আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পরিচয়...!!

যে বিশ্বাস নিয়ে একটা ছোট্ট শিশু হেসে ওঠে তাকে পরে ছুড়ে দেয়া হলে, তেমনি বিশ্বাস আমি করি তোমাকে। আমি জানি তুমি দুঃখ কখনও দেবেনা আমাকে। মামুনের যে অভিমানে গাল ফোলানোর অভ্যাস আছে, সেটা ভুলেই গিয়েছিল রিতা। সেই ৩ মাস আগে একবার কথা হয়েছিল, এত কে মনে রাখে? মনে রাখার জিনিসের অভাব আছে নাকি! মামুনের সাথে কথা হবার পর আর স্কাইপে বসা হয়নি রিতার। কাজের চাপে জীবন বের হবার দশা, চ্যাটিং করবে কখন? আজ অনলাইন হয়েছে, তাও চাচাতো বোন ৩ বার ফোন করার পর।

অনলাইন হয়ে মামুনের আইডি দেখে রিতা মনে করার চেষ্টা করে এত সুন্দর একটা ছেলের সাথে কবে ওর কথা হয়েছে। মনে পরে না। বিষয়টাকে খুব একটা আমলেও নেয়না রিতা। কত ছেলে আসবে যাবে। যদিও সুন্দর ছেলের দেখা মেলা ভার, কিন্তু অনলাইনের বেশির ভাগ ছেলেই নোংরা।

ওদের কথা ভেবে সময় নষ্ট করার সময় কার আছে? ওকে নিয়ে ভাবতে ভাবতেই সে ‘হাই’ দেয়। এই ছেলের আইডি ইংলিশে, দেখতে ভীষন সুন্দর। বাংলাদেশি বলে মনেই হয়না। ‘কি খবর’ জিজ্ঞেস করতে কিছুটা অবাকই হয় রিতা। ‘কাজ কর্ম কেমন যাচ্ছে, অফিসের ঝামেলা মিটেছে?’ – এই প্রশ্নে রিতা খানিকটা আকাশ থেকেই পরেছে।

ওর অফিসে যে ঝামেলা চলছে সেটাও মনে রেখেছে! বাপ রে! রিতার আবার কিছু কিছু সময়ে মাথা ঠিক মত কাজ করে না। কাকে কি বলতে হয় শিখেইনি মেয়েটা। বলেই ফেলেছে, ‘তুমি যেন কে?’ মামুন কপট অভিমানের সুরে অনুযোগ করে, ‘আমাকে ভুলেই গেছ?’ ‘সরি, ঠিক মনে পরছে না’ – ইভাবেই উত্তর দেয় রিতা। কি বলতে কি বলবে, পরে আর এক ভেজাল। তার থেকে সত্য বলা ভাল।

মামুন যখন বলল, বাংলাদেশে গিয়ে আমি স্কাইপে তোমাকে কত বার ম্যাসেজ রাখলাম, ‘আমি দেশে এসেছি, দেখা করতে ইচ্ছা করছে তোমার সাথে। কোন খবরই নেই তোমার!’ ‘কই, আমি তো তোমার কোন ম্যাসেজ পাইনি। অবশ্য আমি ব্যস্ত ছিলাম, স্কাইপে বসাই হয়নি। যাহোক, কতদিন ছিলে দেশে?’ ‘প্রায় ১ মাস। ’ তারপর বাতুনী রিতার প্রশ্নের ঝড় শুরু হয়।

দিন কাল কেমন গেল দেশে? সবাই কেমন আছে? কি কি করল? এর মধ্যেই সহজ ভাবে মামুন ওর এক অভিজ্ঞতা শেয়ার করে। কি করে এক লম্পট মেয়ের পাল্লায় পরে ৭ হাজার টাকা খুইয়েছে। অনলাইনে পরিচয় সেই মেয়ের সাথে দেখা করতে যায় মামুন। অনেক বছর বিদেশে থাকার কারনে ঢাকার রেস্টুরেন্টগুলো সে চেনেই না। সেই মেয়ে ওকে বনানীতে একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে যায়।

হঠাৎ মেয়ের বান্ধুবী ফোন করে। ফোন রেখেই মেয়ে বলে বান্ধুবী তার কাছে ৫ হাজার টাকা চেয়েছে। এই মুহূর্তে টাকাটা ওর কাছে নেই। এটিএম বুথ থেকে তুলে দিতে হবে। বান্ধুবী আসছে ওই রেস্টুরেন্টে।

মামুনের কাছে ৫ হাজার টাকা থাকলে ওকে ধার দিতে বলে। বলে নিচে নেমেই ব্যাংক থেকে তুলে দিয়ে দেবে। মামুন সহজ মনে বলে ওর কাছে ৫ হাজার টাকা আছে। মেয়েটার অনুরোধে টাকাটা তাকে দেয় মামুন। এর কিছুক্ষন পরেই একটা মেয়ে আসে, টাকাটা নিয়ে চলে যায়।

দু’জনে আরও কিছু সময় বসে থাকে। সেই মেয়ে আর টাকার ব্যপারে কিছুই বলে না। মামুনও লজ্জায় চাইতে পারে না। বের হবার পর ও মেয়ে তাকে বিদায় জানিয়ে চলে যায়। টাকাটা আর চাইতে পারেনা মামুন।

প্রায় ৫ দিন পর মেয়েটা আবার ওকে ফোন করে বলে ওর স্বামী ঘরে নেই। তাই ও বের হতে পারবে না। মামুন যদি একটু কষ্ট করে ওর বাসা থেকে টাকাটা নিয়ে যায়। মেয়ে আরও জানায় মামুনের জন্য রান্না করছে সে। মামুন যেন মানা না করে।

ও ভীষন কষ্ট পাবে। এই কথায় মামুন রাজী হয় তার বাসায় যেতে। উত্তরা বাসা। মামুন গিয়ে দেখে ছিম-ছাম গোছানো ঘর। ছোট্ট একটা ৪ বছরের বাচ্চা আছে মেয়েটার।

বাচ্চাটার কথা জানত মামুন। ওর জন্য কিছু চকলেট নিয়ে গেছে মামুন। বাচ্চাটা ভীষন খুশি। মেয়েটা ওকে বেডরুমে নিয়ে যায়। বিছানায় বসতে বলে।

এক সময় মামুনের হাতের উপর হাত রাখে। কিছুটা অস্বস্তি লাগলেও হাত সরিয়ে নেয় না মামুন। এই শুনে রিতা বলে, ‘তুমি তো মজা নিচ্ছিলে, হাত সরাবে কেন? তারপর কি হল বল। আর কি কি করলে ৫ হাজার টাকায়’। ‘উফ, থামো তো।

কি সব বলছ’ উত্তর দেয় মামুন। ‘কেন? কিছু করনি বলছ? মেয়ের জামাই ঘরে নেই জেনে তুমি গেলে কেন?’ ‘ঠিক আছে, আমার ভুল হয়েছে। তোমাকে আর কিছু বলব না’ – অভিমানী উত্তর মামুনের। ‘নিজে মান-ইজ্জত খুইয়ে এসেছ, আমার সাথে রাগ দেখাচ্ছ। ভালো তো!’ ‘তুমি শুনবে? না শুনলে বল আমি কাজে যাই।

ভেবেছিলাম আজ ল্যাবে যাব না, তোমার সাথে গল্প করে কাটাবো। থাক তুমি, আমি যাই। ’ ‘আচ্ছা বল। ’ মামুন বলতে থাকে। সেই মেয়ে কথা বলতে বলতে এক পর্যায়ে মামুনকে চুমু খেতে থাকে।

একটু পর তার বাচ্চা ঘরে আসে, সে অপ্রস্তুত অবস্থায় মামুনকে বলে চলে যেতে। ফিরে আসে মামুন। ফিরে এসে সিএনজি ভাড়া দিতে গিয়ে দেখে ওর মানিব্যাগ পকেটে। সেখানে ২ হাজার টাকা ছিল, সেটা থাকার তো প্রশ্নই ওঠে না। সব শুনে রিতার ভীষন অভিমান হয়।

মেজাজটাই খারাপ হয়ে যায়। রিতার মনে পরে এই পাগল নাকি আবার রিসার্চার। এরাও এত বড় গর্দভ হয়!? মামুনের কথা শুনে রাগে রিতা বলে আর কথা বলবে না। সেই শুরু হয় মামুনের অভিমান। হুট করে সেটা ভেঙ্গেও যায়।

ও একা, নিসঙ্গ মানুষ। কেউ কথা বলছে, এই বা কম কি! মেয়েরা কথা বলে ওর সাথে ভাব জমানোর জন্য, এই একটা মেয়েকে পাওয়া গেছে যে ওর কথা ভুলেও গেছে। রিতার রাগ বাড়তেই থাকে। ও বলে যায়, ‘ওহ! তো ৭ হাজার টাকা যাওয়ার দুঃখ নেই, আর মজা নিতে পারলে না, এই কষ্টে মরে যাচ্ছ? ভালো তো? ফোন নম্বর তো আছেই। আবার ফোন কর।

দেশে আস। দেখা কর ওর সাথে। বদ! নোংরা’। ‘তুমি রাগ করছ কেন?’। ‘রাগ করবে না।

খুশি হবে। আনন্দে নাচা-নাচি করবে! বেকুবের মত কাজ করবে, সেই শুনে আমি খুশিতে নাচব। ’ ‘আরে, আমি কি জানতাম না কি?’ ‘নাহ! তা জানবে কেন? এইডস হত, তখন জানতে। নির্লজ্জ্ব, বেহায়া। ’ এভাবেই কথা চলতে থাকে।

কথায় কথায় মামুন বলে ও হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে ফেলোশিপ করছে। শুনে রিতার আরও রাগ হয়। গাধাদেরও আজ-কাল সেখানে ভর্তি নেয়, জেনে মাথাটা খারাপ হয়ে যায় রিতার। কথার ফাকে ওকে বলে প্রমান কর যে তুমি হার্ভার্ডে আছ। মামুন রিতাকে ওর আইডি কার্ড দেখায়।

রিতা ওর নামটা মনে রাখে। রাতে মামুনের সাথে কথা বলতে বলতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছে, বলতেও পারবে না রিতা। চলবে... [আমার গল্পের পরিচয় পর্বই এত বড় হয়ে গেল! যারা কষ্ট করে, ধৈর্য্য ধরে পুরোটা পরেছেন, তাদেরকে অগ্রিম ধন্যবাদ] ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।