আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাতকাহন : মুক্তবাজার অর্থনীতি ও বাংলাদেশ-পর্ব ৪



ম্যাক লুরারের মতে, আমাদের বসবাস এখন বিশ্বগ্রামে। পুরো দুনিয়া নিয়ে একটা মাত্র গ্রাম। কিন্তু এ আজগুবি গ্রামের যোগাযোগ ও সম্পকগুলো সবই স্থুল। মানুষে মানুষে এখানে কোনো সম্পর্ক নেই। বাণিজ্য এবং মুদ্রাই এখানে সমস্ত সম্পর্কের একমাত্র নিয়ামক।

‘বিনিময়’ ধারণা পরবর্তী যে ‘বাণিজ্য’ ধারণার যুগে আমরা বসবাস করছি সেখানে বড়ই অসমতা। এখানে কোনো নিজস্বতা থাকতে নেই, সৌহাদ্য নেই। এখানে সবই চলে বাণিজ্যেও মাপকাঠিতে। কিন্তু এ বাণিজ্য একজন থেকে অন্যজন কিনবে তা নয়। এখানে একটাই নিয়ম সবকিছু ‘তাঁর’টাই কিনতে হয়।

যদি তোমার কিছু থেকে থাকে তাহলে তা ‘তাঁকে’ দিয়ে দিতে হবে, বেচা যাবে না। এভাবেই চলছে আমাদের বিশ্বগ্রামের কাজ-কারবার। আমাদের গ্রামে আলাদা আলাদা রাষ্ট্রের অস্তিত্ব থাকলেও তা আর আসলে ততখানি কার্যকর নয়। রাষ্ট হচ্ছে * বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর বদৌলতে রাষ্ট্র নিজেই যেন বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর মতো হয়ে দাঁডিয়েছে। আমাদের লোকজ সব হারিয়ে আমরা এখন অনেকটাই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছি।

উদারতাবাদী অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের সময়ে আমাদের প্রাণপ্রিয় সোনার বাংলা হয়ে ‘বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি’তে। নিউ লিবারেলিজমের মানে অর্থনীতিতে সরকারের পক্ষ থেকে কোনোরূপ হস্তক্ষেপ না করা। মুক্তবাণিজের চাদর দিয়ে আরো কিছু বিষয়কে মুড়িয়ে দেয়া হয়েছে ওগঋ, ডড়ৎষফ ইধহশ ও ডঞঙ-র পক্ষ থেকে। যেমন : ক. বিদেশী মালিকানায় বিধি নিষেধ কমানো; খ. সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ বিধি নিষেধ হ্রাস করা; গ. আর্ন্তজাতিক পুঁজির চলাচলে সব বাঁধা দূর করা; ঘ. ব্যক্তিখাত, রপ্তানিমুক্ত প্রবৃদ্ধি আর বৈশ্বিক অর্থনীতিতে গুলিয়ে যাওয়া ছাড়া আর সব উন্নয়ন মডেল বাতিল করা। অথচ বিচার বড় ভিন্ন রকমের, ধনী আর ক্ষমতাশালী দেশগুলো কখনোই অবাধ বাণিজ্য বিশ্বাস করেনি বরং বাণিজ্যে একচেটিয়া প্রতিষ্ঠায়ই বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থার চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য।

ধনীকে আরো ধনী আর গরিবকে আরো গরিব করার নীতিই বাণিজ্য নীতি। কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে বিশ্ব দারিদ্র্যের মহৌষধ হিসেবে তারা মুক্তবাণিজ্য আর প্রাইভেটরাইজেশনের প্রেসক্রিপশেন দিয়ে আসছে। এটি একটি ভূয়া, অসত্য, অন্যায্য, অযৌক্তিক প্রপাগান্ডা। গরিবদেশের নীতিনির্ধারক মহল আর সরকারগুলো এ প্রপাগান্ডাকে এখনো জেঁকে বসে আছেন। সবখানে গরিব দেশগুলো চাপ দেয়া হচ্ছে বিদেশি কোম্পানি আর তাদের সস্তা ও ভূর্তকি দেয়া পণ্য আমদানি করার জন্য।

নিজেদের সংকটাপন্ন শিল্প ও উৎপাদনের সহায়তা বন্ধ করে দেয়ার জন্য আর অতি জরুরি সেবাখাতগুলোকে ব্যক্তিমালিকানায় ছেড়ে দেবার জন্য। তাই বাণিজ্য সম্পর্কে বড়লোক মার্কা দেশগুলোর মুক্তবাণিজ্য নামক মহৌষধের ধারণা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। বাণিজ্যের এ অন্যায় ধারা চিরতরে বন্ধ করে দিতে হবে। যে নীতি বা যে পদ্ধতি মানুষের জীবন-জীবিকাকে তার নিজের মতো বাঁচতে দেয় না তা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। মুক্ত বাণিজ্যের এ ধারণা একটি মিথ মাত্র।

আমাদের মনে রাখা ভালো ‘অধিপতি’ সংস্কৃতি ‘অন্য সংস্কৃতি’কে গ্রাস করে। ক্ষুদ্র জাতির সংস্কৃতিকে হটিয়ে অধিপতি সংস্কৃতি নিজেকে প্রকাশ ও প্রকট করে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।