আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পুতুল ভাঙ্গিয়া কাঁদে যে পুতুল



নির্দলীয়, নিরপেক্ষ ত্ত্বাবধায়ক সরকার-এর আন্দোলন এর দাবীতে সোচ্চার ছিল আওয়ামী লীগ ৯৬ সালের কথা। সেই দাবী তখনকার প্রেক্ষাপটে গণদাবীতে পরিণত হয়েছিল এই ব্যাপারে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। বিএনপি'র 'নির্বাচন, মাগুরা স্টাইল' এই অবস্থা সৃষ্টির জন্য দায়ী ছিল। আমরা দেখলাম সেই সময়ের প্রধানমন্ত্রী (খালেদা জিয়া) তখন বলছেন --শিশু এবং পাগল ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নন। তিনি এই গণ দাবীর প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখালেন।

৯৬ এ যেনোতেনো একটা একদলীয় নির্বাচন করলেন যা এদেশের ইতিহাসে 'হাস্যকর' 'অর্থহীন' নির্বাচন হিসেবে নথিভুক্ত । ফলে যা হবার তাই হ'ল---তিনি নামকা ওয়াস্তে আরো একবার প্রধানমন্ত্রী হয়ে গণ রোষের মুখে গভীর রাতে তড়িঘড়ি এক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল পাশ করে লেজ গুটিয়ে সরকার থেকে পালালেন। তারপরের ঘটনা--- আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলো, মেয়াদের শেষে তত্ত্বাবধায়কের অধীনেই নির্বাচন দিল ক্ষমতা ছেড়ে--তখনকার বিরোধী দল সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গঠন নিয়ে টু শব্দটিও করার সুযোগ পেল না--একটা গ্রহনযোগ্য নির্বাচন হল আবার বিএনপি ক্ষমতায় গেল। এবার কী দেখলাম আমরা! বিএনপি’র মাথায় দুষ্টবুদ্ধি বরাবরই একটু বেশী। মওদুদের মত দূর্বৃত্তদের অভাব নেই এই দলটিতে।

মেয়াদ শেষ হবার দিকে --ক্ষমতা ছাড়ার আগেই শুরু হ'ল যে কোন ভাবে নির্বাচন জেতার নীল নক্সা। দলীয় নেতা প্রধান বিচারপতির কর্মকাল দুই বছর বাড়ানো হ'ল যেনো তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হতে পারেন, নির্বাচন কমিশনে 'আলু পটলের বস্তার মত' কাউকে নির্বাচন কমিশনার বানানো হল যারা সাংবাদিকদের সামনে ঠিক ভাবে কথাও বলতে পারতেন না--"ভাইরে, বড় ভেজালে আছি" এখনো কানে বাজে—তখনকার প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে দোকানদার পর্যন্ত আনাজ বেচা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিল। বাঙ্গালীর মেমরী গোল্ড ফিশের মতো না হলে ভুলে যাবার কথা নয়। অর্থ্যাৎ গণ দাবীর মুখে অর্জিত একটি চমৎকার নির্বাচনী ব্যাবস্থাকে একেবারেই 'পঁচিয়ে' ফেলানো হল, অগ্রহনযোগ্য করে ফেলা হ'ল। তখনকার পঅবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি গণ রোষের মুখে অনেক পরে গিয়ে ঘোষণা দিতে বাধ্য হলেন তিনি ঐ পদে অভিষিক্ত হবেন না---আবারোও গণরোষের মুখে বিএনপি ---এবার আরো একটি লজ্জাজনক অধ্যায়ের সূচনা---যিনি রাষ্ট্রপতি (ইয়াজ উদ্দীন) তাকেই তত্ত্বাবধায়কের প্রধান করা হ'ল।

মেরুদন্ডহীন বিএনপির সে রাষ্ট্রপতি যা কিছু করতে চাইলেন সবই হাস্যকর, নির্লজ্জ ভাবে বিএনপির পতাকা তুলে ধরতে শুরু করলেন তিনি! ফলে ক'জন ব্যাক্তিত্ব্ব সম্পন্ন উপদেষ্টা নিজের থেকে পদত্যাগ করলেন। উল্লেখ্য--এই সময়ে এসে আমাদের একমাত্র এবং কেবলমাত্র নোবেল লরিয়েট এলেন বিএনপির উকিল হয়ে। ইউনুস সাহেব বলতে লাগলেন এই তত্ত্বাবধায়কের অধীনেই সবাইকে নির্বাচনে অংশ নিতে। তখনই তিনি নিজেকে চেনালেন এবং পচালেন। তখন থেকেই এই নোবেল লরিয়েট ইউনুস সাহেবের রাজনৈতিক পক্ষপাত স্পষ্ট---নইলে তিনি বাংলাদেশের একজন সর্বজন গ্রাহ্য মুরুব্বী হতে পারতেন--কিন্তু স্বভাব তো আর মলে যাবে না।

তাই তিনি হলেন সেই থেকেই বিতর্কিত। যাহোক! সংকট আরো ঘনীভূত হ'ল। এই সুযোগে এলো সেনা সমর্থিত নতুন তত্বাবধায়ক। তারপর আমরা তাদের দু বছরের শাসনামল দেখলাম। একটি চমৎকার 'নির্বাচনী সরকার ব্যাবস্থা' হিসেবে তত্ত্বাবধায়ক ব্যাবস্থগা যখন বিশ্বে প্রশংসিত হচ্ছিল ----তখনই এই ব্যাবস্থার পীঠে ছুরি কাঁচি চালালো বিএনপি----মোজাম্মেল বাবু যথার্থই লিখেছেন---ঘরের তালার চাবি যখন নকল হয়ে দুর্বৃত্তের হাতে চলে যায় তখন তালা ব্যাবস্থা না বদলে গৃহস্থের উপায় থাকে না।

এখন তাই হ'ল। নষ্ট চালা ফেলে দিয়ে এখন নতুন ব্যাবস্থায় নির্বাচন ব্যাবস্থা ঢেলে সাজানো হল। কিন্তু বিএনপি নিজেদের হাতে খুন করা সেই তত্ত্বাবধায়কের লাশ কাঁধে আহাজারী করছে। সরকারী দল চুন খেয়ে মুখ পুড়িয়েছে বলে নিজেরা আর যেতে পারছে না সেই ব্যাবস্থায়। নির্বাচন নিয়ে সঙ্কট গভীর।

ওদিকে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর তাগিদ-শরীক জামাতের অস্তিত্বের সংকট---বিএনপির ঘরে হৈ চৈ! সব মিলে দেশের রাজনীতিতে পাগলাঘন্টি বাজাচ্ছেন খালেদা জিয়া। এই সঙ্কট উত্তোরণের উপায় কী নেই? নিশ্চয় আছে কিন্তু বিরোধী শিবির আলোচনার পথ রুদ্ধ করে ৪৮ ঘন্টার সময় বেঁধে দিয়ে যখন দুই তৃতীয়াংশ জনতার আস্থা নিয়ে গঠিত সরকারকে বলে---'রাতের আঁধারে পালাবার পথও পাবেন না'-----তখন সরকারও শক্ত হয়ে যায় বৈ কী! আশা করব দুই দল বসে সংশোধীত সংবিধানের আলোকে একটি ব্যালেন্সড নির্ববাচিত বহুদলীয় ব্যাক্তিবর্গ নিয়ে একটি গ্রহনযোগ্য নির্বাচন ব্যাবস্থা-কাঠামো ঠিক করে দেশের এগিয়ে চলা উন্নতি অব্যাহত রাখবে। এসব নিয়ে আলোচনা হোক---শুধু ঘার তেরামী করে সংকট ঘনীভূত করে ঘোলা জলে মাছ শিকারের চেষ্টা করে লাভ হবে না কারো।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।