আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মৌলবাদের হাতে মতিঝিলের রক্তাক্ত বলাকারা, রাষ্ট্রের দায়সারা ভূমিকা এবং আসন্ন নির্বাচনে ধর্মের সম্ভাব্য ব্যবহার প্রসঙ্গে

munirshamim@gmail.com
ক. মতিঝিলের বিমান অফিসের সামনে বলাকারা এখন রক্তাক্ত। ধর্মীয় উন্মাদনা আর মৌলবাদের হিংস্র নখের আঁচড় বসেছে সৌন্দর্য আর দেশজ ঐতিহ্যের স্মারক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বলাকাদের শরীরে। আমার খুব মনে পড়ছে, আশির দশকের শেষের দিকে যখন ঢাকায় আসি, তখন আরামবাগে থাকতাম। স্বাভাবিকভাবেই মতিঝিলের আশপাশের এলাকা হয়ে উঠে আমার প্রধান বিচরণ ক্ষেত্র। ঢাকার সব চেয়ে ব্যস্ততম এলাকা হওয়ার পরও তখন মতিঝিলের এত ব্যস্ততা ছিল না।

প্রায় প্রতিদিন বিকেলে হাটতে হাটতে শাপলাচত্তর হয়ে জীবনবীমা টাওয়ার, স্টেডিয়াম যাবার পথে বলাকাদের সামনে খানিক্ষণ দাঁড়াতাম। শিল্প বৌদ্ধা বা ভাস্কর্যের কোন ব্যাকরণ না জানার পরও এর স্বাভাবিক সৌন্দর্য আমাকে টানতো। মুগ্ধ করতো। সে মুগ্ধতার চিহ্ন রেখে যেতে আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খুটিয়ে খুটিয়ে বলাকাদের দেখতাম। ফলে এ বলাকারা আমার ঢাকা কেন্দ্রীক মন কেড়ে নেয়া প্রাথমিক এবং অবশ্যই মৌলিক ভাললাগাগুলোর একটি।

আর সে মৌলিক ভাল লাগার স্মৃতি যখন রক্তাক্ত হয় ধর্মের নামে অধর্মের আচরণে, মৌলবাদের হিংস্র থাবায় তখন স্বাভাবিক ভাবে হৃদয়-মন ভারাক্রান্ত হয়। এ ভারাক্রান্ত হয়ে উঠাটা অনিবার্য হয়ে উঠে যখন দেখি রাষ্ট্র ধারাবাহিকভাবে এ অপশক্তির দমনে নিরবতা-নিষ্ক্রিয়তার সংস্কৃতি চর্চাকে কর্তব্য বলে দৃশ্যমান উদাহরণ তৈরি করে একের পর এক এবং তারই ধারাবাহিকতায় সংখ্যালঘিষ্ঠ মৌলবাদী-সা¤প্রদাযিক শক্তি তাদেও সম্ভাব্য সকল লীলা-খেলা অনায়াসে চালিয়ে যান। বলাকা ভাস্কর্যের ওপর আক্রমণ কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এমনটি মনে করারও কোন কারণ নেই। বরং এটি অনেকগুলো ঘটনারই যে ধারাবাহিকতা এটি ইতোমধ্যে প্রমাণিত।

মাত্র কিছু দিন আগে বিমানবন্দরের সামনে থেকে বাউল ভাস্কর্য সরানো হয়েছে। সে একই অপশক্তির হিংস্রতায়। সে হিংস্রতা বন্ধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে কোন কার্যকর ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় নি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভাস্কর্যের সা¤প্রদায়িক অনুবাদ কর্ম সম্পাদিত করে পবিত্র হাজীদের যেন অপবিত্র মূর্তি দেখতে না হয় সে রকম ব্যাখ্যা দিয়ে মৌলবাদী-সা¤প্রদায়িক সন্ত্রাসের কাছে নিজেদের নতজানুতাকে জায়েজ করার ফর্মূলা প্রয়োগ করার প্রয়াস চালিয়েছেন অনবরত। বিপরীতে ভাস্কর্য প্রতিস্থাপনের পক্ষে সাধারণ মানুষের সম্মিলিত কণ্ঠ তাদের কানে পৌছায় নি।

রাষ্ট্রের এ ক্রমাগত দায়সার ভূমিকা অব্যাহত থাকলে ক্রমাগত রক্তাক্ত হতে থাকবে মুক্তিযুদ্ধ, দেশজ সংস্কৃতি, ধর্মনিরপেক্ষতা, ইহজাগতিকতা এবং মানবিক বিকাশের সম্ভাব্য উপায় ও পথ। সে আয়োজনটিই চলছে গত কয়েক দশক ধরে। খ. আর মাত্র মাস খানিক পরে জাতীয় নির্বাচন। এটি বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এ নির্বাচনে ধর্ম অন্যতম পুঁজি হিসেবে ব্যবহৃত হবে। অতীতে যেমন হয়েছে।

যেমন গত নির্বাচনে বলা হয়েছিল, এবারের নির্বাচন দেশে ইসলাম থাকা আর না থাকার নির্বাচন। এবং যথারীতি তথাকথিত ইসলামের পক্ষের শক্তি জয়ী হয়েছিল। পরবর্তী পাঁচ বছরে ইসলামের কতটা উন্নতি হয়েছে তা ইসলাম বিশেষজ্ঞরা বলতে পারবেন। কিন্তু সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমরা দেখেছি কী বিভৎসতায় সারা দেশে জঙ্গী সংগঠন বিস্তার লাভ করেছিল, দেশ ব্যাপী বোমা হামলা চালিয়ে সাধারণ মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। আবার সরকারের ঠিক বিদায়ী মুহূর্তে কীভাবে সেসব জঙ্গীদের ধরে জঙ্গীবাদ দমনে নিজেদের সফলতাকে নির্বাচনী পুঁজি করার চেষ্টা করা হয়েছিল।

আমাদের এখনও মনে পড়ে, সে সময় ধরা পড়া জঙ্গীরা মিডিয়ার সাথে কথা বলতে চেয়েছিল। কিন্তু তাদের মিডিয়ার সাথে কথা বলতে দেয়া হয়নি। কেন তাদের মিডিয়ার সাথে কথা বলতে দেয়া হয়নি আজও সে রহস্য আমরা জানি না। তবে প্রথম আলো সহ প্রধান দৈনিক গুলোর অনুসন্ধানী প্রতিবেদন থেকে এটি প্রতিভাত যে, সে সময় বিকশিত জঙ্গীবাদ রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতা না হোক, অন্তত সরকার দলীয় প্রত্যক্ষ পৃষ্টপোষকতা পেয়েছিল। গ. নির্বাচনে ধর্মকে ইস্যু করে মুনাফা ঘরে তোলার জন্য প্রয়োজন ঘটনার।

সে ঘটনা সৃষ্টি করতে হয়। নিজেদের প্রযোজনায়। বলাকা ভাস্কর্য ভাঙ্গার চেষ্টা সে প্রযোজনার অংশ বলেই মনে হয়। কারণ ভাস্কর্য কে জনমনে পরিবেশন করা হবে মূর্তি হিসেবে। বলা হবে মূর্তি ইসলাম ধর্মে হারাম।

সুতরাং দেশকে এ হারাম কর্ম থেকে রক্ষার জন্য রাষ্ট্র ক্ষমতায় দরকার ইসলামী শক্তি। আমিনী ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী নির্বাচনে জয়ী হলে দেশকে ভাস্কর্য মুক্ত করবেন। সুতরাং নির্বাচনের আগে এ ধরনের ঘটনা হয়তো আরও ঘটতে থাকবে। এবং সেগুলোই নির্বাচনে পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করা হবে। সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার প্রক্রিয়া হিসেবে।

এ বিষয়ে সচেতন ঐক্যবদ্ধ হতে না পারলে আবারও সে মৌলবাদ-সা¤প্রদায়িকতার চাষাবাদই নিশ্চিত হবে। এটি হতে দেয়া যায় না। ব্যবহৃত ছবির কৃতজ্ঞতা সহ ব্লগার লাল দরজা
 

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.