আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছোটগল্প -সৈয়দ সাহেবের ধূমপান বৃত্তান্ত

মোটাসোটা - গোলমুখ - চোখ ছোট একজন মানুষ

একজন মানুষ সিগারেট খেতেই পারেন। এটা বলার মত বিষয় না। ব্যাপারটা একটা বলার মত বিষয় হয়ে দাঁড়ায় যখন জীবনের পঁয়তাল্লিশটা বসন্ত পেরিয়ে যাবার পর জনৈক সৈয়দ আহমদ সিগারেট ঠোঁটে তুলে নেয়। ব্যান্ড বেনসন লাইট। উনাকে জনৈক বলাটা ঠিক না।

আপনারা যারা খেয়াল করেন নাই তারা একটু সর্তকতার সাথে স্থানীয় পত্রিকার সাহিত্য পাতাগুলোতে নজর বুলালে দেখবেন এ মানুষটির লেখা গল্প, কবিতা, ধারাবাহিক উপন্যাস ওতে নিয়মিত ছাপা হয় । ইনি একজন লেখক। ছেচল্লিশ বছর বয়সী নবীন লেখক। সিগারেট জ্বালাবার প্রথম দিন খানিকটা ধোঁয়া ফুসফুসে ঢুকে যাওয়ায় বেশ খানিকটা বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয় তাকে। দু’চারজন আবার ব্যাপারটা দেখে খানিকটা মুচকি হেসে মনে মনে বলেও ফেলে আহা বেচারা! ফুসফুসে ধোঁয়টা না ঢুকিয়ে বের করার কায়দাটা বের করে ফেলায় এরপর বিব্রতকর অবস্থায় তাকে আর পড়তে হয় নাই।

সেই শুরু। সেদিনের পর থেকে আজ চার মাস হতে চলেছে। গত চার মাসে এমন একটা দিনের কথা মনে করা যায় না যেদিন তার ঠোঁটে জ্বলন্ত সিগারেট দেখা যায় নাই। কিন্তু একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ হঠাৎ এ বয়সে সিগারেট ধরলেন কেন? ব্যাপারটা খুলে বলার আগে সৈয়দ আহমদ সম্পর্কে আপনাদের দু’চারটা কথা জানতে হবে। নয়ত ব্যাপারটা ঠিক জমবে না।

প্রথমেই বলা যাক মানুষটার নাম সম্পর্কে। সৈয়দ আহমদ মানুষটার ছদ্মনাম। ভাল নাম সৈয়দ আবু বকর আহমেদ। ছোটখাট একটা কেরানীর চাকুরি করেন। চাকুরিটা সরকারী।

সরকারী চাকুরিতে বেতনটা ভাল না হলেও অফুরন্ত সময় পাওয়া যায়। এ সময়টা কাজে লাগিয়ে সরকারী চাকুরেদের কেউ কেউ শেয়ার ব্যবসা করে, কেউ রাজনীতি করে আবার কেউ কাজ খুঁজে না পেয়ে হাতের কাজটাকে টেনে টেনে লম্বা করে সময় পার করে। সৈয়দ আবু বকর আহমেদ প্রথম দলের। বছর দু’য়েক আগ পর্যন্ত তিনি তার অফুরন্ত সময়টার একটা অংশ শেয়ার মার্কেটে ব্যয় করতেন। শেষকালে অবস্থাটা এমন দাঁড়িয়েছিল যে তিনি হয়ে পড়েছিলেন ফুল টাইম শেয়ার ব্যবসায়ী আর পার্ট-টাইম চাকুরে।

আয় -উন্নতি যে ওখান থেকে তিনি করেন নাই তা বলা যাবে না। তবে সে সব আয় বিভিন্ন স্থাবর সম্পত্তিতে যুক্ত হয়ে পড়ায় সে সর্ম্পকে কোন মন্তব্য করা যাচ্ছে না। তবে এটা ঠিক যে তার সময়টা সে সময় বেশ সুন্দরভাবে কেটে যেত। অবশেষে লক্ষ লক্ষ শেয়ার ব্যবসায়ী যে সময়টা থেকে বেকার হতে শুরু করলেন সে সময় থেকে আমাদের এ কাহিনীটা শুরু করা যায়। ভাবতে পারেন শেয়ার মার্কেটে বিস্তর টাকা খুইয়ে সৈয়দ সাহেব সিগারেট ধরেছেন।

হ্যাঁ। এটা একটা সম্ভাবনা বটে। তবে আমাদের কাহিনীতে শেয়ার মার্কেট তার ধোঁয়া টানার কারন নয়। শেয়ার বাজারে ধস নামায় তার হাতে এখন অফুরন্ত কর্মহীন সময়। কোন জিনিষই অফুরন্ত হলে যথাযথভাবে কাজে লাগানো যায় না ।

তাই বড় বড় হাই তুলে অফুরন্ত সময়টার একটা বড় অংশ তিনি অফিসেই ঘুমিয়ে কাটাতেন। প্রতি মাসের সামান্য ক’টা বেতনের টাকা তখন তার চোখে লাগে না। এক সময় এ’কটা টাকার জন্য রাত-দিন পরিশ্রম করতেন। আর এখন ওটা নিয়ে তার কোন মাথাব্যাথা নাই। আর দীর্ঘদিন শেয়ার বাজারে তার ব্যস্ততার জন্য তার কাজগুলো কিভাবে জানি অন্যের হাতে চলে গেছে।

তিনি চাইলেই এখন আবার সে কাজ ফেরৎ আনা যায় না। তাই চেয়ারে বসে সৈয়দ সাহেবের হাই তোলা তখন ছিল এক পরিচিত দৃশ্য। বসে খেলে এক সময় এক ঘেঁয়েমি চলে আসে - এমন সূত্রের নিয়ম অনুসারে কিছুদিন পরই সৈয়দ সাহেবের এমন ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে সময় পার করার উপর প্রচন্ড বিরক্ত জন্মে যায়। সময় কাটাবার জন্য তিনি তখন নিয়মিত পত্রিকা পড়তে শুর ু করলেন। পত্রিকা তিনি নতুন পড়েন না।

আগেও পড়তেন। কিন্তু সে পড়াটা ছিল ভাসা ভাসা। এবার তিনি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়তে শুরু করলেন। হেডলাইন-সাব লাইন-বিনোদন-বিজ্ঞাপন এমন কি সম্পাদকের কাছের চিঠি পর্যন্ত মন দিয়ে পড়তে শুরু করলেন। পড়তে পড়তে হঠাৎ একদিন তার মনে হয় এতগুলো বছরে তার নাম তো কোনদিন কোন পত্রিকার চিঠিপত্র কলামেও ছাপা হল না।

সেদিনই তিনি কলম হাতে নিয়ে বসে গেলেন। প্রাপক সম্পাদক। বিষয় সরকারী অফিসে বিদ্যুৎ সাশ্রয়। গত ঈদের ছুটিতে তিনি ভুলে তার মাথার উপরের সিলিং ফ্যানটা বন্ধ করতে ভুলে গিয়েছিলেন। পিয়নটাও খেয়াল করে নাই।

তিনদিনের ছুটির পর অফিসে এসে দেখেন দোর্দন্ডপ্রতাপে ফ্যানটা বাতাস দিয়ে চলেছে। সিলিং ফ্যানগুলো ঠিকভাবে বন্ধ করলে কতটুকু বিদ্যুৎ সাশ্রয় হত তার একটা খসড়া সে সময় তিনি করেছিলেন। সে হিসাবটাই উল্লেখ করে সকলকে ফ্যান-লাইট বন্ধ করার জ্বালাময়ী আহবান জানিয়ে পত্র রচনা। সপ্তাহখানেক অপেক্ষা করেও যখন দেখলেন তার চিঠিটা ছাপা হয় নাই তখন তিনি পত্রিকায় চিঠি লিখতে উৎসাহ হারিয়ে ফেললেন। পত্র-পত্রিকা ছেড়ে আবার তিনি হাই তুলতে লাগলেন।

এমনি একদিন হাই তুলতে তুলতে পত্রিকার পাতা উল্টাতে গিয়ে দেখেন তার চিঠিটা ছাপা হয়েছে। নিচে জ্বলজ্বল করছে তার নাম। সৈয়দ আবু বকর আহমেদ। মুগ্ধ দৃষ্টিতে নিজের নামটা ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখেন। মুগ্ধতার রেশ কাটতে না কাটতে তিনি কলম তুলে নিলেন আবার।

পত্র রচিত হয় এবং সপ্তাহ খানেকের ব্যবধানে ছাপাও হয়। তারপর থেকে নিয়মিত শুরু হয় পত্র রচনা। এভাবেই চলছিল। মাস দু’য়েক পর তার হঠাৎ মনে হল এসব পত্র কি কেউ পড়ে? তিনি নিজেও কি পড়তেন? উত্তর পেলেন- না, পড়তেন না। পাঠকই যদি না পড়ে তবে লেখে লাভ কি? এবার তিনি পত্র ছেড়ে কলম দিয়ে কলাম লেখার চেষ্টা শুরু করলেন।

চেষ্টাটা আন্তরিক। কেবল অফিসই না। বাসাতেও তিনি লেখা শুরু করলেন। অনেক খেটে-খুটে একটা লেখা দাঁড় করালেন। শিরোনাম ইসলামে সময়নাবুর্তিতা।

অনেকগুলো ফটোকপি করে জাতীয়, স্থানীয় পত্রিকায় পাঠিয়ে দিলেন। চাপা উত্তেজনা নিয়ে মাস দু’য়েক তিনি অপেক্ষা করলেন কবে লেখাটা পত্রিকায় দেখবেন। অপেক্ষাটা হতাশায় রূপ নেবার পর একদিন স্থানীয় পত্রিকা দৈনিক দিবানিশির অফিসে যোগাযোগ করলেন তিনি। মহল্লার ইকবাল ও জায়গায় কি জানি চাকুরি করে। খোঁজ নিয়ে দেখলেন সে জেষ্ঠ্য সাংবাদিক।

ও তার সব বৃত্তান্ত শুনে খানিকটা হাসল। বলে, আপনার লেখা কি কারনে ছাপবে ভাই? আপনি কি লেখক? বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক? সাবেক আমলা? রাজনৈতিক নেতা না বিশিষ্ট সমাজসেবক? কোনটাই তো না। তাহলে আপনার জন্য ওতটুকু জায়গা নষ্ট করবে কেন কোন পত্রিকা? সৈয়দ সাহেব নির্মম সত্য কথাটুকু হজম করতে সময় নিলেন। সত্যিই তো। শেয়ার মার্কেট থেকে স্থাবর সম্পত্তি করেছেন ঠিক কিন্তু পেশায় তো তিনি কেরানী।

সমাজের কেউকেটা নন যে পত্রিকাওলারা ছাপিয়ে দু’পয়সা আয় করবে। চা শেষে শুকনো মুখে তাকে উঠে যেতে দেখে ইকবালের বোধ করি মায়া হয়। তাই বলে, লেখার শখ থাকলে আপনি কবিতা বা গল্প লেখে আনেন। দেখি ছাপানো যায় কিনা। সৈয়দ সাহেব এরপর গল্প-কবিতায় মনোনিবেশ করলেন।

আশ্চর্য হলেও সত্য কথা, কবিতা তিনি রচনা করতে না পারলেও গল্প ঠিকই রচনা করলেন এবং গল্পের গাঁথুনিও হল চমৎকার। জীবনেও সাহিত্য, জীবনবোধ নিয়ে চিন্তা না করা একজন মানুষের হাত থেকে এমন রচনা কল্পনা করা যায় না। কিছু কিছু মানুষকে সৃষ্টিকর্তা প্রতিভা দিয়ে প্রেরন করেন। তবে কি সৈয়দ সাহেব তেমনি একজন মানুষ? ইকবাল এক বিকেলে হাসতে হাসতে এ কথা তাকে বলে বসে। সৈয়দ সাহেব উত্তেজনায় টগবগ করতে থাকেন।

সত্যিই কি তার খোদা প্রদত্ত প্রতিভা আছে? আমাদের কাছে এ প্রশ্নের উত্তর অবশ্য পাওয়া যাবে না। সবে মাত্র দুটো গল্প তার তখন ছাপা হয়েছে। দুটোই দৈনিক দিবানিশি পত্রিকার পাতায়। অন্য জায়গাতেও পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু তারা ছাপায়নি।

এই না ছাপানোর জন্য তার হঠাৎ পাওয়া প্রতিভা নিয়ে সৈয়দ সাহেব কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়েন। তবে কি ইকবাল তাকে সান্ত¦না দেবার জন্যই গল্প দুটো তার পত্রিকায় ছাপিয়েছে? ব্যাপারটা তিনি একদিন ইকবালকে জিজ্ঞেস করে ফেললেন। ইকবাল হেসে বলে, কেন এ কথা জিজ্ঞেস করছেন? গল্প লেখার প্রচেষ্টা দেখে তোমার ভাবী আর ছেলে-মেয়েরা মুখ টিপে হাসে। এ লাইনে যদি আমার কোন আশা না থাকে তবে খামোখা আর চেষ্টা করব না। ইকবাল একটু গম্ভীর হয়ে বলে, মাত্র দুটো লেখাতেই এত অস্থির হচ্ছেন কেন? এখন ও কত সময় বাকী।

সাহিত্যে সময় দেন। এর -ওর সাথে পরিচিত হন। পরিচিতি না পেলে কেউ কি আপনার লেখা ছাপবে? মনে কষ্ট নিয়েন না। এই আমার সাথে আপনার পরিচয় না থাকলে যত ভালই লেখেন না কেন দৈনিক দিবানিশিও আপনার লেখা ছাপাত না। সৈয়দ সাহেব চুপ করে থাকেন।

কথাটা ছেলেটা সত্যি বলেছে। তাকে সাহিত্যে সময় দিতে হবে। এর-ওর সাথে পরিচিত হতে হবে। ইকবালই প্রথম তাকে মিজান শপিং সেন্টারের নিচের আড্ডায় প্রথম নিয়ে যায়। সেই থেকে সৈয়দ সাহেব সে চায়ের আড্ডার নিয়মিত গমন করতে থাকেন।

নবীন আড্ডাবাজ হিসেবে তার বয়সটা যে একটু বেশী তা তিনি অবশ্য প্রথম দিনেই বুঝতে পারেন। মুরব্বী শ্রেনীর মানুষ হিসেবে প্রথমদিকে টাকাটা একটু বেশী খরচ করে আড্ডার প্রবেশাধিকার নিয়ে নেন। মাস খানেকের মধ্যেই তিনি হয়ে উঠলেন তাদের পরিচিত একজন। তাকে ছাড়া আড্ডা আর চলে না। মুফতে চা-সিগারেট স্পন্সর করেন এমন একজন মানুষ প্রতি আড্ডাতেই দরকার।

এ আড্ডার প্রায় সবাই কোন না কোন সময়ে উঠতি লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবার চেষ্টা করেছে কিংবা এখনও চেষ্টা চালাচ্ছে। কেউ কেউ লিটল ম্যাগাজিন খুলেছে। কেউ বা আবার আজকাল নিজের লেখায় নাম না ফোটায় অন্যের লেখা সমালোচনা করে টিকে রয়েছে। প্রায় প্রত্যেকেই নিজের টাকায় দু-তিনটা বই ছাপিয়েছে। সৈয়দ সাহেব এ আড্ডায় প্রথম প্রথম চুপচাপ থাকতেন।

সাহিত্যের নানা ছন্দ বিষয়ে যখন তার হালকা হালকা ধারনা আসি আসি করছে তখন তিনি কথা শুরু করলেন। এ আড্ডায় সবাই কেবল কথা বলে। কেউ শুনে না। যে কারনে সৈয়দ সাহেবের এখানে আগমন তা প্রায় সফল। এরা তাকে এখন চেনে।

কিন্তু লেখা ছাপার হার তখনও বাড়ে নাই। দু’চারদিন ভাল করে খেয়াল করার পর তার নজরে আসে সিগারেটের ব্যাপারটা। একে অন্যের মুখ থেকে সিগারেট কেড়ে টান দেবার সময় সবাই সবার খুব আপনজন হয়ে আসে। এ সময়টায় মানুষের মনটা থাকে নরম। একেবারে থিকথিকে কাদার মত নরম।

ওদের যা বলা হয় তা তারা এ সময়টায় হৃদয় দিয়ে শোনে , অনুরোধ রাখার চেষ্টা করে। সৈয়দ সাহেবের চায়ের অভ্যাস থাকলেও সিগারেটের অভ্যাস একেবারেই ছিল না। সেই থেকে সিগারেটের প্রতি তার আসক্তির প্রকাশ। গত ক’মাসে সৈয়দ সাহেবের লেখা প্রকাশের পরিমানটা বেড়েছে। পাঠকের কাছে তার অবস্থানটা কি তা জানা না গেলেও এটা জানা যায় যে এ শহরের সাহিত্যিক ও সাহিত্য সমালোচকদের কাছে তিনি এখন পরিচিত মুখ।

আজকাল কোথাও তার লেখা গেলে তারা অন্তত একবার নজর বুলায়। সৈয়দ সাহেব সাহিত্যিক হবার একটা পথ পেয়ে গেছেন। পাতার পর পাতা লিখবেন আর সন্ধ্যেও আড্ডায় হাজিরা দেবেন। একই সিগারেট ভাগাভাগি করে খাবেন। সাহিত্যিক জীবনটাকে সুরভিত সুবাসে ভরিয়ে তোলার জন্য আমাদের এ জনৈক সৈয়দ আহমেদ জীবনের পয়তাল্লিশটা বসন্ত পেরিয়ে যাবার পরের সেই সন্ধ্যেয় প্রথমবারের মত সিগারেট এর ধোঁয়া ঠোঁট দিয়ে ভেতরে টেনে নিয়েছিলেন।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।