আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ওয়ান ইলেভেন এর দুই বছর বা এক যুগ পূর্তি !!!



১৯৭৭ সাল থেকে মেয়েটিকে চেনে ছেলেটি। বড় বোনের কাছে পড়তে আসতো মেয়েটি। ওরা থাকতো একই কলোনীতে। ছেলেটি আর মেয়েটির পরিবারের মধ্যে এক সময় সখ্যতা গড়ে উঠে। এভাবে ৭৭ থেকে ৮২।

এক সময় ছেলেটির বাবা বদলী হয়ে যায়। কলোনী ছেড়ে তারা চলে যায় অন্য কোনো স্থানে। মেয়েটি থেকে যায় আগের স্থানেই। ছোট কাল থেকেই ছেলেটি বাউন্ডুলে। সারাদিন বন্ধুদের সাথে আড্ডা, যখন তখন দেশের এ স্থান থেকে সে স্থানে ঘুরতে চলে যায়।

নামে মাত্র পড়তো বিশ্ববিদ্যালয়ে। ক্লাস টাসের ধার ধারতো না। ৯১ সালে ছেলেটি কঠিন ভাবে জড়িয়ে পড়ে একটা মেয়ের সাথে। তদ্দিনে সে চাকুরী নিয়ে ঢাকার বাইরে। প্রতি সপ্তাহে ঢাকায় আসা আর মেয়েটির সাথে দেখা করা ছিল ছেলেটির নিয়মিত রুটিন।

ছেলেটির পরিবার, বন্ধুমহল- সবাই জানতো ওদের বিষয়টি। ৯১ থেকে ৯৪। ভালোই যাচ্ছিল ওদের দিনকাল। হঠাৎ ঝড় শুরু হয়। সে ঝড়ে টানা ৪ বছরের সম্পর্কটা তছনছ হয়ে যায়।

স্বল্প আয়ের ছেলেটিকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা মেয়েটি স্বপ্নের জগৎ থেকে বাস্তবে ফিরে আসে। মেয়েটির বড় দু বোনের নিজেদের ঢাকায় বাড়ি আছে। আর ছেলেটি...? ৫/৬ হাজার টাকা বেতনের চাকুরী করে। কী হবে মেয়েটির ভবিষ্যৎ ? তাই ঠান্ডা মাথায় (!) বসে সম্পর্কের ইতি ঘটালো মেয়েটি। ছেলেটি আর তার বন্ধুদের তরফ থেকে সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখার ব্যাপারে চেষ্টার কমতি ছিল না, হয়নি।

সবাই ব্যর্থ হয়। ৯৫ সালের ফেব্র“য়ারি মাস। বই মেলায় ছেলেটি একটা স্টল নেয়। সে সময় হুমায়ূন আহমেদের যুগ। তাই হু.আহমেদের একক বইয়ের দোকান করে।

দোকানের নাম- কোথাও কেউ নেই। মধ্য ফেব্র“য়ারির কোন এক ছুটির দিনের ঘটনা। দুপুরের পর একদল মেয়ে এলো দোকানে। এর মধ্যে একটি মেয়েকে দেখে ছেলেটির এক বা একাধিক হার্টবিট মিস হলো। সমস্যা হচ্ছে, মেয়েটি খুব চেনা-কিন্তু চিনতে পারছে না ছেলেটি ! বেশ কিছু সময় পর মেয়েটির বান্ধবীরা পরিচয় দিলো।

তাইতো ! ছেলেটি চমকে উঠে। এইতো সেই মেয়ে, যাকে নিয়ে ছোট বেলায় সে স্বপ্ন দেখতো। এ মেয়েটিকে ৮২ সালের পর আর দেখেছে কি না, মনে নেই। বাসায় ফিরে ছোট ভাই বোনদের মেয়েটির গল্প বলে। শুনে ভাই বোনেরা উল্লসিত হয়।

নিজেদের মধ্যে জরুরি মিটিং করে। বাবা কে গিয়ে বলে- ‘ আমরা মেজদার জন্য পাত্রী পেয়েছি। আপনি অনুমতি দিলে ওর বাবা-মায়ের সাথে আলোচনা করা যায়। ’ ছেলেটির মা মারা গেছেন ৮৮ সালে। বাবা দীর্ঘদিন থেকে একা।

তার বড় ছেলে বৌ নিয়ে আলাদা থাকেন। সপ্তাহান্তে বাবার সাথে দেখা করে যায়। সারা দিন ছেলে মেয়েরা স্কুল-কলেজ আর অফিসে ব্যস্ত থাকে। সব ভেবে বাবা রাজি হন। ৯৬ সালের মাঝামাঝি মেয়েটির পরিবারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়।

ছেলেটির বাবার সাথে মেয়েটির বাবার আগে থেকেই চমৎকার সম্পর্ক ছিল। যদিও ম্যালাদিন যোগাযোগ নেই। কিছুদিন সময় চেয়ে নেয় মেয়েটির বাবা। অবশেষে হ্যাঁ বলেন তিনি। ৯৬ সালের ১ নভেম্বর মহা ধুমধামের সাথে মেয়েটি আর ছেলেটির বিয়ে হয়।

তারপর ? কতকিছু ঘটে পৃথিবীতে...। ওদের জীবনে। মেয়েটির বাবা মারা যান ৯৮ সালে। ২০০০ সালে ওদের এক ছেলে সন্তান হয়। ২০০১ সালে ছেলেটির বাবা মারা যান।

আজ ২০০৮ সালের ১ নভেম্বর। আজ বাংলাদেশের ওয়ান ইলেভেনের দ্বিতীয় বর্ষ পূর্তি। আর ছেলেটি এবং মেয়েটির বিয়ের এক যুগ পূর্তি। হাসি-আনন্দ-দুঃখ-বেদনা-কষ্ট-সুখ নিয়ে ওরা দিব্যি কাটিয়ে দিয়েছে ১২ বছর। ওরা ভাল আছে, সুখে আছে।

আসুন, ছেলেটি আর মেয়েটির জন্য দোয়া করি- ওরা আমৃত্যু সুখে থাকুক। ভাল থাকুক। পুনশ্চ : এই গল্পের সাথে লেখকের জীবনের সম্পর্ক কাক তাল মাত্র !


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.