আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ম্যাচের বিবর্তন

বাংলাদেশ ব্লগারস এসোসিয়েশন সদস্য নং: ১০ । facebook.com/milton3d

একসময়ে মানুষ পাথরে পাথর ঘষে আগুন জ্বালাতো। সে আদিম যুগের কথা অবশ্য। তখন থেকে মানুষ আগুনে ঝলসিয়ে খাবার খেতে শুরু করলো। তার আগেও মানুষ তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতো কিভাবে বনের পর বন পুড়ে ছাই হয়ে যায় শুকনো ডালে ডালে ঘর্ষন লেগে।

তাকিয়ে দেখা ছাড়া কোন উপায়ই ছিল না। তখন হয়ত আগুনটা একটা অভিশাপই ছিল। কিন্তু আস্তে আস্তে এই শক্তিটি মানুষের নিয়ন্ত্রনে আসলো। সঠিক নিয়ন্ত্রন ও ব্যাবহারের ফলে এই আগুন এখন সভ্যতার একটা বিশেষ অংশ বিশেষ। হয়ত অনেক পরে বারুদে বারুদে ঘষা দিয়ে আগুন জ্বালানোর পদ্ধতি আসলো।

তারপর সেটা সংরক্ষিত হলো একটা ছোট বাক্সে। নাম তার ম্যাচ। বাংলায় আমরা বলি দিয়াশলাই। প্রয়োজনে কাঠির আগায় থাকা বারুদের সাথে প্যাকেটের গায়ের বারুদে ঘষা দিলেই জ্বলে উঠে আগুন। কালে কালে এই ম্যাচ বাক্স রূপ নিয়েছে বিভিন্ন আকৃতিতে।

কখনও ছোট কখনও বড়। আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন দেখেছি কাঠের চিলতা দিয়ে বানানো বাক্সের ম্যাচ। দাম ছিল পঞ্চাশ পয়সা। হয়ত মটর মার্কা ম্যাচের প্রচলন ছিল বেশী। আরো অনেক মার্কার ম্যাচ পাওয়া যেত।

সেই ম্যাচেও আস্তে আস্তে বিলুপ্ত হলো বাজার থেকে। এলো কাগজের তৈরী বাক্স। তাতে ভর্তি কাঠের কাঠি। আগের চেয়ে দেখতে সুন্দর। দাম ছিল একটাকা মাত্র।

প্যাকেটের গায়ে লিখা থাকতো (৪০±২) টি কাঠি। এরপর ভারতের অনুকরনে বাজারে এলো কাগজ আর মোম দিয়ে বানানো কাঠি আর কাগজের বাক্স। কিন্তু কাঠির দূর্বলতার কারনে সেটা বেশীদিন চললো না বাজারে। একসময় ধুমপায়ীদের পকেটে উঠে আসলো গ্যাস লাইটার। পাথরে পাথরে ঘর্ষন দিয়ে আগুন জ্বালাবার সেই আগের রীতিই।

পাছে জ্বালানী হলো গ্যাস। ম্যাচের জায়গা হয়ে গেলো হেশেলে। কিছুদিন আগে আমাদের বাজারের হঠাৎ ছন্দপতনে বেড়ে গেলো সব কিছুর দাম। কিন্তু ম্যাচের দাম অনেকদিন এক টাকাই রইল। কিন্তু বিক্রেতারা ওটা আর একটাকায় বিক্রি না করে দুই টাকায় বিক্রি করা শুরু করলো।

কিন্তু সেখানে একটা অতৃপ্তি মনে রয়ে গেলো। সেটা ক্রেতা আর বিক্রেতার মাঝে। শুরু হলো দুই টাকায় ম্যাচ বিক্রি। কিন্তু দুই টাকায় এক টাকার ম্যাচ কেনাটা কেমন যেন দেখায়। সেখানেও সেই অতৃপ্তি।

যার ফলে বাজারজাতকরন করা হলো নতুন আকারে বড় ও বেশী কাঠি সম্বলিত ম্যাচের বাক্স। এবার দাম দুই টাকা। সেখানে লেখা এখন (৬০±২) টি কাঠির কথা। কেউ কি গুনে দেখেছে (!) এভাবে হয়ত কোন একসময়ে সময়ের দাবীতে আবারো এর আকার পরিবর্তন হবে। কিন্তু এই আগুনের ব্যাবহার কিন্তু থেকেই যাবে নিশ্চিত ভাবে।

এভাবে কালে কালে কোন জিনিস তার ভোল পাল্টায় প্রয়োজন অনুসারে কিন্তু তার মূল নেচার একই থেকে যায়। যা কখনও পরিবর্তন হয় না। এভাবেই বিবর্তিত হয় সব জিনিস।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.