আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মনপুরা সিনেমা নয়ঃ-

সব কিছুর মধ্যেই সুন্দর খুঁজে পেতে চেষ্টা করি............

মনপুরা সিনেমা নয়ঃ- ইদানীং মনপুরা নামক সিনেমা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে সর্বত্র। ইচ্ছা থাকা সত্বেও আমি সময় করে সিনেনেমাটা দেখতে পারিনি। সত্যি কথা বলতে কী- আমি কস্ট করে সিনেমা দেখিনা। না দেখার কারন-যেসব সিনেমা আমি আগে দেখেছি তার বেশীর ভাগ সিনেমার সারমর্ম-"তারপর তাহারা সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিল" টাইপের। এখন সিনেমা দেখার সময় হয়না।

তাই নতুন কোন সিনেমা নিয়ে ব্যপক আলোচনা সমালোচনা শুনলে কাউকে জিজ্ঞাসা করে জেনে নেই-সিনামার সংক্ষিপ্ত বিশয়বস্তু। তারপর বাকীটুকু মনে মনে নিজের মত আন্দাজ করে নেই। আমি আজ মনপুরা সিনেমা নিয়ে কিছু লিখছিনা। আমি মনপুরা দ্বীপের পরিচিতি নিয়ে লিখছিঃ- "যতদুর চোখ যায় ঐ দূর নীলিমায় চোখ দুটি ভরে যায় সবুজের বন্যায়........."-শিল্পীর গাওয়া এই গানের বাস্তবতা খুঁজে পেতে হলে আপনাকে যেতে হবে সবুজ দ্বীপ মনপুরায়। মনপুরা মুলত ভোলা জেলার একটি বিচ্ছিন্ন উপজেলার নাম।

এযেনো দ্বীপের ভিতরে আর একটা দ্বীপ। ভোলা সদর থেকে ৮০ কিলোমিটার দক্ষিন পুর্ব দিকে বঙ্গোপ্সাগরের কোল ঘেঁষে মেঘনা নদীর মোহনায় মনপুরার অবস্থান। চারিদিকে জলরাশি দ্বারা বেষ্টিত প্রমত্তা মেঘনার উত্তাল ঢেউয়ে সর্বদা শিক্ত মনপুরার পলিমাটি। এই দ্বীপের ইতিহাস বহু প্রাচীন। প্রায় ৭০০ বছর পুর্বে এই মনপুরা দ্বীপ পর্তুগীজ জলদস্যুদের আস্তানা ছিল।

মনপুরার প্রধান আকর্ষন হচ্ছে হাজার হাজার একর জমিতে ম্যানগ্রোভ বনায়ন। মনপুরার বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চল যেমন চরতজাম্মুল, চরপাতিলা, চরজামশেদ, চরপিয়াল, চরনিজাম, লালচর, বালুয়ারচর, চরগোয়ালীয়া সহ প্রায় ১০ টি চরে বনবিভাগের সহায়তায় গড়ে উঠেছে নীরব সবুজ বিপ্লব। মাইলের পর মাইল বৃক্ষ্ররাজির বিশাল ক্যানভাস মনপুরাকে সাজিয়েছে সবুজের সমারোহে। ১৩০০ শতাব্দীতে মনপুরা দ্বীপের উতপত্তি। তবে সেখানে মানুষের বসবাস শুরু হয় ষোড়শ শতাব্ধীতে।

দ্বীপটি বাকলা চন্দ্রদ্বীপের(বাখেরগঞ্জ-বরিশালের আদী নাম) জমিদারীর অন্তর্ভুক্ত ছিল। সেই সময় ইউরোপীয় পর্যটক মউনরিক, ডারথেমা লী ব্রাংক এবং সিজার ফেড্রিক এই দ্বীপ ভ্রমনে আসেন। এ সময় মিঃ মউনরিক এই দ্বীপকে উদ্ভিদবৈচিত্রপুর্ণ দ্বীপ হিসেবে চিনহিত করেন। তিনি এই দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য, পশুসম্পদ, মতস্য সম্পদ দেখে অভিভুত হয়ে পরেন। স্থানীয়দের সেকথা জানালে-স্থানীয় বাসিন্দারা সবাইকে বলে বেড়ান মউনরিক সাহেবের "মন" পুরা হইছে অর্থাৎ মন ভরে গেছে দ্বীপের সৌন্দর্য্য দেখে...।

পরবর্তীতে মিঃ মউনরিকের নামানুসারে দ্বীপের পুর্নাংগ নাম করন করা হয় মনপুরা। প্রায় ৩৭ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের মনপুরা দ্বীপের লোক সংখ্যা প্রায় ৮ হাজার। পরিবারের সংখ্যা ১,৫৬০ টি। ৩ টি ইউনিয়নে গড়া ৩৮ টি গ্রামে ২ টি কলেজ, ২০ টি স্কুল মাদ্রাসা আছে। এখানে শিক্ষিতের হার তুলনা মুলক ভাবে অনেক ভালো-যা প্রায় ৪০%।

সাইক্লোন সেন্টার আছে ৩০ টি। দ্বীপের আভ্যন্তরীন যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হলেও দ্বীপের সাথে বাহিরের লোকের যাতায়ত ব্যবস্থা খুবই খারাপ। ঢাকা থেকে সরাসরি লঞ্চ যোগে মনপুরা যাওয়া যায়। ঢাকা সদর ঘাট থেকে হাতিয়া গামী লঞ্চ মনপুরার রাম্ নেওয়াজ ঘাটে যাত্রা বিরতি করে। এছারাও ঢাকা এবং বরিশাল থেকে ভোলা হয়ে তজুমদ্দিন ঘাটের সি ট্রাক যোগে মনপুরা যাওয়া যায়।

অন্যদিকে চরফ্যাশন থেকে মনপুরার জনতা বাজার রুটেও দৈনিক দুইবার লঞ্চ যাতায়ত করে। মনপুরাতে মেঘনা নদীর বিশাল সাইজের পাঙ্গাস মাছ খাবারের অনেক সুব্যবস্থা থাকলেও থাকার জন্য তেমন কোন ভালো আবাসিক সুবিধা নেই। তবে মনপুরা প্রেস ক্লাব ওখানে মধ্যম মানের একটা হোটেল তৈরী করেছে-যেখানে নিরাপদে থাকা যায়। শীত মৌসুমে হাজার হাজার অতিথি পাখির কলকাকলীতে মুখর থাকে মনপুরার চরাঞ্চল। মনপুরার দক্ষিন পুর্ব প্রান্ত ঘেঁষে প্রায় চার কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ২১০ একর জমিতে গড় উঠেছে অনেকগুলো ফিশারিজ কারখানা।

তারমধ্যে সরকারি মনপুরা ফিশারিজ লিঃ অন্যতম। সরকারি সহায়তায় অবকাঠামোগত উন্নতি করা হলে এই এলাকাটা দর্শনার্থীদের কাছে স্পেশাল ভিউ হিসেবে আকর্ষন করবে। মনপুরার বিভিন্ন বনাঞ্চলে চিত্রল হরিণ সহ অন্য কয়েক প্রজাতির হরিন অহরহ দেখা যায়। চোর শিকারীরা হরিন জবাই করে বিভিন্ন হোটেলে হরিণের মাংশ সরবরাহ করে। এছারাও বিভিন্ন প্রকার অতিথি পাখীদের মাংশ নিয়মিত পাওয়া যায়-যা ভ্রমন পিপাসুদের বাড়তি আকর্ষন যোগায়।

এখানে বাথানে হাজার হাজার মহিষ দেখতে পাবেন। এখানে মহিষের ঘন দুধ, দৈ খুব জনপ্রিয়। নারিকেল, তরমুজ আর বাংগী উতপন্ন হয় প্রচুর পরিমান। মনপুরাতে একধরনে বিশাল সাইজের কুকুর আছে-যা দেখতে খুবই ভয়ংকর। অনেকটা সিংহের কেশরের মত লম্বা লম্বা লোমে আবৃত।

যানাযায়-এই দ্বীপে যখন পর্তুগীজ জলদস্যুরা থাকতো-তারাই তাদের দেশ থেকে এই বিরল প্রজাতির কুকুর এখানে নিয়ে এসেছিল-যার বংশধরদের বিচরণ এখনো বিদ্যমান।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।