আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার সেই সাহসী সৈনিকেরা যারা সুন্দর আগামীর স্বপ্ন দেখায়



সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার সেই সাহসী সৈনিকেরা যারা সুন্দর আগামীর স্বপ্ন দেখায়- সৈয়দ মাহবুবুল আলম, এ শহরে এসেছিলাম শুধু দেখতে, কেন, কিসের মায়ায় মানুষ এখানে আকড়ে থাকে? আমি আসলে সিদ্ধানত্দ নিয়েই ছিলাম আমি গ্রামে ফিরে যাব। গ্রামের মাটি আমাকে টানে। সবার মতো আমিও যদি গ্রাম ছেড়ে শহরে থাকি, আর বলি গ্রামে ফিরে যাওয়া উচিত তাহলে গ্রামের উন্নতি কিভাবে হবে? আমি যার কথা লিখছি সে দেশের কোন বিখ্যাত কোন ব্যক্তি নয়। এ দেশের একজন সাধারণ মানুষ। যে ভালোবাসে এই দেশকে মন প্রাণ দিয়ে, স্বার্থহীনভাবে।

আর দেশের জন্য কিছু করার অদম্য ইচ্ছা তাঁকে তাড়িয়ে বেড়ায় সারাণ। আর সেই ইচ্ছাকে বাস্তবায়নের ল্যে সেই সাহসী সৈনিক ফিরে গেছে নিজের গ্রামে। শহরের চাকচিক্যময় চাকুরি বা নিজের জীবনের জন্য কিছু করার লোভ তাকে আটকিয়ে রাখতে পারেনি। উন্নয়নমূলক কাজ করতে এসে এ ধরনের কিছু সাহসী মানুষের সাথে পরিচিত হবার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। এই লেখার উদ্দেশ্য সেই মানুষদের নিয়ে যারা নিঃস্বার্থভাবে মানুষের জন্য কিছু করার ল্যে নিজেদের উৎসর্গ করেছেন।

প্রচার বিমূখ এ ধরনের লোকরা আমাদের পাশেই আছে। কিন্তু তাদের সহজে দেখতে পাওয়া যায় না। কেননা আপন প্রচারণার চাইতে কিছু করাই তাদের মূল ল্য। কিছু করার একাগ্রতায় মগ্ন এই মানুষগুলোর কাজকে আমরা কখনো পাগলামিও বলি। কারণ নিজের কথা চিন্তা না করে মানুষের জন্য কিছু করতে চায় বলেই আমরা তাদের বলি তারা পাগল।

হয়তো কখনো তা হেয় করে, কখনো ভালবেসে। কিন্তু তাদের এতে কিছুই আসে যায় না। তারা করেই যাচ্ছে আপন মনে আপন ভূবনে। তবে এ কথা সকলেই স্বীকার করি বা বিশ্বাস করি এ সকল লোকরা আমাদের দেশে আছে বলেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আর এ জাতীয় লোকের সংখ্যা দেশে যত বাড়বে আমরা ততই দ্রুত এগিয়ে যাব সমৃদ্ধির দিকে।

বেশ কয়েকদিন আগে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের আমন্ত্রণে চাপাইনবাবগঞ্জ গিয়েছিলাম তামাক বিরোধী কর্মশালা পরিচালনা করতে। বাস পৌছতে পৌছতে প্রায় ভোর ৪টা বেজে গিয়েছিল। বাসে বসে ভাবছিলাম এই অপরিচিত জায়গায় কি করবো? ঠিক এমন সময় দেখলাম আমন্ত্রণকারী তরুণরা আমাদের অপোয় দাঁড়িয়ে আছে। গেষ্ট হাউজে গিয়ে দেখলাম জায়গার স্বল্পতার জন্য যারা আগে ঢাকা থেকে গিয়েছে তারা তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে জেগে আমাদের ঘুমাবার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। কর্মশালার পর আমি ফিরে আসলাম রাতে কিন্তু সেই তরুণরা সারাদিন ব্লাড ডোনেশন ও ব্লাড ম্যাচিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আবার রওনা হয়েছে চাপাইনবাবগঞ্জ থেকে আরো দূর্গম এলাকায়।

না... এতে তাদের কোন লাভ নেই। তারা মানুষের জন্য কিছু করতে যায়। এই তরুণদের কেউ ডাক্তার, কেউ ছাত্র, কেউবা এনজিও কর্মকর্তা। নিজেদের কাজের বাইরে নিয়মিত এ কাজ করা তাদের আনন্দ। সমপ্রতি কয়েকজন তরুণের সাথে পরিচয় ঘটেছে যারা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করছে।

তাদের মাঝে দেখেছি নিজেদের পড়ালেখার পাশাপাশি তারা কিছু করছে বা করতে চাচ্ছে মানুষের কল্যাণে। কিছু করার চেষ্টা বা তাগিদ তাদের সব সময় তাড়িয়ে বেড়ায়। খুব ভালোলাগে যখন এই তরুণদের সাথে কথা বলি। তাদের কিছু করার আন্তরিকতা সত্যিই অনুপ্রেরণা দেয়। শুধু ঢাকায় নয় মফস্বল শহরগুলোতে এমন তরুণ আছে যারা বিভিন্ন সংগঠন বা নিজে চেষ্টা করছে কিছু করতে।

শত বাধার মাঝেও কিছু কিছু তরুণ এগিয়ে আসতে চেষ্টা করছে। হর হামেশা একটু ল্য করলে দেখবেন সহপাঠী বা বন্ধুর জীবন বাঁচাতে তরুণরা কিভাবে নেমে পড়েছে রাস্তায় অর্থ সংগ্রহের জন্য। অমিতকে বাচিয়ে রাখার জন্য আমাদের এই সমাজের মানুষরা এগিয়ে আসনি? অমিতকে বাঁচাতে রাস্তায়-দোকান-অফিসে সর্বত্র অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছে। বেশ কয়েক বছর আগে বি-বাড়িয়ায় ফাইভ ষ্টার কাবের কিছু তরুণকে দেখেছিলাম যারা নিয়মিত মানুষের সেবায় বিভিন্ন কাজ করছে। বিনামূল্যে চু শিবির পরিচালনা করা তাদের এ ধরনের একটি নিয়মিত কার্যক্রম।

গ্রামের অসংখ্য দরিদ্র রোগী নিয়মিত বিনামূল্যে তাদের থেকে সেবা পেয়ে আসছে। ঢাকায় তরুণদের অনেক সংগঠন আছে। এসব সংগঠনের মাধ্যমে তরুণরা নিয়মিত ধূমপান ও মাদক বিরোধী কাজ করছে, চু শিবির বা রক্তদান কর্মসূচি পরিচালনা করছে। এতে যেন কোন কান্তি নেই। বিরামহীন কাজ ... আর অসম্ভব ব্যস্ততা।

মানুষের জন্য কিছু করার নেশা তাদের তাড়াচ্ছে। একটু খুজে দেখলেই এ সকল সাহসী মানুষদের সাংবাদিক, শিল্পী, উন্নয়ন কর্মী, ব্যবসায়ী বা ডাক্তারী পেশাসহ বিভিন্ন পেশায় খুজে পাওয়া যাবে। দেশকে ভালোবাসা, মানুষকে ভালোবাসার সাহসী মানুষ। নিজের স্বার্থকে বড়ো করে না দেখে মানুষের কল্যাণকে বড়ো করে দেখা সাহসী মানুষ। তাদের সংখ্যা গুনে বলা যাবে না তবে, আমি বিশ্বাস করি তারা সংখ্যায় নিতান্ত কম নয়।

কয়েকজন উন্নয়নকর্মী বন্ধু আছে তাদের কাছে আমি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিষয় শিখেছি। তারা বলে, ''আমাদের দেশে ভালো মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি। তারপরও খারাপ মানুষগুলো এ ধরনের আধিপত্য বিস্তার করতে পারছে কারণ তারা সংঘবদ্ধ। সারাদেশের খারাপ লোকদের, একজন আর একজনের সাথে ঘনিষ্ট যোগাযোগ আছে। কিন্তু আমি হয়তো আমার পাশের ভালো মানুষটিকে আজো জানিনি।

আর যারা কল্যাণের চিন্তা করে, সে মানুষগুলো এমন সংঘবদ্ধও নয়। তাই আমাদের প্রয়োজন সংঘবদ্ধ হওয়া। যখনই আমরা সংঘবদ্ধ হবো আমরাও পারবো দেশের জন্য সহজে কিছু করতে। " আসলে এই সাহসী মানুষগুলোকে সহযোগিতা করা প্রয়োজন। প্রয়োজন তাদের উৎসাহ দেয়া।

নিজেদের কাজের মাঝেই আমরা তাদের সহযোগিতা করতে পারি। আমরা অনেকেই তাদের কাজের সমালোচনা করি। কিন্তু তাদের সহযোগিতার জন্য কতবার সাহয্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছি? আমরা যতবার আমাদের দেশের সমালোচনা করি। তার তুলনায় কতবার দেশের ভালো দিকগুলো বলি। আমাদের দেশের কি কোন ভালো দিক নেই? অনেক কিছুতে আমাদের শ্রেষ্টত্ব থাকতেও আমরা নিজেদের খারাপ দিকগুলো বলি।

আমাদের উচিত দেশের ভালো দিকগুলো তুলে ধরা। আমাদের ভালো দিকগুলো হবে আমাদের এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা। মাঝে মাঝে কষ্ট হয়, যখন দেখি মানুষ চিৎকার করে বক্তৃতা করে বলছে দেশের যুব সমাজ আজ অবয়ের শিকার। যুব সমাজ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আমি এই মানুষদের কথার প্রতিবাদে প্রথমেই বলতে চাই যে দেশে এ ধরনের সাহসী অনেক তরুণ আছে যাদের ইতিবাচক মানসিকতা নষ্ট হয়ে যায়নি।

এ তরুণদের সংখ্যা এক নয়, অগুনিত। আর যারা অবয়ের শিকার হয়েছে তাদের এই অবয়ের জন্য অগ্রজরা কি দায়ী নন? আপনারা কি তাদের ফেরাতে কোন চেষ্টা করেছেন? নিজেদের স্বার্থে তাদের ব্যবহার করেন নি? নিজের স্বার্থের চেয়ে বড়ো করে কতবার তাদের কথা ভেবেছেন বা কিছু করেছেন? তারা যখন হতাশায় অগ্রজ হিসেবে আজ যেখানে দাঁড়িয়ে সেখান থেকে কতটুকু করেছেন যাতে তারা হাতাশাগ্রস্ত না হয়। কিছূ বক্তব্য প্রদান ছাড়া, কতবার তাদের কাজের মূল্যায়ন করেছেন? আপনাদের অবয়ের কারণেই আমাদের তরুণরাও আজ অবয়ের শিকার হচ্ছে। এ অবয়ের জন্য আপনারা অগ্রজরাই বেশি দায়ী। নিজেদের কাঁদা ছোড়াছুড়ি আমাদের এমন এক অবস্থায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে যখন আমাদের ভালো দিকগুলো আড়ালে পড়ে গেছে।

নীতিনির্ধারকের ভূমিকায় থেকে আপনারা কতটুকু দিয়েছেন বা করেছেন যাতে তরুণরা এগিয়ে যাবে। আসলে অগ্রজদের খাটো করার কোন ইচ্ছে আমার নেই। শুধু একটি কথা বলতে চাই আমাদের সম্পদগুলো সুসংবদ্ধ করে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ আমাদের আছে। তার জন্য প্রয়োজন শুধু মানুষিকতার পরিবর্তন। নীতিনির্ধারক বা দিকনির্দেশকদের মাঝে কিছু লোক প্রয়োজন যারা সবকিছুর চাইতে গুরুত্ব দিতে পারবে দেশকে, দেশের স্বার্থকে।

নিজের সম্পর্ক বা স্বার্থ এখানে স্থান পাবে না, ঠিক সাহসী মানুষদের মতো। তবে আমার বিশ্বাস হয় একদিন সতিই আমাদের দেশের নীতিনির্ধারক বা দিকনির্দেশকদের মাঝে সাহসী মানুষরা স্থান করে নেবে। বিজ্ঞানের অগ্রগতির পাশাপাশি মিডিয়ার প্রসারে আমরাও ব্যস্ত হয়ে পড়েছি নিজেকে প্রচারে। এক টাকার বিষয় তুলে ধরতে খরচ করব দশ টাকা। তবুও চাই শ্রেষ্ঠত্ব।

নিজেকে চিনাতে, নিজের প্রসার বাড়াতে, নিজের জন্য কিছু করবো। আর তা যে করেই হোক। আগে নিজের কিছু হোক তারপর অন্যের জন্য কিছু করা যাবে। নিজের জন্য কিছু সংগ্রহের অফুরন্ত ুধা গ্রাস করছে আমাদের মন মানসিকতা। উন্নত দেশের আদলে সাজাতে হবে নিজেকে।

তাহলেই আমরা হবো সুখী। উন্নত হবার উম্মাদনা আমাদের চিরচারিত বাংলার মানুষদের গ্রাস করছে। আমরা ভুলে যাচ্ছি মানুষের পাশে মানুষ হিসেবে দাঁড়ানো, আতিথেয়তা, দুঃখী মানুষের জন্য নিজেকে সম্পৃক্ত করার অভ্যাসগুলো। সহজ সরল আর প্রাণবৎসল মানুষগুলোকে আমরা যন্ত্রদানবে পরিণত করছি। আমাদের অহংকার গ্রামগুলোর মানসিকতা ও সৌন্দর্যতাক নষ্ট করছি আমাদের তথাকথিত রাজনীতি ঢুকিয়ে দিয়ে।

তারপরও অকান্ত পরিশ্রম দিয়ে আমাদের স্বকিয়তাকে টিকিয়ে রেখেছে এই সাহসী মানুষগুলো। আমি নিজেও দেশের একজন সাধারণ তরুণ। আমরা যারা সাধারণ মানুষ তারা দেশ বলতে দল, ধর্ম, জাতি বা নিজেদের স্বার্থ দিয়ে বিবেচনা করি না। সরকারি বা বিরোধী দলের কোন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আমাদের প্রতিবাদের স্থান হয় চায়ের টেবিলে বা কোন পত্রিকার চিঠিপত্র কলামে। আমরা যতই চিৎকার করি আমাদের কণ্ঠস্বর কখনো পেঁৗছায় না অপর আর এক সাধারণ মানুষের কাছে।

শুধু শুনতে হয় বা দেখতে হয় তাদেরকে, যারা আমাদের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য রাজনীতি করছে। রাজনৈতিক দলের কাছে আমাদের পরিচয় দেশের জনগণ হিসেবে। আমরা দেশের হাজার রকমের সমস্যা প্রতিনিয়ত মোকাবেলা করি তারপরও দেশের নেতৃবর্গের অবিরত সমস্যা মোকাবেলার আশ্বাসে হাততালি দিয়ে আসছি। রাজনৈতিকদের অবিরত আশ্বাস আমাদের কান্ত করে তোলে। তারপরও স্বপ্ন দেখি/বিশ্বাস করি আমরা এগিয়ে যাবই।

আমাদের দেশ হবে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দেশ। সুখ, শান্তি আর ভালোবাসায় ভরপুর। এমন কোন দেশের কথা বললে বিশ্ব আমাদের কথাই বলবে। মানুষ স্বপ্ন দেখবে এদেশে এসে বসবাসের। বিজ্ঞানের কলকজ্বার অবিষ্কার বা তথাকথিত উন্নয়নের জন্য নয়।

এদেশের প্রতিটি মানুষ কাজ করবে একজন সত্যিকারের মানুষ হতে। আর আমার মতো সাধারণ মানুষদেরকে এ ধরনের স্বপ্ন দেখতে শেখায় ঐ সাহসী এবং সৎ মানুষগুলো, যারা বিশেষ কোন বিশেষণে বিশেষায়িত হওয়ার জন্য কাজ করে না শুধু মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করে। আসুন ঐ সাহসী মানুষগুলোর হাতকে শক্তিশালি করতে তাদের সহযোগিতা করি, তাদের উৎসাহ দিই। আর যারা সুন্দর চিন্তা করে, চিন্তা করে সমাজ ও মানুষের কল্যাণের, তাদের খুজে বের করি, একে অপরের সাথে নিজেদের সম্পৃক্ত করি। আমরা সাধারণ মানুষ ও সাহসী মানুষগুলোর সম্মিলিত চেষ্টা অবশ্যই এ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.