আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সেভিংস ডে লাইট

বৃষ্টিতে হাঁটতে ভাল লাগে আমার কারন কেউ দেখেনা দুচোখের জল ধুয়ে যায় বৃষ্টিধারায়
গাড় অন্ধকারে ডুবে আছে ছোট্ট এই বেড়ার ঘরের চারধার । এর মাঝে কলিম উদ্দীনের সম্বল এই টিমটিমে আলো দেয়া সবেধন নীলমনি এক কূপি। অনেকদিন ধরে বাপের কাছে তার আব্দার ছিলো বড় গোছের একটা হারিকেনের । কিন্ত অভাবের সংসারে তার ঠেলাগাড়ি চালনো বাপের পক্ষে সেই আশা পূরন করা সম্ভব না । আর হবেই বা কিভাবে এই দূর্দিনের বাজারে কলিম উদ্দীনের স্কুলের খরচ চালাতে গিয়ে তার হিমশিম খাবার যোগাড় ,তার উপর আছে সংসারে পাঁচটা মুখের খাবার যোগানো ।

তাই কলিমের আর সেই হারিকেন এখনও কেনা হয়নি । সকাল হলেই বাপ যায় ঠেলাগাড়ি চালাতে আর মা বের হয় বাসাবাড়িতে ঝিঁয়ের কাজ করতে । কলিমের ছোট ৩ টি ভাইবোন সব মিলে সারাদিন বস্তির চারধারে ধূলায় লুটোপুটি খায় । এই সময়টা একমাত্র আল্লাহ তাদের দেখে থাকে । কলিম সকাল ১০টায় বেরিয়ে পড়ে স্কুলের পথে ।

আসতে আসতে তার প্রায় বিকেল। অবশ্য এখন সে আর স্কুলে যায়না বরং বস্তির ঝুপড়ি ঘরে এখন সে প্রস্ততি নিচ্ছে এসএসসি পরীক্ষার। কলিমের মনে পড়ে যায় এইত কিছুদিন আগেও তাদের সব ছিলো কিন্ত সর্বনাশা পদ্মার বুকে এখন সে সব শুধুই স্মৃতি । গ্রামের রহিম বাড়ীর ছেলে এখন ঢাকায় চালায় ঠেলাগাড়ী আর তার বউ বাসা বাড়ীতে কাজ করে । কিন্ত এত হতাশার মাঝেও এখন ও যেন আশার আলো জ্বালিয়ে রেখেছে তাদের ছেলে কলিম উদ্দীন ।

ছেলের অসম্ভব পড়াশোনার প্রতি ঝোঁক দেখে কলিমের পিতা তার শতকষ্টের মাঝেও কলিমের লেখাপড়া খরচ চালিয়ে যাচ্ছে । কলিম মনে মনে স্বপ্ন দেখে একদিন সেও বড় হবে অনেক বড় । চোখের উপর নোনা ঘামের জ্বলুনিতে কঠিন বাস্তবে ফিরে আসে কলিম । একমনে কূপির টিমটিমে আলোয় খুঁজে ফেরে তার ভবিষৎতের আলোকে । কিন্ত এদিকে কূপির আলোও ক্রমে ক্রমে ক্ষীন হয়ে আসছে তেলের অভাবে ।

আর গাড় অন্ধকার গ্রাস করে নিছ্ছে কলিমদের ঘরের বেড়ার দেয়ালকে । এখনও যে অনেক পড়া বাকী অথচ হাতেও অঢেল সময় । কিন্ত এদিকে টাকাও নেই হাতে একদম ,যে তেল কিনে পড়বে । কলিমের মনে হতাশা গ্রাস করে। কিছুই আর ভাল লাগেনা ।

ছোট্ট ঝুপরি ঘর থেকে বেরিয়ে আসে বাইরে। কিন্ত এখানেও যেন গাড় অন্ধকার ঘিরে আছে কলিমের চারধার । বস্তির চারধারে বিশাল বিশাল উঁচু আকাশচুম্বী অট্টালিকার দেয়ালগুলো ঘিরে রেখেছে কলিমদের বস্তিটা দিনের বেলায় ও তাই নেই কোন সূর্যের আলো । কলিম মাথা উঁচু করে তাকিয়ে দেখে এক অট্টালিকার মাথায় টাওয়ারের গায়ে রোদের ঝলকানি ,তার কাছে মনে হয় এযেন মরীচিকা যাকে দেখা যায় কিন্ত ছোঁয়া যায়না । দূরে কোথায় যেন রেডিওতে সংবাদের পাঠিকা বলছে আগামী ১৯শে জুন ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে নেয়া হবে ১ঘন্টা আগে ।

ফলে জনগন সূর্যের আলো আরো বেশী ব্যবহার করে বিদূৎ সাশ্রয় করতে পারবে । এবং এর ফলে দেশ এবং জাতির বিদূৎ ঘাটতি কিছুটা লাঘব হবে । দিনের পড়ন্ত বেলায় কলিমের ঝুপড়ি ঘরে গ্রাস করে রেখেছে অনাহূত গাড় অন্ধকার । বস্তির সেই ঝুপড়ি ঘরের সামনে একাকী এক স্কুল পড়ুয়া বালক বসে আছে অধীর আগ্রহে তার পিতার অপেক্ষায় । তার ছোট্ট কূপিতে আলো জ্বলে উঠবে কখন তার প্রতীক্ষায় ।

আসছে ১৯ শে জুন কলিম কি তার ঘড়ির কাঁটাটি ১ঘন্টা আগাবে ?
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।