আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলছি ,লম্পট ইজ্জত কেড়ে নিবে ,ইজ্জত কি এতই সস্তা

যাপন করছি জীবন যেহেতু যাপন ছাড়া পরিত্রান নেই। জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত দিয়ে রাজাকারদের ঘৃণা করে যাব মৃত্যু পর্যন্ত । । মাননীয় প্রধানমন্ত্রী , আপনি সাম্প্রতিক সময়ে আপনার অনেক জনসভায় বলেছেন “মা-বোনদের ইজ্জত যারা লুটে নিয়েছিল তাদের বিচার বাংলার মাটিতে অবশ্যই হবে। ” বিচার সংক্রান্ত বাক্যাংশটুকু উতসাহব্যঞ্জক ।

কিন্তু আমাদের মা-বোনদের ইজ্জত কি এত সস্তা যে শুকরশাবক কতিপয় সেনা লম্পট ও তাদের দোসররা তা নষ্ট করার ক্ষমতা রাখে । নির্যাতিতা সেই বীরাঙ্গনরা চিরদিন আমাদের কাছে পরমশ্রদ্ধেয়। জানি আপনার এই উক্তি যৌননির্যাতন সংশ্লিষ্ট চিরায়ত মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ যেখানে নির্যাতিত মেয়েটিকে মানুষ হিসেবে নয় বরং নিতান্ত যৌনলালসাপূরনকারী মাংসপিন্ড হিসাবে দেখা হয় । ধর্ষনের পর এই মাংসপিন্ডটি সেকেন্ড হ্যান্ড নিম্নমানের পন্যে পরিনত হয় । বিয়ের বাজারে তার মূল্য আর অবশিষ্ট থাকেনা ।

শুধু তাই নয় সামাজিকভাবে তাকে বয়কট করা হয়(যেখানে উচিত ধর্ষককে সামাজিকভাবে বয়কট করা), পারিবারিকভাবে হতে হয় লাঞ্ছনার শিকার । অশিক্ষিত ও রক্ষনশীল অনেক পরিবার তার দায়িত্ব নিতেও অস্বীকৃতি জানায় অথবা ধর্ষকের সাথে তার বিয়ে দেয়ার দাবি তুলে ধর্ষককে পুরষ্কৃত করা হয় (কোন মধ্যযুগীয় সমাজে আমরা থাকি) । তাই মেয়েটি আইনের আশ্রয় নেয়া দূরে থাক যথা সম্ভব সব কিছু চেপে রাখে আর প্রতিমূহুর্তে অপরিমেয় মানসিক অশান্তির মধ্যে জীবন অতিবাহিত করে । কারন সমাজ তাকে শিখিয়েছে ধর্ষিতার সম্মান থাকেনা । এভাবে সমাজ তাকে পরোক্ষভাবে সবকিছু চেপে রাখতে বাধ্য করে ।

অসমসাহসী দৃড়চেতা কিছু মেয়ে হয়তো নিতান্ত নিজের যোগ্যতায় প্রতিকূল পরিবেশে প্রতিটি পদক্ষেপে বৈরি এক সমাজের সাথে লড়াই করে বেচে থাকে । তাদের সংখ্যা নিতান্তই হাতে গোনা । এই চিত্র পুরো দক্ষিণ এশিয়ার । তাই এই অঞ্চলে ধর্ষন পরবর্তী বিচার এর সাথে মেয়েটির পুনর্বাসন সংক্রান্ত জটিলতা সমস্যাকে আরও ঘনীভূত করে । অন্যদিকে মেয়েটির পুনর্বাসন নিয়ে মাথা ব্যথা থাকেনা কারও ।

তাই দেখা যায় চাঞ্চল্যকর কিছু ধর্ষন ঘটনার ক্ষেত্রে (যেখানে ভিকটিম উচ্চবিত্ত শ্রেণীর একটি মেয়ে) মেয়েটির বিচার নিয়ে গনমাধ্যম যতোটা সোচ্চার হয় মেয়েটির পুনর্বাসন নিয়ে নিয়ে ততোটা আগ্রহ থাকেনা । পত্রিকাগুলো কয়টি নির্যাতিতা মেয়ের মানসিক , পারিবারিক, সামাজিক লাঞ্ছনার খবর গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করে ? (এখানে আমি ধর্ষিত মেয়েটির নির্যাতনের ঘটনাকে নিয়ে গনমাধ্যমের রগরগে সেনসেশন তৈরি ও টি আর.পি ব্যবসার ঘোরবিরোধী । ) যেহেতু টঙ্গে চড়ে সং সেজে চিতকার না করলে আমাদের কানে কিছু পৌছায়না তাই চোখের সামনে সামাজিক নির্যাতন এর চিত্রটি আমরা এড়িয়ে চলতে পছন্দ করি । কারন তা না করলে সমাজের ভিত্তিমূলে কুঠারাঘাত করতে হয় । একটি মেয়েকে মানুষ হিসাবে স্বীকৃতি দিতে হয় ।

যৌনতৃপ্তিদায়ক , সন্তান উতপাদক , স্থায়ী চাকর বা অর্থউপার্জনকারী বস্তুটির নিয়ন্ত্রনের অধিকার আর সমাজপতিদের থাকেনা । চলচ্চিত্রে ধর্ষনের দৃশ্য দেখে একদিকে যৌনসুড়সুড়ি আর অন্যদিকে মেয়েটির কষ্ট থেকে বিমলানন্দ নেয়ার সুযোগ থাকেনা । তাই ধর্ষককে কালেভদ্রে বিচার এর কাঠগড়ায় তুলে (ধর্ষক যদি সমাজের নিম্নশ্রেণীর ক্ষমতাহীন) সমাজ তৃপ্তির ঢেকুর তোলে । কিন্তু নির্যাতিত মানুষটিকে রক্ষনশীল সমাজের বিষযন্ত্রনা থেকে রক্ষা করার দায়িত্ব কার ? সমাজ কি সামনের দিনগুলোতে ও ধর্ষিতাকে এভাবে অসম্মান করবে ? মানসিকতা পরিবর্তনের কোন লক্ষন দেখতে পাইনা যখন রাষ্ঠ্রের সবচেয়ে ক্ষমতাধারী ব্যাক্তি যে নিজেও নারী হয়ে বলেন ধর্ষক নারীর ইজ্জত লুটে নিয়েছে ।  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ২১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.