আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দ্যা লাস্ট লেকচার

.... তবুও আমি স্বপ্ন দেখি ... (স্বপ্ন, বাস্তব এবং ব্লগের সর্বস্বত্ব ব্লগার কতৃক সংরক্ষিত)

র‌্যান্ডি পাউশ ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের স্বনামধন্য কার্নেগী ম্যালন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞানের প্রফেসার। একজন কম্পিউটার বিজ্ঞানী হিসেবে তার যশ ছিল বিভিন্ন দিকে বিশেষত হিউম্যান-কম্পিউটার ইন্টারেকশনে। ছোট ছোট তিন সন্তানের একজন তরুন বাবা, একজন প্রেমময়ী স্বামী অথবা হাস্যজ্জ্বল একজন মানুষ - সব দিক দিয়েই ছিল তার সুখ্যাতি। শুধু অভাব ছিল একটা বিষয়ের - সময়ের। যাইহোক, এই ব্লগ পোস্টের মূল উদ্দেশ্য তার গবেষনার বিষয় বা পারিবারিক জীবন নয়, বরং তার সংক্ষিপ্ত জীবনের শেষ লেকচার যা ইতিহাসে দ্যা লাস্ট লেকচার হিসেবে সমাদৃত হবে যুগযুগ ধরে।

দ্যা লাস্ট লেকচার - এর একটা প্রেক্ষাপট রয়েছে। ২০০৬ সনের অগাষ্ট মাসে পাউশের লিভারে প্রথম ক্যানসার ধরা পড়ে। দ্রুত চিকিৎসা নেয়া হলেও সে ক্যানসারকে নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব হয়নি। বিশ্বের সেরা ডাক্তারদের সমন্বয়ে গড়া দল প্রায় এক বছর চেষ্টার পর ২০০৭ এর অগাস্টে জানায় তার লিভার প্রায় নষ্ট হয়ে গিয়েছে এবং ক্যানসার ছড়িয়ে পড়ছে অন্য অঙ্গেও। ডাক্তাররা এটাও তাকে জানিয়ে দেয় তার কর্মক্ষম জীবনের আর মাত্র ছয় মাস বাকি রয়েছে।

এরকম একটা সময়ে পাউশ স্বীদ্ধান্ত নেয় সে শেষ বারের মত প্রিয় ছাত্রছাত্রীদের সামনে গিয়ে দাড়াবে। ২০০৭ সনের সেপ্টেম্বর মাসের ১৮ তারিখ পাউশ যে লেকচারটা তার ছাত্রছাত্রী, সহকর্মী এবং বন্ধুদের জন্য দিয়েছিল তারই নাম দ্যা লাস্ট লেকচার। এই লেকচারের বিষয়বস্তু ছিল "Really Achieving Your Childhood Dreams". একজন মানুষ যে জানে আর মাত্র ছয় মাস পরই মৃত্ত্বু তাকে একটু একটু করে গ্রাস করতে শুরু করবে, কি অসাধারন প্রাঞ্জল ভাবে সেদিন লেকচারটি দিয়েছিল। বিজ্ঞান নয়, সমাজনীতি নয়, রাজনীতি নয়, নয় অর্থনীতি - একজন মৃত্ত্বু পথযাত্রীর শেষ লেকচার ছিল স্বপ্নকে নিয়ে। প্রিয় ছাত্রছাত্রীদের জীবনের শেষ বেলায় এসেও স্বপ্ন দেখার জন্য অনুপ্রেরনা যুগিয়ে গিয়েছিল সেদিন পাউশ।

দ্যা লাস্ট লেকচার ২২৪ পৃষ্ঠার বই আকারে প্রকাশিত হয় ৮ এপ্রিল ২০০৮। প্রকাশের সাথে সাথে যুক্তরাষ্ট্রে বেস্ট সেলারের খেতাব অর্জন করে বইটি। তবে এ কথাও সত্য পাউশের সেই লেকচারের স্বাদ কোন দিন লিখিত বই দিতে পারবে না। সেই অসাধারন লেকচারের তাৎপর্য শুধু দেখেই উপলব্ধি করা সম্ভব। ১১৬ মিনিটের সম্পূর্ন লেকচারটি ইউটিউবে রয়েছে এবং এখন পর্যন্ত প্রায় পাঁচ মিলিয়ন মানুষ লেকচারটি দেখেছে।

২০০৮ এর মে মাসে পাউশের যকৃতও ক্যানসার আক্রান্ত হয়ে পড়ে এবং অবস্থা দ্রুত খারাপ হতে শুরু করে। জুলায়ের শুরুতে পরিবার থেকে জানানো হয় পাউশের অবস্থা এতটা খারাপ আর কখনও হয়নি। সবশেষে গতকাল (২৫ জুলাই) সকালে যুক্তরাষ্ট্র সহ বিশ্বের অনেক দেশের প্রিয় ছাত্রছাত্রী এবং বন্ধুদের শোকের সাগরে ভাসিয়ে পাউশ চিরদিনের মত মৃত্ত্বর কোলে ঘুমিয়ে পড়ে। আজ পাউশ আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু তার স্মৃতি অমলিন থাকবে স্ত্রী সহ ছয়, চার এবং দুই বছরের তিন সন্তানের হৃদয়ে। এবং অবশ্যই দ্যা লাস্ট লেকচারের স্ক্রিনে, যা যুগযুগ ধরে হাজার হাজার মানুষকে শেখাবে কি করে স্বপ্ন দেখতে হয়।

দ্যা লাস্ট লেকচার - র‌্যান্ডি পাউশ ২৬ জুলাই ২০০৮ ডাবলিন, আয়ার‌ল্যান্ড।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.