আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাড়িভাড়া আইন, কাজীর কিতাব এবং তোঘলকি বাস্তবতা...!...(২য় পর্ব)

``চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই। তা প্রকাশ করতে যদি লজ্জাবোধ হয়, তবে সে ধরনের চিন্তা না করাই বোধ হয় ভাল। ' -- প্রাচীন গ্রীক কবি ইউরিপিডিস (৪৮০-৪০৬ খ্রীঃ পূঃ)

---------------------------------------------------------------------------------- [দৃষ্টি আকর্ষণ: দীর্ঘ পোস্ট। অনুসন্ধিৎসু না হলে ধৈর্যচ্যুতির সম্ভাবনা রয়েছে। ] ---------------------------------------------------------------------------------- বাড়িভাড়া আইন, কাজীর কিতাব এবং তোঘলকি বাস্তবতা...! -রণদীপম বসু [১ম পর্ব এখানে] (পূর্বপ্রকাশিতের পর....) [ধারা ২১.০] ভাড়াটিয়া কর্তৃক মেরামত ইত্যাদিঃ বাড়ি মালিক ইচ্ছা করলেই ভাড়াটিয়াকে বসবাসের অনুপযোগী বা অযোগ্য অবস্থায় রাখতে পারেন না।

স্বাস্থ্যসম্মতভাবে বসবাসের উপযোগী করে বাড়িটি প্রস্তুত রাখতে বাড়ি মালিকের উপর এই আইন বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছে। অর্থাৎ বাড়ি মালিক তার বাড়িটি বসবাসের উপযোগী করে রাখতে আইনতঃ বাধ্য। ভাড়াটিয়াকে পানি সরবরাহ, বিদ্যুৎ সরবরাহ, পয়ঃপ্রণালী নিষ্কাশন ইত্যাদি সুবিধা প্রদান করতে হবে। এমনকি প্রয়োজনবোধে লিফটের সুবিধাও দিতে হবে। কিন্তু উক্তরূপ সুবিধা প্রদানে বাড়ি মালিক অনীহা প্রকাশ করলে ভাড়াটিয়া নিয়ন্ত্রকের কাছে দরখাস্ত করতে পারবেন।

আবার বাড়িটি মেরামতের প্রয়োজন হলেও ভাড়াটিয়া দরখাস্ত করতে পারবেন। ভাড়াটিয়া কর্তৃক অনুরূপ দরখাস্ত পাবার পরে নিয়ন্ত্রক বাড়ি মালিককে নোটিশ প্রদান করবেন এবং বাড়ি মালিককে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্যে শুনানীর সুযোগ দেবেন। শুনানী শেষে প্রয়োজন মনে করলে বাড়িটি মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করার আদেশ দেবেন। এই আদেশ দেবার ত্রিশ দিনের মধ্যে বাড়ি মালিক যদি মেরামত বা করতে ব্যর্থ হন তাহলে ভাড়াটিয়া তা নিয়ন্ত্রককে জানিয়ে সে নিজে মেরামত বা রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য দরখাস্ত করতে পারবে। তবে এরূপ দরখাস্তের সাথে আনুমানিক একটি খরচের হিসাব অবশ্যই নিয়ন্ত্রকের কাছে দাখিল করতে হবে।

নিয়ন্ত্রক তদন্ত করার পরে সন্তুষ্ট হলে ভাড়াটিয়াকে মেরামত বা রক্ষণাবেক্ষণের অনুমতি দেবেন। ভাড়াটিয়া নিজে বাড়িটির মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ করলে যে অর্থ ব্যয় হবে তা বাড়ি ভাড়া হতে কর্তন করে নিতে পারবেন। তবে পূর্বে বাড়িটি মেরামত করার জন্য যে হিসাব দেয়া হয়েছিল তার অপেক্ষা অধিক অর্থ মেরামত বা রক্ষণাবেক্ষণের জন্যে ব্যয় করা যাবে না। ব্যয় করলে উক্ত অতিরিক্ত ব্যয়িত অর্থ বাড়ি ভাড়ার সাথে সমন্বয় করা যাবে না। আবার এও বিশেষ ভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে যে, অনুরূপ খরচ এক বছরে বাড়ি ভাড়ার মোট অর্থের এক ষষ্ঠাংশের বেশি হবে না।

আবার মেরামত যদি জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন হয় তাহলে সেভাবেই নিয়ন্ত্রকের কাছে দরখাস্ত করতে হবে। নিয়ন্ত্রক আদেশ প্রদান করলে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মেরামত কার্য সম্পাদন করতে হবে। বাড়ি মালিক ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মেরামত কার্য সম্পাদন করতে ব্যর্থ হলে ভাড়াটিয়া নিজ দায়িত্বে উপরে বর্ণিত নিয়মে বাড়িটি মেরামত করে নিতে পারবে। এক্ষেত্রে ভাড়াটিয়া বাড়ি মেরামতের যে অর্থ ব্যয় করেছেন সেই অর্থ বাড়ি ভাড়া হতে কর্তন করে নিতে পারবেন। তবে অনুরূপ ব্যয়িত অর্থ অবশ্যই উক্ত বাড়ি ভাড়ার এক ষষ্ঠাংশের বেশি হতে পারবে না।

[ধারা ২২.০] ডেপুটি কমিশনার কর্তৃক বাড়ি মেরামত ইত্যাদিঃ জনস্বার্থে কোন বাড়ির আরও মেরামতের প্রয়োজন হতে পারে। তাই জনস্বার্থের গুরুত্ব বিবেচনা করেই বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের ২২ ধারায় ডেপুটি কমিশনারকে নিজ উদ্যোগে কোন বাড়ি মেরামত করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। তাঁর কাছে যদি প্রতীয়মান হয় যে, বাড়িটি দিন দিন ক্রমাবনতির দিকে যাচ্ছে এবং বাড়িটি ধ্বসে পড়লে জানমাল এমনকি পার্শ্ববর্তী বাড়িসমূহেরও ক্ষতি হবে তাহলে তিনি নিজ উদ্যোগেই অতিসত্বর উক্ত বাড়ি মেরামত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। অনুরূপ মেরামতের জন্যে যত টাকা খরচ হবে তা বাড়ি মালিকের পাওনা বাড়ি ভাড়া হতে ক্রোক করে ১৯১৩ সালের সরকারী পাওনা আদায় আইনের বিধান মোতাবেক আদায় করে নিতে পারবেন। [ধারা ২৩.০] মানসম্মত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের দণ্ডঃ বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের ২৩ ধারায় বাড়ি মালিক কর্তৃক মানসম্মত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের ক্ষেত্রে জরিমানা বা দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

মানসম্মত ভাড়ার চাইতে কম ভাড়া নিলে সেক্ষেত্রে আইনের কোন মাথাব্যথা নেই। কিন্তু আইনসম্মত ভাড়ার চাইতে বেশি বাড়িভাড়া নিলে তা আইনের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই আইনের ৮ ধারা এবং ৯ ধারায় বর্ণিত কারণ ছাড়া অন্য কোন কারণে মানসম্মত ভাড়া অপেক্ষা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অধিক বাড়িভাড়া আদায় করলে সেক্ষেত্রে প্রথমবারের অপরাধের জন্যে মানসম্মত ভাড়ার অতিরিক্ত যে অর্থ আদায় করা হয়েছে তার দ্বিগুণ অর্থদণ্ডে বাড়ি মালিক দণ্ডিত হবেন। তৎপরবর্তী প্রত্যেকবারের অপরাধের জন্যে এক মাসের ভাড়ার অতিরিক্ত যে অর্থ আদায় করা হয়েছে তার তিনগুণ পর্যন্ত অর্থদণ্ডে বাড়ি মালিক দণ্ডিত হবেন। আবার ১১ ধারায় বর্ণিত কারণ ছাড়া অন্য কোন কারণে মানসম্মত ভাড়ার অপেক্ষা অতিরিক্ত কোন ভাড়া প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বা অনুরূপ কোন টাকা গ্রহণ করলে বা দাবী করলে কিংবা প্রদানের জন্যে প্রস্তাব করলে প্রথমবারের অপরাধের জন্যে দুই হাজার টাকা এবং পরবর্তী প্রত্যেকবারের অপরাধের জন্যে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে বাড়ি মালিককে দণ্ডিত করা হবে।

অন্যদিকে, নিয়ন্ত্রক আদালতের লিখিত আদেশ ছাড়া অগ্রীম ভাড়া বাবদ এক মাসের অধিক ভাড়া গ্রহণ করলে প্রথমবারের এক মাসের ভাড়ার অতিরিক্ত যে অর্থ বাড়ি মালিক গ্রহণ করেছেন তার দ্বিগুণ এবং পরবর্তী প্রত্যেক অপরাধের জন্যে এক মাসের অতিরিক্ত যে ভাড়া গ্রহণ করা হয়েছে তার তিনগুণ পর্যন্ত অর্থদণ্ডে বাড়ি মালিক দণ্ডিত হবেন। [ধারা ২৪.০] সুখাধিকার ইত্যাদিতে বাধা প্রদানে দণ্ডঃ বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের ২৪ ধারাটি ভাড়াটিয়ার পদাধিকার, ব্যবহারস্বত্ব বা সুখাধিকারের অধিকার সম্পর্কিত বিধান প্রবর্তন করেছে। যেমন, অন্যের জমির উপর দিয়ে চলাফেরার অধিকার, অপরের দালনের কারণে নিজ বাড়ির আলোবাতাস বন্ধ হতে না পারে এ মর্মে যে অধিকারসমূহ আইনে স্বীকৃতি পেয়েছে তাই হলো সুখাধিকার বা ইজমেণ্ট রাইট। যে বাড়িতে ভাড়াটিয়া বসবাস করছেন বা যে বাড়িতে ভাড়াটিয়া ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন তার সাথেও ইজমেণ্টরাইট বা সুখাধিকার ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। এ ক্ষেত্রে নিরঙ্কুশ অধিকার স্বীকৃত না হলেও প্রথাগতভাবে যতটুকু সুখাধিকার ভোগ ব্যবহার করা সম্ভব তাতে কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না।

অনেক সময় বাড়ি মেরামত করার প্রয়োজন হয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে পৌর কর্তৃপক্ষের নির্দেশও পালন করতে হয়। এক্ষেত্রে যদি সুখাধিকারে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েও থাকে তথাপি তাতে কোন অপরাধ হবে না। এ ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে যদি বাড়ির সাথে সংশ্লিষ্ট কোন সুখাধিকারে বিঘ্ন সৃষ্টি হয় বা বাড়ির সাথে স্থায়ীভাবে ব্যবহারযোগ্য কোন জিনিস সরিয়ে ফেলে বা অপসারণ করে, ধ্বংস করে বা অব্যবহারযোগ্য করে তোলে অথবা ভাড়ার শর্তাধীনে কোন সরবরাহ বা সুবিধা বন্ধ করে দেয় তাহলে তার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রকের কাছে দরখাস্ত করলে নিয়ন্ত্রক সাহেব বিষয়টি অনুসন্ধানপূর্বক সন্তুষ্ট হলে অপরাধীকে পাঁচশত টাকা জরিমানা বা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করতে পারবেন। অনুরূপভাবে পুনরায উক্তরূপ কোন অপরাধ সংঘটন করলে সেক্ষেত্রে বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রক সংশ্লিষ্ট অপরাধীকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করতে পারবেন।

[ধারা ২৫.০] বাড়ি মালিকের ভুল নাম বা ঠিকানা দেবার দণ্ডঃ ভাড়াটিয়া কর্তৃক কোন কোন ক্ষেত্রে অসৎ উদ্দেশ্যের বশবর্তী হয়ে তার বাড়ি মালিকের নাম ও ঠিকানা ইচ্ছাকৃতভাবেই ভুল দেয়া হতে পারে। এ কারণেই বাড়ি মালিকের নাম ও ঠিকানা নিয়ন্ত্রকের কাছে ভুল দিলে তার জন্যে এই ২৫ ধারা প্রণয়নের মাধ্যমে জরিমানা ও অর্থদণ্ডের বিধান করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে যে, কোন ভাড়াটিয়া তার বাড়ি মালিকের নাম ও ঠিকানা ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল দিলে উক্ত ভাড়াটিয়া পাঁচশত টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। তবে বাড়ি মালিকের নাম ও ঠিকানা যে ভুল দেয়া হয়েছে সে সম্পর্কে অবশ্যই ছয় মাসের মধ্যে নিয়ন্ত্রকের কাছে বাড়ি মালিককে দরখাস্ত করতে হবে। [ধারা ২৬.০] বাড়ির দখল বুঝিয়ে দেবার ক্ষেত্রে ভাড়াটিয়ার ব্যর্থতার দণ্ডঃ ভাড়াচুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে ভাড়াটিয়া বাড়ি মালিককে খালি বাড়ির দখল বুঝিয়ে দিতে বাধ্য থাকবেন।

যদি ভাড়াটিয়া তার ভাড়ার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে বাড়িটির দখল বাড়ি মালিককে বুঝিয়ে না দেন তাহলে উক্ত ভাড়াটিয়া দণ্ডিত হবেন। তবে ভাড়াটিয়ার সাথে বাড়ি মালিকের যদি উপভাড়া প্রদানের শর্ত বা চুক্তি কিংবা তার সম্মতি থাকলে ভাড়াটিয়ার বাড়ি মালিককে বাড়ি বুঝিয়ে দেবার বাধ্যবাধকতা থাকে না। বাড়ি ভাড়ার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে যদি ভাড়াটিয়া বাড়িটির দখল বুঝিয়ে দিতে অস্বীকার করেন বা ব্যর্থ হন তাহলে বাড়ি মালিককে ভাড়া নিয়ন্ত্রকের কাছে মামলা দায়ের করতে হবে। এই অভিযোগ পাবার পরে নিয়ন্ত্রক অনুসন্ধান এবং শুনানী গ্রহণ করে সন্তুষ্ট হলে মানসম্মত ভাড়ার দশগুণ অর্থদণ্ডে ভাড়াটিয়াকে দণ্ডিত করতে পারবেন। [ধারা ২৭.০] রশিদ প্রদানে ব্যর্থতার দণ্ডঃ বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের ২৭ ধারায় বাড়ি মালিকের উপর ভাড়া গ্রহণের রশিদ প্রদানের ব্যর্থতার জন্যে দণ্ড আরোপ করা হয়েছে।

এই আইনের ১৩ ধারায় বলা হয়েছে যে, ভাড়াটিয়া কর্তৃক ভাড়া পরিশোধ করা হলে বাড়ি মালিক তৎক্ষণাৎ ভাড়া প্রাপ্তির রশিদ বিধি দ্বারা নির্ধারিত ফরমে (১৯৬৪ সালের বাড়িভাড়া বিধিমালায় রশিদ ফরমের নমূনা বিধৃত আছে) যথাস্থানে স্বাক্ষর করে ভাড়াটিয়াকে প্রদান করবেন এবং বাড়ি মালিককে ভাড়ার রশিদের একটি চেকমুরি সংরক্ষণ করতে হবে। এই আইন অমান্য করে কোন বাড়ি মালিক যদি ভাড়াটিয়াকে ভাড়া গ্রহণের লিখিত রশিদ প্রদানে অস্বীকার করেন বা ব্যর্থ হন তাহলে বাড়ি মালিক ভাড়াটিয়ার অভিযোগের ভিত্তিতে আদায়কৃত টাকার দ্বিগুন অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন। [ধারা ২৮.০] অভিযোগ দায়ের ইত্যাদিঃ বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের ২৮ ধারায় বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রকের কাছে অভিযোগ দায়ের করার পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে। ২৮ ধারায় বলা হয়েছে যে, এই আইনের ২৩, ২৪, ২৫, ২৬ ও ২৭ ধারার অধীনে যে কোন অভিযোগ লিখিতভাবে দায়ের করতে হবে। তদুপরি চার টাকার কোর্ট ফিস সংযুক্ত করতে হবে।

অভিযোগ পাবার পরে নিয়ন্ত্রক সাহেবকে অভিযোগের সত্যতা তদন্ত করে দেখতে হবে। অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে নিয়ন্ত্রক দণ্ড প্রদান করবেন। ২৩, ২৪, ২৫, ২৬ ও ২৭ ধারামতে অর্থদণ্ড প্রদান করা হলে উক্ত অর্থদন্ড প্রদানের তারিখ হতে ত্রিশ দিনের মধ্যে তা নিয়ন্ত্রকের আদালতে জমা না দিলে তাহলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির আবেদনক্রমে ১৯১৩ সালের সরকারী দাবী আদায় আইনের বিধান মতে অর্থ দন্ডের টাকা আদায়যোগ্য হবে। উল্লেখ্য যে, বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের ২৮ ধারার বিধানটি বাড়ি মালিক ও ভাড়াটিয়া উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে। [ধারা ২৯.০] অভিযোগ তামাদিঃ মানুষ তার অধিকার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে তৎপর থাকবে আইনের এটাই কাম্য।

বিলম্ব ন্যায়বিচারকে প্রতিহত করে। এ কারণেই আইনে বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের ২৩, ২৫, ২৬ ও ২৭ ধারামতে অভিযোগ দায়ের করার সময়সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের ২৯ ধারায় বলা হয়েছে যে, বাড়ি মালিক বা ভাড়াটিয়াকে এই আইনের ২৩, ২৫, ২৬ ও ২৭ ধারামতে অভিযোগ দায়ের করতে হলে অবশ্যই উক্ত অভিযোগের অপরাধ সংঘটনের তারিখ হতে ৬ মাসের মধ্যে দায়ের করতে হবে। অন্যথায় অনুরূপ অভিযোগ তামাদি দ্বারা বাতিল হয়ে যাবে। [ধারা ৩০.০] আপীল ও পুনঃবিবেচনাঃ বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩০ ধারায় বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রকের আদেশের বিরুদ্ধে আপীল এবং রিভিউ বা পুনর্বিচারের বিধান বর্ণিত হয়েছে।

এই ধারার ১ উপধারায় বলা হয়েছে যে, কোন ব্যক্তি বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রকের আদেশ বা সিদ্ধান্ত দ্বারা সংক্ষুব্ধ হলে সেই বাড়িটি যে জেলায় অবস্থিত সেই জেলার জেলা জজের কাছে উক্ত আদেশ বা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে সেই ব্যক্তি আপীল করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপীল রুজু করার সময় ৩০ দিন দেয়া হয়েছে। এই সময় গণনা কালে যে দিন নিয়ন্ত্রক আদেশ বা সিদ্ধান্ত দেবেন সেই দিন এবং উক্ত আদেশ বা সিদ্ধান্তের সহিমোহরী নকল তুলতে যে সময় ব্যয় হবে তা বাদ যাবে। বাড়িভাড়া সম্পর্কিত মামলাসমূহ দেওয়ানী প্রকৃতির মামলা। তাই এক্ষেত্রে দেওয়ানী কার্যবিধির বিধানাবলী অনুসরণ করতে হবে।

কাজেই বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রককে বাড়িভাড়ার সম্পর্কিত মামলাসমূহ নিস্পত্তিকালে অবশ্যই দেওয়ানী কার্যবিধির পদ্ধতিগত বিধান অনুসরণ করেই বিচার সম্পন্ন করতে হবে। [ধারা ৩১.০] নিয়ন্ত্রকের আদেশের সত্যায়িত নকল সরবরাহঃ বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩১ ধারায় বাড়িভাড়া সম্পর্কিত মামলার পক্ষসমূহের মামলার যে কোন আদেশ বা সহিমোহরী নকল পাবার অধিকারের বিধান বর্ণিত হয়েছে। এই ধারার মূল বক্তব্য হলো বাড়িভাড়া মামলার যে কোন পক্ষ নির্ধারিত ফি প্রদানপূর্বক নিয়ন্ত্রকের যে কোন আদেশ বা মামলার যে কোন কাগজ-পত্রের সহিমোহরী নকলের জন্য আবেদল করলে সেই পক্ষকে উক্ত সহিমোহরী নকল সরবরাহ করতে হবে। আর অনুরূপ সহিমোহরী নকল সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে। উল্লেখ্য যে, অন্যান্য দেওয়ানী আদালতের মতই সহিমোহরী নকল তোলার পদ্ধতি প্রযোজ্য হবে।

[ধারা ৩২.০] বাড়ি মালিকের বিনা অনুমতিতে বাড়িতে বিদ্যুৎ সরবরাহ পাবেনঃ বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩২ ধারায় ভাড়াটিয়াকে তার বাড়ি মালিকের অনুমতি ছাড়াই বিদ্যুৎ সরবরাহ পাবার অধিকার প্রদান করেছে। এই ধারায় বলা হয়েছে যে, বর্তমানে বলবৎ অন্য কোন আইনে যাই থাকুক না কেন, যে কোন ভাড়াটিয়া তার বাড়ি মালিকের অনুমতি ছাড়াই ভাড়াকৃত বাড়িতে যে কোন লাইসেন্সধারী ব্যক্তির কাছ হতে বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে পারবেন। অন্যদিকে, লাইসেন্সধারী ব্যক্তি বলতে ১৯১০ সালের বিদ্যুৎ আইনের ২ ধারার (জ) দফায় বর্ণিত লাইসেন্সীকে বুঝতে হবে। [ধারা ৩৩.০] অব্যাহতিঃ বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৩ ধারার বিধান দ্বারা দেশের সরকার ও বিভাগীয় চারটি শহরের যেমন- ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম এবং খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের বিধানাবলী হতে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। কাজেই সরকার ও উক্ত চারটি বিভাগীয় উন্নয়ন কর্তৃপসমূহের দখলীয় বাড়ির ক্ষেত্রে এই আইনের বিধানাবলী প্রযোজ্য হবে না।

এই সকল ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিধান অনুযায়ী বাড়িভাড়া সম্পর্কিত বিরোধের নিস্পত্তি হবে। [ধারা ৩৪.০] বিধি প্রণয়নের ক্ষমতাঃ বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৪ ধারাই এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে সরকারকে বিধি প্রণয়নের স্বীকৃতি প্রদান করেছে। কারণ কোন আইনের প্রয়োগ করতে হলে তার সাথে কিছু বিধি ও পদ্ধতি অনুসরণ করা প্রয়োজন হয়ে পরে। তাই যখন আইন প্রণয়ন করা হয় তখন সে আইনে প্রয়োজনবোধে বিধি প্রণয়নেরও ক্ষমতা সংযুক্ত করে দেয়া হয়। কাজেই বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনটি প্রয়োগ করতে গিয়ে যদি বাস্তবে কোন আইনগত ত্রুটি বা অসুবিধা দেখা দেয় তাহলে এই আইনের কার্যকারিতা নিশ্চিত করার জন্যে সরকার প্রয়োজনবোধে বিধি প্রণয়ন করতে পারবেন।

[ধারা ৩৫.০] হেফাজতঃ বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৫ ধারার (ঘ) দফায় বলা হয়েছে যে, ১৯৮৬ সনের বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশের আওতায় দায়েরকৃত কোন মামলা বা আপীল যে সকল আদালতে বিচারাধীন ছিল তাদেরকে বর্তমান বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনটি কার্যকরী হবার তারিখ হতে এই আইনের আওতায আপীল আদালতের কাছে বিচারাধীন রয়েছে বলে বিবেচিত হবে। আর অনুরূপ দরখাস্তসমূহ নিয়ন্ত্রকের কাছে বদলী হবার পূর্বে যে অবস্থায় ছিল সেই অবস্থা বা পর্যায় হতেই নিয়ন্ত্রক তার কার্যক্রম চালিয়ে যাবেন। [ধারা ৩৬.০] রহিতকরণ ও হেফাজতঃ বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৬ ধারাবলে ১৯৯১ সনের বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশকে (অধ্যাদেশ নং ২, ১৯৯১) রদ করা হয়েছে। বলা হয়েছে যে, এরূপ রদের পূর্বে উক্ত অধ্যাদেশের আওতায় সম্পাদিত কাজকর্ম বা গৃহীত ব্যবস্থাদি এই আইনের আওতায় সম্পাদিত বা গৃহীত হয়েছে বলে গণ্য হবে। @ অতঃপর কিতাবী আইন এবং তোঘলকী বাস্তবতাঃ জাসটিস ডিলে জাসটিস ডিনাই, কথাটা প্রবাদসত্য।

যেকোন আইনেরই সাফল্য এর সুষ্ঠু প্রয়োগধর্মী বাস্তবায়নযোগ্যতায়। কাজীর গরু যদি গোয়ালেই না থাকলো, কিতাবী অস্তিত্ব দিয়ে কোন ফায়দা আছে কি ? আইনের স্বাভাবিক ধর্ম হচ্ছে রাষ্ট্রের বিভিন্ন ব্যক্তির পারস্পরিক স্বার্থের সংঘাতে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করা। এই বাড়ি ভাড়া আইনেও বাড়িওয়ালা এবং ভাড়াটিয়া এই দুপক্ষের স্বার্থসংশ্লিষ্টতায় প্রয়োজনীয় ভূমিকা রয়েছে। উভয়পক্ষের অবশ্যপালনীয় হিসেবে কিছু বিধান সুস্পষ্টভাবে দেয়া আছে। কিন্তু বাস্তবতা কী বলে ? ভাড়ার পরিমাণঃ বাড়িভাড়ার পরিমাণ নির্ধারণ করতে গিয়ে আইনটিতে মানসম্মত ভাড়া শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে।

মানসম্মত ভাড়া সম্পর্কে আইনের ১৫(১) ধারায় বলা হয়েছে, ভাড়ার বার্ষিক পরিমাণ সংশ্লিষ্ট বাড়ির বাজার মূল্যের শতকরা ১৫ ভাগের বেশি হবে না। বাড়ির বাজার মূল্য নির্ধারণ করার পদ্ধতিও বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা, ১৯৬৪ তে স্পষ্ট করা আছে। তবে এটাকে সর্বস্তরে গ্রহণযোগ্য করতে ঢাকা সিটি করপোরেশান ঢাকা মহানগরীকে দশটি রাজস্ব যোনে ভাগ করে ক্যাটেগরিভিত্তিক যে সম্ভাব্য বাড়িভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছে তাকে ভিত্তি ধরে ঢাকার যে কোন অঞ্চলে বাড়ি ভাড়া নির্ধারণ করা মোটেও সমস্যা হবার কথা নয়। কিন্তু তোঘলকি বাস্তবতায় স্বেচ্ছাচারী বাড়িওয়ালাদের মুখের কথাই আইন হয়ে গেছে। ভাড়াটিয়াদের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে যে যেভাবে পারে আইনকে সম্পূর্ণ কাঁচকলা দেখিয়ে যথেচ্ছাচারের বলী হতে বাধ্য করা হচ্ছে ভাড়াটিয়াকে।

অথচ আইনের ৭নং ধারায় স্পষ্ট বলা আছে, কোনক্রমেই মানসম্মত ভাড়ার বেশি বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি করা যাবে না। এমনকি বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়ার মধ্যে এই মর্মে কোন চুক্তি থাকলেও মানসম্মত ভাড়ার বেশি ভাড়া নির্ধারণ করা যাবে না। ভাড়া আদায়ের রশিদঃ বাড়িভাড়া আইনের ১৩ ধারায় বাড়িওয়ালার প্রতি ভাড়া পরিশোধের রশিদ প্রদানের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। অর্থাৎ বাড়ি মালিক যখনই ভাড়া গ্রহণ করবেন তখনই বাড়ি ভাড়া পরিশোধের একটি রশিদ ভাড়াটিয়াকে প্রদান করবেন। বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা ১৯৮৬ এ উল্লেখিত ফরমে বা ছকে রশিদ ছাপিয়ে নিয়ে ঐ রশিদ দ্বারাই বাড়ি মালিককে ভাড়া পরিশোধের রশিদ প্রদান করতে হবে।

রশিদ ইস্যু করার সময় বাড়ি মালিক রশিদের মুড়িতেও লিখে রাখবেন এবং তা অবশ্যই বাড়ি মালিককে সংরক্ষণ করতে হবে। কিন্তু বাস্তবে তা আদৌ কি মানা হচ্ছে ? আমার জানামতে ব্যক্তি ভাড়াটিয়ার ক্ষেত্রে কোথাও এটা মানা হচ্ছে না। ভাড়াটিয়াকে বাড়িওয়ালার বাড়িতে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বানিয়ে রাখা হয়েছে সুপরিকল্পিতভাবে। ফলে প্রয়োজনে ভাড়াটিয়া আইনের আশ্রয় নিতে সুস্পষ্টভাবে ব্যর্থ হচ্ছেন এবং বাড়িওলার স্বেচ্ছাচারিতা কোনরূপ জবাবদিহিহীনতার প্রশ্রয়ে আরো যথেচ্ছাচারী হয়ে ওঠছে। বৈধভাবে ভাড়া পরিশোধ করেও লেনদেনের কোন প্রমাণপত্র না পাওয়া সুস্পষ্টভাবেই ব্যক্তির মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন।

এছাড়াও এই বাড়িভাড়া প্রাপ্তির প্রমাণপত্র না দেয়ার পেছনে বাড়িওয়ালার অন্য যে দুরভিসন্ধি কাজ করে তা হলো হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ না করে সরকারের রাজস্ব আয় ফাঁকি দেয়া। এটা কি নিশ্চিতভাবে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকান্ডের আওতায় আসে না ? অথচ আইনের ২৭ ধারায় বলা আছে, এই আইন অমান্য করে কোন বাড়ি মালিক যদি ভাড়াটিয়াকে ভাড়া গ্রহণের লিখিত রশিদ প্রদানে অস্বীকার করেন বা ব্যর্থ হন তাহলে বাড়ি মালিক ভাড়াটিয়ার অভিযোগের ভিত্তিতে আদায়কৃত টাকার দ্বিগুন অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন। আর রাজস্ব ফাঁকির জন্য কী দণ্ডের বিধান আছে তা সংশ্লিষ্ট আইনের অধ্যায় খুঁজে দেখা যেতে পারে। অগ্রিম ভাড়া ও জামানতঃ আলোচ্য বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের ১০ নং ধারায় বলা আছে, ভাড়া দেয়া বা ভাড়া নবায়ন করা অথবা ভাড়ার মেয়াদ বৃদ্ধির কারণে বাড়ির মালিক কর্তৃক ভাড়ার অতিরিক্ত প্রিমিয়াম, সালামী, জামানত বা অনুরূপ কোন টাকা দাবী বা গ্রহণ করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এমনকি অনুরূপ কোন প্রিমিয়াম, সালামী, জামানত প্রদানে কোন ভাড়াটিয়াকে বাধ্য করা যাবে না।

এ ছাড়াও বাড়ি মালিক বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রকের পূর্ব অনুমোদন ছাড়া অগ্রীম ভাড়া হিসেবে এক মাসের ভাড়ার অতিরিক্ত টাকা দাবী বা গ্রহণ করতে পারবেন না। কিন্তু বাস্তবে কি তা মানা হচ্ছে ? অথচ বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের ২৩ ধারায় সুস্পষ্টভাবে নির্দেশিত আছে যে, বাড়ি মালিক এই আইনের ৮ ধারা এবং ৯ ধারায় বর্ণিত কারণ ছাড়া অন্য কোন কারণে মানসম্মত ভাড়া অপেক্ষা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অধিক বাড়িভাড়া আদায় করলে সেক্ষেত্রে প্রথমবারের অপরাধের জন্যে মানসম্মত ভাড়ার অতিরিক্ত যে অর্থ আদায় করা হয়েছে তার দ্বিগুণ অর্থদণ্ডে বাড়ি মালিক দণ্ডিত হবেন। তৎপরবর্তী প্রত্যেকবারের অপরাধের জন্যে এক মাসের ভাড়ার অতিরিক্ত যে অর্থ আদায় করা হয়েছে তার তিনগুণ পর্যন্ত অর্থদণ্ডে বাড়ি মালিক দণ্ডিত হবেন। আবার ১১ ধারায় বর্ণিত কারণ ছাড়া অন্য কোন কারণে মানসম্মত ভাড়ার অপেক্ষা অতিরিক্ত কোন ভাড়া প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বা অনুরূপ কোন টাকা গ্রহণ করলে বা দাবী করলে কিংবা প্রদানের জন্যে প্রস্তাব করলে প্রথমবারের অপরাধের জন্যে দুই হাজার টাকা এবং পরবর্তী প্রত্যেকবারের অপরাধের জন্যে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে বাড়ি মালিককে দণ্ডিত করা হবে। অন্যদিকে, নিয়ন্ত্রক আদালতের লিখিত আদেশ ছাড়া অগ্রীম ভাড়া বাবদ এক মাসের অধিক ভাড়া গ্রহণ করলে প্রথমবারের এক মাসের ভাড়ার অতিরিক্ত যে অর্থ বাড়ি মালিক গ্রহণ করেছেন তার দ্বিগুণ এবং পরবর্তী প্রত্যেক অপরাধের জন্যে এক মাসের অতিরিক্ত যে ভাড়া গ্রহণ করা হয়েছে তার তিনগুণ পর্যন্ত অর্থদণ্ডে বাড়ি মালিক দণ্ডিত হবেন।

ভাড়াটিয়া উচ্ছেদঃ বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৮ নং ধারায় উল্লেখ রয়েছে যে, ১৮৮২ সনের সম্পত্তি হস্তান্তর আইন বা ১৮৭২ সনের চুক্তি আইনের বিধানে যাই থাকুক না বেন, ভাড়াটিয়া যদি নিয়মিতভাবে ভাড়া পরিশোধ করতে থাকেন এবং বাড়ি ভাড়ার শর্তসমূহ মেনে চলেন তাহলে যতদিন ভাড়াটিয়া এভাবে করতে থাকবেন ততদিন পর্যন্ত উক্ত ভাড়াটিয়াকে উচ্ছেদ করা যাবে না। এমনকি ১৮(২) ধারা মতে বাড়ির মালিক পরিবর্তিত হলে ও ভাড়াটিয়া যদি আইনসম্মত ভাড়া প্রদানে রাজি থাকেন তবে তাকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা যাবে না। তবে আইনসম্মত ভাড়া দেয়ার পরও যেসব কারণে ভাড়াটিয়াকে উচ্ছেদ করা যাবে- ১.০ কোন চুক্তির অবর্তমানে ভাড়াটিয়া বাড়ি মালিকের অনুমতি ব্যতীত বাড়ি বা বাড়ির কোন অংশ উপভাড়া প্রদান করলে বা ২.০ ভাড়াটিয়া যদি এরূপ কোন আচরণ করেন যা পার্শ্ববর্তী বাড়ি দখলকারীদের জন্যে বিরক্তিকর বা উৎপাতজনক হয় অথবা ৩.০ ভাড়াটিয়া যদি বাড়িটি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেন বা ব্যবহার করার অনুমতি দিয়ে থাকেন অথবা ৪.০ বাড়িটির নির্মাণ পুনঃনির্মাণ অথবা বাড়ি মালিকের বা তার লোকজনের প্রকৃতপক্ষে প্রয়োজন হয়ে পরে যা আদালতের কাছে সঙ্গত বলে প্রতীয়মান হয় তাহলে উক্ত ভাড়াটিয়াকে উচ্ছেদ করা যাবে। এ ক্ষেত্রে ভাড়াটিয়া বাড়ি ছেড়ে দেয়ার পরবর্তী দুমাসের মধ্যে বাড়িওয়ালা যদি নির্মাণ, পুনঃনির্মাণ বা মেরামতের কাজ শুরু না করেন অথবা সাবেক ভাড়াটিয়া বাড়ি ছেড়ে দেয়ার ছয় মাসের মধ্যে যদি বাড়িওয়ালা অন্য কোনো ভাড়াটিয়ার কাছে বাড়ি ভাড়া দেন তবে আদালত বাড়িটি সাবেক ভাড়াটিয়ার দখলে দেয়া বা আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেয়া বা উভয়ই দেয়ার জন্য বাড়িওয়ালাকে আদেশ দিতে পারেন। ৫.০ চুক্তিতে নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে বা এ রকম কোন চুক্তি না থাকলে মাসিক ভাড়া পরবর্তী মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে যদি ভাড়াটিয়া পরিশোধ না করেন তাহলে উক্ত ভাড়াটিয়াকে উচ্ছেদ করা যাবে।

এছাড়াও ৬.০ যদি ভাড়াটিয়া ভাড়া নেয়ার সময় যে অবস্থায় বাড়িটি পেয়েছেন তা বজায় রাখতে ব্যর্থ হন, বাড়ির অবকাঠামোর কোনো ক্ষতি করেন এবং বাড়িওয়ালা এ রকম ক্ষতির ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করে নোটিশ দেয়ার তিন মাসের মধ্যে ক্ষতি মেরামত না করেন। অথবা ৭.০ বাড়িওয়ালার লিখিত সম্মতি ছাড়া ভাড়াটিয়া যদি বাড়ির কোনো স্থায়ী অবকাঠামোর ক্ষতি করেন। কিন্তু বাস্তবতা কী বলে ? সামনের মাস থেকে বাড়ি ছেড়ে দেবেন, বাড়িওয়ালার মৌখিক নির্দেশই কোনঠাসা ভাড়াটিয়ার জন্যে ফরয-ই-আইন হয়ে বাধ্যগত আজাব নেমে আসে। বাড়ি মেরামতঃ বাড়ি মালিক ইচ্ছা করলেই ভাড়াটিয়াকে বসবাসের অনুপযোগী বা অযোগ্য অবস্থায় রাখতে পারেন না। স্বাস্থ্যসম্মতভাবে বসবাসের উপযোগী করে বাড়িটি প্রস্তুত রাখতে বাড়ি মালিকের উপর এই বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের ২১ নং ধারায় বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছে।

অর্থাৎ বাড়ি মালিক তার বাড়িটি বসবাসের উপযোগী করে রাখতে আইনতঃ বাধ্য। ভাড়াটিয়াকে পানি সরবরাহ, বিদ্যুৎ সরবরাহ, পয়ঃপ্রণালী নিষ্কাশন ইত্যাদি সুবিধা প্রদান করতে হবে। এমনকি প্রয়োজনবোধে লিফটের সুবিধাও দিতে হবে। কিন্তু উক্তরূপ সুবিধা প্রদানে বাড়ি মালিক অনীহা প্রকাশ করলে ভাড়াটিয়া নিয়ন্ত্রকের কাছে দরখাস্ত করতে পারবেন। আবার বাড়িটি মেরামতের প্রয়োজন হলেও ভাড়াটিয়া দরখাস্ত করতে পারবেন।

ভাড়াটিয়া কর্তৃক অনুরূপ দরখাস্ত পাবার পরে নিয়ন্ত্রক বাড়ি মালিককে নোটিশ প্রদান করবেন এবং বাড়ি মালিককে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্যে শুনানীর সুযোগ দেবেন। শুনানী শেষে প্রয়োজন মনে করলে বাড়িটি মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করার আদেশ দেবেন। এই আদেশ দেবার ত্রিশ দিনের মধ্যে বাড়ি মালিক যদি মেরামত বা করতে ব্যর্থ হন তাহলে ভাড়াটিয়া তা নিয়ন্ত্রককে জানিয়ে সে নিজে মেরামত বা রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য দরখাস্ত করতে পারবে। তবে এরূপ দরখাস্তের সাথে আনুমানিক একটি খরচের হিসাব অবশ্যই নিয়ন্ত্রকের কাছে দাখিল করতে হবে। নিয়ন্ত্রক তদন্ত করার পরে সন্তুষ্ট হলে ভাড়াটিয়াকে মেরামত বা রক্ষণাবেক্ষণের অনুমতি দেবেন।

ভাড়াটিয়া নিজে বাড়িটির মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ করলে যে অর্থ ব্যয় হবে তা বাড়ি ভাড়া হতে কর্তন করে নিতে পারবেন। তবে পূর্বে বাড়িটি মেরামত করার জন্য যে হিসাব দেয়া হয়েছিল তার অপেক্ষা অধিক অর্থ মেরামত বা রক্ষণাবেক্ষণের জন্যে ব্যয় করা যাবে না। ব্যয় করলে উক্ত অতিরিক্ত ব্যয়িত অর্থ বাড়ি ভাড়ার সাথে সমন্বয় করা যাবে না। আবার এও বিশেষ ভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে যে, অনুরূপ খরচ এক বছরে বাড়ি ভাড়ার মোট অর্থের এক ষষ্ঠাংশের বেশি হবে না। আবার মেরামত যদি জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন হয় তাহলে সেভাবেই নিয়ন্ত্রকের কাছে দরখাস্ত করতে হবে।

নিয়ন্ত্রক আদেশ প্রদান করলে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মেরামত কার্য সম্পাদন করতে হবে। বাড়ি মালিক ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মেরামত কার্য সম্পাদন করতে ব্যর্থ হলে ভাড়াটিয়া নিজ দায়িত্বে উপরে বর্ণিত নিয়মে বাড়িটি মেরামত করে নিতে পারবে। এক্ষেত্রে ভাড়াটিয়া বাড়ি মেরামতের যে অর্থ ব্যয় করেছেন সেই অর্থ বাড়ি ভাড়া হতে কর্তন করে নিতে পারবেন। তবে অনুরূপ ব্যয়িত অর্থ অবশ্যই উক্ত বাড়ি ভাড়ার এক ষষ্ঠাংশের বেশি হতে পারবে না। কিন্তু বাস্তব বলে সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা।

ভাড়াটেদের খোয়াড়ি জীবনই এর ভাষ্য। ভাড়া পুনঃনির্ধারণের সময়কালঃ বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৬ ধারায় স্পষ্ট করে উল্লেখ করা হয়েছে যে, মানসম্মত ভাড়া কার্যকরী হবার তারিখ হতে দুই বছর পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। দুই বছর পর মানসম্মত ভাড়ার পরিবর্তন করা যাবে। কিন্তু বাস্তব কী বলে ? চলতি বছরের জানুয়ারিতে গোটা ঢাকাতেই বাড়িওয়ালারা খুব অন্যায়ভাবে বাড়িভাড়া একদফা বাড়িয়ে দিলেও জুলাই থেকেই শুনা যাচ্ছে যে আরেকদফা ভাড়াবৃদ্ধি ঘটে গেছে অনেক এলাকায় এবং অন্য অনেক এলাকায় ইতোমধ্যে বাড়িওয়ালারা ভাড়াটিয়াদের কাছে মৌখিক এলান দিয়ে ফেলেছে, দ্রব্যমূল্যের যা দাম ! আগামী মাস থেকে ভাড়া হবে এতো। নইলে বাড়ি ছেড়ে দেবেন।

বাড়ি ছাড়লেই যে বাড়িওয়ালার লাভ ! নতুন ভাড়াটিয়াকে ঠিকই বর্ধিত ভাড়ায় বাসা ভাড়া দেবেন। কিতাবে বন্দী আইনের সাথে বাস্তবতার তোঘলকি ব্যাভিচার যে কতোটা সঙ্গতিহীন ও বিপরীতমুখি, এরই গুটিকয় নমূনা উদাহরণ দেয়া হলো শুধু। তা প্রতিকারের কোনো উপায় কি নেই ? আইনের শোভন বাক্যবন্ধে এটাও স্পষ্ট বলা আছে যে, সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি তার উপর অবিচার হচ্ছে এমন মনে করার কারণ ঘটলে তিনি যথানিয়মে আইনের আশ্রয় নেয়ার অধিকার রাখেন। এবং বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের ২৯ ধারায় বলা হয়েছে যে, বাড়ি মালিক বা ভাড়াটিয়াকে এই আইনের ২৩, ২৫, ২৬ ও ২৭ ধারামতে অভিযোগ দায়ের করতে হলে অবশ্যই উক্ত অভিযোগের অপরাধ সংঘটনের তারিখ হতে ৬ মাসের মধ্যে দায়ের করতে হবে। অন্যথায় অনুরূপ অভিযোগ তামাদি দ্বারা বাতিল হয়ে যাবে।

আইনের এরকম আশ্রয় যদি থেকেই থাকে, তাহলে প্রশ্ন আসে, তা সত্তেও এমন ভুক্তভোগী ভাড়াটিয়ারা কেনই বা প্রতিকার চেয়ে আইনের যথাযথ আশ্রয় নিতে ব্যর্থ হচ্ছেন ? @ আইনের আশ্রয়ে যেতে ভয় কোথায় ? চলবে..... [৩য় পর্ব]

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.