আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কর্পোরেট মোবাইল কোম্পানী: কী করছে, কীভাবে করছে

মুহূর্তে যা কিছু বিনাশী...তার অন্তর্দহনে আজো আমি নির্বিকার

বেশ কয়েকদিন আগে জানা যায় অবৈধ ভি ও আই পি সংযোগ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয় বাঙলাদেশের শীর্ষস্থানীয় মোবাইল কোম্পানীগুলোকে। খবরটি প্রকাশের পর আমরা জেনে যাই আমাদের দেশের শত শত কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকা এ মোবাইল কোম্পানীগুলোর আসল চরিত্র। সরকারের পক্ষ থেকে একশ দেড়শ কোটি টাকা জরিমানা করে এদের ছেড়ে দেয়া হলে, স্বভাবতই আমাদের মনে দুটো প্রশ্নের উদয় হয়। এক; দৈনিক কতো কোটি টাকা উপার্জন করলে এতো বিশাল অঙ্কের অর্থ জরিমানা দিতে এতোটুকু প্রশ্ন তুলেনি মোবাইল কোম্পানীগুলো। দুই; এভাবে জরিমানা নিয়ে ছেড়ে দিয়ে সরকার কোন স্বার্থে, কিসের লোভে বিষয়টির সঠিক তদন্তকে পাশ কাটিয়ে গেলো।

এ বিষয়গুলো জনগণের কাছে মোটেই পরিস্কার নয় এবং সরকারও এ বেনিয়া কোম্পানীগুলোর বিষয়ে যতোটা সম্ভব “চেপে যাওয়ার” চেষ্টা করেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রভুত কল্যানের ছোঁয়াতে দেশ এগিয়ে যাবে এ প্রত্যাশা প্রতিটি দেশপ্রেমিক নাগরিকের। কিন্তু টেলিযোগাযোগের নামে যে আমাদের দেশে সাম্রাজ্যবাদের যে স্থাপনা গড়ে উঠেছে, তা বর্তমানে দেশের সাংস্কৃতিক এমনকি মৌলিক স্বাধীনতাকেও গ্রাস করছে। ১৯৯৬ সালের শেষের দিকে বাঙলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাতে প্রথম বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ফোন বিনিয়োগ করে। বর্তমানে বাঙলাদেশে আনুমানিক যে সাত মিলিয়ন[১] মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী রয়েছে, তার সূচনা কিন্তু ঘটেছিলো সেই সময় থেকেই।

তবে মজার বিষয় হলো গ্রামীন ফোন প্রাথমিক সময়ে যে লোগো নিয়ে বাঙলাদেশে তাদের ব্যবসা শুরু করেছিলো, দীর্ঘ প্রায় ১২ বছরে তাদের ব্যবসায়িক আচরনের সঙ্গে তাদের লোগোটিও বদলে যায়। লাল সবুজের লোগো বদলে চলে আসে নরওয়ে ভিত্তিক টেলিশিল্পপ্রতিষ্ঠান টেলিনোর এর লোগোটি। ফুটে ওঠে বেনিয়াদের পরিচয়। বাঙলাদেশে তাদের ব্যবসার সূচকটি এতোটাই ঊর্ধ্বমুখী যে, গ্রামীণ ফোনকে বর্তমানে “টেলিনোর মুকুটে হীরার পালক”[২] বলা হয়ে থাকে। অন্যান্য মোবাইল অপারেটরদের ক্ষেত্রেও একই সত্য প্রযোজ্য।

আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে মাত্র ১ মাসে বাঙলাদেশের মোবাইল কোম্পানীগুলো তাদের মুনাফা বাড়িয়েছে ৪ গুন। এভাবে প্রতিদিন শতকোটি কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। কেবল কর্পোরেট বাণিজ্যই নয়; তার সঙ্গে চলছে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন যার অন্যতম নজির টিএসসি’র সঙ্গে গ্রামীণ ফোনের কালো চুক্তি করার ঔদ্ধত্য, যা পরবর্তীতে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের আন্দোলনে প্রশাসন বাতিল করতে বাধ্য হয়। কর্পোরেট বাণিজ্য যদি দেশের স্বার্থ রক্ষা করে করা হতো তাহলে হয়তো সমীকরণ অন্যরকম হতে পারতো, কিন্তু পুঁজি কেন্দ্রীক যে মোবাইল ফোনের ব্যবসা জমে উঠেছিলো, তা আজ আমাদের মেধা, মনন আর সংস্কৃতিকেও ব্যবহার করছে তাদের ব্যবসার স্বার্থে। তাই এদের প্রতিহত করা আবশ্যক, কেননা আমরাই আবহমান বাঙালি সংস্কৃতির উত্তরাধিকারী।

তথ্যসূত্র: [১]: প্রতিযোগিতামূলক বিদেশী বিনিয়োগ ও বাঙলাদেশ প্রেক্ষাপট [২]: টেলিনোর ইনসাইড কেইস ২০০৪

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.