আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফুটবলার আবুল



ফুটবল খেলা দেখা যায় রেডিও-তে, তাও নাকি আবার রেডিও’র পেছনে ! হাস্যকর প্রলাপ বললেও যথার্থ বলা হবে না। যত্তোসব আজগুবি বিষয় নিয়ে আলাপে মশগুল থাকে পাড়ার লোকজন। যেখানে যাই একই কথা। আবুল নাকি বড়ো ফুটবলার হয়েছে। কয়েক দিন ধরে বলে বেড়াচ্ছে পাড়ায় পাড়ায়।

তার ফুটবল খেলা নাকি প্রায় প্রতিনদিনই রেডিও’র পেছনে দেখা যাচ্ছে। এমন কথা শুনে এক মুরুব্বি নাকি আবুলের গালে ঠাস করে একটা থাপ্পরও বসিয়ে দিয়েছিলো। তবু আবুল তার জবানে অটল। রেডিও-তে চাকরি করে এপাড়ার এক ভদ্রলোক। উনি বাসা থেকে সকালে বেরিয়ে যান আসেন রাতে।

সাত সকালে উনি যখন হন্তদন্ত হয়ে বাসা থেকে বের হচ্ছিলেন তখন সেখানে আগে থেকে দাঁড়িয়েছিলো পাড়ার লোকজন। উদ্দেশ্য অন্যকিছু নয়। উদ্দেশ্যটা নেহায়েতই আবুল বিষয়ক প্রশ্ন করা। ধুরমুর করে ভদ্রলোক রিকশায় উঠে পড়েছেন। এতো লোক যে তার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছে সেদিকে তাকানোর কোনো ফুরসৎ নেই তার।

হবে হয়তো কোনো বিশেষ কাজের তাড়া আছে। ওপাড়ার কালাই ঠাকুর ঠিক রিকশার সামনে দাঁড়াতেই ভদ্রলোক মুখে কিছুটা বিরক্তির ভাব নিয়ে বললেন, কিছু বলবেন? নিমিষেই পাড়ার লোকজনে ভরে গেলো রিকশার চারদিক। সেখানেই এক সাথে কয়েকজন জিজ্ঞেস করলেন রেডিও’র পেছনে আবুলের ফুটবল খেলা দেখা যাবার কথা। ভদ্রলোক বললেন, হ্যাঁ, তাতো দেখা যায়ই। তবে ছেলেটা এখনো ভালো খেলতে পারে না।

বলেই রিকশাঅলার পিঠে আলতো করে একটা টোকা মারলেন। রিকশা গড়গড় করে চলে গেলো। পাড়ার লোকজনের মুখে কোনো কথা নেই। যেনো বোবা সেজে গেছে সবাই। শুধু একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে হা করে থাকে তারা।

আমি তো বিষয়টিকে ফালতু বলে উড়িয়েই দিয়েছিলাম। যখন শুনলাম রেডিও’র ভদ্রলোকের উত্তরটা, তখন নিজেই একটু ভরকে গেলাম। পড়ে গেলাম গোলক-ধাঁধায়। টেলিভিশনে ছায়াছবি, নাচগান, খেলাধুলা দেখেছি। সময়ে অসময়ে রেডিওতে ধারাভাষ্যও শুনেছি।

কিন্তু এমন বিদঘুটে ঘটনাটার কথা তো শুনিনি। আর এক বন্ধু আছে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। ঢাকা বেতারে কাজ করে। এমন সমস্যায় পড়েছি ভয়ে ওকেও জিজ্ঞেস করতে পারছি না। এমন প্রশ্ন শুনে যদি আমাকে গাধা ভেবে বসে ? আবুল যেখানে খুশি ফুটবল খেলুক, যেখানে সম্ভব দেখা যাক; আমি এসবের মধ্যে আর নাই।

অফিসের কাজে এমনিতেই আমার মাথা ঠিক নাই। গত দুই মাস বাইরে ছিলাম। গতকাল রাতেই ফিরেছি। আবুলের সাথে এখনো দেখা হয় নি। এসব আজব কথা শুনে ওর সাথে দেখা করার ইচ্চাটাও উবে গেছে।

মাথাটা কেমন যেনো টলমল করছে। অফিস যাবো। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে গলায় টাই পড়ছিলাম। আয়নাতেই দেখতে পেলাম আবুলকে। রীতিমতো একজন ফুটবলার বেশে ঢুকে পড়েছে আমার রুমে।

শরীরে জার্সি আর হাতে একটা ফুটবল। একরাশ বিরক্তি নিয়ে তাকালাম ওর দিকে। ও হেসে আমার কাছে এসে বললো, ভাইজান আপনে আসছেন মাগার আমার সাথে দেখা করলেন না। একটা লম্বাদীর্ঘশ্বাস ফেলে আমি বললাম, তোর সাথে কি আর দেখা করা যায় রে ? তুই তো স্টার হয়ে গেছিস। রেডিও’র পেছনে তোর খেলা দেখা যায়, কম কথা তো নয়! আবুল আমার টাই নাড়তে নাড়তে বললো, ভাইজান পাড়ার লোকজনের মতো আপনে আমারে ফালতু ভাবতাছেন ? আমি বললাম, না না তোরে ফালতু ভাবতে যাবো কেনো ? আবুল আমার খাটের বসে আঙুলের মাথায় বলটি বোঁ বোঁ করে ঘুরাতে ঘুরাতে বলে, যা-ই বলেন ভাইজান, ফুটবলের মতো খেলাই হয় না।

আমি ওকে একটু দ্বিধাগ্রস্ত মনে বললাম, তুই কি সত্যিই ফুটবল.... আবুল আমার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বললো, বুঝতে পারছি তুমিও পাড়ার লোকজনের মতো অঅমারে বিশ্বাস করতে পারতাছো না। এরপর আবুলের সাথে কিছু কথা হলো। আবুল আজ বিকেলে পাড়ার লোকজনকে তার কথার সত্যতা প্রমাণ করে দেবে। পাড়ার লোকজন কয়েকটি রেডিও সাথে করে চলে এলো আবুলের বাড়ির সামনে। লোকজন মাঝে মাঝেই রেডিও’র পেছনে তাকাচ্ছিলো।

নাহ ! কিচ্ছু তো দেখা যায় না। রীতিমতো হতাশ সবাই। আমিও যাচ্ছিলাম আবুলের বাড়ির সামনে। আমাকে দেখেই লোকজন রেগে গেলো। কোথায় আবুল।

ওর পিঠের চামরা তুলে নেবো। ফাইজলামি পাইছে, তাই না? এমন সময় আবুলের বন্ধু মফিজ এলো। তার সাথে কয়েকটি রিকশা ভ্যান। ও ঈশারায় রিকশায় উঠতে বললো। সাত-পাঁচ না ভেবে কয়েকজন অতিউৎসাহী রিকশায় উঠে বসলো।

আমি উঠলাম একটি রিকশাতে। কারণ উৎসাহ আমারও কম নয়। রিকশা চলেছে রেডও সেন্টারের দিকে। সময় যাচ্ছে আর কৌতুল আর রাগ বাড়ছে লোকজনের। রেডিও সেন্টারের সামনে এসেই থামলো রিকশাগুলো।

এরপর যা ঘটলো তা আর বলার মতো নয়। সত্যিই রেডিও’র পেছনে আবুলকে ফুটবল খেলতে দেখলো সবাই। রেডিও সেন্টারের পেছনে একটা বিশাল মাঠ পড়ে আছে। ওখানে ছেলেপুলেরা বিকেল করে ফুটবল খেলে। আবুলও তাদের সাথে খেলে।

আশপাশের বাসা ও রেডিও সেন্টারের ভবনের জানালা দিয়ে কর্মকর্তারাও মাঝে মাঝে খেলা দেখেন। পাড়ার লোকজনের চোখে-মুখে আগুন ঝরছিলো। আমি ওদের দিকে তাকাতেই ভয় পাচ্ছিলাম। কিন্তু আবুলের সেদিকে কোনো ভ্র“পেই নেই- ও খেলেই চলেছে। সত্যিই রেডিও’র পেছনে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.