গাজীপুর ,বাংলাদেশ
বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংযোজন করার বিরুদ্ধে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বিভিন্ন মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা কথা বলেছি বাংলাদেশ সামাজতান্ত্রিক দল বা জাসদ সভাপতি জনাব হাসানুল হক ইনুর সাথে ।
(তথ্য সুত্র : রেডিও তেহরান/বাংলা )
রেডিও তেহরান : বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংযোজন করার বিষয়ে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের অনেকেই বিষোদগার করে চলেছেন। কিছু দিন আগে ডেপুটি স্পিকার এর সমালোচনা করেছেন , আইনমন্ত্রী ব্যারিষ্টার শফিক আহমেদ এর মধ্যে কয়েকবার রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন । তো আমি আপনার কাছে জানতে চাচ্ছি , ৮৫ পার্সেন্ট মুসলামানের দেশে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হওয়াটাকে এত নেতিবাচকভাবে দেখা হচ্ছে কেন?
হাসানুল হক ইনু : দেখুন , এই মুহুর্তে মহাজোটের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের মধ্যে সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের বিষয় নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি । তাছাড়া বিষয়টি নিয়ে আমরা মোটেও মাথা ঘামাচ্ছি না ।
এই মুহুর্তে আমাদের কাছে যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ সেটি হচ্ছে , ধর্মের নামে যে জঙ্গীবাদী রাজনীতি চর্চা হচ্ছে সেটা থেকে বাংলাদেশকে কিভাবে রক্ষা করা যায় । আর সে বিষয়ে প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্যে আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি । আর আপনার প্রশ্নের জবাবে আমি বলছি বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র । এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ বা সংখ্যালঘু বলে কথা নয় এখানে আমাদের সংবিধানে গণতান্ত্রিক রীতি নীতি অনুযায়ী যার যার ধর্ম সে স্বাধীনভাবে অবাধে চর্চা করবে । সংবিধানে বিষয়টি স্বীকৃত ।
বাংলাদেশে সংখালঘু মুসলমানসহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা যে যার ধর্ম পালন করার অধিকার রাখে । আসলে এই মুহুর্তে এটি কোনো জাতীয় এজেন্ডা নয় । এটা নিয়ে কোনো আলোচনার সূত্রপাত সরকারের পক্ষ থেকে বা সংসদের ভেতরে করা হয়নি । আইনমন্ত্রী এ সম্পর্কে যা বলেছেন তা তার ব্যক্তিগত মতামত ।
রেডিও তেহরান : আচ্ছা জনাব হাসানুল হক ইনু , আইনমন্ত্রী বলতে চাচ্ছেন , রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হওয়ার কারণেই জঙ্গীবাদ শক্তিশালী হচ্ছে ।
তো আইনমন্ত্রীর এ ধরনের বিশ্বাস বা মানসিকতা সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কি ?
হাসানুল হক ইনু : দেখুন, আমি আবারও বলছি , আইনমন্ত্রী রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের কারণে জঙ্গীবাদ শক্তিশালী হয়েছে বলে যে বক্তব্য দিয়েছে সেটিও তার নিজস্ব অভিমত । আসলে জঙ্গীবাদের পেছনে বহু কারণ রয়েছে বলে আমি মনে করি । এর সাথে রাষ্ট্রীয় , প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক কারণ জড়িত । বাংলাদেশে জঙ্গীবাদী তৎপরতা চালুর পেছনে বিএনপি সক্রিয়ভাবে সহযোগীতা করেছে। প্রশাসন সহায়তা করেছে - তাছাড়া আন্তর্জাতিক কারণও রয়েছে।
সুতরাং সাদামাটা ভাষায় জঙ্গীবাদের কারণ বা জঙ্গীবাদী সশস্ত্র কর্মকান্ডের কারণ হিসেবে বলা যাবে - আর্থ - সামাজিক এবং রাজনৈতিক । তাছাড়া এর পেছনে আরো বহু কারণ রয়েছে। আর রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের সাথে জঙ্গীবাদ সম্পর্কযুক্ত নয় ।
রেডিও তেহরান : ১৯৮৮ সালে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয় । তো এখানে কিন্তু একটি প্রশ্ন চলে আসে , তাহলে ৮৮ সালের আগে বা তারও আগে কি বাংলাদেশে কোনো উগ্রবাদী সন্ত্রাসী তৎপরতা ছিল না ?
হাসানুল হক ইনু : খুব ভালো একটা প্রশ্ন করেছেন, এ প্রশ্নের জবাবে আমি বলবো - ৮০ দশকের আগে পাকিস্তান আমলে যখন বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ চলছিল সেই যুদ্ধের সময় এ দেশের সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামীর লোকজন দেশ বিরোধী এবং গণ বিরোধী তৎপরতা চালায় ।
তারপর ৭০ এর দশকে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির চর্চা হয়েছে কিন্তু জঙ্গীবাদী রাজনীতির চর্চা হয়নি । এই চর্চা শুরু হয়েছে আশির দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে । রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করা না করার সংগে এর কোনো সম্পর্ক নেই । সাবেক স্বৈরশাসক এইচ এম এরশাদ স্বৈরতান্ত্রিকভাবে অগণতান্ত্রিকভাবে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করেছিল । এর সাথে ধর্মের শ্রদ্ধাবোধের বিষয়টিও জড়িত নয় ।
এরশাদ এটা করেছিলেন রাজনৈতিক কারণে । অবশ্য এরপর তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন। তাছাড়া সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করার বিষয়টি সঠিক হয়েছে নাকি বেঠিক হয়েছে সে বিষয়টি বাংলাদেশের জনগণ ভবিষ্যতে সিদ্ধান্ত নেবে । এই মুহুর্তে এ বিষয়টি নিয়ে আমাদের কোনো মাথা ব্যথা নেই । আমরা মনে করি যে রাজনীতিতে যদি সাম্প্রদায়িকতার চর্চা হয় এবং রাষ্ট্রীয় প্রশাসন যদি সেই সাম্প্রদায়িকতার পক্ষে অবস্থান নেয় তখনই জঙ্গীবাদের উত্থান হয় ।
এর আগের প্রশাসন এবং সরকার ধারাবাহিকভাবে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির চর্চা করেছে এবং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের সংগে যুক্ত করার সুযোগ তৈরী করে দিয়েছে। প্রসঙ্গক্রমে বলবো - বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর চিহ্নিত প্রায় ১০ হাজারের উপর সদস্য আফগানিস্তানে তালেবানদের সাথে যুক্ত হয়ে আফগান যুদ্ধে অংশগ্রহণের চেষ্টা চালিয়েছে এবং প্রকারান্তরে তারা বাংলাদেশে সশস্ত্র জঙ্গীবাদের আমদানি করেছে ।
রেডিও তেহরান : ইসলাম ধর্ম অসাম্প্রদায়িকতার শিক্ষা দেয় । অনেকেই মনে করেন বাংলাদেশের মানুষ অসাম্প্রদায়িক । এদেশে কখনো গুজরাট বা বাবরী মসজিদ ধ্বংসের মত কোনো ঘটনা ঘটতে দেখা যায় নি ।
বাংলাদেশের প্রতিবেশি এমন দেশও আছে যেখানে প্রায় প্রতি মাসেই সাম্প্রদায়িক হাংগামা বা নির্যাতনের ঘটনা ঘটে । মুসলিম অধ্যুষিত বাংলাদেশ সত্যিই এর ব্যতিক্রম । তারপরও বর্তমান সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রীদের অনেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের ব্যাপারে বিষোদগার করছেন, এ বিষয়টিকে বাংলাদেশের মুসলিম জনগণ কিভাবে মূল্যায়ন করবে বলে আপনি মনে করেন ?
হাসানুল হক ইনু : দেখুন, ইসলাম অসাম্প্রদায়িকতার শিক্ষা দেয় আমি এ ব্যাপারে আপনার প্রশ্নের সাথে একমত । বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানসহ এ দেশের মানুষ অসাম্প্রদায়িক । বিশ্বের সব মুসলমান অসাম্প্রদায়িক ।
তবে এর সাথে রাষ্ট্রধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই । আমি স্পষ্ট করে বলবো - সাম্প্রদায়িতকার সাথে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করা না করার কোনো সম্পর্ক নেই । সাম্প্রদায়িকার বিষয়টি রাজনৈতিক । এখানে ধর্মকে ব্যবহার করা হচ্ছে । সুতরাং ইসলামের সাথে সাম্প্রদায়িকতার কোনো সম্পর্ক নেই ; সংবিধানেরও কোনো সম্পর্ক নেই ।
এখানে একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কথিত মুসলমান নামধারী ব্যক্তিরা সাম্প্রদায়িকতার চর্চা করছে ; জঙ্গীবাদের চর্চা করছে । আর এটি অগণতান্ত্রিক ধর্মবিরোধী কাজ ।
রেডিও তেহরান : জনাব হাসানুল হক ইনু , আপনি এই যে আমার প্রশ্নের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে বল্লেন বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী মুসলমানরা অসম্প্রদায়িক এবং ইসলাম অসাম্প্রদায়িকতার শিক্ষা দেয় । তাহলে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে বাদ দিয়ে অন্য কোনো রাজনৈতিক তত্ত্ব সংযোজন করার প্রয়োজন কি ; রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকলে অসুবিধা কোথায় ?
হাসানুল হক ইনু : এটি সুবিধা অসুবিধার বিষয় নয় ; বিষয়টি রাজনৈতিক । যেমন সৌদি আরবে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বলে কিছু নেই ।
সেটি ইসলামিক রিপাবলিক অব সৌদি আরবও নয় । তবে পাকিস্তানে যে ইসলামিক রিপাবলিক অব পাকিস্তানের বিষয়টি পুরোপুরি রাজনৈতিক কারণে । তবে এর সাথে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই । ফলে বাংলাদেশে এরশাদ তার স্বৈরাচারী শাসন টিকিয়ে রাখার জন্যে রাজনীতিতে ধর্ম ব্যবহারের চেষ্টা করেছে। দেখুন , যদি দেশে গণতন্ত্র থাকে তবে ধর্মকে সম্মান করা হয় ।
আর এর অর্থ এই নয় যে - এটি ধর্মহীন রাষ্ট্র । এটি যেমন ধর্মহীন রাষ্ট্র নয় তেমনি ধর্মবিরোধী রাষ্ট্রও নয় । বাংলাদেশের সংবিধান কখনও ধর্ম বিরোধী ছিল না । সুতরাং এই বিতর্ক অনর্থকভাবে করা হচ্ছে । আমরা সবাই জানি যে বাংলাদেশে সশস্ত্র জঙ্গীবাদীরা সংবিধান , প্রশাসন, রাষ্ট্র ও আদালতকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছিল ।
তারা আদালতে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মানুষ হত্যা করেছে। তারা তথা কথিত বা তাদের ব্যাখ্যায়িত ইসলামের শাসন জারী করার জন্যে নিজের হাতে আইন তুলে নিয়েছিল । আর সে হিসেবে বাংলা ভাই ও শায়েখ আব্দুর রহমানদের ইতোমধ্যে ফাঁসী হয়ে গেছে। তার চেয়ে বড় কথা হচ্ছে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের সংগে এরা যুক্ত । তারা অবৈধভাবে অস্ত্র আমদানি করছে ।
তারা বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্য ও কৃষ্টির সংগে সম্পৃক্ত নয় । #
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।