আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সরকার এবং প্রতিক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলের কলংক ঢাকার অবলম্বন: আমাদের হাবাগোবা এক ভাস্কর্য



প্রথমত আমাদের জানতে হবে, বিমানবন্দরের গোলচত্ত্বরে এই মূর্তিবিরোধী গোষ্ঠীটির আকস্মিক উগ্রতার মূলে এবং এর ব্যাপক মিডিয়া কাভারেজের পছনে কোন ধরনের বিবেকবোধ, ইন্ধন ও ইঙ্গিত লুকিয়ে আছে কিনা। এরই সাথে যোগ করতে হবে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিÑ আন্তর্জাতিক ও দৈশিকÑ উভয়ই। আর দেশের ভেতর যখন সবচেয়ে জরুরি মানুষে মানুষে একতা, সবসময়ে এবং এই সময়েও, তখন বৈদিশক শক্তির কাছে সবচেয়ে জরুরি অনৈক্যÑ কি বিশ্বাসের ভিত্তিতে, কী সংস্কৃতির ভিত্তিতেÑ বর্তমান সময়ে। এতে তাদের সার্থ হাসিল সহজ হয়... ... আমাদের দেশে সবসময়ে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে এই অন্ধধর্মীয়ভাবাবেগ। ফলে তা সবসময়েই মাথা চারা দিয়েছে ঠিক নির্বাচনের আগে আগে এবং পরপরেই বা সরকার যখনই বিরাট কোন সংকটে পড়েছে তখনই।

পার্শ¦বর্র্তী দেশ ভারত এবং দূরবর্তী কিন্তু গুরুত্বপুর্ণ দেশ পাকিস্তানের েেত্রও একই কথা প্রযোজ্য। ধর্মান্ধ গোষ্ঠীগুলো আর্ন্তজাতিক পরিস্থিতির প্রতি অন্ধ থেকে গোয়ার্তুমি করে চলেছে। এতে নয়া সাম্রাজ্যবাদী দেশটির অভিমতই দেশের ভেতর মূর্তরূপ পায়। সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো চায় একটা দেশের ভেতর যতটা সম্ভব একটা জনপ্রতিনিধিত্বহীন সরকার আর এরই পরিণতিতে দেশে গণবিচ্ছি ধমৃান্ধ গোষ্ঠীর এই আস্ফালন। আবার এই আস্ফালনকেই ব্যবাহার করা হয় একটি দেশের অর্থনৈকি-রাজনৈতিক পরিবেশকে অস্থির করে দিয়ে নিজেদের সার্থ হাসিলের ধান্ধায়।

বিপরীতে, এর ভেতর দিয়ে সবসময় তিগ্রস্থ হয়েছে দেশ, সাধারণ মানুষ। এর পরিণতিতে সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ কেবলি দূর থেকে আরো দূরে মিলিয়ে গেছে। একটি সরকার যখনই অনেক দিক দিয়ে ব্যর্থ হয়ে পড়ে, বড় ধরনের সংকটে পড়ে তখনই আমরা দেখতে পাই, ব্যর্থতাকে, সংকটকে লুকাতে এমনতর ঘটনা ঘটতে থাকে Ñ নিমর্ম পরিহাস হলেও এ সত্য। তা যে রাজনৈতিক দলই এদেশে মতায় থাকুক, ধর্মান্ধতাকে উস্কে দেয়। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারও কি একই পথের পথিক কিনা কে জানে।

ধর্মের বিষয়ে কোন জোড়াজুড়ি চলবে না । এই সতর্কীকরণ স্ব-ধর্মের ভেতর থাকা সত্বেও নিজেরা সচেতনভাবে বামিয়ন ভাস্কর্য ভাঙ্গার ভেতর দিয়ে প্রকৃতই নিজ ধর্মের প্রতি অবমাননা প্রদর্শন করেছিলো, তারা মানে আফগান তালেবানরা, এর ভেতর দিয়ে তাদের উগ্র অন্ধত্বের সারই রেখেছিলো তারা। সে বেশিদিন আগের ঘটনা তো নয়। এই বিমানবন্দর চত্ত্বর মূর্তি বিরোধী নেতা নূর হোসেন নূরানীর দেশব্যাপী মূর্তিভাঙ্গার ঘোষণা আমাদেরকে সত্যিই অবাক রে দেয় একটা স্বাধীন দেশে এমন অন্ধত্ব ধারণ কিভাবে সম্ভব, অথচ এটাই ঘটছে বাস্তবে। অনেক প্রাচীন ভাস্কর্যও আছে আমাদের জাদুঘরে।

এই সব প্রতœসম্পদ আমাদের অতীত ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ দলিল, সেেেত্র এরা আমাদের ইতিহাসের, আমাদের পরিচয়েরও অভিভাজ্য অংশ। বিভিন্নকালে এসববের নির্মিত হয়েছে। এসবের ভেতর দিয়ে আমরা নিজ জাতীর অতীত, এবং নিজ জাতির অতীত ধর্মীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক রূপরেখা সংরতি দেখতে পাই। ্সব নিয়ে বিভিন্ন ধরনের ভাবনা ভাবা চলে কিন্তু এসব ধ্বংস করে দেয়ার হুমকি কী ভয়ানক তারা নিজের জাতীয় পরিচয়কেই মুছে ফেলতে চায়, এর ভেতর দিয়ে এদের এই জাতীর প্রতি বিদ্বেষই ফুটে ওঠে। এরা মুখে এখন এই জাতীর স্বাধীনতাকে না পারতে মেনে নিলেও এদের কর্মকান্ডে স্বাধীণতা বিরোধিতাই বিদ্যমান।

না হলে দেশের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত শিখা অনির্বান, শিখা চিরন্তন নিয়ে ণিভিয়ে ফেলার হুমকি কিভাবে দেয়, উল্টা প্রশ্ন তোলে, “মুক্তিযুদ্ধের সময় কি আগুন জ্বালানো হইছিলো?” এর কর্মের ভেতর দিয়ে এদের এই দেশের স্বাধীনতার প্রতি তাদের বিরূপ ভাবই প্রকাশিত হলো। এই হুজুররা ভাস্কর্য ধ্বংসের মধ্য দিয়ে এদেশের প্রাচীন ও বিগত ইতিহাসকেই অস্বীকার করছেন। আর প্রাচীন স্থাপনা ও ভাস্কর্য ধ্বংস সাধন সে কেবল বর্বরতার কাজই হতে পারে। যার অর্থ ভিন্ন একটা সংস্কৃতিকে আগ্রাসন করা। অন্যকথায়, ফ্যাসিবাদই হয়ে দাঁড়ায় এটা।

এরা এভঅভৈ হিটলারের কর্মকান্ডের নবরূপায়নকে সামনে নিয়ে আসে। এর ভেতর দিয়ে যেমন ভিন্ন সংস্কৃতির প্রতি বিদ্বেষই লালন করা হয় এবং এর ভেতর দিয়ে আসলে নিজ সংস্কৃতির প্রতি অপর সংস্কৃতির বিদ্বেষকেও জাগিয়ে তোলা হয়। অর্থাৎ, তাদের এই ঘোষণা প্রত্য্য না হলে পরোে সা¤প্রদায়িকতার বিষবাস্পে ভরা। সামনের নিবৃাচনে এই কর্মকান্ডের ভেতর দিয়ে সংখ্যালঘু স¤প্রদায়কে ভীতু করে ফেলা এবং এদে কে ভোট থেকে সরিয়ে রাখা এবং নতুবা তাদের সাথে সহগোমী হতে বাধ্যকরাই এর পেছনের দূরবর্তী কারণ। আর যে কারণে ভাস্কর্যের বিরোধীতা সেটা তাদের কাছে বাহ্যিকভাবে ধর্মীয়।

সেটা উপাসনার নিহিতার্থে নির্মিত কোন জীব-রূপ নির্মাণের েেত্র। যা স্রষ্টার পুঁজার জন্য, দেবতার উপসনার জন্য নির্মিত। ইসলাম বহুল দেবতার বহুল স্বরকে সমর্থন করে না এবং এদের কোন মূত-বিমূর্র্ত রূপ-ও-ভাবনাকেও উপাসনা করে না, অর্থাৎ মূর্তি ও বহু-ইশ্বর বিরোধী। কিন্তু আধুনিককালে ভস্কর্য বলতে মূর্তিপুজারকদের উপসনার উদ্দেশ্যে নির্মিত মূর্তিকে বোঝায় না। বরং এর চেয়ে আরো অনেক বেশি ব্যাপক ও ভিন্ন এই বিষয়টি।

আজকাল আধুনিক ভাস্করগণ তো কোন ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে ভাস্কর্য নির্মাণ করেন না, করেন নিজের দর্শন ও ভাবনাকে স্বাধীন ও নান্দনিক রূপ দেয়ার ল্েয, যার সাথে যুক্ত হয় নিজ সংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদান, সেখানে আসে নিজ সংস্কৃতির ইতিহাসের সেরা ব্যাক্তিত্বগণ, সেরা সামাজিক-ঐতিহাসিক ঘটনাসমূহ বা এর সাথে জড়িত জনগণের মূর্ত-বিমূর্ত-রূপ স্মৃতি-বা-ভাবনা-চিহ্ন হিসেবে দর্শকের স্বাধীনভাবনাকে উস্কে দেয়ার ভেতর দিয়ে স্বসংস্কৃতির সাথে দর্শককে ঐকতানে আনা ও এক অদৃশ্যবন্ধনে বেধে রাখার প্রত্য্যে নয় বরং পরো এক বাসনা। এবং এর সাথে ধর্মীয় উপাসনার কোন যোগ নেই, এমনকি এর সাথে ভিন্ন ধর্মের মূর্তি পূজারও কোন সম্পর্ক নেই। আর ভিন্ন ধর্শীরা যারা মমূর্তিপূজারি তারা তো তাদের নিজ ধর্মের প্রয়োজনে মূর্তি নর্মান করবে। আর এর সাথে তো ভাস্কর্য ধ্বংসের হুমিকি বৈধতা পায় না কোনভাবেই। তা হলে কেন এই ভাস্কর্য বিদ্বেষ, এর ভেতর দিয়ে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষদের উস্কে দিয়ে আসলে তারা অন্যকোন পার্থিব লাভালাভের বাণিজ্যই আসলে করে চলেছে, তার।

এই অসুস্থ মানসকে প্রতিরোধ করতে হবে, যতটা সম্ভব। তো এখানে যেভাবে যুক্তি বিস্তার করা হয়েছে: যারা তাদের নিজের পাবলম্বন করতে গিয়ে মূর্তিভাঙ্গার আয়োজনে একাত্ম তাদের নিজেদের অবশ্যমান্য শাস্ত্রচারও যে এতে মার খাচ্ছে, তা ধর্মান্ধরা রাজনৈতিক স্বার্থে ভুলে থাকতে চাইলেও, সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষকে তা ভুলতে না দেয়া। ভাস্কর্যও এক ধরনের সৃজনকর্ম এবং একই সাথে নিজেই এই সৃজনশীলতার স্মৃতি বাহক। ভাষ্কর্য যে কেবল স্থায়ী অমর অজর কিছু, সবসময় তাও নয়। ণস্থায়ীও হতে পারে।

ভাস্কর্যের সাথে সহগামী আসলে শিল্পী-শিল্প-ভোক্তার বহুমত বহুপথের এক স্বাধীন ানাহত নির্বাধ, নির্বিরোধ নয়,নির্বাধ চর্চা। কোন কোন ভাস্কর্য কয়েকঘন্টার আয়ু দিয়েও তৈরি করা হয় এবং তা শিল্পী মনেরই প্রতিফলন এবং এর পেছনেও কোন ধরনের উপাসনার গন্ধ লেগে নেই। ইসলামের প্রসারণকালে পৌত্তলিকদের মুর্তি পূজার পেছনে পৌত্তলিকদের ধর্মীয়বিশ্বাস জড়িত ছিলো, আর আজকের যুগে যারা ভাস্কর্য চর্চা করে, তারা আদৌ পৌত্তলিক নয়, না তারা মূর্তি পূজাও করে না ভাস্কর্য চর্চার ভেতর দিয়ে। তাহলে তাদের নির্মিত ভাস্কর্যকে কিভাবে মূর্তির সাথে যুক্ত করে দেখা হয়? আর এ দেশে খ্রীস্টিয় বা সনাতন ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা পৌত্তলিকতার সাথে আংশিক বা পূর্ণভাবে জড়িত, তারা যেহেতু ভিন্ন ধর্মাবলম্বী তাদের ভাব-মূর্তি তো ভাঙ্গা যাবে না নিশ্চয়। প্রতিটি ধর্মীয় স¤প্রদায় তাদের ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করতে পারবে, এবং এদের ভাববিগ্রহও এরা নির্মাণ করতে পারবে, এটাইতো নির্দেশ মুসলিম ধর্মের: ধর্মের ব্যাপারে কোন জোড় জবরদস্তি নাইÑ এই স্পষ্ট নিদের্শকে কোন শিতি মুসলিমই লঙ্ঘন করতে পারে না।

তাহলে এই ধর্মান্ধরা দেশের যত মূর্তি আছে সব ভেঙ্গে ফেলার হুমকি কিভাবে দেয়! আবার আমাদের দেশের আমাদের সংস্কৃতির ভাস্করগণ যে ভাস্কর্য নির্মাণ করে থাকেন, তার সাথে তেমন বিশ্বাস যেহেতু জড়িত নেই, তা তাদের এই ভাস্কর্য শিল্পের সাথেও তো উপাসনার বিষয়টি জড়িত নেই, তা হলে পৌত্তলিকতার বিরোধিতা করতে গিয়ে তারা ভুল জায়গায় আঘাত করছেন কেন!, সধর্মে পৌত্তিলকতা নেই, তাই এটি আলোচনার কেন্দ্রে আসতে পারে না এবং পরধর্মের পৌত্তলিকতাতো পৌত্তলিকদের জন্য নির্ধারিত, যাকে বাধা দেয়া মুসলমানদের শাস্ত্রীয় নিষেধ বটে। এইসব ভাস্কর্য ধ্বংসের সাথে তাই ধর্মীয় ধরণের কারন দর্শনোই যায় না। আমাদের দেশে ভাস্কররা কি ধর্মচর্চা করছেন? এমন উদ্ভট ধারণা কেবল অন্ধ উগ্র ধর্মান্ধদের পইে সম্ভব, যা মানা মানে আত্মধ্বংস ডেকে আনা জাতীয় কি রাষ্টীয় েেত্র। অথচ মনে হচ্ছে, এরা যেনো সরকারী প্ররোচাও পাচ্ছে এখন! কিন্তু যারা বিমানবন্দর ভাস্কর্য ভাঙ্গনের সাথে সংশ্লিষ্ট তারা তো মুষ্টিমেয় অশিতি ছাত্র নয়। ফলে একে নেহায়েত অশিার ফল হিসেবে তো আর চালানো যাবে না, এর পেছনে রাজনৈতিক দলের তিব্র প্রেরণা রয়েছে।

এর প্রতিফলন দেখি পরবর্তিদিনের বিভিন্ন রাজনৈতিক ইসলামী দলের তিব্র তিব্র পাবলম্বনের ভেতর। কেবল তাদের এই ভাস্কর্য বিরোধিতার চেহারা দেওয়া হয়েছে ধার্মিক। একসময় ছিলো কোন প্রাণীর ছবি আঁকা যাবে না, ছবি তোলা যাবে না। কিন্তু আজকাল কে না ছবি তোলে। ছবি তোলা যাবে না, কারণ তাতে প্রাণ দেওয়া যাবে না।

এমনই ছিলো তাদের বিশ্বাস। কিন্তু বিভিন্ন টেলিভিশন সাংবাদিক যখন ক্যামেরা হাতে তাদের পানে ছুটে যায়, তখন তো তাদের পাঞ্জাবীর খুট দিয়ে মুখ ঢাকতে দেখি না। তারা তো দিব্যি টববগ করে কথার লাভায়। পরে যখন এসব প্রচার হয় তখন তারা তা গিলতে থাকে। কই বিভিন্ন চ্যানেলে যখন ধর্মীয় অনুষ্ঠান হয়, তখন তো তার বিরুদ্ধে তাদের কোন ধরণের বিরোধিতা সাধারণত চোখে পরে না।

সেেেত্রও তো ক্যামেরা এইসব ছবির প্রাণ দিতে পারে না। তাই বলে কি সাংবাদিকতা বন্ধ করে দিবে তারা। মুসলিম কোন দেশে বিভিন্ন চ্যানেলে সাংবাদিকতা নেই? সৌদির বাদশা এলে তার ছবিও তো ভিন্ন চ্যানেলে চ্যানেলের ও পত্রিকায় ছড়িয়ে পড়ে, তখন কি আমরা এসবের প্রাণ দিতে পারি? তো এই ছবি তোললে প্রাণ দিতে হব, আমরা তো তা দিতে পারি না। কিন্তু এসব বন্ধ করে দিতে চাবে বলুন কোন পাগলে! সমস্ত স্যাটালাইট চ্যানেলে, সারা বাংলাদেশের চাররঙা বিলবোর্ডে যে বিজ্ঞাপন কৌশল, তার বিরুদ্ধে তাদেরকে কিন্তু কখনই দেখিনি রূখে দাঁড়াতে। মাদ্রাসার শিক এবং শিার্থীদের আমরা সবসময়েই দেখেছি কোন সাহিত্যÑশিল্পকলা’র মধ্যে প্রতিফলিত কোন অভিমত তাদের বিরোদ্ধে যাচ্ছে কিনা , তাদের অভিমত যদি এ বিষয়ে হ্য বোধক হয়, তবে তাদের জেহাদি যোশে নামতে দেখেছি মাঠে।

কিন্তু দেশে মঙা চলেছে, দেশে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ইস্যুতে তাদের কোন হাকডাক থাকে না। এতেই বোঝা যায়, তারা তাদের নিজের প্রয়োজনে নয়, বরং অন্যসব দল যেগুলো মূলত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে শক্তিশালী তাদের তাবেদারীই সার হয়, তাদের ইঙ্গিতেই নির্ধারিত হয় এদের মতার প্রকাশমাত্রা। এরা মূলত সেই একই ভণ্ড সুবিধাবাদী রাজনৈতিক দল, যারা হাজারো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আন্দোলনহীন। যে সময়ে যে প্রয়োজনে এসব বিষয়ের অবতারণা, সে তখনকার প্রাচীন পৌত্তিলকদের নও মুসলিম হওয়ার পরও তারা তাদের প্রিয়মূর্তিকে ভুলতে পারছিল না। তাই পর্যায়ক্রমে একধাপে এসে এই চিকিৎসা ব্যাবস্থা, আর তা তাদের ধর্মবিশ্বাস পরিবর্তনের পরেই কার্যকর হয়েছিলো, আগের ধাপতো নয়।

ভিন্ন ধর্ম বিশ্বাস লালনকালে (পৌত্তলিক) নিশ্চয় তার দেবাতাদের মূর্তিকে বিসজর্ন দিতে বলা হয় না। আজকের যুগে আর নওমুসলিম অবস্থায় নেই কোন মুসলিম ও মুসলিম প্রধান দেশ। যারা ভিন্ন ধর্মঅবলম্বী এদেশে রয়েছে তারাও নিশ্চয় সংবাদপত্রে এবং বিভিন্ন চ্যানেলে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ধর্মীয় উপাসনার ল্েযই চোখ রাখে না। তা হলে এইসব চ্যানেলের সাথে ধর্মীয় বিশ্বাস চর্চার সাথে তো কোন ধরণের সঙঘর্ষ ঘটা সম্ভব নয় । তবু ভাস্কর্য েেত্র তা ঘটছে।

অলংকরণ আর শিল্প এক নয়, যখন কোন ধর্মীয়য় বা সুনিদিষ্ট দর্শনের জন্য শিল্পকলার চর্চা হয় তখন তা মূলত ঐ। ী ীভশ্বাসের বা দর্শনের অলংকরণ হয়ে ওঠে, শিল্প অবশ্যই অধিক কিছু। তাই শিল্পের উপড় সবসময়ে প্রতিক্রিয়াশীল অংশ সবসময়েই খাপ্পা, তাদের ভয় শিল্পীর ও শিল্পের স্বাধীন অভিব্যাক্তিকে, যাতে বেরিয়ে পড়ে আন্তরিক সত্যের নিবিড়তাটি। যার দিকে আন্তরিক অভিনন্দর খোলা থাকে নতুন প্রজন্মের ও সাধারণ মানুষের অধিকতর গ্রহিষ্নু মানসিকতা, কিন্তু এটিও একটি অতি ধীর প্রক্রিয়া। ভাস্কর্যকে মূর্তি উপসানার সাথে গুলিয়ে কাল্পনিক শত্র“ দাঁড় করানোর কী মানে, যদি না এর পেছনে কোন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ধান্ধা না থাকে।

আসলে আছে, সামনের নির্বাচন সেই ধান্ধা, কারণ তাদের উদ্দেশ্য আর যাই হোক তা নিদারুণবাবে নিন্দনীয়, এটাও আমারেকিান নির্বচানের েেত্র ব্যবহৃত সফটমানির মতো এক ছদ্মবেশি দেশীয় কৌশল। এসব কৌমি মাদ্রাসার শিার্থীদের দারিদ্রের সুযোগ নিয়ে তাদেরকে একটি বিদেশী ভাষায় শিতি করা হয় কেবলি ধর্র্মীয় প্রয়োজনে নয়, ধর্মীয় রাজনীতির প্রয়োজনেও। এদেরকে কেবলি সীমিত ধর্মীয় শিা দেয়া হয়। হাজার বছর আগের পৃথিবী আর বর্তমান পৃথিবী তো এক পৃথিবী নয়। ফলে আগের যেসব বিষয়, যে সব বিশ্বাস আর টিকে নেই কোন এলাকায় কোন জনস¤প্রদায়ের মধ্যে, সেই বিশ্বাসকেও কাল্পনিকভাবে ঐ স¤প্রদায়ের মধ্যে জীবিত ভাবা সম্ভব হয়ে ওঠে।

অনেক প্রাচীন মতকে বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে প্রয়োগ করার শিা থেকেও তারা বঞ্চিত । না হলে এ ধরণের কাজে তো তাদের নামার কথা না। এর পেছনে সেই হুজুরগণ যারা নিজেদের ছবি তুলতে আপত্তি করে না,চ্যানেলে চ্যানেলে ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে ঘিরে নিজেদের ভিডিও ফুটেজ চালাতে ভাললাগে। দেখতে পান না এর ভেতর দিয়ে ফটোগাফ স্মপর্কিত নিষেধ কিভাবে মার খাচ্ছে। কিন্তু ভাস্কর্যকে ভয় পান, ভাবেন বিধর্মী কাজ, বিলবোর্ডের নিচ দিয়ে চলতে ভাল লাগে কিন্তু সাহিত্য-শিল্পকলা েেত্র ভিন্ন মত প্রতিফলিত হলে সবচেয়ে বেশি রেগে যান।

সর্বাগ্রে ভাবেন মৃত্যুদন্ডদানের কথা,,যেনো এটাই এর যথা বিধান (মুসলিম উদ্দীন, হমায়ুন আজাদ, শামসুর রাহমান) এমনকি তাকে খুন করতে পিছপা হন না। এমন ভাবলে তাদের লাভ হয়, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে লাভ হয়। তা কেবলি তাদের নেতাদের ব্যাক্তিগত লাভালাভ, সুবিধাবাদের চেহারা। বিমান বন্দরের সামনের চত্তর কেবলই কি মুসলিম অনুভূতি প্রকাশের জন্য নির্ধারিত ? তা হলে এইসব অপগন্ড হুজুররা কিভাবে সেখানে একটি মিনার স্থাপনের দাবী জানায়। আর জায়গাটি একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের অধীনে সরকারের জায়গা।

সেখানে কিভাবে নিজ ধর্মের স্থাপত্য অর্জনের দাবী জানানো হয়? এইকেই বলে আত্ম-অন্ধত্ব। আর তারা সরকারী জায়গা দখল করে অনুমতিহীনভাবে মসজিদ-মাদ্রাসা বানিয়ে ফেলে, এতে অধর্শ হয়না কারণ এর সাথে এদের রুটিরুজি জড়িত। তারা নিশ্চয় জানে সরকারী জায়গা সাধারণ জনগণের। যেখানে বিভিন্ন ধর্মবিশ্বাসের অন্তগর্ত নাগরিকদেরও অধিকার থাকে। আর হুজুরদের দাবী মেনে নিলে, সেখানে হিন্দু বৌদ্ধ এবং খ্রিষ্টানরা তদের স্ব স্ব ধর্মবিশ্বাসের প্রতিফলন হিসেবে মূর্তিগড়ার অধিকার দাবী করলে তারও তো অনুমোদন দিতে হবে।

বিমান বন্দর দিয়ে কেবল মুসলমানরাই হজ্জ করতে যায় না, এ পথে হিন্দু, খ্রিস্টান ও বৌদ্ধরাও তো যাতায়ত করে। তো তাদের দাবী কি তারা মেনে নেবেন? অথচ তাদের যুক্তিও তাদের মতোই যুক্তি সিদ্ধ হবে। আমার কথা হলো, মূর্তি গড়লে খারাপ এটা কোন যুক্তির কথা হতে পারে না, যারা মূর্তিতে বিশ্বাসী তারা তা গড়বে, এবং এর ভেতর দিয়ে তারা তাদের বিশ্বাসের চর্চ করবে। যারা মূর্তিতে বিশ্বাস করে না, তাদেরকে কি আর মূর্তি প্রভাবিত করতে পারবে? ধর্মীয় বিশ্বাসের লেশচিহ্নহীন নি¯প্রাণ ভাস্কর্য তো আরো পারবে না! যারা মুসলমানরা যেমন তাদের বিশ্বাসের অধিকার রাখে, অন্যরাও একই অধিকার সংরণ করে। ।

আবার যারা মূর্তি অবিশ্বাসী তারা নিজেদের উপাসনার জন্য কোন মূর্তি গড়বে না। কিšতু অন্যের জায়গায় এবং যাদের সাথে ধর্মীয় বিশ্বাস ও উপাসনারও যোগ নেই, সেখানে বিশেষত অন্য প্রতিষ্ঠানের েেত্রও কেন এই প্রতিরোধ মেনে নেয়া হবে। লালন এদেশের একজন সেরা প্রতিভাবান ব্যাক্তিত্ব। তার বিশ্বাস, সপ্রশ্ন চর্চা আমাদের সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে, আমাদের মঝে পরমত ও সাপ্রদায়িক সহিষ্ণুতা বাড়িয়েছে, যা একটি জাতির অগ্রগতি বিশাল ভূমিকা রাখছে। একে সরাসরি হয়তোবা অর্থনৈতিকভাবে পরিমাপ করা যায় না কিন্তু তার অবদান যে খুবই বড়ো, সে আমরা কোনভাবেই ভুলতে পারবো না।

আর এই লালনের ও তার ভাবধারার বাউলদের একটি ভাস্কর্য আমাদেরকে সে বোধটুকুর দিকে তাকাতে সহায়তা করতো, বহু স¤প্রদায়ের সম্মিলিত স¤প্রীতি পূর্ণ জীবন যাপনের প্রতি। আর এ পথটি তো সব ধর্মীয়-ধর্মহীন স¤প্রদায়ের অবাধ যাতায়তেরই। তেমন জায়গাতেই লালনকে ও তার ভাবধারাকে মানায়। সেখানে ‘ কোন ভাবে অন্ধ দাবী দাওয়ার বাস্তবায়ন মানায় না। বইয়ের ভেতর ছবি সংযোজন যে শিাকে সহজে অনুসরণযোগ্য করে তোলে তার বিশ্বাস তাদেরও হয়তো আছে, তাদের বইগুলোর মধ্যে দুর্বল ইলাস্ট্রেশন আছে কিন্তু খেঁজুর গাছের ছবি পর্যন্তই, (সেদিনও যদি জানা যেতো যে গাছেরও প্রাণ আছে, তা হলে হয়তো এর ছবি আকার নিষিদ্ধ হতে পারতো, যদি প্রাণের প্রশ্ন বিবেচনা করি।

) কখনই তা উটের ছবিটি পর্যন্ত গড়াবে না। অথচ একটা প্রাণীর ছবি হাজার শব্দের চেয়ে দ্রুত একটা ছাত্রকে শেখাতে পারে প্রাণী সম্পর্কিত অনেক তথ্য। কিন্তু এরা তা সংযোজন করতে পারে না। তারা সেই প্রাচীন আমলেই রয়ে গেছে। এতেই বোঝা যায় বড় ধর্মীয় রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বারা এদের ব্যবহার করা কেন সহজ।

আর এদেশে সাধারণ লোকদের মাঝে যদি ধর্মীয় অনভিূতিতে এই উগ্রধর্মান্ধদের ন্যূণতম স্বীকৃতি থাকতো, তা হলে মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর সংগঠন কখনই সম্ভব হতো না, এতেই বোঝা যায় এদের মতামতের প্রতি সাধারণ মানুষের কোন সমর্থন নেই এবং এই ধারার দলগুলো বিচ্ছিন্ন এবং দেশের প্রধান প্রধান ইস্যুতে আন্দোলন করে না, বিচ্ছিন্ন হতে হতে একসময় ারও প্রতিক্রিয়াশীল এবং উন্মাদনাগ্রস্থ হয়ে ওঠে এবং একদিন ঝাঁপিয়ে পড়ে বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে (বাংলাভাই, আব্দুর রহমান, হান্নান,... ...)। এ ছাড়া তাদের জন্য ভিন্ন পথ খোলা থাকে না, অবশেষে লঙ্ঘন করতে হয় দেশের আইন। সিভিল এভিয়েশনের চেয়্যারম্যানের বর্তমান মন্তব্য, তিনি নিজেও অবয়বময় ভাস্কর্য নির্মাণের পে নন। এবং উগ্র হুজুরের দাবী ‘সেনাপ্রধানের আগ্রহে ভাস্কর্য সরানো হয়েছে’ এবং মাদ্রাসা ছাত্রদের জঙ্গিপনা এবং জরুরি আইন লঙ্গন। এর মধ্যে একটি সমান্তরাল অবস্থান আমাদের হতবাক করে দেয়।

মৃনাল হক বলেছেন তিনি তিরিশটি মডেল জমা দিয়েছিলেন এবং সেখান থেকে কর্তপ একটা বাছাই করেছিলেন এবং সে অনুযাযী কাজ হচ্ছিল। চেয়ারম্যানও তা হলে এই মডেলের নির্বাচনে ছিলেন বা নির্বাচিত মডেল অনুমাদন করেছেন। না হলে একটি প্রতিষ্ঠানের অধীনে কিভাবে এই কাজ চলতে থাকে। মডেল অনুযায়ী কাজ হচিছল না বলে চেয়ারম্যানের পাল্টিখাওয়া রহস্য হজুরদের উস্কে দেয়ারই অভিপ্রায়। হুজুর আর চেয়ারম্যানদের নাকের ডগায় চলছে মাসের পর মাস কাজ আর তারা আজ বলছে মডেল অনুযায়ী কাজ হচ্ছেনা, আর হজুরা মূর্তি প্রতিরোধের জঙ্গীপনা, এবং ভাস্কর্যের সংশোধন না করে চেয়ারম্যানের ফের ফোয়ারা বানানোর প্রস্থাবনা আমাদের অবাক করে দেয়।

তার ভাস্কর্য ভাল না হলে ভাস্করকে সংশোধনের প্রস্তাব দেওয়া যেতে পারতো। তা না করে ফের ফোয়ারা বানানো হুজুরদের সাথে তার আঁতাতকে প্রকাশ করে। আর হুজুররা নিশ্চয় ভাস্কর্য নির্মাণ কার্যক্রম বহুদিন থেকেই দেখে ও জেন আসছিলো কিন্তু তখন তাদের প্রতিবাদের তীব্রতা ছিলো না। হঠাৎ এটা তীব্র হলো কেন, এর পেছনে সম্ভবত, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিরও একটা সম্পর্ক রয়েছে, না হলে জরুরি অবস্থা চলা কালে, এবং সরকারী নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতিতে একটি ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাজকে ধ্বংস করে দেয়ার সাহস তারা পেতো না। তাছাড়া আর সাংবাদিক সম্মেলনে নূরানীর দাবী ছিলো তিনি জেনারেল মইনকে জানিয়েছেন এবং তার প থেকে সে জানিয়েছে তিনিও অবয়বধর্মী মূর্তির বিরোধী।

আর একটি ধর্মীয় রাজনৈতিক দলের প্রধান গ্রেফতারী পরোয়ানা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সভাতে উপস্থিত থাকার মতো নজীরবিহীন ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটিয়েছেন, যাতে সর্বস্তরের জনগণই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন, এবং এই কল্কং থেকে দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরানোরও একটা প্রকল্প এটা। সরকার আমাদেরকে প্রথম দিকে যত ধরণের প্রতিশ্রি“তি দিয়েছিলেন, অধিকাংশ েেত্রই সরকারের ব্যর্থতার নজির তাকে যে নির্বল করে ফেলেছে তারই নমুনা এসব। সম্ভবত আরো অনেক গুরুত্ব পূর্ণ রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয় এই দ্বিমূখী আন্দোলনের ভেতর দিয়ে চাপা দেয়া হচ্ছে। আর তার হয়তো অনুমান করতে পারবেন, যারা রাজনীতি-অর্থনীতি বিশারদ। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির নাজুক অবস্থাকে, যেখানে চারদলীয় ঐক্যজোট এখনো নির্বাচন কমিশনে আবেদন পত্রই জমা দেননি, এবং আওয়ামীলীগের আবেদনপত্র ত্র“টিমুক্ত নয় বলে অভিহিত, সেখানে একটা ঘোলাটে পরিস্থিতি সহজেই অনুমেয়, সে েেত্র এই তিনচারদির বাকী থাকতে, হজুরদের ভাস্কর্য নির্মাণ বিরোধী আন্দোলন সা¤প্রদায়িকতাকে উস্কে দেয়ার পূর্বাপর একই রাজনৈতিক কৌশলও হতে পারে।

এবার আসা যাক, মৃণাল হক প্রসঙ্গে। তিনি একাই সারা শহরে ভাস্কর্য গড়ে চলেছেন, তা সড়কের মোড়ে। জনসাধারণেরচোখের উপর। আর অন্যভাস্করগণ চেয়ে চেয়ে দেখছেন। আর পেছনে পেশি শক্তি প্রশাসনিক আঁতাত, এবং সিটি কর্পোরেশনের বিশেষ পছন্দ এবং তাদের ভাস্কর্য সম্মন্ধে ন্যূনতম জ্ঞানহীনতা সবমিলয়ে মৃণাল হককে একাই একশ করে তোলেছেÑ এমনই আলোচনা, ও মন্তব্য শিল্পীদের।

এ ধারণা হয়েছে আর্ট বিটের একটি সংখ্যায় বিভিন্ন শিল্পী ও শিল্পবোদ্ধাদের মৃণাল সংক্রান্ত প্রতিক্রিয়া পড়ে, আর মৃনাল যদি এমনই হয়ে থাকে ’ তা তো একদিনের ব্যাপার নয়, বহু বছরের, সে েেত্রও বলার কথা মৃনাল সম্পর্কিত এই ােভ ও শিল্পীদের অনৈক্য হুজুরদের হয়তো কিছুটা সাহস যুগিয়েছে এমন ঘৃণ্য কাজে। কেননা এই মৃণালই করছিলো বিমানবন্দর প্রবেশ পথের মতো গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টের বাউল ভাস্কর্যটি। এদিকে মৃণালের ভাস্কর্য সম্পর্কে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে বিমান এভিয়েশন এবং এর সাথে ঘটেছে ভাস্কর্য উপড়ানো মাদ্রাসা ছাত্রদের মাধ্যমে। আবার বিমান এভিয়েশনের চেয়্যারম্যান, হুজুর এবং হুজুর মারফত প্রচারিত জেনারেল মইনের ভাস্কর্য সম্পর্কে অভিমত, একই স্বরে ও সমে এসে পৌচেছে। এবার আসা যাক ভাস্কর্য প্রসঙ্গে।

ভাস্কর্যটি ভাল কি মন্দ, এটি, আদৌ কোন ভাস্কর্য হয়েছে কিনা, এটা বাউল লালনের, তার যেখানে কোন অথেনটিক চেহারা বলা যায় নাই, সেখানে একটি বাস্তবতাধর্মী ফিগারেটিভ ভাস্কর্য কতটা নান্দনিক হবে? আকাশের দিকে তাকিযে গলা ছেড়ে গান গাওয়ার মধ্যে যে আত্মমগ্ন ও উদাস ভঙ্গীটি তা লাললনের প্রখর সচেতন ও প্রশ্নাতুর ও মানবসাধনার যে পরিচয় তার সাথে বিট্রে করে কিনা তা ও বিবেচ্য। সে নিয়ে বিতর্ক হতে পারে কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে, এটি ধর্মান্ধ গোষ্ঠিটির বিবেচনার বিষয় নয়। এসব কে দেখেছে, ভাস্কর্যটির পূর্ব মডেল যারা নির্বাচন করলেন, তারাই। সাধারণ জনগণ তো দেখার সুযোগই পায়নি। আর আমরা সংবাদ পত্রে পলিথিন মোড়ানো ফটোগ্রাফ থেকে অনুমান করছি।

সেখানে জনপ্রতিনিধি, শিল্পবোদ্ধা এবং অন্যমাধ্যমের শিল্পী এবং ভাস্করদের সমন্বিত অনুমোদন ও নির্বাচন ছিলো না। পাবলিক প্লেসে ভাস্কর্য স্থাপান বিমান এভিয়েশন এবং সড়ক সংস্থা নিজেদেরকেই যথেষ্ট মনে করেন, যেহেতু জায়গা এবং খরচের ভার কিছুটা হলেও তারা বহন করেন। এটা একটা ভুল। কিন্তু এর মানে মাঝপথে ধর্মান্ধদের চাপে মাঝপথে মত বদলানোর ব্যাপার নয়। কোন পাবলিক প্লেসে ভাস্কর্য সথাপনের েেত্র পাবলিকদের অপিনিয়ন জরুরি কিনা আর জরুরি হলে ঐ এলাকা জুড়ে যে সমস্ত লোকজন বাস করে তারা কি কেবল জনগণ হিসেবে গণ্য হবে নকি তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি এই রূচি ও চিন্তার দায়িত্ব নেবে? এবার আসা যাক, দর্শক তথা পাবলিক প্রসঙ্গে।

একটি ভাস্কর্যকে সব দর্শকই একইরকম দৃষ্টিতে দেখবে, এটা কি সবসময়ে ঠিক, একটা ভাস্কর্য কি পাল্টে দিতে পারে একটা গোষ্ঠির বিশ্বাসের চেহারা, যেমন একরাতে কোন রাজনৈকি ক্যু বদলে দিতে পারে রাষ্ট্রের চেহারা? সে কতই না বিরল ঘটনা। অনেকে তো বছরের পর বছর ভাস্কর্যের পাশ দিয়ে যায়, এর দিকে যেমন ফিরে তাকায় না তেমনি তাকে নিয়ে ভাবেনও না। আবার একটি ভা¯কর্যের অর্থ একেক জনের কাছে একেক রকম। আর হজুররা ভাবেন, সবাই কেবল তার মতো করেই ভাস্কর্যটিকে নিয়ে ভাববেন, এটাও একটা কুসংস্কার অধিকাংশ েেত্রই। এই কুসংস্কার ভুল প্রমাণিত হবে, যদি দর্শকের প্রতিক্রিয়া নেয়া হয়,।

কোন কোন দর্শক বলে বসতে পারে, এটা তো কিছুই বুঝলাম না। যারা ভাস্কর্যকে এতো ভয় পাচ্ছেন, তারা ভাস্কর্যকে একটা প্রবল শক্তিশালী একটা রাজনৈতিক দলের চেয়েও বুঝি শক্তিশালী ভাবেন! তারা কি ভাবেন, জীবিত একটা মানুষ একটা নি¯প্রাণ মূর্তির দ্বারা একমুহুর্তে পাল্টে যাবে, এতটাই ঠুনকো জীবিত মানুষের সাংস্কৃতিক অজর্ন এবং অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে দিন-কে-দিন পাকতে থাকা বিশ্বাস। এ যেনো ভাস্কর্যের উপর এক ধরণের অলৌলিক মতা আরোপ অতি-অর্থ ও প্রভাবন মতাকেই জোর করে চাপিয়ে দেয়া, এবং নিরর্থক একটা অতিপরাধিনতার মনোভাবকে অযুক্তিকভাবে দর্শকের উপর চাপিয়ে দেয়া, দর্শকদের তথা জনসাধারণকে বোকা ভাবার পরিণামও এটা। এ আসলে একটা ট্যাবুই, যা হলো নিজের বিশ্বাসের বাইরে কিছু দেখলেই ভীতু হয়ে ওঠা, যেনো সে নিজের উপরে কোন ধরণের নিয়ন্ত্রন রাখতে পারবে না। দর্শকের পরামর্শদাতা, পথনিদের্শক ওই একটা নি¯প্রাণ ভাস্কর্য! আজকের দিনে তা কেবল হাস্যকর।

যদি ধরে নিতে পরি দর্শক আসলে তার সংস্কার, কুসংস্কার, শিা, উদারতা, চিন্তাশীলতা, অলসতা, সব ধারণ করেই স্বাধীন। আর তাই কতভাবেই না একটা ভাস্কর্যের দিকে তাকানোর সামর্থ্য রাখে। ফলেএকে নিয়ে তার গোয়ার্তুমিও নেই, যা আছে এই উগ্র গোষ্ঠিটির। আর ভাসকর্যের যদি এতো মতা থাকতো তাহলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় চত্ত্বরের অনেকগুলো ভাস্কর্য আছে। এরা এদেশে দুনির্তীগ্রস্ত নেতা, আমলা উৎপাদন অšত— বন্ধ করতে পার তো।

বিশ্ববিদ্যালযের শিা ব্যর্থ হলেও। কে জানে হয়তো এগুলো ভাস্কর্যই হয় নাই, তাই এদের মেন প্রবল সম্মোহনী শক্তি নেই। হয়তো বিমন বন্দরেরটার ছিলো, তাই এটা কওমি মাদ্রাসার ছাত্রদের, হুজরদের, এভিয়েশনের চেয়ারম্যানকে গ্রাস করে ফেলছিলো দিন-কে-দিন, তাই মুক্তির আপ্রাণ প্রচেষ্টা থেকেই এই বিস্ফোরণ- এই আন্দোলন। আসলে এমনসব আন্দোলনের সময়ে সাধারণ মানুষের নানামত বিচিত্র উপলব্দি মতাকে আমলে আনা হয় না, এত যে সাধারণ জনগনকে নিয়ে যে রাজনীতি, তা-ই আদতে মার খায়। এইসব ধর্মান্ধ গোষ্ঠির কার্যকলাপ দেখলে মনে হয়, একটি ভাস্কর্য দ্বারা পুরো প্রভাবিত হয়ে পাল্টে যাবার জন্য সারাদেশের লোকজন কবে থেকে বসে আছে।

যেনো একটা ভাস্কর্য স্তাপিত হলে প্ররো দেশ একপলকে নষ্ট হয়ে যাবে! এবার আসা যাক বিভিন্ন দেশের মুসলিমদের কথায়, যেসব দেশে মুসলমানরা সংখ্যা লঘু। সেখানে সংখ্যা গরিষ্ঠের দাবী হয়ে ওঠুক মসজিদ না স্থপনের, এটা কি বেধতা পায় না তাদের ক্রিয়া কর্মে। ভারতে বসবাস রত মমুসলিমরা কি মূর্তি দেখে দেখে প্রভাবিত হয়ে হিন্দু হয়ে গেছে দলে দলে? তারা হজ্জে যাওয়ার সময় নিশ্চয় পথে অনেক মূর্তি দেখতে পায়, পায় নাকি। এতে কি তাদের হজ্জ নষ্ট হয়ে যায়। তাহলে কি এদের হজ্জ হয়নি এতোদিন।

বিভিন্ন দেশের মুসলমান যাত্রিরা তাদের দেশের বিমান বন্দরের সামনে বিভিন্ন ভাস্কর্য পেরিয়ে আসে নিশ্চয়, সেখানে তাদের জন্য সেটা কোন অসুবিধা ডেকে আনে বলে শুনিনি। এ পর্যন্ত আেন মুসলমান যাতীও এ নিয়ে অভিযোগ উত্থাপন করতে শুনিনি। কেবল বাংলাদেশেই এসব সম্ভব হচ্ছে, সত্যি সেলুকাস কি বিচিত্র এই দেশ! মুসলমান কি কেবলি বিমানবন্দরেই মুসলমান, নাকি সবজায়গায়, সবদেশেই মুসলমান। তাহলে যে সব দেশে মুসলমান সংখ্যালুঘু সেসব দেশের মসুলমানদের অবশ্য ভাস্কর্যে কিছু আসে যায় না। সেখানে তাদের ধর্মবোধ পাল্টেই কি যায়, উল্টোটা কি আমরা দেখতে পাই না, একটি বা দুটি মেয়ে ইংল্যান্ডে বোরখা পড়ে স্কুলে যেতে পারছে না বলে, প্রতিবাদ করছে এবং স্কুলইি ছেড়ে দিচ্ছে, ভিন্ন বা বিরুদ্ধ একটা পরিবেশ একটি বিশ্বাসের ভিতকে সবসময়েই নষ্ট করে এটা বরং ভুলই প্রমাণিত হয় এেেত্র।

এটাই প্রমাণ হয়, বিশ্বাসটির জীবনী শক্তির তীবত্রা একদিনে বদলে যায় না, আর একটি ভাস্কর্যের সাপেে এই বিবেচনা তো আরো ঠুনকো। এতে আসলে এই গোষ্টিটির আত্মবিশ্বাসহীনতাকে সামনে তোলে ধরে। যা তাদেরকে বন্য করে তোলে, তা হলো নিজেদের বানানো ভয় ও অন্ধ ভাবাবেগ। এবার আসা যাক আমার নিজেকে নিয়ে কিছু সমালোচনা। একটি রাজনৈতিক দলও কেবল তার নিজ নেতা ও কর্মীর জন্য যে আন্তরিকতা এবং সক্রিয়তা দেখান একজন সাধারণ মানুষের জন্য তা প্রদর্শন করে না, ফলে এক ধরণের ভারসাম্য হীনতায় ভুগছে আমাদের এই সামাজিক ও রাজনৈতিক সক্রিয়তা।

এবং একই কথা প্রযোজ্য সাহিত্যিক-কলাবিদদের েেত্রও। ফলে আমার নিজেকেও সন্দেহ হয় আমি নিজে লেখার চৈষ্টা করি বলেই, হয়তো ভাস্কর্য পছন্দ করি বলেই আজকে এমন কলম ধরার সক্রিয়তা, হয়তো আর দশটা পাচটা রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ইস্যুতে আমাকে পাওয়া যাবে না, যেমন বেশির ভাগকে পাওয়া যায়না, এ আসলে সচেতনতা নয়, যতোটা না স্ব-পেশার লোকের প্রতি সহমর্মিতা। কই, দেশে র্গামেন্টেস-কর্মীদের বাজে অবস্থা, দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাটকল বন্ধ হলো, যখন কিনা পচনশীল ও প্রাকৃতিক তন্তুর এক নতুন ও শক্তিশালী বাজার তৈরি হয়েছে বিশ্বে পরিবেশবাদী আন্দেলনের প্রোপটে। তখন কিন্তু আমরা সাহিত্যিক-কলাবিধÑ লেখক-সুশীলসমাজ, বিভিন্ন সাহিত্য-সাংস্কৃতি সংগঠ কে প্রবলভাবে এগিয়ে আসতে দেখি না, প্রবল প্রবলভাবে, আজ যতটা দেখছি ভাস্কর্যকে ঘিরে সবার সমবেত প্রতিক্রিয়া। আমিও একইরকম ব্যাতিক্রম নই ।

আমি কি মূর্তি বিরোধী? না কখনই না। সেটা অন্যের বিশ্বাসের সাথে যুক্ত। আমি ভাস্কর্য বিরোধী? না কখনই না। সেটা আমার স্বাধীনতার অনুভবের সাথে জড়িত, যার অর্থ আমি স্বাধীনভাবে করার সুযোগ পাই। আমার ভুলশুদ্দের জন্য আমাকে আতঙ্কিত হতে হয় না।

যা পৃথিবীর কোন ধর্ম বা দর্শন বা রাজনৈতিক গ্রন্থ অনুমোদন করে না। এদের সবার ইচ্ছ আমি তাদের মতো হয়ে পড়ি। কেবল শিল্প-সাি ত্যে আমি মাঝে মাঝে এই সুযোগটি পাই, যা দুলর্ভ ও দামী। এমনকি ইংল্যান্ডের রাণীর কপালে শোভা পেতো ভারতউপমাহাদেশ থেকে অপহৃত যে হীরকখন্ডটি, রাণীর কাছে তা যতোটা, তার চেয়েও। ভোটের রাজনীতিকেও আমাদের মনে রাখতে হবে।

আর রাষ্ট্রমতায় থাকা অনির্বাচিত ও জনবিচ্ছিন্ন সামরিক শাসন কালগুলোতে, তখন যেকোন সামরিক সরকারই যেটা করেন, দেশে বিদ্যমান, প্রতিক্রিয়াশীল এবং দেশের ধর্মীয় কিন্তু জনবিচ্ছিন্ন দলগুলোকেই সবার আগে কাছে বেড়ান, প্রশ্রয় দিয়ে থাকেন। কারণ এদের দুর্বলতা, জনবিচ্ছিন্নতা, এদের মতার ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.