আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নবাব সিরাজউদ্দৌলা

মীরজাফরের পুত্র মিরনের নির্দেশে মোহাম্মদী বেগ ৩ জুলাই নবাবকে হত্যা করে। এরপর নবাবের মৃত দেহ হাতির পিঠে উঠিয়ে সারা মুর্শিদাবাদ শহর ঘুরিয়ে অমর্যাদাকর অবস্থায় ফেলে রাখা হয়। রাতের আঁধারে নবাবদের বিশ্বাসী খাদেম হোসেন খাঁ খোশবাগে তাঁকে সমাহিত করেন। ২৪ বছর বয়সে স্বদেশকে ভালবেসে, স্বদেশের মানুষকে ভালবেসে, স্বদেশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্যই প্রাণবিসর্জন দিয়েছিলেন। সিরাজউদ্দৌলা বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব।

পলাশীর যুদ্ধে নবাবের পরাজয় ও মৃত্যুর পরই ভারতবর্ষে ইংরেজ-শাসনের সূচনা হয়। রবার্ট ক্লাইভ বা লর্ড ক্লাইভ। তিনি ছিলেন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সেনাপতি। ভারত উপমহাদেশে ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠায় মূল ভূমিকা পালন করেন এই ব্রিটিশ সেনাপতি। ১৭২৫ খ্রীষ্টাব্দের ২৯ সেপ্টেম্বরে তার জন্ম।

পলাশীর যুদ্ধে তার নেতৃত্বে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সেনাদল বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলার সৈন্যদল কে পরাজিত করে। তার উপাধি ছিল পলাশীর প্রথম ব্যারন। ১৭৫৭ সালের ২৩শে জুন পলাশীর প্রান্তরে সিরাজের পরাজয় এবং ২রা জুলাই ঘাতকের হাতে তার প্রাণ হারানোর মধ্য দিয়ে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়ে যায় বহুকালের জন্য। নবাব সিরাজউদ্দৌলা ছিলেন বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার স্বাধীন নবাব। তার জন্ম ১৭৩৩ সালে।

নবাবের পুরো নাম মীর্জা মুহম্মদ সিরাজদ্দৌলা। নবাব আলিবর্দী খাঁ’র মৃত্যুর পর, তার ইচ্ছা অনুযায়ী ১৭৫৬ খ্রিষ্টাব্দে বাংলার মসনদে আরোহন করেন নবাব সিরাজউদ্দৌলা। সিরাজের রাজত্বকালের প্রথম থেকেই ইংরেজরা নানাভাবে তার কর্তৃত্ব উপেক্ষা করতে থাকে। তারা সিরাজের অনুমতি ছাড়াই দুর্গ নির্মাণ করে। সিরাজ তীব্র প্রতিবাদ জানান এবং দুর্গ নির্মাণের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।

গোলান্দাজ বাহিনীর প্রধান নিহত হওয়ার পর সিরাজদ্দৌলা মীরজাফর ও রায় দুর্লভকে তাঁদের অশ্বারোহী বাহিনী নিয়ে তীব্র বেগে অগ্রসর হতে নির্দেশ দেন। কিন্তু উভয় সেনাপতি তাঁর নির্দেশ অমান্য করলেন। ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে বিশ্বাসঘাতক মীর জাফর, জগৎশেঠ, রায়দুর্লভ, উর্মিচাঁদ যেভাবে ও যে উদ্দ্যেশ্যে হাত মিলিয়েছিল ইংরেজদের সাথে, ঠিক একইভাবে ও একই উদ্দ্যেশ্যে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে কুচক্রী গোলাম আযম, আব্বাস আলী খান, ফকা চৌধুরী ও মোনায়েম খানরা হাত মিলিয়েছিল পশ্চিম পাকিস্তানীদের সাথে। ঐতিহাসিক মেলেসন পলাশীর প্রান্তরে সংঘর্ষকে ‘যুদ্ধ’ বলতে নারাজ। তার মতে,“নবাবের পক্ষে ছিল ৫০ হাজার সৈন্য আর ইংরেজদের পক্ষে মাত্র ৩ হাজার সৈন্য।

কিন্তু প্রাসাদ ষড়যন্ত্রকারী ও কুচক্রী মীর জাফর, রায় দুর্লভ ও খাদেম হোসেনের অধীনে নবাব বাহিনীর একটি বিরাট অংশ পলাশীর প্রান্তরে ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে কার্যত কোনো অংশগ্রহণ করেনি। এই কুচক্রীদের চক্রান্তে যুদ্ধের প্রহসন হয়েছিল। ” বয়সে তরুন হলেও নবাবসিরাজউদ্দৌলার চিন্তা ছিল নিঁখুত ও নির্ভূল। সিরাজউদ্দৌলা বুঝতে পেরেছিলেন, বিদেশী ইংরেজরাই একদিন এদেশের স্বাধীনতা ও সম্পদ কেড়ে নিতে পারে। তিনি যাদেরকে বিশ্বাস করেছিলেন, তারাই ইংরেজদের সাথে চক্রান্তে লিপ্ত হয়ে তার বিপক্ষে চলে যায়।

পরাজিত হয়ে নবাব শেষ মুহূর্তে ঘাতকের কাছে প্রাণভিক্ষা নয়; ওজু করে দু রাকাত সালাত আদায়ের সুযোগ দানের অনুরোধ করেছিলেন। সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক রচিত ‘নারীগণ’ নাটকে লেখক দেখিয়েছেন নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে হত্যার পর নবাব মহলের অন্তপুরে বন্দি নারীদের নানা উপলব্ধি। নবাব সিরাজের বন্দি নানী, মা, পত্নীর জবানে উঠে আসে তাদের জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা। বন্দি নারীদের আত্মহত্যার পথ বন্ধ করে দেয়া হয়। অঙ্গুরির বিষ কেড়ে নেয়া হয়, কেড়ে নেয় হয় খঞ্জর।

প্রহরীর রূঢ় হাত তাদের শরীর স্পর্শ করে। তাদের বন্দি করার মধ্য দিয়েই ঘটনার শেষ হয় না। ক্ষমতা পাকাপোক্ত এবং বিদ্রোহের পথ রুদ্ধ করতে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে এসব নারীকে হত্যাও করা হয়। হত্যা করা হয় নারীদের আত্মপ্রকাশের সুযোগ। হত্যা করা হয় নারীর মর্যাদা আর অধিকার, হত্যা করা হয় নারীর স্বাধীনতা।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.