আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিডিআরের স্বজনদের বিডিআরদের সাথে সাক্ষাৎ এবং একটি কাকতালীয় সংবাদ

সুন্দর সমর

আজ পিলখানার বাইরে তীর্থের কাক বা ঝড়ে পড়া বকের মতো দাড়িয়ে থাকা কয়েকজন ভাগ্যবান স্বজন বিডিআর জওয়ানদের সাথে সাক্ষাৎ করার সুযোগ পেয়েছে। আর একটি বাংলা ওয়েব সাইটে খবরটি এসছে এ ভাবে: সদর দপ্তরের ভেতরে থাকা বিডিআর জওয়ানদের হাজারো স্বজন ঝিগাতলা গেটে ভিড় করে আজও। জওয়ানদের সঙ্গে স্বজনদের সাক্ষাতের জন্য তাদের পরিবারের সদস্যদের তালিকা করতে মাইকিং করে দায়িত্বরত সেনা সদস্যরা। গেটের সামনে ভিড় না করে লাইনে দাঁড়িয়ে ভেতরে ঢোকার টোকেন নিতে বলেন তারা। এর পর সাক্ষাতের জন্য ২৪৫ জনের তালিকা করা হলেও ৪০ জনকে টোকেন দেয়া হয়।

শেষ পর্যন্ত দুই দফায় মোট ১২টি পরিবারের সদস্যরা সাক্ষাতের সুযোগ পায় বলে জানান কর্তব্যরত সেনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন তৌহিদ। তিনি বলেন, সকালে আমাদের কাছে আসা দলের ১০ জনের মধ্যে প্রথমে সাতজনকে দেখা করানো হয়েছে। দ্বিতীয় দলের ১০ জনকে অপেক্ষা করতে বলা হয়। তাদেরও আজকে দেখা করার সুযোগ দেয়া হবে। দেখা করে ফিরে এসে বিডিআর জওয়ানদের স্বজনরা সাংবাদিকদের জানান, ভেতরে থাকা আমাদের স্বজনদের সঙ্গে মুখোমুখি দেখা করানো হয়েছে।

তাদের সঙ্গে সাংসারিক নানা দিক নিয়ে কথা হয়েছে। তারা ভাল আছে বলে জানান এ সব সাক্ষাৎকারী। গতকাল নয়, আগামি কালও নয় আজই তাদের এই দেখা করার সুযোগ কেনও দেয়া হল? এক বন্ধুকে সে প্রশ্ন করতেই তিনি কমপিউটার খুটখাট করে নিয়ে এলেন আনন্দবাজারে প্রকাশিত আজকের একটি খবর। 'বেপাত্তা’ বিডিআরদের পরিবারও ভিটেছাড়া ওঁরা এখন শুধুই উদ্বাস্তু। তল্পিতল্পা নিয়ে রাস্তায় বসে থাকা পরিবারটার পরিচয় জানা হল না।

জেনেই বা কী লাভ? কোনও এক বিডিআর রক্ষীর পরিবার বলে কখনও লোকে চিনত ওঁদের। এখন চেনে না। পিলখানায় বিডিআর সদর দফতরে বিদ্রোহ থামার পরে আবাসিক রক্ষীদের পরিবারকে ব্যারাক থেকে রাস্তায় বার করে দিয়েছিল সেনা। তার পর বিডিআরের সব রক্ষীকে সদর দফতরে কাজে যোগ দিতে বলেছিল। পরিবারগুলো রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেও মাথা গোঁজার জায়গা পায়নি।

ব্যারাকে জায়গা না পেয়ে যাঁরা ভাড়াবাড়িতে থাকতেন, তাঁদেরও পত্রপাঠ বাড়িওয়ালা উঠিয়ে দিয়েছেন। পিলখানা-গণহত্যার তদন্ত চলছে। কে বাড়িতে সেনা-পুলিশের ঝামেলা চায়? অগত্যা ওঁদের নামতে হেয়ছে রাস্তায়। বসে-দাড়িয়ে ঘেঁষাঘেঁষি অজস্র মুখ। রাতের বেলাটা কারও বাড়ির উঠোন বা সিড়ির তলায় হাতেপায়ে ধরে কাটানো।

সকাল হতে না হতেই আবার ফুটপাথ। হাতে টাকাপয়সাও নেই। বিদ্রোহের জেরে এ মাসে বিডিআরে মাইনেই হয়নি। অনেক পরিবারে আবার মাধ্যমিক পরীক্ষাথর্ী রেয়ছেন। কিন্তু ভবিতব্যই তো এখন আরও বড় পরীক্ষায়! পরিবারের রোজগেরে লোকটারও কোনও খবর নেই এ মাসের ১ তারিখে কাজে যোগ দেওয়ার পর থেকে।

বিদ্রোহের পরের দিন, ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানার ব্যারাকের ফটকে ফটকে বিডিআর অফিসারদের আত্মীয়দের কান্না দেখেছিলাম। হুবহু সেই ছবিই এখন দেখছি ব্যারাকের চারধারে। বিডিআরের যে হাজার সাতেক রক্ষী সদর দফতরে কাজে ফিরেছেন, এখনও পর্যন্ত তাঁদের কোনও খবর বাইরে আসেনি। এই ন’দিনে পরিবারের লোকেরা তাঁদের চিঠি-ফোন কিছুই পাননি। এমনিতেই ২ ও ৩ তারিখ রাতে ব্যারাকের ভিতরে গুলি চলার গুজব ছিড়েয়ছিল।

এর পর কাজে যোগ দেওয়া বিডিআর কর্মীদের কেয়ক জনকে গ্রেফতার ও কেয়ক জনকে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হেয়ছে বলে সরকারি সূত্রে খবর আসার পরে সেই গুজব বদলে গিয়েছে মাত্রাছাড়া আতঙ্কে। ফলে যত দিন যাচ্ছে, তত ভিড় বাড়ছে ব্যারাকের বাইরে। সেনা-পুলিশ অফিসার দেখলেই তাঁদের পা জিড়েয় আছাড়ি-পিছাড়ি করে কাঁদছেন মহিলারা। বিডিআরের নতুন ডিজি িব্রগেডিয়ার মইনুল হোসেন অবশ্য জানিয়েছেন, যে রক্ষীরা সদর দফতরে ‘রিপোর্ট করেছেন’, তাঁরা ভাল আছেন। কিন্তু কেউ তাতে আশ্বস্ত হচ্ছেন না।

কুমিল্লার দেবীদ্বার থেকে আসা স্কুলছাত্রী লাকি আক্তার শিরিন গত দু’দিন ধরে ব্যারাকের সামনে ঠায় দাড়িয়ে। তার বাবা, হাবিলদার আব্দুল মোমিনের খবর এখনও পায়নি। ১ বছর বয়সে মা-হারা শিরিন তার কাকার মৃত্যুসংবাদটাও বাবাকে দিতে চায়। সে সুযোগও মেলেনি। সদর দফতরের বাইরে চিঠির একটা বাক্স অবশ্য বসেছে, তবে সেটার ‘কাজ’ আলাদা।

ডিজি মইনুল হোসেন বিডিআর রক্ষীদের পরিবারবর্গকে বলেছেন, “ভিতরে চিঠি পাঠিয়ে ওঁদের বলুন, বিদ্রোহের সময় যা দেখেছেন, কতOর্পক্ষকে জানাতে। ” সে দিন ব্যারাকে হাজির রক্ষীদের সাহায্যে দোষীদের চিিহ্নত করার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি। যদিও সরকার, সেনাবাহিনী ও পুলিশের অপরাধদমন শাখার তিনটে আলাদা কমিটি বিডিআর-বিদ্রোহের তদন্ত চালিয়ে এখনও কোনও রিপোর্ট দিতে পারেনি। আগামিকাল ঢাকায় আসছে স্কটল্যাণ্ড ইয়ার্ডের চার সদস্যের দল। এ দিকে, গতকাল সকালে পিলখানার ৪৪ নম্বর ব্যারাকের বাথরুমে এক সুবেদারের ঝুলন্ত দেহ মেলে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সেনা কর্তা জানিয়েছেন, বিদ্রোহের ব্যাপারে ওই রক্ষীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হেয়ছিল। সম্ভবত সেই চাপেই তিনি আত্মহত্যা করেন। সব চেয়ে আশ্চর্য লাগছে আবার সেই দমচাপা আবহটা ফিরে আসায়। বিদ্রোহ মিটে যাওয়ার পর দু’তিন দিন সাংবাদিকদের সেনা-প্রহরায় সদর দফতরের ভিতরে নিয়ে যাওয়া হেয়ছিল। এখন তা-ও বন্ধ।

সরকারেরও মুখে কুলুপ। আর বাইরে উৎকিণ্ঠত কেয়কশো চোখ। পিলখানা এখন রোজই ২৬ ফেব্রুয়ারি দেখে!' ( http://www.anandabazar.com/11bdesh1.htm )

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.