আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একজন সন্ত্রাসীর খোলা চিঠি...



মা গো, কেমন আছো তুমি? ওষুধ খাচ্ছ তো ঠিকমত? না খেলে যে শরীর খারাপ করবে মা.. কেন শুধু শুধু নিজেকে কষ্ট দেবে বল? আমায় নিয়ে তুমি কোন দুশিন্তা করনা মা। পুলিশ আর প্রতিপক্ষের দৃষ্টি ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে বেড়াতে হয়, তবু ছেলে তোমার মাছে ভাতে ভালই আছে। ওরা বলে আমি নাকি সন্ত্রাসী। কিন্তু আমি তো সন্ত্রাসী নই গো মা, আমি যে তোমার ছেলে... যেই হাত দিয়ে তোমার আর বাবার আঙ্গুল চেপে ধরে হাঁটতে শিখেছিলাম, সেই হাতে এখন অস্ত্র থাকে, এই কথা সত্যি... তাই বলে আমি তো মানুষ হত্যা করিনা গো মা... যাদের মারি, ওরা তো মুখোশধারী দানব! আমাদের পাড়ার লোকমান সাহেবের কথা মনে আছে মা? ওই যে বিরাট ব্যবসায়ী, যার কাছে কত অসংখ্যবার তুমি গিয়েছিলে আমার একটা চাকুরীর জন্য। কত অপমান সইলে অথচ চাকুরীটা হলনা শেষ পর্যন্ত।

অথচ জানো মা? সেই লোকমান সাহেব এখন প্রতি মাসে আমাকে মোটা অঙ্কের চাঁদা দেয়। কারন আমি তো এখন আর জীবিকার সন্ধানে সেই বেকার যুবক নই.. তোমার ছেলে এখন অনেক বড় মানুষ গো মা....অনেক বড় বড় নেতানেত্রীর সাথে ওঠাবসা তোমার ছেলের। জানো মা? আমার এক 'নেতা' সেদিন আমাকে একটা দামী গাড়ী উপহার দিল, খুশী হয়েই দিল। কারন আমার বাহিনী যে তার সব গোপন ব্যবসা দেখাশোনা করে। এ.সি, অডিও সিস্টেম, সব কিছু আছে গাড়ীতে।

ভাবছি একদিন গাড়ীটাতে তোমাকে নিয়ে বেড়াতে বের হব পুরো ঢাকা শহর... আমার প্রানের ঢাকা শহর.... যেই শহরে আমার জন্ম হয়েছিল একটা 'নিষ্পাপ' শিশু হিসেবে। তোমার না অনেক শখ ছিল যে আমাদের নিজেদের একটা বাড়ী হবে, দামী গাড়ী হবে? গাড়ী তো হল, আর কিছুদিন যাক, এরমাঝে যদি কারো হাতে মারা না পড়ি, তাহলে বাড়ীর কাজে হাত দেব। তুমি আমার বাড়ীতে থাকবেনা মা? মা গো, তুমি কেন বল যে আমি হারাম টাকা রোজগার করি? আমি তো অনেক পরিশ্রম করে নিজের জীবন বাজি রেখে টাকা কামাই করি গো মা... আমার সৎমানুষ বাবা টাকার অভাবে আমার একমাত্র বোনটার একটা ভাল বিয়ে দিতে পারলনা। বোনটা আমার এখন ছেলেমেয়ে নিয়ে কত কষ্ট করে। সেই সময় যদি আমি আজকের আমি থাকতাম, তাহলে হয়তো কতই না ধুমধাম করে বোনের বিয়ে দিতাম।

বাবার অসুখের সময় কত মানুষের কাছে হাত পাতলে, কিন্তু কই? কেউ তো তাদের 'হালাল' টাকা দিয়ে আমাদের সাহায্য করলনা। বাবা আমার বিনা চিকিৎসায় মারা গেল। আজকে আমি যখন আমার রোজগারের টাকা থেকে কিছু এতিম বাচ্চার খরচ চালাই, আমার অপরাধ কি খুব বেশী হয় মা? বাচ্চাগুলো কি আমার পাপের অংশীদার হয়? হয়তো হ্যাঁ, হয়তো না.... যাই হোক, তোমার অলস ছেলে এখন অনেক পরিশ্রমী হয়েছে গো মা। তোমার বকুনি না খেলে দুপুর ১২টার আগে যার ঘুম ভাঙ্গতে চাইতোনা, সেই ছেলে এখন রাতের পর রাত জেগে থাকে অস্ত্র হাতে, কখন জানি প্রতিপক্ষ আক্রমন করে, একটা বুলেট বন্ধ করে দেয় নিশ্বাস.. তবুও ভালই আছি.. কারো কাছে হাত পাতি না... যা কিছু প্রয়োজন, আদায় করে নিই। পড়ালেখায় ভাল ছিলাম না বলে একসময় যারা আমাকে নিয়ে উপহাস করত, এখন তারা আমাকে দেখলে দূর থেকে সরে পড়ে।

আমি জানি ওরা আমাকে সম্মান না, ভয় করে। এটাও জানি, আজকে যদি আমার অপঘাতে মৃত্যু হয়, এই মানুষগুলোই কাল আমার কবরের উপর থুতু ছিটিয়ে দিয়ে বলবে "মরেছে শুয়োরের বাচ্চাটা"... তবে এখন আর সেসব নিয়ে চিন্তা করিনা... মা গো, আজকে এটুকুই থাক, হাতে সময় আর বেশী নেই। আবার কবে লিখতে পারব জানিনা। তুমি কিন্তু এই চিঠির কোন উত্তর দিওনা মা। কারন, তুমি যখন এই চিঠি পাবে, আমি তখন হয়তো ঠিকানা বদলে ফেলব।

বরং যদি বেঁচে থাকি, তাহলে আমিই আবার পরে লিখব। ঠিক আছে মা? নিজের যত্ন নিও, ইতি, তোমার খোকা।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.