আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুক্তবাজার অর্থনীতি ও দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়া

নিজে পড়ুন অন্যকে পড়তে উৎসাহিত করুন।

বলা হয়, ‘মুক্তবাজার অর্থনীতির নিয়ম হচ্ছে দ্রব্যমূল্য নির্ভর করবে বাজারের সরবরাহ ও চাহিদার উপর। যদি সরবরাহ চাহিদার তুলনায় কম হয় তাহলে দ্রব্যমূল্য বাড়ে এবং তখন উৎপাদকরা বেশি দামের আশায় উৎপাদন বৃদ্ধি করে। ফলে সরবরাহ বৃদ্ধি পায় এবং দাম ক্রমে ক্রমে আবার হ্রাস পেয়ে পূর্বের অবস্থায় নেমে আসে। কিন্তু এই টেক্সট বই নিয়মটির অনেক বাস্তব ব্যতিক্রম পৃথিবীতে আছে।

বাংলাদেশের সাধারণ ক্রেতারা তাই টেক্সট বইয়ের এই নিয়মটির কথা বিশ্বাস করেন না। তাদের ধারনা হচ্ছে এ দেশে দাম একবার বাড়লে তা আর কখনোই কমে না। এরকম বিশ্বাসের পেছনে সাধারণ মানুষের বহু কালের সঞ্চিত অভিজ্ঞতাই কাজ করছে বলে মনে হয়। তাহলে কি সত্যই বাংলাদেশের বাজার দুনিয়ার অন্যান্য বাজারের মত নয়। যদি তাই হয় তাহলে এর বিশেষ বিশেষতত্ত্বগুলো কি সেটি এ দেশের মুক্ত বাজারপন্থী অর্থনীতিবিদদের আজ ভেবে দেখতে হবে।

চিহ্নিত করতে হবে এবং সে অনুযায়ী দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের কার্যকর সুপারিশ গড়ে তুলতে হবে। তা না করে চুপ-চাপ বসে থাকলে তারা রেহাই পাবেন না। বাংলাদেশের উৎপাদকরা বিশেষত কৃষি পণ্যের উৎপাদকরা সংখ্যায় অনেক বেশি এবং বাজারে রয়েছে সেই তুলনায় অল্পসংখ্যক মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রবল প্রতাপ। ফলে চাল-ডাল-শাকসবজি ইত্যাদি খাদ্যের দাম ক্রেতারা যা দেন কৃষকের হাতে তার মাত্র অর্ধেকটা সাধারণত পৌঁছায়। চালের দাম যদি শহরে ৪০ টাকা কেজি হয়, তাহলে ধরে নিতে হবে যে, কৃষক পাবেন গড়ে ২০ টাকা সর্বোচ্চ এটা হতে পারে ২৪ টাকা।

এরকম পরিস্থিতিতে বাজারে মধ্যস্বত্বভোগীদের দাপট না কমিয়ে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব। কারণ ক্রেতা যদি ৪০ টাকার বদলে ৫০ বা ৬০ টাকা কেজি দরেও চাল কেনেন তাতে চাল উৎপাদকের কোনো লাভ হবে না। লাভ হবে মাঝখানের ফড়িয়া-সিন্ডিকেট-আড়ৎদার মধ্যস্বত্বভোগীদের। ফলে বেশি দামের কারণে বেশি লাভ এবং বেশি লাভের আশায় উৎপাদক কর্তৃক বেশি বিনিয়োগ ও বেশি উৎপাদন এবং তার ফলে পুনরায় দাম হ্রাস এই যুক্তি বাংলাদেশের বিশেষ প্রকৃতির বাজারে খাটছে না খাটবেও না। বর্তমান সরকার স¤প্রতি এ কথাটা উপলব্ধি করতে শুরু করেছেন বলে মনে হচ্ছে।

কারণ তারা মধ্যস্বত্বভোগীদের দাপট কমানোর লক্ষ্যে কৃষিপণ্যের প্রাথমিক উৎপাদকদের কাছ থেকে ক্রেতাদের সরাসরি ক্রয়ের ব্যবস্থা করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। এই লক্ষ্যে নতুনভাবে পাঁচ হাজার প্রাথমিক বাজার নির্মাণ করার কথাও ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু এই বাজারগুলো কতটুকু কৃষক বান্ধব হবে তা আমরা এখনো জানি না। এগুলোতে ইজারাদারদের কোনো শেয়ার থাকবে কিনা, এখান থেকে ফঁড়িয়ারাই আবার কিনে নিয়ে দ্বিতীয়বার অন্য বাজারে তা বিক্রির সুযোগ পাবেন কি না, এগুলো কোন কোন অঞ্চলে হবে এবং সেখানে কৃষক ও নগদ ক্রেতাদের সরাসরি সংযোগ প্রতিষ্ঠিত হবে কিনা এসব নিয়ে নানারকম প্রশ্ন ও সন্দেহ জনমনে রয়েছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যাটি হচ্ছে সরকারের আমলাতান্ত্রিকতা, অস্বচ্ছতা এবং জনগণ ও গণসংগঠনগুলোর প্রতি এক ধরনের তাচ্ছিল্যের ও অবিশ্বাসের মনোভাব।

এরকম একটি নতুন ধরনের বাজার ব্যবস্থা সাফল্যের সঙ্গে গড়তে হলে শহরের ভোক্তাদের যে সংগঠন রয়েছে (ক্যাবের কথা উল্লেখ্য)। কৃষকদের যে সব গণসংগঠন রয়েছে এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের যে সব সমিতি রয়েছে, যেসব অর্থনীতিবিদেরা এ নিয়ে গবেষণা করেছেন তাদেরকে এক ছাতার তলে এনে গভীর মনোনিবেশের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চালাতে হবে। ইতোমধ্যে গৃহীত নানা ধরনের বাজার এক্সপেরিমেন্টের সাফল্য-ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবং একটি গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণমূলক সংলাপ ও আলোচনার মাধ্যমেই তথাকথিত মুক্তবাজার পন্থার সীমাবদ্ধতাগুলো দূর করে গণস্বার্থের অনুকূল গণনিয়ন্ত্রিত বাজার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। সেটি না করে যে মানুষটি আজ তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে তেল ছাড়াই রান্না করছেন তাকে গিয়ে ‘তেল ছাড়া রান্না স্বাস্থ্যকর’ বা খাদ্যের দাম বেশি সুতরাং খাদ্য কম ভোগ কর’। এ ধরনের কথা বলাটা খুবই নিষ্ঠুর পরিহাস হয়ে যাবে।

আর সে কথাটি যদি একজন নধর স্বাস্থ্যবান শাসক শ্রেণীর সদস্যের কাছ থেকে একজন শীর্ণ অভুক্ত শাসিত ব্যক্তির দিকে নিশ্চিন্ত মনে ছুঁড়ে দেয়া হয় তাহলে বেশি দিন আর ওই দরিদ্র লোকটি মুখ বুজে শান্ত হয়ে থাকবেন না। শাসক শ্রেণীর এই নিশ্চিন্ত মনোভাবটি বেশিদিন স্থায়ী হবে না। বলা হয়, ‘মুক্তবাজার অর্থনীতির নিয়ম হচ্ছে দ্রব্যমূল্য নির্ভর করবে বাজারের সরবরাহ ও চাহিদার উপর। যদি সরবরাহ চাহিদার তুলনায় কম হয় তাহলে দ্রব্যমূল্য বাড়ে এবং তখন উৎপাদকরা বেশি দামের আশায় উৎপাদন বৃদ্ধি করে। ফলে সরবরাহ বৃদ্ধি পায় এবং দাম ক্রমে ক্রমে আবার হ্রাস পেয়ে পূর্বের অবস্থায় নেমে আসে।

কিন্তু এই টেক্সট বই নিয়মটির অনেক বাস্তব ব্যতিক্রম পৃথিবীতে আছে। বাংলাদেশের সাধারণ ক্রেতারা তাই টেক্সট বইয়ের এই নিয়মটির কথা বিশ্বাস করেন না। তাদের ধারনা হচ্ছে এ দেশে দাম একবার বাড়লে তা আর কখনোই কমে না। এরকম বিশ্বাসের পেছনে সাধারণ মানুষের বহু কালের সঞ্চিত অভিজ্ঞতাই কাজ করছে বলে মনে হয়। তাহলে কি সত্যই বাংলাদেশের বাজার দুনিয়ার অন্যান্য বাজারের মত নয়।

যদি তাই হয় তাহলে এর বিশেষ বিশেষতত্ত্বগুলো কি সেটি এ দেশের মুক্ত বাজারপন্থী অর্থনীতিবিদদের আজ ভেবে দেখতে হবে। চিহ্নিত করতে হবে এবং সে অনুযায়ী দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের কার্যকর সুপারিশ গড়ে তুলতে হবে। তা না করে চুপ-চাপ বসে থাকলে তারা রেহাই পাবেন না। বাংলাদেশের উৎপাদকরা বিশেষত কৃষি পণ্যের উৎপাদকরা সংখ্যায় অনেক বেশি এবং বাজারে রয়েছে সেই তুলনায় অল্পসংখ্যক মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রবল প্রতাপ। ফলে চাল-ডাল-শাকসবজি ইত্যাদি খাদ্যের দাম ক্রেতারা যা দেন কৃষকের হাতে তার মাত্র অর্ধেকটা সাধারণত পৌঁছায়।

চালের দাম যদি শহরে ৪০ টাকা কেজি হয়, তাহলে ধরে নিতে হবে যে, কৃষক পাবেন গড়ে ২০ টাকা সর্বোচ্চ এটা হতে পারে ২৪ টাকা। এরকম পরিস্থিতিতে বাজারে মধ্যস্বত্বভোগীদের দাপট না কমিয়ে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব। কারণ ক্রেতা যদি ৪০ টাকার বদলে ৫০ বা ৬০ টাকা কেজি দরেও চাল কেনেন তাতে চাল উৎপাদকের কোনো লাভ হবে না। লাভ হবে মাঝখানের ফড়িয়া-সিন্ডিকেট-আড়ৎদার মধ্যস্বত্বভোগীদের। ফলে বেশি দামের কারণে বেশি লাভ এবং বেশি লাভের আশায় উৎপাদক কর্তৃক বেশি বিনিয়োগ ও বেশি উৎপাদন এবং তার ফলে পুনরায় দাম হ্রাস এই যুক্তি বাংলাদেশের বিশেষ প্রকৃতির বাজারে খাটছে না খাটবেও না।

বর্তমান সরকার স¤প্রতি এ কথাটা উপলব্ধি করতে শুরু করেছেন বলে মনে হচ্ছে। কারণ তারা মধ্যস্বত্বভোগীদের দাপট কমানোর লক্ষ্যে কৃষিপণ্যের প্রাথমিক উৎপাদকদের কাছ থেকে ক্রেতাদের সরাসরি ক্রয়ের ব্যবস্থা করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। এই লক্ষ্যে নতুনভাবে পাঁচ হাজার প্রাথমিক বাজার নির্মাণ করার কথাও ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু এই বাজারগুলো কতটুকু কৃষক বান্ধব হবে তা আমরা এখনো জানি না। এগুলোতে ইজারাদারদের কোনো শেয়ার থাকবে কিনা, এখান থেকে ফঁড়িয়ারাই আবার কিনে নিয়ে দ্বিতীয়বার অন্য বাজারে তা বিক্রির সুযোগ পাবেন কি না, এগুলো কোন কোন অঞ্চলে হবে এবং সেখানে কৃষক ও নগদ ক্রেতাদের সরাসরি সংযোগ প্রতিষ্ঠিত হবে কিনা এসব নিয়ে নানারকম প্রশ্ন ও সন্দেহ জনমনে রয়েছে।

এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যাটি হচ্ছে সরকারের আমলাতান্ত্রিকতা, অস্বচ্ছতা এবং জনগণ ও গণসংগঠনগুলোর প্রতি এক ধরনের তাচ্ছিল্যের ও অবিশ্বাসের মনোভাব। এরকম একটি নতুন ধরনের বাজার ব্যবস্থা সাফল্যের সঙ্গে গড়তে হলে শহরের ভোক্তাদের যে সংগঠন রয়েছে (ক্যাবের কথা উল্লেখ্য)। কৃষকদের যে সব গণসংগঠন রয়েছে এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের যে সব সমিতি রয়েছে, যেসব অর্থনীতিবিদেরা এ নিয়ে গবেষণা করেছেন তাদেরকে এক ছাতার তলে এনে গভীর মনোনিবেশের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চালাতে হবে। ইতোমধ্যে গৃহীত নানা ধরনের বাজার এক্সপেরিমেন্টের সাফল্য-ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবং একটি গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণমূলক সংলাপ ও আলোচনার মাধ্যমেই তথাকথিত মুক্তবাজার পন্থার সীমাবদ্ধতাগুলো দূর করে গণস্বার্থের অনুকূল গণনিয়ন্ত্রিত বাজার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। সেটি না করে যে মানুষটি আজ তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে তেল ছাড়াই রান্না করছেন তাকে গিয়ে ‘তেল ছাড়া রান্না স্বাস্থ্যকর’ বা খাদ্যের দাম বেশি সুতরাং খাদ্য কম ভোগ কর’।

এ ধরনের কথা বলাটা খুবই নিষ্ঠুর পরিহাস হয়ে যাবে। আর সে কথাটি যদি একজন নধর স্বাস্থ্যবান শাসক শ্রেণীর সদস্যের কাছ থেকে একজন শীর্ণ অভুক্ত শাসিত ব্যক্তির দিকে নিশ্চিন্ত মনে ছুঁড়ে দেয়া হয় তাহলে বেশি দিন আর ওই দরিদ্র লোকটি মুখ বুজে শান্ত হয়ে থাকবেন না। শাসক শ্রেণীর এই নিশ্চিন্ত মনোভাবটি বেশিদিন স্থায়ী হবে না।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.