আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

'সামনে আসছে শুভ দিন'...কিন্ত কার জন্য?

হাঁটা পথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে হে সভ্যতা। আমরা সাত ভাই চম্পা মাতৃকাচিহ্ন কপালে দঁড়িয়েছি এসে _এই বিপাকে, পরিণামে। আমরা কথা বলি আর আমাদের মা আজো লতাপাতা খায়।

এক. পাহাড়ের ঢাল বেয়ে গড়ানো পাথর পতন চূড়ান্ত হওয়া বিনা থামে না। দুই বছর আগে নির্বাচনী সংঘাতের ধাক্কায় রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার যে পাথর গড়াতে শুরু করেছিল, তা বোধ করি এখন তলায় পৌঁছাতে যাচ্ছে।

রাষ্ট্রের মঞ্চে অভিনীত হচ্ছে শেষ অঙ্কের শেষ দৃশ্যাবলি। কিন্তু কী আছে পথের শেষে, সেই প্রশ্ন এখন আগের থেকে অনেক বেশি করেই জাগ্রত। রাজনীতিবিদেরা পায়ের তলার হারানো মাটি আবার ছুঁতে পারছেন মনে হচ্ছে। ৪ আগস্টের সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফল হাতে আওয়ামী লীগ এখন আত্মবিশ্বাসী। বিজয়ী প্রার্থীদের বিগলিত হাসির মধ্যে শেখ হাসিনার হাসির ছায়াপাতও আমরা খেয়াল করেছি।

একপক্ষে আশা আর আরেক পক্ষে হতাশার মাঝখানে বড় হয়ে উঠেছে গত দুই বছরের খতিয়ান: কী পেলাম আর কী হারালাম। আমলনামা হাতে নিয়ে আজ এর উত্তর আমাদের খুঁজতে হচ্ছে বৈকি! বিশেষত, চোর-পুলিশ খেলায় উভয়পক্ষই যখন কান্ত ও রিক্ত, তখন ভাবতে হচ্ছে, এ কি ‘শেষ হইয়াও হইল না শেষ’ জাতীয় কোনো গল্প? ৪ আগস্টের নির্বাচনী রায় অনেককেই নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছে। ঘটনাটি একটি সন্ধিক্ষণ, এর মধ্যে জড়াজড়ি করে রয়েছে পরিস্থিতির মধ্যকার নানামুখী মাত্রা। এখানে ভোট দেন সারা দেশের মোট ভোটারদের ১.৫ শতাংশ। নগণ্য হলেও এই দেড় শতাংশের মধ্যেই বিশ্লেষকেরা সমগ্র ভোটারের মনোভাবের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাচ্ছেন।

৮/৪ (সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিন) সংস্কার কর্মসূচিকে যেভাবে নড়বড় করে দেয়, গত দুই বছরের আর কোনো ঘটনায় তা ঘটেনি। কেননা এতে প্রমাণ হলো জনগণের ঝোঁক এখনো সাবেকি রাজনীতির প্রতি। তাই যদি হবে, তবে সংস্কারের নৈতিক শক্তি ফুরালো বলে। তার জেরেই বন্দী নেতা-নেত্রীদের কারাগার থেকে বের হওয়ার তোড়জোড় শুরু হলো। এটা একটা দিক।

অন্যদিকে নির্বাচনী আয়োজনের সাফল্যে সরকার ও নির্বাচন কমিশন বলবার ভিত্তি পেল যে, জরুরি অবস্থাতেও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। পাশাপাশি, বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীদের পরাজয় সত্ত্বেও দল দুটি বুঝতে পারে, এই জয়টা আসলে রাজনীতিবিদদেরই। শেখ হাসিনার জামিনে মুক্তিকেও তাঁরা খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবির ওজর হিসেবে ব্যবহার করছেন। এভাবেই খালেদা জিয়া বা শেখ হাসিনা এবং তাঁদের ধারার অনেক হর্তাকর্তার দুর্নীতির অভিযোগের ধার য়ে যেতে দেখা গেল। দৃশ্যত, সরকার এখন তাঁদের বিচারের থেকে আপসে মুক্তির জন্যই বেশি তৎপর।

কাজে কাজেই বিএনপি জোট হেরেও জিতল আর আওয়ামী জিতেও হারল। জরুরি অবস্থায় নির্বাচনে যাওয়ার বিরুদ্ধে আপত্তি আর খাটল না। সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রায়ে নৈতিকভাবে পরাজিত সরকারও জয়ী হলো অন্যভাবে। তারাও এখন দাবি করতে পারে যে, সিটি করপোরেশন নির্বাচন যারা করাতে পারে, জাতীয় নির্বাচনও তারাই করতে সম। এ বাস্তবতায় দুটি প্রধান দল এবং সরকারের মধ্যে জটিল সম্পর্কের পট রচিত করে দিল ৮/৪।

সেই পটের ভূমিতে পরস্পরবিরোধী তিনটি পক্ষই রেষারেষি সত্ত্বেও হয়ে উঠল পরস্পরের প্রতি নির্ভরশীল। ১/১১-এর রাজনীতির শুদ্ধিকরণ ৮/৪-এর পরে গতি হারিয়ে হয়ে গেল অভিযুক্ত নেতৃত্বের ‘দায়মুক্তকরণ’। এর বিনিময়ে ক্ষমতাসীনরা জরুরি অবস্থায় করা সব কাজের দায় থেকে অব্যাহতি চাইবে। এই লেনদেনের মধ্য দিয়ে ৮/৪ এক অর্থে ১/১১-এর খণ্ডন হয়ে উঠল। দুর্নীতি দূর ও রাজনৈতিক সংস্কারকে ‘অভীষ্ট’ এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সৎ জনপ্রতিনিধি উপহার দেওয়াকে ‘ল্ক্ষ্য’ হিসেবে ঘোষণা করেছিল এই সরকার।

অভিযুক্ত রাজনীতিবিদদের মুক্তির কলরোলে সেই অভীষ্ট হারিয়ে না গেলেও দূরে সরল। আর ল্যটি রয়ে গেল ক্ষতবিক্ষত ও অমীমাংসিত। তবে কি সংস্কার হোক বা না হোক, দুর্নীতিবাজরা সবাই সাজা পাক বা না পাক, যেনতেন নির্বাচনের দিকেই পরিস্থিতি ধাবিত হতে চায়? সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বিন্দুতে যে এই সিন্ধু জন্মাবে, তা কে ভাবতে পেরেছিল? এর মধ্যেই লুকিয়ে আছে পুরোনো রাজনৈতিক শক্তির পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রাণভোমরা। কিন্তু দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের ঘোঁটের বিরুদ্ধে যে পরিবর্তনের আকাক্সা জনমনে ঢেউ তুলেছিল, কানসাট-ফুলবাড়ী-শনির আখড়ার গণবিস্ফোরণ যে রদবদলের ডাক দিয়েছিল, তা কি বিফল হবে? সরকারই তো সেই স্বপ্ন বুনে দিয়েছিল মানুষের মনে। সরল চোখে ১/১১ ছিল সেই ডাকেরই সাড়া।

কিন্তু দিনের শেষে দেখা যাচ্ছে, রাজনৈতিক মহলের অসহযোগিতায় আর সরকারের নিজস্ব দোলাচলে সেই অন্তিম আকাক্ষ অপূরিতই রইল। কি রাজনীতিতে কি অর্থনীতিতে, কোনো প্রতিশ্রুতিই তারা সম্পূর্ণ করতে পারেনি। বরং রাজনৈতিক নেতৃত্বকে বন্দী রেখে জনগণের সহানুভূতি আকর্ষণের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আর এখন বিনা প্রায়শ্চিত্তে তাঁরা পার পেতে যাচ্ছেন। যথাযথ বিচার প্রক্রিয়ায় অভিযোগগুলো প্রমাণিত হলে ওই সহানুভূতির বাষ্প উবে যেত।

তা হবে কি না তা আজ অনিশ্চিত। তাই ১/১১ পরিবর্তনের সাড়া না হয়ে হলো তারই ট্র্যাজেডি। আবার এই ট্র্যাজেডিকে ‘বিজয়ে’ পরিণত করার নামে নামে নবযৌবন পাওয়া রাজনীতিবিদেরা যা করবেন, তা হবে দেশের সঙ্গে নতুন মশকরা। তাঁরা ‘যেমন আছি তেমন রব’ গোঁ ধরে টিকে গেলেন। জনগণের কোনো আকাঙ্ক্ষাই তাঁদের কাছে দাম পেল না।

তাঁরা এখনও নিজেদের ধোয়া তুলসিপাতাই গণ্য করবেন এবং বাকি সকলকেও তা মানতে হবে বলে জেদ ধরেছেন। তাঁদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক মহিমা রক্ষাই হয়ে উঠলো দেশের থেকে বড়। তাঁরা জিতলেই নাকি দেশ জেতে, এ কেমন কথা? তাঁরা একে গণতন্ত্রের বিজয়ও বলবেন। কিন্তু কোন গণতন্ত্র? দুই বছর আগে যা আমরা দেখেছিলাম? এ-ই যদি হবে, তবে গত দুই বছরে সকল পক্ষই কি আমাদের নিয়ে থোড় বড়ি খাড়া আর খাড়া বড়ি থোড় খেলাই চালালেন? পরিবর্তন ওপর থেকে আসে না। তার চাহিদা ও যোগ্যতা সমাজের ভেতর সৃষ্টি হতে হয়, করতেও হয়।

এ ব্যাপারে জনসমাজকেও আÍসমালোচনায় বসতে হবে যে, যে পরিবর্তন তাঁরা চেয়েছিলেন, তাঁর জন্য তাঁরা কতদূর যেতে রাজি? কথায় আছে, জনগণ যেমন তেমন নের্তৃত্বই তাঁরা পান। সুতরাং দায় আমাদেরও কম নয়। এই সকল কার্যকারণের ফলেই রাজনীতির গঠন ও গতি পাল্টানোর কর্মযজ্ঞ কেবল সংষ্কারের কুচকাওয়াজ দিয়েই শেষ হলো, দুর্নীতি ও দুর্বৃত্ত রাজনীতির বিরুদ্ধে সত্যিকার লড়াই আর হলো না। ওপরের থেকে আসা পরিবর্তন যে আখেরে প্রহসন কিংবা ট্র্যাজেডিতে পরিণত হয়, সেই বুঝ এখন আসা উচিত। দুই. এই পরিবর্তনের দার্শনিক ধাত্রীকুলে অনেকের সঙ্গে সুশীল সমাজের বিরাট অংশও ছিল।

ডাকনামে ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়’ বলে পরিচিত ব্রিটেন, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডার কূটনীতিকদের ভূমিকাও সর্বজনবিদিত। আমাদের ব্যবসায়ী এলিটরাও বসে থাকেননি। বিশ্বের অভিজাততম চিন্তাশালা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনের বরাতে এই তিন অংশের অবস্থান তুলে ধরা যাক: ক. সুশীল সমাজের এক প্রখ্যাত সদস্য বলেছেন: ‘আমাদের এই সামরিক সরকারকে সমর্থন করা দরকার। এ ছাড়া আর কোনো বিকল্প ছিল না। ’ খ. ‘ব্যবসায়ীরা গড়পড়তাভাবে জরুরি অবস্থাকে স্বাগত জানান।

গোড়ার দিকে অর্থনীতি গতিপ্রাপ্ত হয় এবং ঢাকা শেয়ারবাজার চাঙা হয়। ’ গ. ঢাকাস্থ এক পশ্চিমা রাষ্ট্রদূত স্বীকার করেন, ‘জানুয়ারির ঘটনা সংঘটনে আমরা (আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়) কলকবজার ভূমিকা পালন করেছি...সেনাবাহিনীকে ক্ষমতায় আনায় ব্রিটিশ, আমেরিকান, অস্ট্রেলীয় এবং কানাডীয়রা বিরাট আকারে জড়িত ছিল...এমনকি জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকেও অভ্যুত্থানের পক্ষে নিচুমাত্রার সমর্থন দেওয়া হয়েছিল। ’ আরেক বিদেশি কূটনীতিক বলেন, ‘আমাদের উন্নয়নকাজের স্বার্থ রক্ষায় এটাই ছিল একমাত্র পথ। ’ রাজনীতির দশ পাকে প্রায়শই ভগবান ভূত হন আর ভূত হয়ে যান ভগবান। অচিরেই হয়তো আবার দেখতে পাব সেই ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়’, সেই সুশীল সমাজ এবং সেই ব্যবসায়ীরা আবার ‘গণতন্ত্র রায়’ দুই দলের শীর্ষ নেতাদের মুক্ত করা, নির্বাচন দেওয়া এবং তার আয়োজনে বাঘে-মোষকে এক ঘাটের পানি খাওয়ানোর যজ্ঞে দূতিয়ালি করছেন।

সেই যজ্ঞের শেষে কারা থাকবেন, কারা যাবেন তা নিশ্চিত না হলেও এটা নিশ্চিত যে, দাগি হয়ে ফেরত আসার পর, যজ্ঞে নাকে খত দেওয়া শেষে, রাজনীতিবিদদের দর্প অনেকটাই লোপ পাবে। মতার সংকীর্ণ সুড়ঙ্গপথ দিয়ে তাঁরা হয়তো মসনদের কাছাকাছি হবেন, কিন্তু তাঁদের মাথা থাকবে নিচু। অন্যদিকে এই দুই বছরে রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যে অগণতান্ত্রিক বিভিন্ন শক্তির প্রভাব বিস্তৃত হয়েছে, তার ছাপও সহসা মুছে যাবে না। আরও নিবিড় হয়ে রয়ে যাবে এর মধ্যে জেঁকে বসা দেশি-বিদেশি বেনিয়াদের মুনাফার ডাঁট ও দাপট। কোণঠাসা ও জনবিচ্ছিন্ন রাজনীতিবিদেরা থাকবেন এই ত্রিপীয় শক্তির মুখাপেক্ষী।

সেই দুর্বল ও পরাস্ত নেতৃত্ব বিশ্বের আধিপত্যশীল মতার দাপটে আর অভ্যন্তরীণ টানাপোড়েনে কাবু হয়ে মৌলিক ভূমিকা পালনে অক্ষম হবেন। সুতরাং দ্বন্দ্বের মীমাংসা তাই হবে না, তলায় তলায় তা আরও জোরদার হয়ে আরেকটা ১/১১ও যে ঘনিয়ে আনবে না, তার ভরসা কী? অন্যদিকে যখন সব দিকে ‘সামনে আসছে শুভ দিন’ জাতীয় স্লোগান উঠবে, তখনো জনগণ প্রতারিত বোধ করবে। নির্বাচন হবে, প্রার্থীরা বিজয়মালা গলায় পরবেন, কিন্তু সেই জয়ের শরিক জনগণ হবে না। আগে তারা ছিল রাজনীতির দ্বারা প্রবঞ্চিত, এখন হবে ওই ত্রিশক্তির দ্বারা প্রতারিত। বাংলার দুঃখী মানুষ জয় চায়নি, চেয়েছিল অভীষ্ট পূরণ হোক।

দেশ তাদের আপন হোক, সরকার তাদের প্রতিনিধি হোক, আর রাষ্ট্র হোক জনস্বার্থের রক। ১/১১-এর পৌনে দুই বছর পর সেই আশা দুরাশাই হয়ে রইল। আর এ সুযোগে বিপর্যয়ের নতুন চক্র শুরু হওয়াও বিচিত্র নয়। অসম্ভব নয় নতুন খলনায়কের আবির্ভাব। তিন. গণিতের সমীকরণে সব সময় একটা অজানা রাশি ‘এক্স’ ধরে নেওয়া হয়।

নইলে অঙ্ক মেলে না। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দিগন্তে বারবারই এ রকম অজানা ঘটনা ‘এক্সের’ আবির্ভাব ঘটতে দেখা যায়। বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো অকস্মাৎ শেখ মুজিবের সপরিবারে নিহত হওয়া, ক্ষমতার মধ্যগগনে অকস্মাৎ জিয়াউর রহমানের বিলয়, কিংবা সাম্প্রতিক সময়ের পাঁচ শ বোমা, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা ইত্যাদি হলো তেমনই এক একটি ‘এক্স’ জাতীয় ঘটনা। যাকে আগে থেকে জানা যায় না, কিন্তু যাকে হিসাবে নিতেই হয় এবং যার আবির্ভাবের পর রাজনীতি আর আগের মত থাকতে পারে না। বিপরীতে রাজনীতির অপর একটি ধ্রুবককেও হিসাবে নিতে হবে।

সেই ধ্রুবক হলো জনগণ, তাঁরা আছেন এবং থাকবেন। তাঁদের উত্থানও কিন্তু অপশক্তির ‘এক্স’-কে কাটাকাটি করে ভারসাম্য রা করতে পারে, অতীতে বারবার করেছে। এই ‘এক্স’ জাতীয় ঘটনাই বাংলাদেশের জনগণের রাজনৈতিক মুক্তিকে বারবার জটিল করে তুলেছে। নইলে জনগণ নিজেই নিজেদের সত্যিকার রাজনীতির পথ রচনা করে নিতে পারত। সেটা হতো দুর্বৃত্ত রাজনীতির বিপরীতে জনগণের গণতান্ত্রিক রাজনীতির সুদিন।

ঘনঘটার মধ্যে এখন দেখার অপো, সামনের ‘শুভদিনটি’ কার নামে আসে এবং কাকে তা জয়ী করে। আমাদের জয়ে কাজ নাই, আমরা চাই জনগণের শাসনের অভীষ্ট অর্জন। (লেখাটি গত ৪ সেপ্টেম্বরের প্রথম আলোর সম্পাদকীয় পাতায় প্রকাশিত হয়। ) পুনশ্চ: ১/১১ ছিল 'ভুল, বিপর্যয়কর এবং গণবিরোধী চক্রােন্তর ফসল, োয়ার অন টেররের বঙ্গীয় সংস্করণ' এই অবস্থানের বিপরীত পক্ষরা বলে থাকেন, সেনাবাহিনী সেসময় হস্তক্ষেপ না করলে আরো রক্তপাত হতো। হ্যাঁ হয়তো হতো।

কিন্তু তাঁরা এটি আড়াল করেন যে, সংঘাতের জমি তৈরিতে আজ যারা ত্রাতা সেজেছেন তাঁদের অনেকেরই হাত ছিল। বাংলাদেশে ইরাক-আফগানিস্তানের ধারায় কারজাই টাইপের সরকার প্রতিষ্ঠা করে, রাষ্ট্রটাকে পরাশক্তির ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থের ঘুঁটি বানানো এবং ওয়ার অন টেররে সামিল করানোর পরিকল্পনা ১/১১ এর বেশ কয়েক বছর আগে থেকে বাস্তবায়িত হওয়া শরু হয়। ২৮ অক্টোবরের ঘটনায় তাদেরও হাত আছে। পরাশক্তির থেকে মদদ না পেলে বিএনপি ওভাবে চলতো না। বাবর কার লোক, তারেক কার আশীর্বাদপুষ্ট? আর হাসিনা ভাবলেন, যেহেতু তাঁরা অনেক বেশি মার্কিন ঘেঁষা অতএব জয় তাদেরই।

১/১১ এসবেরই মধ্যবিন্দু। এখন যখন সেই পরিকল্পনা পুরো কাজ করছে না, তখন আসবে আরো বিপর্যয়কর পরিকল্পনা। সেটাই নতুন এক্স। এবং তাতে আরো রক্তপাত বিপর্যয়ের সম্ভাবনাই কেবল বাড়ে। যারা অল্প রক্ত দেখে ভয় পেয়েছিলেন এবার তাদের অনেক বেশি রক্ত দেখতে হতে পারে।

ইতিহাসের যে সমস্যা রক্তপাত ছাড়া সমাধান হবার নয়, তা রক্ত নেবেই। জনগণের উত্থান না হলে তা হবে দাঙ্গা, বিপ্লব না হলে তা হবে প্রতিবিপ্লব, আন্দোলন না হলে তা হবে চক্রান্ত। রক্তের পথেই হয়তো যাবতীয় অনাচারের দায় আমাদের শুধতেই হবে। হয় জনগণ তা করবে, নইলে তা জনগণের ওপর চড়াও হবে। কোনোদিকেই তাই আশা নাই।

ইতিহাসের দেবতা কখনো কখনো রক্ত ছাড়া শান্ত হয় না।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.