আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

“ভালবাসায় বদল (শেষ পর্ব)

"You may like a situation which is not good for you And You may dislike a situation which is good for you." (Al- Quran)

মুশফিকই প্রথম কথা বলে উঠে.. .. ঃ আপনারা তো কিপটা ? ঃ কেন কিপটা কেন? ঃ কিপটা না হলে কেউ বরই এর বদলে বরই এর বিচি দেয় !!! দিলেনই যখন বরই দিলেই পারতেন.. .. মেয়ে দুটি তখন আম খাচ্ছিল... ঃ আচ্ছা এখন বলেন আম খাবেন ? ঃ না ! আম খাব না । লিপি বলে উঠে “ খাইলেও দিতাম না !! ঃ দিলেও খাইতাম না!! ঃ আচ্ছা আপনি কী বরই বেশি পছন্দ করেন ? ঃ হ্যাঁ। আমি তো মেয়েমানুষ না যে তেতুল পছন্দ করব। লিপির তখন একটি প্রবাদ মনে পড়ে। “যেমন বুনো ওল তেমন বাঘা তেতুল”।

ছেলেটিকে “বাঘা তেতুল” বলেই মনে হচ্ছে। .. .. আজ ছেলেটাকে একটু বাজিয়ে নিতে হবে। হঠাৎই লিপি বলে উঠে.. .. “ এত ফালতু কথায় কাজ নাই । আসেন কাজের কথায় আসি । ঃ কাজের কথা ? কাজের কথা কী? মুশফিক আশ্চর্যই হয়.. .. ঃ কাজের কথা হল আমাদের দুজনের মধ্যে কার সাথে প্রেম করতে চান? ঃ মানে?? ঃ কেন বাংলা বোঝেন না ? আমি কী মঙ্গোলিয়ানদের মত ম ম ম করছি না কী? ঃ মঙ্গোলিয়ানরা কী ম ম ম করে না কী ? ঃ কী জানি ! মঙ্গোলিয়া লিখতে ম লাগে সে জন্যই বললাম!!! একথায় ওরা সবাই হেসে উঠে.. .. এখন তাড়াতাড়ি বলেন প্রেম বা পেরেম যাই হোক কার সাথে করতে চান ? ঃ কেন ? জানালায় কথা বললেই কী প্রেম করতে হবে না কী? ঃ কেন কেন !! প্রেমই তো করতে হবে!! বরই আর তেতুলের দেখা হল আর একটু-আধটু প্রেম হবে না তাই কী হয়!!! ঃ হুঁ প্রেম করা যেত .. কিন্তু সমস্যা হল হাজী মুহম্মদ মহসিন আর কোন কিপ্টের প্রেম হওয়া কী সম্ভব ? ঃ আপনি কী হাজী মুহম্মদ মহসিন না কী? ঃ পুরো না হলেও কাছাকাছি.. .. ঃ আমরাও কিপ্টে নই তবে কাছাকাছি.. মুশফিক এবার সশব্দে হেসে ওঠে।

ঃ তাড়াতাড়ি বলেন কার সাথে প্রেম করতে চান? ঃ উুঁ এইটা আসলেই সমস্যা । আপনারা দুজনেই সুন্দরী.. আমার তো দুজনের সঙ্গেই করতে ইচ্ছে হচ্ছে। ঃ দুজনের সঙ্গেই করবেন? আচ্ছা ঠিকাছে... আপনি তো হাজী মহসিন..যার সবকিছুই বেশি বেশি..এককাজ করেন আপনার হাত চারটা ,মুখ চারটা ,চোখ চারটা মাথা দুইটা করে ফেলেন তাহলে আমরা দুজনই আপনার সঙ্গে প্রেম করব। হা হা হা মুশফিক ও শব্দ করে হেসে ওঠে.. ঃ না সবকিছু তো দ্বিগুণ করা সম্ভব না । তারচেয়ে আপনারাই ঠিক করেন .. কোন একজন আমার সাথে প্রেম করতে চান।

ঃ না আপনি ঠিক করেন! ঃ আচ্ছা তাহলে তো পাত্রী নির্বাচন করতে হয় । আচ্ছা তাহলে প্রথমে লিপি আসেন.. লিপি জানালায় এসে দাঁডায়.. ঃ এই মেয়ে দাঁত দেখি.. .. লিপি ভেংচি মেরে দাঁত দেখায়। চুল দেখি.. (লিপি দেখায়)..বেশ ভাল.. .. এবার হাঁটো তো দেখি.. .. বিডালের মতো.. ঃ বিড়ালের মতো হাঁটব মানে? ঃ মানে ক্যাটওয়াক কর.. .. ঃ বাব্বা ! শখ কত ! পারব না ! পাত্রী দেখা শেষ হলে বিদায় হন! মুশফিক অবশ্য পরবর্তী পাত্রী দেখার আগেই পাত্রী পছন্দ করে ফেলে.. .. লাবনী বলে দেখি তুই সর.. বলেই লাবনী ক্যাটওয়াক করে দেখায়.. .. ঃ থাক! থাক! আর লাগবে না। ঃ এবার বলেন কাকে পছন্দ হয়? লাবনী জিজ্ঞেস করে.. ঃ আসলে দুজনকেই তো ভাল লাগছে.. .. মুশফিক রহস্য করে.. ঃ আপনি তো দেখছি বীরবীরপুরুষ !!!! ঃ বীরবীরপুরুষ মানে ? ঃ মানে বীরপুরুষের তো এক প্রেমিকা আর আপনার হবে দুই প্রেমিকা তাই আপনি বীরবীরপুরুষ !!!! (আবার হাসির রোল উঠে) ঃ নাহ্ আমার আর বীরবীরপুরুষ হয়ে কাজ নেই !! আপনারাই ঠিক করেন !! ঃ না .. আপনি দাঁত দেখলেন , হাঁটা দেখলেন , চুল দেখলেন , ক্যাটওয়াক দেখলেন.. আপনিই ঠিক করেন .. .. ঃ আচ্ছা তাহলে বলেন লাইট জ্বালানো নেভানোর খেলা কে খেলতেন ? ঃ আমরা দুজনই খেলতাম... ঃ তাহলে তো মধুর সমস্যা !! ঃ মধুর সমস্যা হলে তো সেটাকে আর সমস্যা বলে না ! ঃ হুঁ মধুর সমস্যায় টস একটা ভাল সমাধান হতে পারে .. ঃ হ্যাঁ ঠিকই বলেছেন.. .. মুশফিক পকেট থেকে পাঁচ টাকার কয়েন বের করে.. আচ্ছা এই হল পাঁচ টাকার কয়েন.. লিপি আপনার হল পরিবার.. আর লাবনী আপনার হল শাপলা ফুল.. ঠিক আছে? ঃ হুঁ ঠিক আছে.. দুজন একসাথেই বলে উঠে.. মুশফিক কয়েনটি উপরের দিকে ছুঁড়ে দেয় ... তার পর সেটা ক্যাচ ধরে ওদের দিকে তাক করে.. মনে মনে প্রার্থনা করে.. লিপির নামটি যেন উঠে.. লাবনী চিৎকার করে উঠে..লিপির পরিবার উঠেছে.. এই কথা বলার সাথে সাথে ওরা সবাই স্তম্ভিত হয়ে যায়.. “লিপির পরিবার” কথাটি ওদের পুরো ভড়কে দেয়.. ওদিকে লিপি বেচারী তো লজ্জায় একশেষ!!!!! লিপিকে লজ্জা পেতে দেখে মুশফিক জিজ্ঞাসা করে.. ঃ আরে আপনি তো দেখি লজ্জা পাচ্ছেন!! আমরা কী আর সত্যি সত্যি প্রেম করব না কী ? ঃ কেন করলে অসুবিধা আছে ? লিপি বলে ওঠে.. ঃ না অসুবিধা নাই ! তবে আমি মনে করেছিলাম আপনারা ফান করছেন! তাই আমিও হাওয়া দিচ্ছিলাম.. ঃ তো মশাই হাওয়া যে দিলেন বেলুন তো ফুলে ঢোল..এখন বেলুন যদি আকাশে উড়তে চায় ? লাবনী রসিকতা করে.. ঃ উড়তে চাইলে উড়তে দেব.. আমার অসুবিধা নাই.. ঃ বুচ্ছি! বুচ্ছি! আপনাদের বেলুন ওড়ার জন্য রেডি.. তবে এখনই উড়ে যাইয়েন না ! ধীরে ধীরে ওড়েন... এদিকে লিপির অবস্থা তখন দেখার মতো । তার অবস্থা দেখে মুশফিক ও লাবনী হেসে ওঠে.. .. এভাবে দিন বেশ কেটে যাচ্ছিল মুশফিকের .. .. এখন জানালায় নীলাকাশ দেখা নিয়ে ওর কোন আফসোস নাই !! এখন সে আকাশ না দেখলেও প্রতিদিন পাশের জানালায় সকালে ও বিকালে “পূর্ণিমা চাঁদ” লিপিকে দ্যাখে.. .. প্রতিদিনই লাবনী ওদের সুযোগ করে দিয়ে চলে যায়.. .. এর কিছুদিন পরই দৃশ্যপটে আসে প্রেমের অত্যাবশ্যকীয় তিন নাম্বার বস্তু মোবাইল.. এখন আর জানালায় প্রতিদিন কথা হয় না ।

কথা এখন প্রাইভেট পর্যায়ে চলে গেছে..যেখানে আমার মত গল্পকার দূরে থাক.. লাবনীর ও প্রবেশ নিষেধ !! কথা বলতে বলতে রাতগুলো ব্যস্ততায় ভরে ওঠে.. ফজরের আজান দিলে বুঝতে পারে..আজ অনেকক্ষণ কথা হল !!! মাঝে মাঝে জানালায় কথা বলার সময় লাবনী ব্যঙ্গ করে ওঠে “এখন আর আমার প্রয়োজন নাই না !!! ওরা হেসে ওঠে... তখনও ওরা বাইরে দেখা করা শুরু করেনি.. একদিন জানালায় লিপি বলে “ আমরা বাসা বদল করে অন্যএকটা ভাল বাসায় চলে যাচ্ছি .. .. ঃ ভাল বাসায় যাচ্ছ কীভাবে বুঝলে ? এই যে দ্যাখ আমরা এই বাসাটাকে ভাল ভেবেই উঠেছিলাম.. .. এখন কী অবস্থা!! আকাশ দেখা যায় না , বাতাস আসে না..কী যে এক অবস্থা!! ঃ ভাল বাসা না পাও “ভালবাসা” তো পেয়েছ !! ঃ হ্যাঁ, ভাল বলেছ.. .. তাহলে তোমরা কবে যাচ্ছ ? ঃ আগামী মাসেই.. ঃ তাহলে এখন কী হবে ? ঃ বোকা না কী ? ভাল বাসায় চলে গেলেও আমাদের “ভালবাসা” তো আর চলে যাচ্ছে না !! আমরা দুজনই যেহেতু ভাড়া থাকি অনেক বাসা আমাদের পরিবর্তন করতে হবে.. কিন্তু কথা দাও আমাদের “ভালবাসা” আমরা কখনোই বদল করব না .. কথা দাও! ঃঠিক আছে ! কথা দিলাম.. .. “ভালবাসা” বদল করব না... (শেষ)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।