আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভুলতে পারিনা সেই সুধামাটির গন্ধ

একজন ইউনুস খান বেঁচে থাকতে চান গণ মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং উদ্যেগ গ্রহণের মাঝে।
ময়মনসিংহ গিয়েছিলাম। উদ্দেশ্য বোরোর চর। এটা একটা গ্রামের নাম। এটা ময়মনসিংহ শহর থেকে আনুমানিক ২০ কি.মি. দূরে।

আমি এবং আমার দুলাভাই একটা মোটরসাইকেল নিয়ে রওনা হলাম। ১৫ কি.মি. রাস্তা অর্থাৎ কাছারী বাজার পর্যন্ত রাস্তা পাকা। আমরা সেখানে একজনকে জিজ্ঞাস করলাম বোরোর চর যাব কোন দিক দিয়া? উনার দেখানো পথ দিয়ে কিছুক্ষণ যাওয়ার পর দেখি রাস্তার অবস্থা খুব খারাপ। কাঁদা আর কাঁদা। কয়েকজন কে এই কাঁদা মারিয়ে আসতে দেখলাম।

হাটু পর্যন্ত গেড়ে যায়। আমরা ফিরে আসার মনস্থির করে ফেলেছিলাম। কিন্তু একজনের কথায় একটু সাহস পেলাম। উনি বললো নদীর পাড় দিয়ে একটা রাস্তা আছে কাঁদা নেই কিন্তু খুবই উচু-নিচু। দুলাভাইকে আমি বললাম চলেন গিয়ে দেখি।

আমরা ঐ লোকের সাথে কথা বলতে বলতে মোটর সাইকেল ঠেলে আসতেছিলাম। এর মাঝে এক বৃদ্ধ এসে মোটর সাইকেলের দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে রইলো আমরাতো অবাক। তখন উনি বললো-নানারা মোটর সাইকেল কি কান্দ কইরা আনছুইন, কোন প্যাক(কাদা) দেহিনাতো। আমরা হেসে বললাম না নানা আমরা এইদিক দিয়া যাইনাই ঘুরে আইসা পড়ছি। তারপর নদীর পাড় ধরে রওনা হলাম।

দেখি উচঁ-নিচু রাস্তা। হালকা বাতাসে মন জুড়িয়ে যায়। রাস্তার একপাশে নদী আর অন্যদিকে গাছ আর গাছ। এরমাঝে রাখাল গরুর পাল নিয়ে যাচ্ছে। রাস্তার পাশের একটা খোলা মাঠে দেখি হরেক রংয়ের হাজার হাজার ছাগল।

অপূর্ব সেই দৃশ্য। আরেকটা আশ্চর্যজনক জিনিস ছিলো ঘোড়ার পাল। আরে দুলাভাই দাঁড়ান দাঁড়ান একটা ছবি তুলি। নদীর পাড়ে দেখি নারী-পুরুষ মিলে পচাঁ পাটগাছ থেকে পাট ছাড়াচ্ছে। পাটপচাঁনোর মন কাড়া সেই গন্ধ আমার নাকে এসে লাগলো।

তখন মনে হলো সত্যিকারের গ্রামে এসে পৌছেছি। বুক ভরে নিঃশ্বাস নিলাম। আমাদের দেখে ছোট ছেলেমেয়েরা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আর হাসে। আমরা চলছি বোরোর চরের উদ্দেশ্যে। কিছুক্ষণ পরপর ঘোড়ার গাড়ি দেখছি।

পিছনে একটা বাচ্চা ঘোড়াও দৌড়াচ্ছে। ডানের একটা বিলের দিকে তাকিয়ে অবাক। যেন সাদা মেঘের মেলা বসেছে। শত শত সাদা সাদা বক। আমরা মোটরসাইকেল রেখে সু-মোজা খুলে রাস্তায় রেখে বিলের দিকে দৌড় লাগালাম।

মানুষ আমাদের দেখে হা করে তাকিয়ে আছে। আমাদের সেইদিকে খেয়াল নাই। আমরা বকদের সাথে লাফালাফি করতে লাগলাম। ওরা আমাদের দেখে উড়ে গিয়ে একটু দূরে সরে বসে। আমরা যত ওদের আপন করতে চাই ওরা তত আমাদের পর করে দেই।

ঐ সময় ওরার একটা অদম্য স্বাধ মনের মাঝে খুব চেপে ধরেছিলো। এইভাবে অনেকক্ষণ ছোটাছুটি করলাম। এইদিকে বিকেল গড়িয়ে সন্ধা হয়ে আসছে। দুলাভাই বললো চলো রওনা হয়। রাস্তায় এসে দেখি এক চাচা পাটগাছ একত্রে বেঁধে বেলা বানিয়ে নদী দিয়ে যাচ্ছে।

পড়ন্ত বিকালে চাচাকে নিয়ে সেই ছবিটি বুকের ভিতর অনেকদিন ধরে থাকবে।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।