আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

***একজন বীরঙ্গনার প্রতি ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দিন ...***

:)
স্বাধীনতা যুদ্ধের নীরব সাক্ষী ও অমানুষিক নির্যাতনের শিকার বীরাঙ্গনা মমতাজ। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার ১৩ কিমি দূরে গোসিঙ্গাপুর লতিফপুর তালতলা গ্রামে তার জন্ম। মাত্র দশ বছর বয়সে সুন্দরী মমতাজের বিয়ে হয় একই গ্রামের দরিদ্র কৃষিশ্রমিক কাছম আলী মোড়লের ১৫ বছরের ছেলেরমিজ উদ্দিন মোড়লের সঙ্গে। বিয়ের আড়াই বছর পর রমিজ স্ত্রী মমতাজকে ঘরে তুলে নেয়। হতদরিদ্র রমিজ ও গৃহবধূ মমতাজ শীতলক্ষ্যার নদীর পার ঘেঁষা গ্রাম লতিফপুরেই ঘর বাঁধে।

দুই শিশু কন্যাকে নিয়ে ভালই চলছিল তাদের সংসার। অভাব থাকলেও নারকেল সুপারি বাগানে ঘেরা তাদের জীর্ণ কুটিরে অশান্তি ছিল না কোনদিন। চাটাইয়ের বেড়া আর ছনের ছাউনির ঘরে তেল চিটচিটে বালিশে শুয়েছিল মমতাজ। অকস্মাৎ হানাদার বাহিনী আক্রমণ করে তাদের গ্রামে। দেবর আলা উদ্দিন জসীম স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেয়ায় অষ্টাদশী বধূ মমতাজ বেগমকে আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় স্থানীয় রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনারা ঘর থেকে তুলে নিয়ে বন্দুক মুখে ধরে মমতাজকে টেনে তুলে নিয়ে যায় অদূরে এক ব্রিজের নিচে নিয়ে পাশবিক নির্যাতন করে কমপক্ষে ১২ জন পাক সেনা , ৯ মাসেরঅন্তঃসত্ত্বা মমতাজ চিৎকার করতে থাকে ভয়ে ও আতঙ্কে।

দলবদ্ধ পিশাচদের উল্লাসে চাপাপড়ে মমতাজের হাতজোড় করা শত মিনতি। হানাদার বাহিনীর নরপশুরা পালাক্রমে ধর্ষণ করে মমতাজকে। জ্ঞান হারান মমতাজ। এরপর কী হয়েছে কিছুই মনে নেই তার। শাশুড়ীর আহাজারিতে যখন জ্ঞানফেরে তার তখন তিনি নিজেকে দেখতেপান বাড়ির উঠানে চাটাইর উপর।

রক্তাক্ত নিথর দেহখানি নিজেরইচ্ছায় নাড়ানো যাচ্ছিল না। অসহ্য যন্ত্রণায় বিষাক্ত দেহটি যেন অবশ হয়ে গেছে। তাকে ঘিরে প্রতিবেশীদের কারওকারও চোখে অশ্রুধারা। ফুপিয়ে কাঁদছেন স্বামী। পরে স্থানীয় কয়েকজন মহিলা মমতাজের গর্ভথেকে টেনে বের করে আনেন এক মৃত পুত্র সন্তান।

কিন্তু বাচ্চার দেহেরএকটা অংশ থেকে যায় পেটের ভেতরেই। ক্ষত-বিক্ষত পায়ুনালী আর যৌনাঙ্গ দুটিএক হয়ে যায়। গত ৪২ বছর ধরে শরীর থেকে রক্ত ঝরছে মমতাজের। শরীর অসহ্য যন্ত্রণায় ছটফট করে এতগুলো বছর কেটে গেল। একটি রাতের জন্য ঘুমাতে পারেননি মমতাজ।

কানে শুনেন না, ঝাপসা হয়ে গেছে চোখ। কোন কাজ করতে পারেন না। সারাদিন অন্যের বাড়িতে দিনমজুরের কাছ করে স্বামী রমিজউদ্দিন। কাজ শেষে প্রতিদিন সন্ধ্যায় রমিজ উদ্দিন শীতলক্ষ্যার জলে মমতাজের রক্তাক্ত জামা -কাপড় ধুয়ে দেন। চাইলেই মমতাজকে ছেড়েদিতে পারতেন রমিজ।

কিন্তু ভালবাসার এই মানুষটিকে বুকে আগলে রেখেছেন পরম মমতায়। রমিজ উদ্দিনের নিজস্ব জমি বলতে তেমন কিছুই নেই। যা ছিল তা বিক্রি করে আর হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করা অর্থ দিয়ে ৪২টি বছর ধরে স্ত্রী চিকিৎসা সেবা করেছেন। নির্যাতনের শিকার মমতাজের পায়ুনালী ও যৌনাঙ্গ ক্ষতবিক্ষত ও ছিন্ন ভিন্নহয়ে গেছে স্থায়ীভাবে। পাঁচবার অপারেশন করেও মমতাজকে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভবহয়নি।

বিকল্পভাবে তলপেটে পায়ুনালী স্থাপন করে কৃত্রিম পাইপ দিয়েমলত্যাগ করেছেন ৪২ বছর ধরে। কী যন্ত্রণাদগ্ধ জীবন! ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে জীবন্মৃত অবস্থায় আজও বেঁচেআছেন মমতাজ। মসৃণ কার্পেটে যখন বিজয়ের মহোৎসব চলছে তখন বীরাঙ্গনা মমতাজের আর্তনাদ শুনার সময় আছে কি কারো? আজ তিনি আমাদের সকল স্বাধীনতা প্রাপ্ত সুখীমানুষকে লজ্জার সাগরে নিমজ্জিত করে বলেন,‘মানুষ না গরু,বুঝি না। ঘর নাই, বাড়ি নাই,কই থাকি, কেমনেথাকি, জানি না। সেদিনের কথা এখন আর কই না, কইলে মাথা খারাপ লাগে।

’ ওই ঘটনার পর থেকেতিনি কানে ভালোমত শোনেন না। বেশিরভাগ সময় তাকে ইশারা করে বোঝাতে হয়। স্বামী রমিজউদ্দিন মোড়ল নিজের সহায়সম্বল বিক্রি করে তার চিকিত্সা করিয়েছেন। এ সময়ে তার দুটি মেয়ের বিয়ে হয়। স্ত্রীর চিকিৎসা করাতে করাতে তার স্বামী সচ্ছল কৃষক থেকেএকসময় শুধু ভূমিহীনই নয়, ভিটেবাড়িও হারাতে হয়েছে তাকে।

অথচ সুচিকিৎসা পেলে মমতাজ সুস্থ হয়ে উঠতেপারতেন। কেউ তার পাশে দাঁড়ায়নি। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া মমতাজকে এখনও প্রতিদিন প্রায় শতাধিক টাকার ওষুধ খেতেহয়। বৃদ্ধ স্বামী রমিজকে কষ্টে যোগাড় করতে হয় এই টাকা। মমতাজের স্বামী রমিজউদ্দিন দিন মজুর।

তিনি এখন বৃদ্ধও দুর্বল। কিন্তু স্ত্রী মমতাজ এর চিকিৎসা ও ঔষধের খরচ বহন করার জন্য তাকে প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়। সারাদিন খেটে খুটে যাই জুটে, বেলা শেষে তাই দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবার ও ঔষধ কিনে বাসায় ফিরেন। ওষুধের খরচ যোগাড়করতে গিয়েই প্রায়ই উপোস থাকতে হয় এই বৃদ্ধ দম্পতিকে। গ্লানিকর জীবনের এই যন্ত্রণা দগ্ধ বোঝা আর সইতে পারছেন না মমতাজ।

তাই প্রতিবছর ১৬ ডিসেম্বর জাতির বিজয়ের দিনে অস্ফুট আর্তনাদে মমতাজ জানতে চান বিজয়? কিসের বিজয়? কার বিজয়? তার এই প্রশ্নের জবাব দেয়ার সাহস আছে কার?গত ৪২ বছরে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ঠাঁই মেলেনি মমতাজের। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তার আর কিছুই চাইবার নেই। একটাই ইচ্ছা শুধু তার । বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যার সঙ্গে দেখা করতেচান তিনি। মমতাজ জানেন না তার এ ইচ্ছা পূরণহবে কি না।

জীবনযুদ্ধে বিপর্যস্ত মমতাজ বলেন, মুক্তিযুদ্ধ আমার জীবন থেকে সব কেড়ে নিয়েছে। যুদ্ধে এত মানুষের মরণ হল, কিন্তু আমার মরণ হল না কেন? বর্তমানে তিনি তিনি প্রচন্ড পেটের পীড়ায় শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তী হন গত ৩০ জুন ২০১৩ তারিখে। সপ্তাহ খানেক চিকিতসা শেষে অবস্থার উন্নতি হলে তিনি গ্রামে ফিরে যান । উল্লেখ্য, বীরাঙ্গনা মা মমতাজ বেগমের ১৯৭৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত পাঁচটি অপারেশন হয়েছে রেক্টোভ্যাজাইনাল ফিস্টুলার। এখন ডাক্তাররা তার পেটের মধ্যে টিউব লাগিয়ে দিয়েছেন, এখান দিয়েই পায়খানা হয়।

ডিহাইড্রেশন আর অপুষ্টিও তাঁর সার্বক্ষণিক সঙ্গী। এতগুলো অপারেশনের ধকল তার শরীর বহন করতে পারে না। ফলে তাকে মাঝে মাঝেই হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। তিনি যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন তাকে চিকিৎসা ও ঔষধ গ্রহণ করেইবাঁচতে হবে। কিন্তু তার এই চিকিৎসা ব্যয় বহন করা তার বৃদ্ধ স্বামীর পক্ষে ক্রমশ অসম্ভব হয়ে পড়েছে ।

এভাবে চলতে থাকলেএই বীরাঙ্গনার বিনা চিকিৎসায় মরতে হবে যা আমাদের জন্যচরম লজ্জা ও অপমানের। বর্তমানে তার দেখা শোনা করছেন তার ই স্বামী রমিজ উদ্দিন , তার মেয়ে নিলুফার ইয়াসমীন। রমিজউদ্দিন মন্ডলের ফোন নাম্বার ০১৭৬৫৮১৯১১০ । নীলুফার জানালেন, মাসে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর থেকে সাড়ে তিনশ টাকাপান। মুক্তিযোদ্ধা ভাতা নিয়ে এখনও টালবাহানা চলছে।

আজ দেব,কাল দেব বলে কেবল সময়ই পার করছেন কর্মকর্তারা। মা ৭ গণ্ডা জায়গা পেয়েছে । সেখানে ইঞ্জিনিয়ারও গিয়েছিল বাড়ি করে দেবে। মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা (হাছিনা) র সঙ্গে দেখা করেএসেছেন ও মা । বর্তমানে আরো সম্বল বলতে আছে শুধু দুটি গরু ।

দারিদ্রতার কষাঘাতে মুমূর্ষ বীরাঙ্গনা মা মমতাজবেগম এখন অসহায় জীবন যাপন করছেন যখন তার প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় চিকিতসা সহায়তা । আমরা কি পারি না এই বীরাঙ্গনার জীবনের শেষ কয়েকটা দিনের ভার নিতে? সমাজের কোন বিত্তবান কি এই দম্পতির দায়িত্ব নিতে পারে না? কোন রাজনীতিবিদ কি পারে না মমতাজদের দুঃখ দূর করার রাজনীতি শুরু করতে? বিত্তবানরা বা রাজনীতিবিদ দের হস্তক্ষেপ আসবে কি না জানিনা তবে আমরাযারা সাধারণ মানুষতারা চাইলেই সামান্য সাহায্য করে তার কষ্ট কিছুটা লাঘবকরতে পারি। তার মুখে একটু হাসি ফোটাতে কি আমরা পারিনা ... বীরাঙ্গনা মমতাজ বেগম কে নিয়ে বিভিন্ন সময়েজাতীয় দৈনিকে প্রচারিত সংবাদ – http://www.nokshablog.net/ammansura/posts/411 Click This Link Click This Link Click This Link http://womenchapter.com/views/2824 Click This Link http://aparajitanews.com/?p=4591 Click This Link Click This Link http://www.nagorikblog.com/node/12641 Click This Link http://womenchapter.com/views/1565 http://www.youtube.com/watch?v=iE4Imq9dmGc http://www.genocidebangladesh.org/?p=406 ( সংগৃহীত ও সম্পাদিত )
 

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.