আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অরক্ষিত মানুষের পাশে দাঁড়ান



আমার কেন জানি মনে হচ্ছে , পুরো দেশটাই অরক্ষিত। পিলখানায় নারকীয় হত্যাকান্ডের পর পুরো দেশই উদ্বিগ্ন। কেউ জানে না কি হচ্ছে, কি হতে যাচ্ছে। 'অপারেশন রেবেল হান্ট' চলছে। দেশবাসী চান কোন নিরপরাধ যেন হান্টিং এর শিকার না হন।

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, বহিরাগত একটা শক্তির প্রচ্ছন্ন ছায়ায় ঘটেছে ২৫ ফেব্রুয়ারির ঘটনা। এরা কারা ? এই অস্ত্র এলো কোত্থেকে ? কারা চালালো এই অস্ত্র ? বিরোধী দলের অংশগ্রহণে প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ। এমনটিই হওয়ার কথা। জাতীয় সংসদ জাতির আশা-আকাংখার প্রাণবিন্দু। আর সাংসদরা তাদের যোগ্য প্রতিনিধি।

জাতীয় প্রতিনিধিরা জাতির বিবেকের পক্ষে কথা বলবেন সেটাই নিয়ম। যুক্তিতর্ক হবে, সিদ্ধান্ত হবে। জাতি দেখবে মাননীয় এমপিরা জাতীয় ইস্যু নিয়ে কথা বলছেন। প্রজন্ম জানবে তাদের গন্তব্যের কথা। তাদের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থার কথা।

এবারের একুশে পালিত হয়েছে একটি ভিন্ন আবহে। এই একুশের চেতনা সামনে রেখে দেশের আপামর মানুষ বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই। এই প্রজন্মের তরুণ-তরুণীরা বলেছে, ঘাতক রাজাকার মুক্ত বাংলাদেশ চাই। জাতি যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ তখন আমরা কিছু আস্ফালনও লক্ষ্য করছি। জঙ্গি মৌলবাদী শক্তির মদদদাতা কিছু তথাকথিত জ্ঞানপাপী বলছেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেই দেখুক না।

’ বেশ বড় ধরনের ধমক তাদের কথাবার্তায়। এরা এই শক্তি পাচ্ছেন কোথা থেকে? তারা কি এখনও জাতির বিরুদ্ধে অবস্খান নিতে চান? যেমন করে একাত্তর সালে নিয়েছিলেন? স্বাধীন একটি রাষ্ট্রে আইনানুযায়ী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হতেই পারে। এতে বাধা দেয়ার কোন কারণ আছে বলে আমি মনে করি না। যারা এই বিচারের বিরুদ্ধে হুঙ্কার দিতে চান তাদের চিনে রাখা দরকার। এরা গত সাঁইত্রিশ বছর বিভিন্ন তমদ্দুনের থলেতে লুকিয়ে ছিলেন।

নিজে ধার্মিক নন, অথচ ধর্মের নামে যারা রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চান তাদের ধ্বজা ধরেছেন বিভিন্ন সময়ে। হীন স্বার্থ হাসিল করেছেন বিভিন্ন সরকারের কাছ থেকেও। এই প্রজন্ম আজ ঠিকই বলছে, জাতি বিপুল ভোটের মাধ্যমে বর্তমান ক্ষমাতসীনদের সেই রায় দিয়েছে। ম্যান্ডেট দিয়েছে যুদ্ধাপরাধী খুনিদের বিচার করার। ভেবে অবাক হতে হয়, এসব বর্ণচোরা তস্কররা এখনও লুকিয়ে আছে এই সমাজে।

যারা বাংলাদেশের ইতিহাসকে পাল্টে দিতে চায়। যারা জাতির জনককে অবজ্ঞা করার ধৃষ্টতা দেখায়। এদেরই একজন সম্প্রতি চাকরিচ্যুত তথ্য সচিব আ. ত. ম ফজলুল করিম। যিনি কবি আবু করিম নামেই পরিচিত। তিনি এক সময় বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

ছিলেন জাসদের মুখপাত্র দৈনিক গণকণ্ঠের সঙ্গেও সম্পৃক্ত। এরপর নিজেকে ঢেকে রেখেছেন। তার মন নতজানু হয়েছে ক্রমশ মৌলবাদী ডানপন্থিদের আরাধনায়। তারই বহির্প্রকাশ ঘটিয়েছেন তিনি তার কবিতায়। কটাক্ষ করেছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে।

তার অবুঝ শিশু রাসেলকেও। বাংলা কবিতার মাঠের একজন শব্দ শ্রমিক হিসেবে স্পষ্ট বলে দিতে পারি আবু করিম যে কবিতাটি লিখেছেন, তা পাঠে আমার মনে হয়েছে এটা আদৌ কোন কবিতা নয়। একটি পরিশুদ্ধ কবিতায় উপমা, উৎপ্রেক্ষা, চিত্রকল্প যা থাকা দরকার এর এক শতাংশও নেই এই কবিতাটিতে। নিছক কটাক্ষ এবং ব্যঙ্গাত্মক শব্দের পরিমণ্ডলেই বেড়ে উঠেছে তার এই কথিত কবিতাটি। আবু করিমকে সবিনয়ে প্রশ্ন করি, বঙ্গবু শেখ মুজিব যদি এই জাতির মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্ব না দিতেন তবে আপনি কি এই স্বাধীন দেশের ‘সচিব’ পদটি পেতেন? অতএব জাতির স্খপতি, জাতির জনকের প্রতি অবজ্ঞা তো নিমকহারামীরই শামিল।

একজন ‘কবি’ দাবিদার হয়ে আপনি এই কাজটি করতে পারলেন? এই আপনার কাব্য রুচি? দুই. একটি দেশের উন্নয়নে প্রতিটি মানুষের ভমিকা অপরিসীম। সে জন রাজনীতিকই হোন, আর আমজনতাই হোন। সরকারি দলের ভমিকা যেমন গুরুত্বপর্ণ তেমনি গুরুত্বপর্ণ বিরোধীদলের ভূমিকাও। সম্প্রতি সেই কথাটি আবার স্মরণ করিয়ে দিলেন ভারতীয় লোকসভার স্পীকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। তিনি নবীন এমপিদের একটি ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামে যোগ দিতে বাংলাদেশে এসেছিলেন।

তিনি বলেছেন, বিরোধীদলকে সব সময় সৃজনশীল বিরোধিতার ভমিকায় থাকতে হয়। বিরোধিতার খাতিরে বিরোধিতা করার মানসিকতা ও প্রথা বাদ দিতে হবে। মনে রাখতে হবে দেশের স্বার্থই সবচেয়ে প্রধান। এই প্রসঙ্গে একটি কথা স্মরণ করা প্রয়োজন। চারদলীয় জোট ২০০৬ সালে যখন ক্ষমতা ত্যাগের জন্য প্রস্তুত হলো তখন তারা তাদের চারপাশে তৈরি করেছিল এক ধরনের ‘আলীবাবার’ দরজা।

যেমনটি তারা চেয়েছিল তেমনটি চিচিং ফাঁক বললেই যেন তা তাদের অনুকলে প্রসন্ন হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান মন:পুত না হওয়ায় তারা শেষ পর্যন্ত তাদের মনোনীত রাষ্ট্রপতিকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করে। দোহাই দেয় তারা সংবিধান, গণতন্ত্র এবং রাষ্ট্রীয় জনমানসের। আসলে সবই ছিল হীন মানসিকতার জালে বোনা। ফলে বিএনপি নামক দলটি ব্যাপকভাবে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

এমনকি তাদের থানা, জেলা পর্যায়ের কমিটিগুলোও দখলদারদের কবলে পড়ে মহা রাক্ষসে পরিণত হয়। সম্প্রতি বিএনপি তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে যে মতবিনিময় করেছে সেসব চিত্র দেখে খুব স্পষ্টই জানা যাচ্ছে কেন্দ্রীয় নেতারা তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কেমন বৈরী আচরণ করেছিলেন। কথাগুলো এ জন্য বললাম যে, এই হচ্ছে বিএনপির ‘দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী’ চেতনার স্বরূপ। যাদের একটি পক্ষ এখনও বাংলাদেশে ডানপন্থি মৌলবাদী চক্রকে নেপথ্য মদদ দিয়ে যাচ্ছে। যারা এখনও একাত্তরের পরাজিত রাজাকার চক্রের সঙ্গে গাটছাড়া বিনষ্ট করার জন্য প্রস্তুত নয়।

বর্তমান সরকারের ভাল কাজগুলোকে সাপোর্ট না দিতে পারলেও গঠনমূলক সমালোচনা করার দায়িত্বটি নিতে পারে প্রধান বিরোধীদল। কারণ তারা জনগণের ম্যান্ডেট প্রত্যাশা করলে জনগণের স্বার্থের পক্ষে তাদের দাঁড়াতেই হবে। সে ক্ষেত্রে ট্রানজিট, টিফা ইত্যাদিকে উপলক্ষ না করে বরং দেশের বাণিজ্য, উন্নয়ন এবং প্রযুক্তির সেক্টরগুলোকে গতিশীল করার পক্ষেই বিরোধীদলের অবস্খান থাকা দরকার। এই লেখাটির শেষ পর্যায়ে এসে টিভি চ্যানেলে একটি বীভৎস সংবাদ দেখলাম। একই রাতে ঢাকার বিভিন্ন স্খানে ছিনতাই হয়েছে।

পঁয়ত্রিশ জনেরও বেশি আহত হয়েছে। ছিনতাইকারীরা কুপিয়েছে নিরীহ মানুষদের। টিভি রিপোর্টে দেখানো হচ্ছে, টহলরত পুলিশবাহিনী ঝিমুচ্ছে ভ্যানে বসে। দেশের আইনশৃখলা পরিস্খিতি ফার্স্ট প্রায়োরিটি হওয়া উচিত। সে কথা দুই স্বরাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রীই বলছেন বারবার।

তারপরও দেশে চুরি, ডাকাতি, খুন, রাহাজানি বেড়েই চলেছে। এ বিষয়ে সরকারের আরও কঠোর হওয়া উচিত। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, পথচারীরাও যদি নিরাপদ না থাকতে পারেন তাহলে তো পুরো দেশই অরক্ষিত। এর শেষ কোথায় ? (সংযোজিত ) নিউইয়র্ক, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ --------------------------------------------------------------------- দৈনিক সংবাদ । ঢাকা।

২৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ শুক্রবার প্রকাশিত

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.