আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অরক্ষিত বাংলাদেশ-৩



ভজন সরকার আবারও আমার সেই বন্ধুটির টেলিফোন , কানাডায় তার ভাগ্যে কি আছে তা জানার জন্যে অতি উৎসাহী । ব্যাকুল বন্ধুর আকুল জিজ্ঞাসা,‘‘ তুই না সেদিন বললি আমি অনেক কিছুই হইতে পারবো । সে সম্বন্ধে কিছু বল না শুনি ?’’ আমার এই মহাঘাউরা বন্ধুটি যে কিনা সুক্ষ্ণ যুক্তির নিক্তিতে পরখ করে তবেই সব কিছু বিশ্বাস করতো একদিন , সে আমার এই ব্যঙ্গোক্তিটিকে বিশ্বাস করছে দেইখ্যা আমি এক তীব্র দীর্ঘশ্বাস ফেললাম । বললাম ,‘ পারবি বন্ধু, সবই হইতে পারবি । এই দেখ না আমি লেখক হইছি ।

অনেকে কবি হইছে । আর আমার মত অনেকেই বছরে এক হালি করে বই ছাপাইয়া ফেলতাছে । আর তোর শ্বশুর বাড়ি যখন সংবাদপত্র অফিসের আশে পাশে , তখন সাংবাদিকতার বাতাস একটু হইলেও গায়ে লাগছে । ওই বাতাসটারে সুগন্ধি মাখাইয়া নিয়া আসবি । এখানে এসেই সাংবাদিক না হইলে, পত্রিকার সম্পাদক হইয়া যাবি ।

’’ আমার মহাযুক্তিবাদী বন্ধুটি ‘ধ্যুৎ তাই কি হয় ’ বললেও মনে হইলো কিঞ্চিৎ আশার আলো দেখলো । কণ্ঠে একটা গদগদ ভাব নিয়া কইলো,‘ তুই না এক সময় কইছোস যে, তুই ই- ম্যাগাজিনে লিখস । ওইটা আবার কি ?’’ ‘ ই-ই হউক , আর ঈ-ই হোক , সেইট্যা তোর বড় বিষয় না । বিষয়টা হইলো তুই কি হইছোস সেইটা। ’, আমি কইলাম ।

দরিদ্র মানুষের পক্ষে আজীবন লড়ে যাওয়া আমার বন্ধুটি নিজে দরিদ্র হওয়ার ভয়ে মহা ভাবনায় পড়ছে বুঝতে পারলাম । বললাম,‘ তুই তো পেটের চিন্তা করতাছিস, পেট চালাইবো মামু । মামু বাড়ি থাকবি । খাওন পড়ন সব পাবি । হাতে অফুরন্ত অবসর ।

খালি প্রতিভা বিকাশে ব্যস্ত থাকবি । আর বৌয়ের কথা চিন্তা করণের কোন দরকার নাই । আত্মীয় স্বজন যখন আছে পর-নিন্দা পরচর্চা কইরা সময় মহা আমুদে কেটে যাব। আর ভাবীর তো একটু গানবাজনার অভ্যেসও ছিলো । উনার জন্যে কানাডা তো অতি উর্ব্বর ভূমি ।

গান গাইতে গাইতে কাহিল হইবো কিন্তু শ্রোতারা কইবো‘ওয়ান মোর’ । আর বছর বছর দেশে গিয়া একখানা সিডি বাইর করতে পারবো । ফলটা কি দাঁড়াইলো ? প্রবাস জীবনের এক বছরের মধ্যেই সৃষ্টিশীলতায় জ্বলজ্বলে এক তারকা দম্পতি । ’’ আজীবন রাজনীতি করা আমার বন্ধুটির নিজের এইসব সম্ভাবনার কথা খুউব একটা মনে ধরলো বইল্যা ঠাউওর করা গেল না । আড়ে ঠাড়ে খালি রাজনীতির কথা জিগায় ।

আমি কইলাম ,‘ কানাডার রাজনীতিতে নিজে কতটুকু সুবিধে করতে পারবি সেটা বলা মুস্কিল । তবে বাংলাদেশের রাজনীতির ‘দাদাভাই’ না হইলেও‘ মিয়াভাই‘ হইতে পারবি সেটা এক শত ভাগ নিশ্চিত । ’’ বন্ধুটির পায়ের তলায় একটু কাঁদামাটি পড়ছে বইল্যা মনে হইলো এইবার । খরগোশের মত কান খাড়া কইরা আমার কথা শুনছে । আমি বললাম ,‘ তুই তো গাঁয়ের পোলা ।

বটতলায় যখন কেউ চুল কাটতে বসে , আশে পাশে যে রকম বিজ্ঞ মানুষের ভিড় সেই রকম এখানেও কোন দাওয়াতে কিংবা সমাবেশে যাবি , দেখবি আশে পাশে কত রাজনৈতিক পন্ডিত । বাংলাদেশে হেনো রাজনীতি নাই যে তেনারা করেন নাই । আর হেনো নেতা নাই তেনাদের সাথে খাতির নাই । মনে মনে ভাববি প্রধানমন্ত্রী এই ‘জিনিস’টারে কেনো এতদিন চেনেন নাই , সেই ব্যাপারে তীব্র আফসোস ! শুধু একজন হইলে কথা আছিল । এই রকম গন্ডায় গন্ডায় ,ডজনে ডজনে পাবি ।

আর সে তুলনায় তুই তো আসল জিনিস । লেঃজেঃ হোঃমোঃ এরশাদের ঠোলায় তোরে চিনছে , আর এই সব প্রবাসী রাজনীতিবিদেরা তো নস্যি । আমার কেনো জানি মনে হয় , তোর জন্যে এই মাঠটা এখনো খালি পইড়্যা আছে , বন্ধু । কত দিন থাকে সেইটাই কথা । সময় নষ্ট করণ ঠিক হইবো না !’’ বন্ধুটি ‘ইউরেকা ’ বইল্যা প্রকাশ্যে চিৎকার না দিলেও মনে মনে বঙ্কিম উল্লাসে পুলকিত হইছে এইটা সহজেই বোঝন গেলো ।

আমি তার দ্বিধার ঘরে আরেকটা পেরেক ঠোকার জন্যে বললাম ,‘ আরেকটা সম্ভাবনা ছিলো আজ থেকে দশ বছর আগে ,আমি যখন আসি তখন । তখন ভাবছিলাম , লোক বাড়বো ,সমস্যা বাড়বো ,হতাশাও বাড়বো । লোক জন অদৃষ্টে-অদৃশ্যে বিশ্বাসী হইয়া ধর্মকর্ম আকড়াইয়া ধরবো। ফলে ধর্মস্থান বাড়বো হু হু কইরা । তারপর ধর বাঙ্গালী যখন, নানা কুতুবের আগমন ,দলাদলি , কলহ বিবাদ তো আছেই ।

ফলে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানও গজাইয়া যাইবো গন্ডায় গন্ডায় । তাই এই লাইনে ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল সেইটা বুঝতে পারছিলাম । কিন্তু এখন সেই শূন্য স্থানটা পূরণ হইয়া গেছে মনে হয় । আর জীবনের শেষ চিকিৎসার মত শেষ উপদেশ একটা আছে ,সেইটাও বইল্যা ফেলি । আজকেও সময় বেশী নাই ।

দৌঁড়ের সময় হইয়া গ্যাছে এখনি কাজে যাইতে হইবো । ’ বন্ধুটি একটু ধান্ধায় পড়ছে মনে হইলো কাজে যাইতে হইবো শুনে । আমি কইলাম ,‘ এখানে সবাই কাজে যায় । ছাত্রজীবনে আকাশ ভাই অর্থ্যাৎ কমরেড অধ্যাপক এম,এম, আকাশের শ্রেনীতত্ত্ব ক্লাশের কথা মনে নাই ? কানাডা আইস্যা ভাববি, তখন থিউরি ক্লাশ করছিলাম আর এখন সেইটার প্র্যাকটিক্যাল করতাছি । সেটা মনে না থাকলেও কোন ক্ষতি নাই ।

মাধ্যমিক পরীক্ষায় শ্রমের মর্যাদা রচনা মুখস্থ কইরা পাশ করছিলি কিন্তু সেইটার ব্যবহারিক পরীক্ষা বাকী ছিলো মনে কইরা কাজ চালাইয়া যাবি । ’ এইবার বন্ধুটির ঘাউরামির পুরানো রোগ আবার দেখা দিলো বইল্যা মনে হইলো । হঠাৎ টেলিফোনের ওপার থেকে হতাশা আর ক্ষোভ মিশিয়ে খাঁটি ঢাকাইয়া ভাষায় বইল্যা উঠলো,‘ এইবার বুজছি । বৌয়ের ইজ্জত বাঁচাইতে গিয়া নিজের ইজ্জত খোয়াইতে হইবো । খ্যাতা পুড়ি তোর কানাডায় যাওয়া ।

হ্যালায় যুদ্ধেই যামু না । ’ টেলিফোন লাইনটা কেটে গিয়ে এক বিরক্তিকর একঘেয়ে শব্দ শ্রবনেন্দ্রিয় বেয়ে হৃদয়ের গভীরে ঢুকে গেলো । তার সাথে যোগ হলো চারদিকের ভয়াবহ নিস্তব্ধতা । এক ফালি মেঘ কোথা থেকে যেন নেমে আসলো আমার দুই চোখে । এক ফোঁটা জল গাল বেয়ে মুখে পরতেই এক নোনতা বিস্বাদে ছুঁয়ে গেলো মনে ।

এটা কী কান্না না, বৃষ্টি ? সেটাও বোঝা গেলো না। কারণ, আমি এখন বিভূঁই বিদেশে যুদ্ধরত এক সৈনিক । আমার তো ফেরার আর কোন পথ নেই । সময় নেই চোখের জল ফেলবারও । এখন সময় শুধু সামনে যাওয়ার ! Click This Link


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.