জীবন বুনে স্বপ্ন বানাই মানবজমিনে অনেক চাষ চাই
গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি হল জনগণের ম্যান্ডেট। একটি দল যত জনপ্রিয় বা ভালো হোক তাকে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে আসতে হয়। সবচেয়ে জনপ্রিয় দলটিরও একদিন ক্ষমতা ত্যাগ করতে হয়।
আমাদের দেশে রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে ৫ বছর মেয়াদী একটি সরকার আসে। ৫ বছরের শেষ দিন সেই সরকার যত জনপ্রিয় হোক, তাকে ক্ষমতা ত্যাগ করতে হয়।
আবারও ভোটে অংশগ্রহণ করে জনগণের সমর্থন বা ভোট পেতে হয়। অর্থাৎ গণতন্ত্রের অন্যতম ভিত্তি হল সরকারের মেয়াদ। একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সরকার ক্ষমতায় আসবে, তার বেশি ক্ষমতায় থাকা অগণতান্ত্রিক।
রাষ্ট্রে গণতন্ত্র থাকলেও আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোতে কোন গণতন্ত্র নাই। দলগুলোর অভ্যন্তরে আছে একনায়কতন্ত্র, পরিবারতন্ত্র ও স্বৈরতন্ত্র।
১/১১ এর পর এই বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। বহুলভাবে দাবি উঠতে থাকে দলগুলোর অভ্যন্তরে গণতান্ত্রিক ধারা তৈরি করার। দলের কর্মীদের ভোটে প্রতিবছর নেতা নির্বাচিত করার বিধানের উপর জোর দেয়া হয়। জনপ্রিয় নেতাকেও তার নেতৃত্বের প্রতি তার কর্মীদের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রতি বছর কাউন্সিল করে কর্মীদের ম্যান্ডেট নিয়ে নেতৃত্ব ধরে রাখতে হবে।
কিন্তু এই দলগুলোর ভেতর গণতন্ত্র চর্চার কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটি ও খালেদা জিয়া।
গতকাল খালেদা জিয়াকে বিএনপির আজীবন চেয়ারপারসন ঘোষণা করেছে বিএনপির স্থায়ী কমিটি। খালেদা জিয়া এই ঘোষণা সানন্দে মেনে নিয়েছেন। অর্থাৎ খালেদা জিয়া এখন বিএনপির স্থায়ী নেতা। আর কখনও তাকে কর্মীদের সমর্থন নিতে হবে না। কখনও কাউন্সিল করে তাকে বাদ দেয়া যাবে না।
এটা কি কোন গণতান্ত্রিক নিয়মের মধ্যে পড়ল ? যে দল নিজের অভ্যন্তরীণ পরিচালনার ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক কোন নিয়ম মানে না, তারা কিভাবে রাষ্ট্র পরিচালনায় গণতন্ত্র কায়েম করবে? যার দলে গণতন্ত্র নাই, সে গণতন্ত্র গণতন্ত্র বলে চিৎকার করুক, আসলে তার কোন নৈতিক ভিত্তিও নাই গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলার। বরং এই একচ্ছত্র ক্ষমতা চরম দুর্নীতির জন্ম দেবে। যার উদাহরণ আমরা অতীতে বহুবার দেখেছি।
অন্যদিকে এই উদাহরণ থেকে বিএনপির তৃণমূল নেতারাও তাদের দলীয় পদ আজীবন ধরে রাখার জন্য উৎসাহিত হবে। অযোগ্য লোকেরা তৈলমর্দন করে দলীয় পদ দখল করবে।
যোগ্য নেতৃত্বের বিকাশ চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে। দল ভরে যাবে চামচায়। গণতন্ত্র সে কেবল মুখের বুলি থেকে যাবে চিরকাল।
তাছাড়া এই উদাহরণ থেকে আওয়ামী লীগ সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো উৎসাহিত হলে দলের ভেতরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কোন উদ্যোগই আর সফল হবে না। আর দলগুলোর ভেতর গণতন্ত্র না থাকলে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে গণতন্ত্র থাকলেও তার আড়ালে থেকে যাবে স্বৈরতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র, পরিবারতন্ত্র ও গোষ্ঠীতন্ত্র।
খালেদা জিয়ার এই উদাহরণ গণতন্ত্রের জন্য একটি বিরাট হুমকি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।