আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সুইসাইড নোট

অর্থ নয়, কীর্তি নয়, সচ্ছলতা নয়, আরো এক বিপন্ন বিস্ময় আমার রক্তের ভিতর খেলা করে আমাকে ক্লান্ত করে... ক্লান্ত করে...

থই থই অন্ধকার নামে হৃদয়ের পড়ে থাকা উঠোন জুড়ে। নিথর উঠোনকে শুধাই, ও উঠোন বলতো কতোদিন তোমার বুকে পড়েনি তার পদধূলি ? মনে নেই। কিন্তু ঢের তো মনে রেখেছ এক জোড়া বাদামি নয়ন আর সরল রেখার মতো সোজা ভ্রু। মুহূর্তের জন্যও তো ভোলনি সেই রাগের মুহূর্তে রক্তাভ হওয়া কর্ণযুগল। হায় হৃদয় ! তুমি কি ভুলতে পারোনা সেপ্টেম্বরকে ? সেপ্টেম্বর মানে তোমার পরবাসী হওয়ার দিন, তোমার স্বপ্নের পথে গমনের দিন।

গমন মানে কি একেবারেই চলে যাওয়া মানসী ? ভুলে যাওয়া মানে কি একেবারেই বিস্মৃত হওয়া? হয়তোবা। তা না হলে তুমি কেমন করে ভুলে গেলে ওই সমান্তরাল রেলের পাশে ধূলো ওড়ানো মেঠোপথ। কেমন করে ভুলে গেলে কাঁঠালচাঁপার গন্ধ, হেমন্তের সোনা ধান, নবান্ন উৎসব,শীতের পিঠা,খেজুর রস, বাসন্তী উৎসব, বৈশাখী মেলা...। কেমন করে বিস্মৃত হলে ইশকুলের ওই শিশির মাখানো বকুলতলা ! কখনো কি মনে পড়ে সোনামন, ওই নদীটার কথা। এই যে এইখানে, বুকের গহীনে যার অবস্হান।

একদা যার জঠর জুড়ে ছিল দুকূল ছাপানো ঢেউ, ছিল নিঃসীম নাব্যতা- যেদিন তুমি ছিলে। নদী আজ খটখটে শুকনো। নদী আজ মুমূর্ষু। শুনে যাও ওই নদীর কাছে, কতোদিন তার বুকে ওঠেনি জলতরঙ্গ ! কতোদিন তার বুকে ভাসেনি স্বপ্নভেলা ! দেখে যাও ও অন্তর্লীনা, তোমার ফেলে যাওয়া স্মৃতির চিতায় কতোটা দহিত হই ! দুচোখে অথই নদী জাগিয়ে কতোটা পথচাওয়া প্রহর গুনি! একবার শুধু বলে যাও,'' ভালোবাসা কারে কয়,সে কি শুধুই যাতনাময় ?'' আমি তো মেঘ চিনতাম না, বৃষ্টি চিনতাম না। তুমি আমায় বৃষ্টি চিনিয়েছ, পূর্ণিমা চিনিয়েছ - চিনিয়েছ দুঃখ।

আর চিনিয়েছ কান্নার রঙ, বেদনার নীল নীল বসতভিটা। তুমি শিখিয়েছ বিরহ যাপন,শিখিয়েছ ক্রন্দন। আজ কেবল অষ্টপ্রহর স্মৃতি হাতড়ানো । কেবলই দূরের বাঁশি শ্রবণ আর চাঁদের পটে প্রিয় মুখ অংকন। দোহায় লাগে ও বাশরী, দোহায় লাগে ও শশী ! তোমরা আর আমায় পিছু ডেকনা, আর মায়াডোরে বেঁধনা।

একটু অবসর দাও গতানুগতিকতায় গা ভাসানোর । বধির সে বাশরী, বধির সে চাঁদ শোনেনা কিছুই। বারংবার শুধু আমায় স্মৃতিঘরের বাসিন্দা বানিয়ে দেয়। আর আমি সে ঘরের বাতায়ন পর্দা সরিয়ে অপলক চেয়ে থাকি একটা ফর্সা গোলগাল মুখের দিকে। কাজল কালো হরিণী নয়ন নয়, গোলাপের পাপড়িতূল্য ঠোঁট নয়, শাওন মেঘের মতো কুন্তলরাশিও নয়।

তবে কী এমন ভালোলাগায় চেয়ে রই নিষ্পলক? তবে কী এমন সৌন্দর্যের ধারায় অবগাহন করি ? জানি না। জানি না তোমা মাঝে কী এমন ভালোলাগা লুক্কায়িত যার খাদে পড়ে দিশা হারিয়েছিল শা,ম,স...। জানি না কোন সৌন্দর্য কিরণে অন্ধ হয়ে জীবনের পথ হারিয়ে ফেলেছে বন্ধুবর সন্জু। বড় বিস্ময় জাগে গো স্বপ্নকন্যা , যখন দেখি সন্জুও আজ তোমার তরে প্রতীক্ষিত প্রহর গোনে, শূণ্যতার দামে বিষণ্নতা খরিদ করে ! হায় মানসী ! হায় ভালোবাসা ! তুমি আর কতোকাল ঊন্মনা রবে ? তোমার উপেক্ষা দেখে দেখে ঝরে গেল সবগুলো ক্যালেন্ডারের পৃষ্টা। তোমার উদাসীনতা দেখে দেখে নক্ষত্রের পতন ঘটল সাদামাটা মর্ত্যে।

যেনবা তোমার বিরহেই আজ দুচোখের শিশিরগুলো ক্রমাগত পতনশীল ! তবুও তুমি নীরব। তবুও তুমি ঠিকানাবিহীন। তাই মেঘকে বলি ও মেঘ, তুমি একবারের জন্য দূত হওনা ! মানসীর কানে কানে বলো না আমার বিরহগাথা। বাতাসকে বলি ,ও বাতাস, আমার বার্তাখানি পৌঁছে দাওনা মানসীর দুয়ারে! আমি যে আজো পুরনো বন্দরে পানসি ভিড়াই। আর মনে মনে যেনবা অস্ফুট উচ্চারণে বলি - ওগো সুদূরিকা, আমার সকল নিয়ে বসে আছি।

তুমি এসো, ফিরে এসো... । উহ ! আর পরছি না ! অক্ষি গোলকে প্রসব বেদনা উঠেছে বিন্দু বিন্দু শিশির জন্মাবার। কী আর লিখব গো হৃৎময়ূখ ? এর চেয়ে অধিক কী লেখা যায় সুইসাইড নোটে ?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।