আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জলপাই দোস্তের পদন্নোতি

তবুও জীবন যাচ্ছে কেটে জীবনের নিয়মে।

খুব কুলোজ বন্ধুদের মধ্যে একজন হঠাত করে আর্মিতে যাওয়ার বায়না ধরলো। যতোই বুঝাই যে ওখানের জীবন বড়ই কঠিন। কে শুনে কার কথা। শেষপর্যন্ত অনেক লম্ফ-ঝম্প দিয়ে দোস্ত কমিশন পেলো।

এরপর দেখা গেলো বাকী সবারই আর্মি হবার বাসনা। আমি নিজে কখনো এইম ইন লাইফ শিখিনি। ভবিষ্যত পরিকল্পনা ছিলো না। মধ্যিখানে পাইলট হওয়ার চেষ্টা করে ফেল মেরেছি। তাই ইউনিতেই পড়ার ইচ্ছা নিয়ে বসে ছিলাম।

কিন্তু সব জিগরী দোস্ত এভাবে চলে গেলে আমি তো ফতুর। আমি স্কুল জীবন থেকেই হোস্টেলবাসী। ফ্যামেলির লোকজন থেকে বন্ধুদের জন্য টান একটু বেশি। অবশ্য মা-বাবা বাইরে তাই পিছুটানও কম ছিলো। শেষপর্যন্ত কোন দোস্তকেই আর্মি এলাউ করে নাই।

কিন্তু যে গেছে ওর যন্ত্রনায় সবাই অস্হির। প্রতি সপ্তাহেই এসে হাজির। ওর নিজেরও অবশ্য পিছুটান ছিলো কম। মা মারা গেছে সেই ছোটবেলায়। বাবা জেলার মানুষ।

ক্ষমতার কমতি ছিলো না। কিন্তু টাকা পয়সার কমতি। দোস্তের টাকা পয়সা থেকে শুরু করে থাকা খাওয়া সবই আমাদের রুমে। দোস্ত বলে কথা, তাই সবাই সব রকমের অত্যাচারই মেনে নিতাম। বিভিন্ন রকমের ট্রেনিং + কষ্টের কথাগুলো শেয়ার করতো।

ফিরে আসতে চাইলে সাহস দিতাম এই বলে যে আর তো মাত্র কয়েকমাস, তারপর আর আমাদের মানুষ বলে গন্য করবি না। আর্মিতে জয়েন করার পরপরই দোস্তের ডারলিংয়ের বিয়ের কথাবার্তা চলতে থাকে। উনার মাথা তো পুরো আউলা। বছরখানেক খরচ-পাতির ব্যবস্হা করা যাবে সেই গ্যারান্টি দিলাম আমরা। কিন্তু মেয়ে ভাগিয়ে আনা সম্ভব না (যদিও এইসব কাজ অনেকগুলোই সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে)।

পরে যদি আর্মির ডলা খাইতে হয় সেই ভয়ে। সিভিল লোকজন হলে রিক্স নেওয়া যেতো। এই কাজটি উনার উপরই ছেড়ে দিলাম। প্রথম চাকরীর জীবনে সে নিজেও এতো বড় রিক্স নেয় নাই। কি আর করার।

সবাই মিলে শান্তনা দিলাম। গতবছর মিশনে কঙ্গো এসে আমার এদিকে বেড়াতে আসার চেষ্টা করেছিলো। আমি প্রয়োজনীয় কাগজ পাঠালাম। শেষ পর্যন্ত ব্যস্ততার জন্য আসে নাই। চারদলীয় সরকারের সময় উনি খালেদার সিকিউরিটির গোয়েন্দা বিভাগের লোক ছিলেন।

প্রচুর ক্ষমতা ছিলো। কিন্তু মনে শান্তি নেই। যোগাযোগ হলেই শুধু না পাওয়ার বক্তিমা। সিভিল লাইফ কি মজার, দেশে-বিদেশে ঘুরে বেড়ানো, জীবনে প্রচুর টাকা-পয়সা কামানো, নিয়মের বেড়াজালে থাকতে মন চায় না, ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি তখন আগের দিনের উপদেশ মনে করাই দেই।

সৎ থেকে যে কিছুই করা যাবে না তার উদাহরন স্বরূপ কিছু পরিচিত আর্মির আত্মীয়-স্বজনের নমুনা উনার সামনে তুলে ধরি। হতাশা বাড়তে থাকে। শেষ পর্যন্ত উনি মনোস্হির করলেন মেজর হয়ে কিছুদিন চাকরী করবেন। তারপর চাকরী ছেড়ে ব্যবসায়ী। বল্লাম তোমাদের জন্য শুভ দিনগুলো ফিরে ফিরে আসে।

শেষ পর্যন্ত দোস্ত মেজর হলো। গতকাল ম্যাসেজ পাঠালেন। যদিও আগের মতো যোগযোগ আর নেই। তারপরও শুভ কামনা।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।