আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাথর

মানুষ তো না... আমি জানোয়ার... মানুষ যেদিন হব ফিরে আসব সেইদিন...

ছুটন্ত ট্রেনের দিকে পাথর ছুঁড়ে মারা নিঃসন্দেহে আনন্দের কাজ; বিশেষ করে পাথরটা যখন ট্রেনের জানালা দিয়ে ঢুকে পড়ে তখন লক্ষভেদের যে আনন্দ হয় তা অলিম্পিকের শুটাররাও পান কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। আমি কখনো সত্যিকার ট্রেনে চড়িনি......... জীবনে কখনো ঘন্টায় ৬০-৭০ কিলোমিটার বেগে ছুটে চলা ট্রেনের দিকে পাথরও ছুঁড়ে মারিনি। তাই আমি সত্যিই জানি না যে যাত্রীদের ট্রেনে চড়ার আনন্দ বা সেই আনন্দে ঈর্ষান্বিত হয়ে পাথর ছুঁড়ে লক্ষভেদের মজাটা ঠিক কি। তবে ছুটন্ত ট্রেনের দিকে নব্য শুটারদের ছুঁড়ে মারা পাথরে যাত্রীদের যে সমূহ অসুবিধা ঘটে তাতে কোন সন্দেহ নেই। তাই এই শুটারদের প্রতি আমার আবেদন যতই আনন্দ হোক .......পাথর ছুঁড়ে মারা বন্ধ করুন।

আমার এরকম নীতিবাক্যমূলক পোস্টের অবতারণার কারণটা ব্যাখ্যা করছি.......... আমার একজন প্রিয় শিক্ষক.... শফিক স্যার.... ফিজিক্স পড়াতেন। কদিন আগে তিনি ট্রেনে করে জামালপুর যাচ্ছিলেন। তখন কিছু শৌখিন শুটার স্যারের বগির দিকে ছুঁড়ে মারে পাথর...... পাথরটা স্যারের চোখে এসে লাগে। স্যারের চশমা গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে যায়..... চোখে প্রচন্ড আঘাত পান স্যার। ডাক্তারের কাছে গেলে ডাক্তার জানান স্যারের রেটিনা ফোবিয়া সেন্ট্রালিসের কাছাকাছি এলাকায় ছিঁড়ে গেছে।

ফোবিয়া সেন্ট্রালিসের এলাকায়ই সবচেয়ে স্পষ্ট প্রতিবিম্ব সৃষ্টি হয়.... সেখানে আঘাত পাওয়া মানে পড়াশোনা করাটা একটা বড় ঝুঁকির কাজ। আর রেটিনা বদলানোও যায় না.... সম্ভবত সুঁই সুতোও লাগানো যায় না তাতে। আজ রোববার সকালে স্যারের অপারেশন...... মেজর অপারেশন একটা..... সবাই স্যারের জন্য দোয়া করবেন। আপনাদের সবার শুভ কামনা আর প্রার্থনায় হয়তো স্যার আবার সুস্হ হয়ে ফিরে আসবেন.....। খবরটা শুনেই স্যারকে ফোন করেছিলাম।

স্যার নাকি ক্লাস করাচ্ছেন!!!! পরে আবার ফোন করেই হা হা করে উঠলাম..... "স্যার এখন আপনি ক্লাস করাচ্ছেন...... আপনার রেস্ট দরকার....." স্যার বললেন," ধুর আমার কিছু হয়নি...." আমি স্যারের পুরাতন স্টুডেন্ট বলেই হয়তো স্যার দীর্ঘশ্বাসটা ফেলেই বললেন,"আরে পাগল, মরে তো যাই নাই.... হয়তো একটা চোখ মরে গেল আরকি। " স্যার খুব আশাবাদী মানুষ। স্যারের এই কথা শুনে আমি একটু নরম স্বরেই বললাম, " ডাক্তাররা তো রেস্ট নিতে বলেছে আপনাকে..."স্যার জবাবে বললেন,"হুমমম তা তো বলেছে কিন্তু সারাক্ষণ বাসায় বসে থাকলে তো একঘেয়ে লাগে.... উল্টা-পাল্টা চিন্তা মাথায় আসে........ কি না কি হয়.." আমারও সাথে সাথে মনে হল সৃষ্টিকর্তা না করুন__ কিন্তু যদি স্যারের কিছু একটা হয়ে যায় তাহলে কি হবে স্যারের টুনটুনি পাখির মত ছোট্ট দুটো মেয়ের..... স্যারের প্রিয়তমা স্ত্রীর??!!?? জোর করে মাথা থেকে চিন্তাটা দূর করে দিলাম। স্যারকে বললাম "কিছু হবেনা স্যার..... আপনি ভাল হয়ে যাবেন.." আমি চাই স্যার ভাল হয়ে যান..... সেজন্য আপনারা দোয়া করবেন..... আর একটু আনন্দের লোভে কারো দিকে পাথর ছুঁড়ে মারাটাও বন্ধ করবেন। সেটা ব্লগেই হোক.... আর বাস্তব জীবনেই হোক.... পাথরটা কথার হোক বা আবেগের হোক.... কিংবা হোক রেললাইনকে সাপোর্ট দেওয়া শক্ত নুড়ি...... সেটা ছোঁড়া বন্ধ করলে হয়তো অনেকেই আঘাত থেকে রক্ষা পাবে।

আর কাউকে রক্ষা করাটা পাথর ছোঁড়া থেকে কম আনন্দের সেটা দয়া করে আমাকে বিশ্বাস করতে বলবেন না। লেখাটা কষ্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ!!!!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।