আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পুতুল প্রীতি

............................................

আমাকে ছোটবেলায় বাড়ি থেকে কেউ খেলনা কিনে দিতো না। এমনকি আমার বোনরাও তাদের খেলনা আমাকে কখনও খেলতে দেয়নি। তারা শো-কেসে তাদের খেলনা সাজিয়ে রাখতো কিন্তু দিতো না। আর নতুন কোনো খেলনা কেউ দিলে তাও দিতো না আমাকে। আমার বড়বোনের দুইটা ভাল্লুক ছিল, যার একটাও আমাকে ও দেয়নি।

দুইটাই পেয়েছিল আমার খালাত দুই ভাইবোন। আমার খালাত ভাই অবশ্য ভাল্লুকটা দেখে ভয় পেতো। আমার খেলনার মধ্যে ছিল একটা টেলিফোন, একটা টেলিভিশন, দুইটা পুতুল। আর একটা পুতুল পুরোপুরি ঠিক ছিল কিন্তু আরেকটা পুতুল ছিল ইয়া লম্বা আর পায়ে হিল ছিল না। তাই পা টা কেমন উঁচু হয়ে থাকতো।

হিল হারিয়ে গেছিল দেখেই আমার বোনরা সেটা আমাকে খেলতে দিয়েছিল। টেলিফোনটার আবার চাকা ছিল চারটা। নম্বর ঘুরালে ক্যারক্যার আওয়াজ হতো, টেলিভিশনটাতে বিভিন্ন জীবজন্তুর ছবি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আসতো আর মিউজিক হতো। এইসব খেলনা নিয়েই আমি আমার শৈশব পাড় করেছি। আমার কাছে এখন শুধু টিভিটা আর চাকাওয়ালা টেলিফোনটাই আছে।

একবার বালিশ দিয়ে আমার শৈল্পিক হাত দিয়ে একটা পুতুল বানিয়েছিলাম। চারকোণা বালিশের দুইকোণে দুইটা রাবার ব্যান্ড দিয়ে ঝুঁটির মত বেঁধে দিয়ে দিয়েছিলাম। আর বালিশের মাঝখানের চেয়ে একটু উপরে পলিথিনের দড়ি দিয়ে বেঁধে মাথার আকৃতি করেছিলাম, এরপর আমার ওয়াটার কালার আর ফেব্রিকসের কালার দিয়ে চোখ মুখ এঁকে এটা ফ্রক পড়িয়ে দিয়েছিলাম। পুতুলটার চেহারা হাস্যকর হলেও অনেকেই এটার প্রশংসা করেছিল আর আমারও খুব প্রিয় ছিল পুতুলটা। কিন্তু আম্মু এই পুতুলটাকে একদম দেখতে পারতো না।

এরপর আমার মামাতো দুইবোন আমাকে একটা বড় পুতুল বানিয়ে দিল যা আমার অত্যন্ত পছন্দের ছিল। সবাই পুতুলের বিয়ে দিতো। আমি দিতাম জন্মদিনের পার্টি। কেক কিনে বাচ্চাদের ডাকতাম। কিন্তু এই পুতুলটা আমার চাচাতো বোনের(ছোট) পছন্দ হলো।

তাই দিয়ে দিলাম। এরপর যখন ক্লাস এইটে পড়ি তখন ছোটমামী একটা পুতুল দিল আমাকে মাথায় মুকুট দেয়া মিস ইউনিভার্স খুব্বই সুন্দর। কিন্তু আমার কি আর বয়স আছে খেলার!!তাও আমি রেখে দিলাম। কিন্তু আম্মু তখন বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ পড়ে জানলো ঘরে পুতুল রাখা ঠিক না। তাই সব পুতুলগুলো আবার খালাত বোন দুইটাকে দিয়ে দেয়া হল।

কিন্তু ওর মধ্যে একটা পুতুল ফিডার ছিল সাথে, সেটাকে আমি রেখে দিলাম। এরপর একদিন আমার এক ভাগ্নেকে আমার মিস ইউনিভার্স আর ঐ ছোট পুতুলটাকে খেলতে দেয়া হল। সে সেগুলোর হাত-পা-মাথা খুলে যে কোথায় কোথায় ফেলল তা আমি আর মিলাতে পারলাম না। এখন ভাবতেই অবাক লাগে কত ছোট্ট ছোট্ট জিনিসে কত খুশিই না হতাম!! সেদিন ডল লিখে সার্চ দিলাম গুগলে এরকম অনেক ডলের ছবি আসলো তা দেখে আমি আমার অতীতে ফিরে গেলাম। ইশ! এই সব পুতুলগুলো যদি আমার হতো!!


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।