আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দ্বিখন্ডিত -গল্প



সময়: ০০-৩০ NASA- র এই উইংটাতে লোকজন তেমন বেশী নেই। সজীবরা তিন জন পালা করে ডিউটি দেয়। একজন স্টান্ড বাই অপারেটরও আছে। সপ্তাহে একটু বেশী সময় ধরে ডিউটি দিতে হলেও, পে- চেক এর দিকে তাকিয়ে, চাকরীটাকে মন্দ লাগেনা তার। সে ছাড়া, বাকীরা সব কালো আমেরিকান।

বয়কনিষ্ঠ হলেও, মেধার দিক থেকে সহকর্মীদের বেশ সমীহ অর্জন করে ফেলেছে সে । যদিও মাত্র দুবছর হলো এই চাকরীতে। বরাবরের মতো ব্লগে চোখ বুলিয়ে বেশ কাটছিলো অলস সময়টা। মাঝে মাঝে কিছু রুটিন ডাটা চেক্। ফিডব্যাকগুলি ঠিকমতো আসছে কিনা লক্ষ্য রাখা।

সজীবদের কাজ হলো চাঁদের ভূগর্ভস্থ তেজস্ক্রিয় খনিজগুলিকে নিয়ে। প্রজেক্টের এই পর্যায়ে ওরা আভ্যন্তরীণ পরিবর্তনগুলি নিয়মিত মনিটরিং করে, ডাটাবেইজ তৈরী করে। ভবিষ্যতে খনিজ সম্পদ আহরণের জন্য তাদের উপাত্তগুলি কাজে লাগানো হবে। তার অবশ্য ভবিষ্যত নিয়ে মাথা ব্যথা নেই। মোটা রকমের টাকা জমাতে পারলেই, সে তার স্বপ্নের সফট্‌ওয়্যার প্রজেক্ট নিয়ে কাজ শুরু করবে।

বিপ্‌ বিপ্‌ এলার্মের শব্দে সে একটু বিভ্রান্ত হয়ে পড়লো প্রথমে। রেডিয়েশন লেভেল একটা নির্দিষ্ট লেভেলের উপর না এলে এই এলার্ম শুরু হবার কথা না। কিন্তু ডায়াল থেকে তীব্র লালাভ আলোর বিচ্ছুরণ বলে দিচ্ছিল, শুধু শব্দ নয় ভিজুয়্যাল স্কেলেও কিছু একটা ঘটে গেছে। মনিটরের দিকে ঝুঁকে বসে দৃষ্টিবিভ্রমের ব্যাপারটা নিশ্চিত হয়ে নিতে চাইলো সজীব। 'অসম্ভব!! ' একেবারেই অসম্ভব মনে হলো তার কাছে পরিস্থিতিটা! একমাত্র ব্যাপক বিধ্বংসী পারমানবিক বোমা ছাড়া এমন রেডিয়েশন ঘটা সম্ভব নয়! কিন্তু চাঁদের ভেতরে এমন বিস্ফোরণ ঘটবে কিভাবে?! সব গুলি অবজারভেশন বলছে গত এক ঘন্টায় ক্রমাগত বিস্ফোরন হয়ে চলেছে চাঁদের কেন্দ্রে।

কোন এক চেইন রিএ্যাকশনের সুইচ যেন চালু করে দিয়েছে কেউ। নিঃসন্দেহে এটা রেড এলার্ট জারীর মতো পরিস্থিতি। সজীব তবু আরো পাঁচ মিনিট পর্যবেক্ষণের সিদ্ধান্ত নিলো। পাঁচ নয়; তিন মিনিটের মাথাতেই তীব্র সাইরেন আর আলোর অবিরত ঘুর্ণন শুরু হয়ে গেলো NASA এর এই উপকেন্দ্রের সবকটি অবজারভেটরী থেকে। সময়: ০৪-৩০ কোন ভাবেই যেন ব্রিফিংএর কথাগুলি, উপলব্ধিতে আসছিলনা- নেলীর।

বিমর্ষ মুখে রিমোট হাতে নিয়ে টিভির দিকে তাকিয়ে সজীবের কথাই ভাবছিলো সে। নাসার ব্রিফিং এ যদিও বার বার সবাইকে আস্বস্ত করা হচ্ছিল- "চাঁদের সাউথ পোল এইটকান বেসিন (South Pole-Aitken basin) এ টাইটানিয়াম এর চেইন রিএ্যাকশন লক্ষ্য করা গেছে। প্রচুর পরিমাণে ডিউটেরনস এর উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে এবং এটা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর কারণে বিস্ফোরণের বিস্তৃতি ঘটছে চাঁদের বিষুব রেখা বরাবর"; একটু বিরতি দিল লোকটা -"অবস্থা দৃস্টে মনে হচ্ছে এই গতিতে বিস্ফোরণ চলতে থাকলে আর মাত্র ২৪ ঘন্টার ভেতর চাঁদ আড়াআড়ি ভাবে দুই টুকরা হয়ে পড়বে। তবে বিপর্যয়টা যতোটা ভয়াবহ মনে হচ্ছে, আসলে ততোটা না।

দীর্ঘ মেয়াদি কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়া কেবল সাগর ও পোতাশ্রয়ে জাহাজ চলাচল বাঁধা গ্রস্থ হবে। .........." নেলী ঠিক বুঝতে পারছিলোনা; সে এই কথাগুলি সচেতনভাবে সুস্থ মস্তিষ্কে শুনছে! চাঁদ ভেঙ্গে পড়ছে?! চাঁদ দুই টুকরো হয়ে পড়বে?! কিভাবে হয়? এদিকে ইতিমধ্যেই আবহাওয়ার বিচিত্র আচরণের খবরও পাওয়া যাচ্ছে চারদিক থেকে। সে পুরো ব্যাপারটাকেই হয়তো এতোটা সিরিয়াসলি নিতোনা, যদিনা সজীবের সাথে তার ফোনে আলাপ না হতো। অনেক কষ্টে মোবাইলে যোগাযোগ করে সে জেনেছে ব্যাপারটা সত্যিই ঘটছে। সজীব শুধু তাকে বলেছে, সে শীঘ্রই বাসায় ফিরছে।

এমন কি হতে পারে; যে পৃথিবীর আয়ু আর মাত্র ২৪ ঘন্টা?! নেলী বুঝতে পারছে না তার এই মুহুর্তে কি করা উচিত। মোবাইলটা জলপ্রপাতের সুরে বেজে উঠতেই সে প্রায় হামলে পড়লো ফোনের উপর। অনেকক্ষণ ধরেই সে এই ফোনটার অপেক্ষায় আছে। কাঁপা কাঁপা গলায় বললো- "হ্যালো!" সময়: ০১১-৩০ সজীব বাসায় ফিরছে। রাতভর অনেকগুলো কাজ করতে হয়েছে তাকে।

তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে কাজটা সেটা সে মাত্র শুরু করতে পেরেছিলো। ফাইনাল ডাটা পেতে পেতে আরো কিছু সময় নিবে। কম্পিউটার এর সাথে তার মোবাইল সিন্ক্রোনাইজ করা থাকায় হিসেব শেষ হওয়া মাত্রই সেটা চলে আসবে তার মোবাইলে। মাঝখানের এই সময়টায় সজীব আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে চায়। 'নাহ! ভুল হলো'- ভাবলো সে।

এখন যে কাজটা করতে যাচ্ছে সেটার কাছে অন্য কোন কিছু আসলে মাইনে রাখে না। হয়তো পৃথিবী বাঁচলো কি মরলো, জোয়ার ভাটা হলো কি হলো না, তার আর কিছু যায় আসবে না! সে নেলীকে সব জানিয়ে দিতে চায়। দুদিন আগেই সাবেরার সাথে কথা হয়েছে তার। "আমি ফিরছি না সাবেরা। " "জানতাম।

" সাবেরা কি দীর্ঘশ্বাস গোপন করলো? "আমি ইউনির সেই পুরোনো তরুণ তুর্কী সজীব আর নেই সাবেরা। " সাবেরা সেটা জানে। সজীবের গত কদিনের উচ্ছাস কমে আসতে খুব বেশী সময় নেয়নি। আমেরিকা এসেই ইমিগ্র্যান্ট স্বামীর কাছ থেকে ডাইভোর্স নিয়ে নিয়েছিল সাবেরা। সজীবের জায়গায় আর কাউকে মেনে নেয়া তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছিলো না।

এই দেশে এসে আর বাবা মার মুখ রক্ষার কিছু ছিলনা। ৫ টা বছর অনেক সয়েছে ঢাকায়, যথেস্ট। সজীবের সব খবরই তার জানা ছিল। নেলীর কথাও জানতো। এটাও জানতো, তার উপর জেদ করেই সে নেলীকে বিয়ে করেছে।

কিন্তু সজীবের সাথে ৫ বছর পর দেখা হয়ে, অনেক হিসেবই উলট পালট হয়ে গিয়েছিলো তাদের দুজনের- কিছু দিনের জন্য । একসময় মনে হয়েছিল বুঝি প্রথম বর্ষের সেই সদ্য তরুন-তরুনী! ভালবাসার উদ্যাম দেয়া নেয়া এভাবে আবার মাথা চাড়া উঠবে কদিনের জন্য- কে জানতো। বুঝি প্রদীপ নিভে যাবার আগেই বেশী তেজে জ্বলে। কেন এমন হয়? সাবেরার প্রশ্ন তার মনের ভেতরই চাপা পড়ে থাকে। সজীবের কাছে সে আর কিছু শুনতে চায়নি।

হয়তো ভালবাসারাও এক সময় তৃপ্ত হয়ে পড়ে! সজীব জানেনা, নেলীর জন্য ভালবাসাটাই কি সাবেরাকে তার কাছে ফিরে আসতে দিলো না!? আজকে এই অনিশ্চয়তা মাখা সময়টাতে তার মনে হলো, কিছুটা স্বস্তি ফিরিয়ে আনি নেলীর মাঝে! নাকি কেবল নিজের জন্যই করছে সে?! ভাবতে থাকে সে। সময়: ১২-৩০ রিচার্ডকে আগে থেকেই চিনে সজীব। তাই পরিচয় করিয়ে দেবার ঝামেলায় গেলোনা নেলী। "সাজীব, আমি জানি এখন সময়টা ঠিক নয়। কিন্তু আমি এই বিপর্যয়ের সময়টুকু রিচার্ডের সাথে থাকতে চাই।

আমি তোমাকে হয়তো আর অল্প কিছু দিনের ভেতরেই বলে দিতাম। আমরা কদিন ধরেই ডেট করছি। আমার মনে হয় -হি ইজ মাই পারফেক্ট ম্যাচ'। " নেলীর গলার স্বরে এমন কিছু খুঁজে পেলোনা সজীব, যা দিয়ে তার মনে পড়তে পারে এই মহিলা তার ৩ বছরের ঘরণী! নিজের অল্প কয়টা জামা কাপড় গুছিয়ে নেলীর ফ্ল্যাট ছেড়ে নেমে আসলো সে। গাড়িতে উঠার সময় ডাটা এস এম এস পেলো সে।

তার এনালাইসিস সফল হয়েছে! দ্বিখন্ডিত হবার ২৪ ঘন্টার ভেতরেই আবার পরস্পরের আকর্ষণে একত্রিত হয়ে পড়তে যাচ্ছে চাঁদের খন্ড দ্বয়! কোন প্রতিক্রিয়া কি হলো তার ভেতরে? বোঝা গেলো না। মোবাইলটা পকেটে ফেলে, দ্বিখন্ডিত জীবনের দিকে পা বাড়ায় সজীব।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.