আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নবাব এর শহর কাবাব এর শহর লখনউ

সীমাহীন পথে ছুটে চলা নদীতে সাঁতার কাটি আমার অবারিত স্বপ্নের বৈতরনি নিয়ে .......... " স্যার , এ যো কাবাব কে বারে ম্যা বাতা রাহিহু না। ও আপ যাব খাওগি না দেখনা , একদাম মু মে বিঘাল জায়েগা " এটা ছিল আমাদের পাণ্ডে জি র বর্ণনা লাখনউ র কাবাব এর অবশ্যই অঙ্গ ভঙ্গির মাধ্যমে কথা ছিল ট্রেন থেকে খুব ভোর এ যখন স্টেশন থামবো , আমাদের কে মাটির ভার এর চা খাওয়াবে , যার স্বাদ নাকি আমরা জিন্দেগী ভার নেহি ভুল পাউজ্ঞা থুরি মহিলা বলে কথা বলতে হবে পাউজ্ঞা ( নাহিন ভাবি চুপি চুপি আমাকে বলেন , বুঝলেন না , এমন আফিম মেশানো চা খাওয়াবে , আপনি প্রতি উইক এন্ড এ লাখনউ চলে যাবেন এর পর দেখবেন লাইফ চলছে দিল্লি লাখনউ করে বাচ্চাদের পরীক্ষা চলছে , সারা জীবনে পড়াশুনা যত ফাকিবাজি করেছি সেগুলো র শোধ করে চলছি , অ ,আ , ১, ২ নামতা , বাক্য গঠন কোনটাই বাদ পরছে না , সব শিখতে হচ্ছে এই টাইপ এর কান দিয়ে ধুয়া ছোটা অবস্থায় , হুট করে অফিস থেকে বাসায় ফিরে , কর্তা ঘোষণা দিলেন আগামী ২১ তারিখ আমরা লাখনউ যাচ্ছি মুহূর্তে আমি ছেলে মেয়ে সহ বসে গেলাম পরীক্ষার সময় সূচী নিয়ে , দেখলাম মেয়ে র ইংলিশ আর ছেলে র ম্যাথ তার মানে ডবোল প্রেসার কান দিয়ে ডবোল ধোঁয়া যে ভদ্র লোক কে স্কুল ছুটির দিন গুল তে কোথাও বেরাতে যাবার , আবদার করা যায় না , কারন উত্তর একটা " আমি দিল্লি এসছি চাকরি করতে বেড়াতে নয় " সুতরাং বুঝতে ই পারছেন , না বলার কোন উপলক্ষ এ নাই ... বাংলাদেশী আমরা দুই পরিবার সাথে বাকিরা সব এখানকার । শুক্রবার রাত । । এমনিতেই মন টা একটু ফুর ফুরে থাকে পরবর্তী দুইদিন ছুটির আমেজে সুতরাং বই খাতা সহ পরিক্ষার প্রস্তুতি নিতে চললাম শের শায়েরি , মুজরা কাবাব এবং নবাব এর শহরে নিজামুদ্দিন এর পথে ... গাড়ি থেকে নিজামুদ্দিন নেমে , যার যার সম্বল ঘটি বাটি নিয়ে দৌড়ের উপর চলা সুরু করতে হল , প্লাটফরম এ যেতে আমাদের কে বেশ অনেকটা পথ হাটতে হবে সত্যি বলছি লোকাল জনগন না থাকলে , সারারাত ঘুরতে হতো ওই জন অরন্যে , সুরু হল আমার ভারতে র প্রথম রেল ভ্রমন উইথ শতাব্দী এক্সপ্রেস ট্রেন এ উঠে সব কিছু ঘুছিয়ে বসতে ই যথাসময় এ যাত্রা সুরু করল ,আর আমি ব্যস্ত হয়ে গেলাম ছেলে মেয়ে র ঘুমানোর চিন্তায় , না হয় আগামিকাল সমস্তদিন বিরক্ত করবে বেড়ানোর আনন্দ মাটি ... আমাকে বলা হোল এখানকার ৬ সিট এর মাঝে ৪টা আমাদের বাকি দুইটা তে অন্য এক কাপল বসবে ...।

আমি খুজে খুজে হয়রান ৬ টার মাঝে ৪ টার দেখা মিলে বাকি কোথায় ? পাশে র যুবক এগিয়ে এলো , হুট করে কোথা থেকে হাঙ করা একটা সিট বেড় হয়ে এলো , প্রথমে টাশকি এরপর হাসি । । তিন তলা আসনবিন্যাস এর ব্যাপারে কোন ধারনা এ ছিল না যেহেতু বাসা থেকে ডিনার করে এসছি, বাকি ছিল ঘুম ,তৃতীয় তলা তে মেয়ে , ২য় তে ছেলে আর এক্কেবারে নিচ তলা আমার জন্য বরাদ্দ । । বুঝতে ই পারেন কর্তা ততোক্ষণে বাকিদের সাথে রানি কে নিয়ে কার্ড খেলাতে ব্যাস্ত হয়ে পরেছে এ এক অন্যরকম অনুভূতি ।

ছোট বেলায় দোলনা তে ঘুমাতে মনে হয় এমন এ লাগতো কি ভাবছেন এক ঘুমে রাত কাবার ??? উ হু ততক্ষনে রাত ৩ টা বাজে । সকাল ৫ টার দিকে উঠে বসলাম দেখি বাচ্চা রা আগে ই জানলা দিয়ে , বাইড়ে দেখছে আর গল্প করছে কে কি দেখল , আমি বাইরে তাকিয়ে দেখি ঘুটঘুটে আন্ধার ভ্রমন এর উৎসাহে উপরওয়ালা জানেন কি দেখে কি ভাবছিল শৈশব হয় এ এমন রঙিন , অন্ধকার কে মনে হয় বিশাল ক্যানভাস , ইচ্ছা মতো নিজের রঙ এ রাঙিনো যায় ...... আমার ট্রেন প্রতিবেশী রা ও ততক্ষণে সরব নিজেদের খুনসুটি নিয়ে ... শুরু হয়ে গেল নামবার প্রস্তুতি ... আমরা যেহেতু ছিলাম শেষ ষ্টেশন এর তাই মোটামুটি ট্রেন ফাঁকা , দল এর সবাই একসাথে নামতে হবে অপেক্ষা করছি ... আর ভেতর থেকে যতটুকু সম্ভব শহর কে দেখে নিলাম ...। ষ্টেশন ষ্টেশন নেমে আমাদের নারায়ণগঞ্জ এর রেলষ্টেশন এর সাথে কোন পার্থক্য পেলাম না , ছোট , নোংরা । । এখানে সেখানে পান এর পিক , থুথু ।

। তবে নিজামুদ্দিন সত্যি ই অনেক বড় এবং ভালভাবে সংরক্ষিত । সোজা হোটেলে চলে গেলাম ফ্রেশ হতে। । নিচে এসে দেখলাম আমাদের কেউ তখন ও রিসেপশন এ আসে নি ।

। খবর নিয়ে দেখল , কমবয়সী ছেলে গুল সব হাই ভলিউম এ গান এর সাথে উদ্দাম নৃত্ত করছে সাথে । । গ্রেপ জুস সারারাত বস দের সাথে ছিল , মুক্তি পেয়ে এই উল্লাস । ।

কিন্তু উল্লাস দীর্ঘ স্থায়ী হল না বলাবাহুল্য ...। শহরের সেরা নাস্তা র ধাবা তে চলে এলাম সব হুরমুর করে। । হাতে বানান মাখন ,ব্রেড , ছোলা , পুরী সুজি সিঙ্গারা আলুসাব্জি রটি ... সাথে চা ... ইমামবাড়া দর্শন ...। চমৎকার মিষ্টি রোদ এ সুরু করেছিলাম লখনউ ভ্রমন , ইমামবাড়া পৌছাতে তাপ দুগুন , শহর তাকে অনেক আপন মনে হোল ... আবহাওয়া থেকে সুরু করে, শহরের অলিগলি সব কিছু আমাদের যে কোন মফস্বল শহর কে মনে করিয়ে দেয় , পোশাক আচরণ সব কিছু , মুসলমান আধিক্য রয়েছে , রয়েছে খাবার এ রয়েছে নাবাবি ছোঁয়া ...।

নবাব আসাফ উদ -দৌলা নির্মিত এই ভবন মূলত ১৭৮৪ সাল এ ,হযরত ইমাম হসসাইন এর নাম অনুসারে । । অনেকটা তাজ মহল এর অনুরূপ ইমামবাড়া অন্দর মহল মুহরাম এর সময় মিছিল এর তাজিয়া এই ইমামবাড়া মাঝে এ রয়েছে বিখ্যাত ভুলভুলাইয়া , যেখানে নবাব বেগম দের সাথে লুকোচুরি খেলতেন দেয়াল এর ও কান আছে এর দেয়াল তৈরি তে কয়লা র মিশ্রন ব্যাবহার করা হয়েছে , এতে করে প্রাসাদ এর যে কোন পাশে কিছু বললে, অন্য পাশে সেটা শুনতে পাওয়া যায় আমাদের বর্ণনা কারি গাইড এর ভাষ্য অনুযায়ী , প্রাসাদ এর প্রহরীরা যাতে কোন ধরনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হতে না পারে , তার জন্য এই নিরাপত্তা ... হায় রে যার যত বেশি আছে তার ঘুম তত কম , দেয়াল এর ছবি বাউলি র এক্কেবারে অন্দর মহল এর এর কূপ এর পানি তে , ইমামবাড়ার মুল দরজার জন প্রবেশ কারি দের ছায়া পরে এত চমৎকার বিস্ময় পূর্ণ স্থাপনা , ভাব্লে অবাক লাগে ... পূরটাই সুন্দর পরিকল্পনার ছাপ রয়েছে । অই যে কইলাম যত আছে তত চিন্তা এই পানি র উৎস গোমতী নদী , এখানে ডুব দিয়ে সাঁতার কেটে নদী তে ভাসা যায় ... কথিত আছে , মহল এর শেষ কর্মচারী দেওয়ান রাস্তুগি শত্রুর হাতে ধরা পরলে , এই খানে প্রাসাদ এর সকল চাবি সহ ঝাঁপ দেন , পরে উনার মৃতদেহ পাওয়া যায় । ।

কিন্তু চাবিগুলো নদী বুকে ঠাই পায় ...... আমাদের জোহর নামায এর সময় মধ্য দুপুর । । ইমামবাড়া তে দেখলাম অপূর্ব এক মসজিদ , সেখানে সবাই নামায পড়লাম ,। । শুধু আমরা ই শুনলাম শুক্রবার ব্যাতিত সেখানে কোন জামাত হয় না পাশে রয়েছে ছোট ইমামবাড়া ।

যা কিনা নাবাব আলিশাহ নির্মাণ করান , বড় টার অনুরুপ এ এখানে আলি শাহ এবং তার মায়ের কবর রয়েছে দিনের এই পর্যায়ে আমরা ক্লান্ত ক্ষুধার্ত । । সুতরাং খাবার পালা যে কাবাব এর গল্প আমাদের কে এখানে এনেছে , তার সানিধ্য কামনায় আমরা উদগ্রীব টুন্ডাই কাবাব ...... সকালে গাড়ি তে যখন রেডিও তে এখানকার প্রভাতী শুনছিলাম , সেখানে , চমৎকার , সু-নিপুন ভাবে মেজাজ খারাপ করে দেয়া ন্যাকা এক আর । জে ... আমাদের কে বার বার আনুরধ করল এখানে এসে আগার টূণ্ডাই নেহি টেস্ট কিয়া তো কুচ নেহি কিয়া । মেয়ে রা ভুলে গেছিলাম, কিন্তু ছলনাময়ির মিষ্টি ভাষণ বাকি রা ভুলতে পারে ? টুন্ডাই কাবাব .ঘর এর ভীর দেখার মত ...।

সবাই নিরব হোটেলর মত শান্তিপূর্ণ ভাবে অপেক্ষা করে টেবিল খালি হবার আগে এ একটা হাত বা, পা বাড়িয়ে দিয়ে বুক করে রাখে আমরা দুইজন কে আগে ই পাঠিয়ে ছিলাম, তাই খুব বেশি ঝামেলা পোহাতে হয় নি । । চরম অপেক্ষা ... র পর বিখ্যাত টুন্ডাই আসলো । । আহ্‌ ভাঙিয়া মুখে পুরিবার পর , এক অপূর্ব দৃশের অবতারনা হইলো যাহা বর্ণনার আতিত বিজ্ঞজন এর মতে( ভারতীয় ) ইহাই ভারত বর্ষের সর্বকাল এর সর্ব উৎকৃষ্ট কাবাব ।

নিন্দুকের ভাষায় ( বাংলাদেশী ) এই বস্তু আমাদের দেশীয় নির্বোধ কে খাওয়াইলে তাহার বোধ শক্তি পুর মাত্রায় ফিরিয়া পাইবে । একদিকে আমাদের টেবিল এ আমরা কোনটা খাব খুজে পাচ্ছি না, অন্যদিকে বাকি সব টেবিল উহ আহ , টেস্টই । লা জাবাব । । এর শব্দে কান ঝালাপালা মনে হচ্ছিল আদা রসুন নামে যে কোন মসলা আছে সেটা নাম, সাধ গন্ধ কোনটার সাথে ই এদের পরিচয় নাই ... এদের কাছে মসলা মানে গরম মসলা র সাধ হচ্ছে লবন ।

মনে মনে ভাবলাম আহা বেচারা রা ভাল খাবার হইতে বঞ্চিত ,সুখাদ্য র সাধ উহারা পায় নাই উহাদের কে যদি ঢাকা শহরের ইটালি হোটেলে বসানো হয় ,তাহা হইলে কিঞ্চিৎ মোক্ষ লাভ হয় আমাদের মিতালি ,সোহাগ , নিরব , স্টার কাবাব , মৃগয়া হবে ওদের জন্য স্বর্গ বাচ্চা রা অনেক ক্লান্ত তাই হোটেল এ ফিরলাম, বিকেলে শপিং করব ... এখানকার চিকেঙ্কারি হাত এর কাজ বিখ্যাত আসর ,মাগরিব, নামাজ শেষ করে আমি বসলাম বাচ্চা দের কে একটু পড়া তে , বাকি রা সবাই শপিং এ ... আমার শাড়ী অবশ্য চলে এসছে সময় মত রাতে হোটেল এর পাশে এক রেস্টুরেন্ট এ গেলাম, খাবার মোটামুটি ভাল কিন্তু পরিচ্ছন্ন তার অভাবে , কোন মতে ফিরে এলাম। ২য় দিন উজ্জ্বল এক ভোর এ হোটেল এ নাস্তা খেয়ে বের হলাম। লা মারতটিনিয়ার দেখলাম ,যা ১৮ শতকে তৈরি মোঘল আর ইউরোপীয় ধাচে র স্থাপনা ,বর্তমানে এটি , বিক্ষাত কলেজ একে একে ক্লক টাওয়ার বিশ্ববিদ্যালয় রুসি দরজা , গোমতী নদী র তীর এর মতি মহল মুক্তা প্রাসাদ নামে এর পরিচিতি , যেখানে নবাব অবকাশ কালিন দিন যাপন করতেন , সব দেখে গোমতী নদি তে নৌকা ভ্রমন করলাম সর্ব শেষ দেখলাম ১৭৮০-১৮০০ সনে স্থাপিত রেসিডেন্সি ব্রিটিশ আবাসিক দের জন্য নির্মিত এটা ছিল উনাদের বাথরুম ছত্তর মঞ্জিল দিল্কুশা কোঠি দেখছি দৌড়ের উপর , তাই আপনাদের ও সেভাবে দেখালাম সেখান থেকে দুপুরের খাবার , আগের চাইতে ভাল , পরিবেশ ঠিক ঠাক ,কিন্তু এমুন চিপা যে ১মাইল দূরে গাড়ি রাইখ্যা আসতে হয় খাইতে কিন্তু কি আর করা আসতেই হল ... অনেক কিছু খেলাম এখানে ...। । সেখান থেকে কোন মতে হোটেল এ পা রেখে ব্যাগ সহ সোজা রেল ষ্টেশন ...।

ফিরে চল ব্যাস্ত জীবনে ২৪*৭ দিন ব্যস্ততায় কাটানোর পর, বাচ্চা দের পরিক্ষার মাঝে র এই ছোট্ট পরিবর্তন আমাদের সবার জন্য অনেক খানি টনিক এর কাজ করেছে । । অল্প সময় এর জন্য হলে ও ফিরে পেয়েছিলাম ,আমার সৃতির শহর মুনশিগঞ্জ কে , যেখানে সকল শ্রেণীর মানুষ গুল নিজস্বতা নিয়ে বসবাস করে ...। এই ট্যুরে একটা প্রাপ্তি না না ঠিক প্রাপ্তি না। প্রমান হোল ... কোন কিছু তে অতিরিক্ত আশা করে থাকতে নেই ।

। এমন টুন্ডাই খাওয়াইছে ... যে এটা এখন ঐতিহাসিক রুপ পেয়ছে মন খারাপ, তখন বলি মন টা পুরা টুন্ডাই হয়ে আছে, রান্না ভালহয় নাই বলি, আজকের রান্না এক্কেবারে টুন্ডাই ... অপরিচিত বাসায় দাওয়াত , খাবার একদম মজা হয় নাই কিন্তু বলতে পারছি না , জিজ্ঞেস করলেন খাবার কেমন লাগছে । । কঠিন ফাটাফাটি মুড নিয়া বলি , কি যে বলেন ঝাক্কাস খাবার পুরা টুন্ডাই এইবার বলেন আমার পোস্ট টা ও নিশ্চয়ই । ।

টুন্ডাই এর উপর টুন্ডাই মানে ডবোল ...............। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.