আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সত্যি উদ্ধার (২য় কিস্তি) মূল: ও. হেনরি ভাষান্তর: বিধান রিবেরু

সকল অন্ধকারের হোক অবসান

জিমি ছেলেটাকে আর পাত্তা না দিয়ে প্ল্যান্টার্স হোটেলে ওঠে। রুম ভাড়া নেয় রালফ ডি স্পেনসার নামে। ডেস্কে কেরাণিকে জিমি বলে, ‘এখানে এসেছি ব্যবসা করতে। এ শহরে জুতোর ব্যবসা কেমন চলবে?’ কেরাণি জিমির পোশাক আশাক আর ব্যবহার দেখে মুগ্ধ। কেরাণি ছোকরা নিজেই এলমোর শহরে তরুণদের মধ্যে ফ্যাশনের প্রতীক কিন্তু জিমিকে দেখে সে নিজের কমতিগুলো ধরতে পারছে।

জিমির পোশাক পড়ার ধরন দেখতে দেখতে কেরাণি সব প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। ‘হ্যা, এখানে জুতোর ব্যবসা ভালোই হবে। কারণ শুধু জুতো বিক্রি করে এরকম কোনো দোকান এখানে নেই। এ এলাকায় শুকনো মালপত্রের দোকান আর জেনারেল স্টোরেই জুতো বিক্রি হয়। এখানে সবকিছুর ব্যবসাই ভালো চলে।

মিস্টার স্পেনসার আপনি এলমোরে ব্যবসা শুরু করে এখানেই থাকতে শুরু করেন। এখানকার মানুষজনও বেশ মিশুক। ’ স্পেনসার ভাবে- কয়েকটা দিন কাটানো যাক, পরিবেশটা বোঝা দরকার। স্যুটকেস হাতে নিয়ে স্পেনসার রওনা দিলো ঘরের দিকে। কেরাণি স্যুটকেস বহনের জন্য কুলি দিতে চাইলে স্পেনসার তাতে বাধা দেয়।

সে বলে, নিজেই বহন করতে পারবে। ভারী, তাতে কী! রালফ স্পেনসার, ফিনিক্স পাখির মতো জন্ম নেয় জিমি ভ্যালেন্টাইনের ভস্ম থেকে। আগুন শিখার রেখে যাওয়া ভস্ম এবং পাশাপাশি প্রেম অঙ্কুর- এ দুটি নিয়ে এলমোরে জেঁকে বসে জিমি। জুতোর দোকান খোলে সে। ভালোভাবেই শুরু হয় ব্যবসা।

অনেককেই বন্ধু বানিয়ে ফেলে সে। এলমোরে পায় সামাজিক প্রতিষ্ঠা। হৃদয়ের ইচ্ছাও পূরণ হয়। আন্নাবেল অ্যাডামস-এর সঙ্গে দেখা করে স্পেনসার। যতদিন যায় ততোই আন্নাবেলের রূপ তাকে মুগ্ধ করতে থাকে।

এক বছরের মাথায় স্পেনসার আদায় করে সামাজিক সম্মান, প্রসারিত হয় তার ব্যবসা। শুধু তাই নয় আন্নাবেলের সঙ্গে বাগদান সম্পন্ন হয়; বাকি থাকে দুই সপ্তাহের মধ্যে বিয়ের অনুষ্ঠান। আন্নাবেলের বাবা অ্যাডামস সাধারণ মানুষ, ধীর-স্থির ও পরিশ্রমী ব্যাংকার- স্পেনসারকে মেয়ের জামাই হিসেবে সে গ্রহণ করে। আন্নাবেল স্পেনসারকে নিয়ে গর্ববোধ করে এবং সমানভাবে ভালোও বাসে। সবকিছু মিলিয়ে স্পেনসার আন্নাবেলের বাড়িতে ঘরের ছেলের মতো হয়ে যায়।

আন্নাবেলের বিবাহিত বড় বোনের বাড়িতেও তার যাতায়াত অবাধ হয়। একদিন স্পেনসার রূপী জিমি তার এক পুরনো বন্ধুকে চিঠি লেখে- সেন্ট লুইসের একটি নিরাপদ ঠিকানায়: প্রিয় পল, আগামী বুধবার ঠিক রাত নটায় লিটল রক-এ তুমি সুলিভানের বাড়িতে থাকবে। আমি চাই তুমি আমাকে একটু সাহায্য করো। উপহারস্বরূপ আমি তোমাকে আমার সরঞ্জামসহ স্যুটকেসটা দিতে চাই। আমি জানি এটা পেয়ে তুমি দারুণ খুশি হবে- হাজার খানেক ডলার দিয়েও তুমি এ জিনিস পাবে না।

জানো- আমি পুরনো কাজ ছেড়ে দিয়েছি- এক বছর আগে। এখন আমার একটা সুন্দর দোকান আছে। সৎ উপায়ে উপার্জনের চেষ্টা করছি। আর কিছুদিনের মধ্যেই আমি বিয়ে করতে যাচ্ছি পৃথিবীর সবচেয়ে চমৎকার একটি মেয়েকে। এটাই আসল জীবন- সহজ সরলভাবে বাঁচা।

এখন লাখ ডলারের বিনিময়েও অন্যের এক ডলার ধরবো না। বিয়ের পর এখানকার ব্যবসা বিক্রি করে চলে যাবো পশ্চিমের দিকে- যেখানে আমাকে কেউ চেনে না। তারা আমার অতীত নিয়ে ঘাটাঘাটিও করবে না। আমি তোমাকে বলছি বন্ধু, আমি এক পরীকে বিয়ে করতে যাচ্ছি। ও আমাকে প্রচন্ড ভালোবাসে।

তাই সারা পৃথিবী দিলেও আমি আর বাজে কাজ করবো না। সুলিভানের বাড়িতে তোমাকে যেন অবশ্যই দেখি। আমি যন্ত্রপাতিসহ একা আসছি। তোমার পুরনো বন্ধু জিমি জিমি যেদিন চিঠিটা লেখে তার পরদিন সোমবার রাতে বেন প্রাইস নিঃশব্দে পা রাখে এলমোর অঞ্চলে। সাধারণ বেশভূষা তার।

রাস্তার ধার ধরে হাঁটছে সে। এবং যা খুঁজছে তা পেয়েও যায় বেন। ওষুধের দোকান থেকে স্পেনসারের জুতোর দোকান- সবগুলো থেকে অপোকৃত নতুন দোকানের ওপরে লেখা রালফ ডি স্পেনসার; নামটির দিকে ভালো করে তাকায় বেন। ‘ব্যাংকারের মেয়েকে বিয়ে করতে যাচ্ছো জিমি?’ বেন নিজের মনে বিড়বিড় করে, ‘বিয়ে করছো ভালো, কিন্তু আমাকে না জানিয়েই ...!’ পরেরদিন জিমি নাস্তা সাড়ে এ্যাডামস পরিবারের সঙ্গে। সে লিটল রকে যাবে- বিয়ের স্যুট ও আন্নাবেলের জন্য কিছু সুন্দর জিনিস কেনার জন্য।

এবারই প্রথম এলমোর ছেড়ে বাইরের শহরে যাচ্ছে জিমি। এক বছর হয়ে গেছে, জিমি পুরনো পেশা ছেড়ে দিয়েছে। জিমি ভাবে, বেশ কৌশলেই সে পাড় পেয়ে গেছে। যাইহোক, নাস্তা শেষে পুরো পরিবার বেরুলো- এ্যাডামস, আন্নাবেল, জিমি এবং আন্নাবেলের বড় বোন এবং তার পাঁচ ও নয় বছরের দুই মেয়ে- সবার মধ্যেই একটা উৎসবের আমেজ। জিমিকে এগিয়ে দিতে সবাই আসে জিমির হোটেলে।

ওদেরকে দাঁড় করিয়ে জিমি দৌঁড়ে নিজের ঘর থেকে স্যুটকেসটা নিয়ে বেরোয়। এরপর সবাই মিলে যায় ব্যাংকে। সেখানে বাইরে অপো করছে ঘোড়া, গাড়ি ও ডোলফ গিবসন- জিমিকে রেল-রোড স্টেশন পর্যন্ত পৌঁছে দিতে। রওনা দেয়ার আগে জিমি অন্যান্যদের সঙ্গে ঢোকে ব্যাংকের ভেতর কারণ এ্যাডামসের ভাবী-জামাতার সব জায়গায় অবাধ যাতায়াত। ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারী সকলেই জিমিকে স্বাগত জানায়- মালিকের ভাবী-জামাতা বলে কথা! তাছাড়া জিমি দেখতে বেশ সুপুরুষ ও সুদর্শন যুবক।

জিমি মেঝেতে তার স্যুটকেস নামিয়ে রাখে। আনন্দ আর তারুণ্যের স্বাভাবিক উচ্ছাসে আন্নাবেল জিমির হ্যাট মাথায় দিয়ে স্যুটকেসটা উঠানোর চেষ্টা করে। ‘আমাকে কি ড্রামারদের মতো লাগছে?’ আন্নাবেল জিজ্ঞেস করে, ‘ওরে বাপরে, রালফ এর ভেতর কী? এতো ভারী! মনে হচ্ছে সোনার ইট দিয়ে ভরা। ’ ‘না ওটাতে অনেকগুলো নিকেলের ছাঁচ- বিভিন্ন নক্সার জুতো তৈরীর জন্য। ’ জিমি নির্বিকার থেকে বলে, ‘জিনিসগুলো ফিরিয়ে দেবো।

এগুলো জমিয়ে ট্রেনে করে পাঠানোর খরচ বাঁচাবো বলে ভেবেছিলাম। আজকাল একটু বেশী হিসেবী হয়ে গেছি। ’ এলমোর ব্যাংকে নতুন সিন্দুক ও ভোল্ট বসানো হয়েছে। ওক কাঠের রেলিঙের ভেতর জড়ো হয়েছে সবাই। এ্যাডামসের বেশ গর্ববোধ হচ্ছে, সে সবাইকে নতুন প্রযুক্তির ভোল্ট কাছে গিয়ে দেখার তাড়া দিচ্ছে।

ছোটো ভোল্টে তিনটি ইস্পাতের খিলি একটি হাতল দিয়েই খোলা যায়, এর সাথে একটা টাইম-লকও আছে। এ্যাডামস দারুণ উৎসাহ নিয়ে ভোল্টের খুটিনাটি স্পেনসারকে বলছে। স্পেনসার চুপচাপ শুনছে ঠিকই কিন্তু তার অতো আগ্রহ নেই। দুই মেয়ে, মে আর আগাথা, চকচকে ধাতু, মজার ঘড়ি-তালা, হাতল এসব দেখে ভালো মজাই পাচ্ছে। এদিকে, সবাই যখন ব্যস্ত তখন ব্যাংকের ভেতর ঢোকে বেন প্রাইস।

রেলিঙের বাইরে বেন অলস ঘোরাঘুরি করে একজায়গায় কনুইয়ে ভর দিয়ে দাঁড়ায়। ব্যাংক কাউন্টারের কর্মচারীকে সে আগেই বলে রেখেছে- সে ব্যাংকের কাজে আসেনি, সে এসেছে পরিচিত একজনের সঙ্গে দেখা করতে। হঠাৎ একটা নারী কণ্ঠের চিৎকার। সবাই চুপ হয়ে গেলো। বিষয়টা বুঝে উঠতে সবার কয়েক সেকেন্ড লাগে।

খেলতে খেলতে সবার অগোচরে বড় মেয়ে মে, ছোটো বোন আগাথাকে ভোল্টের ভেতর আটকে দিয়েছে। শুধু তাই না, এ্যাডামস যেভাবে দেখিয়েছে সেভাবেই নব ঘুরিয়ে মে বন্ধ করেছে ভোল্টের দরজা। বৃদ্ধ এ্যাডামস হায়হায় করে ওঠে। ভোল্টের নব ধরে টানাটানি করে। ‘না এ দরজা খোলা যাবে না।

কারণ এখনো ভোল্টের টাইম-লক সেট করা হয়নি আর কম্বিনেশনও ঠিক করা হয়নি। ’ এ্যাডামসের গলা কেপে ওঠে। আগাথার মা পাগলের মতো কান্না শুরু করে। (ক্রমশ....) (অনুবাদটি পুলিশ ক্রাইম ব্রাঞ্চের পত্রিকা ডিটেকটিভ-এ প্রকাশিত)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.