আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পুতুল নাচের পুতুল



চাঁদের আলোয় আজ ভেসে যাচ্ছে পৃথিবী এমন অদ্ভুত সময়ে যদি কাউকে ছেড়ে যেতে হয় এই সুন্দর ভুবন কেমন লাগে, কেমন লাগে তার ? বড় জানতে ইচ্ছা করে... আজ থেকে ঠিক দশ দিন আগে এই লেখাটা শুরু করে ছিলাম। অনেক স্মৃত্মির ভীড়ে হারাতে হারাতে লেখাটা শেষ হলোনা । এরমাঝে আমার র্দূঘটনা ঘটে গেলো নানান কিছুর ঝামেলায় আর লেখাটায় হাত দেয় হয়নি আজ সন্ধ্যায় তাকে আবারো একা করে সে চলে গেলো... প্রিয় বন্ধুর স্বামী চলে গেলো অপূর্ব জোছনা ভরারাতে ...শান্তিপাক তাঁর আত্মা এই প্রার্থনা প্রায় ভাবি কেন এই অনুক্ষণ ছুটে চলা উদাস্ত পরিশ্রম। স্বপ্ন সুন্দরের জাল বুনা। রূপালী মরিচীকার মায়া পেরিয়ে ক'জন ধরতে পারে সোনার হরিণ।

আকাশে উড়াল দিবে পাখি যে কোন মূহুর্তে যার কোন নিশ্চয়তা নেই কেউ জানেনা সীমারেখা। অথচ চিরদিনের বাঞ্ছা বুকে ধারণ করে ছোটায় রেসের ঘোড়া। কালরাতে ফেসবুকের পাতা খুলে অনেক মন খারাপ হলো অদৃশ্য ভাবনার সূতায় বাঁধা পরছি বারবার। আশার আলোটুকু যখন কারো চোখে থেমে যায় কেমন লাগে তার? আমরা সবাই জানি এই শেষ পরিনতির কথা তবু কীসের এত আশা বুকে ছুটে বেড়াই? হয়তো আপন মনে একটা সীমারেখা টেনে নেই হয়তো ভাবি তখন আর কিছু করার থাকবে না তখন নতুন যাত্রার কাল গুনবো স্বপ্ন দেখব। "মেমসাব আজ দেড়মাস হাসপাতালে তোমার পার্থদার অবস্থা ভালোনা" এ'কটি কথা আমাকে দারুণ ভাবে খোঁচায় ।

অসহায় পুতুল নাচের পুতুল হয়ে থাকি। ভাষা হারায় মুখে, অন্তরে ঝরে জল কিছু তো বদলাতে পারি না জানি শেষ পরিণতি। কী বলব? কেন এমন হয় আর কটাদিন কী বেশী দেয়া যেতো না তাদের জীবনটা উপভোগ করার। ভালোবাসায় এক হয়ে আনন্দে হাত ধরে থাকার? শুরু থেকে এক টানাপুরেণেই তো কাটল সময়। যখন স্থিত হয়ে বসার সময় হলো চোখ মেলে দুজনে দুজনাকে দেখার সময় হলো তখনই কেন অন্য জীবন শুরু হয়ে গেলো? কে যাবে ক্যান্টনমেন্টের দিকে.... যাবে... যাবে একসাথে শেয়ারে? হাঁকটা ভীড়ের ভীতর থেকে আসছিল।

ছোট্টখাট দেহ চোখে পড়ছিল না কিন্তু শব্দ ঠিক কর্ণকুহরে। খুঁজে খুঁজে কাছে যেয়ে বললাম, আমি যাবো। সেই থেকে এক সাথে যাত্রা শুরু। আমার বন্ধু যাকে চিনি সেই কলেজের জীবন থেকে। কত জল্পনা কল্পনার ডানা উড়িয়ে দিতাম দুজনে মিলে।

ভাবনায় চিন্তায় মিলেমিশে একাকার হয়ে কাটিয়েছি কত সময়। শূধু বদরুন্নেসা থেকে কন্টেনমেন্ট না আমারা ঘুরতে লাগলাম ঢাকা শহর, ওর বাড়ি পূজায় আমার বাড়ি ঈদে আর কল্পনায় চলে যেতাম দেশ পাড়ি দিয়ে বিদেশে। আমরা দুজনে খুব ভাবতাম একদিন দুজনে এক সাথে কলকাতা যাবো। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে অর্নাসের আগেই বিয়ে হলো তার । যাকে মনে মনে পছন্দ ছিল অনেক অথচ বলা হয়নি কখনো তারই আগ্রহ দেখে রাজী হয়ে গেলো।

সদ্য পাস করা ডাক্তার আলজেরীয়ায় পোস্টিং তখন। বিয়ের পরে সেও চলে গেলো স্বামীর সাথে অজানা দেশে। অজানা ভাষা অচেনা মানুষ শিল্প সংস্কৃতির বিস্তর ব্যাবধান। ব্যাস্ত স্বামী সারাদিন কাজে আর একা একা উদাস আকাশ দেখে দূর সবুজদেশে প্রিয়জনের কথা ভাবা। ভালোবাসার জীবনের মাঝে কোথায় যেন ফাঁকা।

ডাক্তার স্বামীর চোখ এড়াল না নতুন বৌ এর একাকীত্ব। বলল, তুমি চলে যাওয় দেশে পরীক্ষাটা দাও নিশ্চিন্তে আমিও দেশে ফিরে আসার ব্যবস্তা করে ফেলি এর মধ্যে। ফিরে এসে পড়ালেখা ব্যাস্ততা প্রিয় জনের মাঝে আবার সেই উদাসী বাঁশি বুকের মাঝে কষ্টের কামড়। প্রতিদিন আসার প্রতিশ্রুতি দিয়েও ফিরে আসা হচ্ছিল না একদিন পণ করে বসল যতদিন তুমি আসবে না এই আমি শাড়ি উল্টো করে পরব। ডানে আঁচল ফেলে শুরু হলো শাড়ি পরা।

অবাক চোখে দেখে দেখে এক সময় অনেকেই জেনে গেলো মেয়েটির গোপণ পণের কথা। ভালোবাসার অপেক্ষার কথা। ফিরে এলো ভালোবাসা ঘুরে গেলো শাড়ী। সুখের স্থায়ীত্ব হাতে গোনা সময়। একে একে তিন ছেলে তাদের মানুষ করতে, নতুন করে গুছিয়ে বসতে বেশ খানিকটা সময় তো গেলো।

বাড়িঘর বানিয়ে সাজিয়ে বসার আগেই ছেলেদের ভর্তি করা হলো নৈনিতাল। দুজনের শরীরের একটা অংশ যেন চলে গেলো ওপারে। সে অংশের পরিচর্যা করে তাদের শুভ সুন্দরের মাঝে প্রতিষ্ঠিত করতে মাকে ঠেলে দেয় হলো ওদের কাছে। ইন্ডিয়াতে মা বাংলাদেশে বাবা মাঝে মাঝে আসা যাওয়া। এভাবেই কেটে গেলো জীবনের স্বর্নযুগ।

স্কুল শেষে ছেলেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বার প্রান্তে পৌঁছালে হঠাৎ খুলে গেলো আমেরিকায় আসার দরজা। একটা বছর এসে কিছুই চেনা জানার আগে ফিরে যেতে হলো ফেলে আসা ব্যবসা বানিজ্য গুছিয়ে রেখে আসতে। ফিরে এসে নতুন দেশে নতুন করে সুখের সন্ধানে নেমে পড়া। দুই জায়গায় বাড়ি আবার শুরু হলো সুখের টানাটানি। নিউ ইয়র্কে আসার পর আবার নতুন করে সিদ্ধান্ত হলো না সবাই এখানে থাকবে আর পার্থ ফিরে যাবে দেশে মাঝে মধ্যে আসবে।

ছেলেরা বড় হয়েছে আর ক‌টা দিন ছেলেদের পড়ালেখা শেষ হলে তখন শুধু দুজনের সময়। তো বাড়ি যাওয়ার আগে একবার চেকাপ করাতে গিয়ে ধরা পরল তিনখানা এটমবোম শরীরে। চলবে...

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।