আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রোজনামচা ও একটি প্রার্থনা

তবুও জীবন যাচ্ছে কেটে জীবনের নিয়মে।

আবহাওয়াটা দিন দিন সুন্দর হয়ে যাচ্ছে। যদিও মাঝে মাঝে কিঞ্চিত ব্যাঘাত ঘটায় ঝড়-বৃষ্টি। তবে তা কোনভাবেই ইংলিশ ওয়েদার না। গাছে গাছে ফুল ফুটা শুরু হয়েছে।

শহর থেকে একটু দুরে থাকি। বন-জঙ্গলের পরিমান একটু বেশি। ট্রাম ধরতে হাটতে হয় বেশ কিছুক্ষন। তাই আসতে যেতে হরেক রকমের ফুল-ফলের দেখা পাওয়া যায়। যেমন-চেরী, ব্রামবল, আপেল।

হেটে যেতে যেতে অথবা ছুটির দিনে সাইকেল থামিয়ে কিছু পেড়ে পকেট ভর্তি হবে। হয়ত অন্যান্য দিনও সুন্দর ছিলো। কিন্তু দেখার চান্স হতো কম। অন্ধকার থাকতে অফিস শুরু হতো আর যখন বের হতাম তখনও অন্ধকার। তাই সুন্দর অসুন্দর বুঝা যেতো না।

ছোটবেলায় যখন স্কুলে যেতাম তখন এরকম অনেক ফল খাওয়া হতো। বিশেষ করে হরতকি (যদিও তিতা), আমলকি, আমড়া (বরিশালি না, স্হানীয়,ব্যাপক টক), তেতুল, নটকল। এসব গাছ হয়তো কারো টিলার উপরে অবস্হিত। কিন্তু ফলগুলো যারা রাস্তা দিয়ে যায় তাদের জন্য। একমাত্র নটকল ছাড়া অন্যান্যগুলো আমাদের মতো বাদর ছাড়া আর কেউ হাত দিতো না।

শুধু কি আর রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া জিনিসগুলো সখ মেটাতো। মাঝে মাঝে মশা, জোকের ভয় উপেক্ষা করে নির্ঝন টিলায় অভিযান। তবে মা টের পেলে সন্ধ্যার পর একটু অন্যরকম আদর করতো। গ্রামের স্কুলে ছিলো না কোন রকমের লাঞ্চের ব্যবস্হা। এসব বন্য ফল আর রঙ্গিন বরফ(আইসক্রিম) আমাদের ক্ষুধা মেটাতো।

বিলের ধারের বন্ধুদের হয়তো চাহিদা থাকতো আমলকি,নটকল এগুলোর প্রতি আর আমাদের ছিলো বেতফলের চাহিদা যা ওদের ওখানে বেশি হতো এবং তুলতে প্রচন্ড কষ্ট হতো। দুই গ্রুপেই হতো আদান প্রধান। আমের সিজনে তো কথাই নেই। কাচা আম আছাড় মেরে অথবা দরজার চিপায় ফাটিয়ে লবন মরিচ দিয়ে। আহ, জ্বিবে পানি এসে গেলো।

অফিসের সবাই এখন ছুটি নিতে ব্যস্ত। সামার আসলেই কেউ না কেউ অনুপস্হিত। সবগুলো ছুটি একসাথে পাওয়া যাবে না। তাই এক সপ্তাহ অথবা ২/৩দিন করে ছুটি নেওয়া হয়। আমি এখনো শুরু করিনি।

বছরে ৪২দিন(শনি,রবি সহ) ছুটি। দেশে যাবার প্লান নেই তাই সামারেই অথবা রোজার মাসটা ছুটি কাটানোর ইচ্ছে। বছর শেষে অফিস থেকে ক্যালেন্ডার, ডায়রী দেয়। ডায়রী কখনো ব্যবহার করিনি। এতো জরুরী কোন ব্যক্তি আমি না যে ডায়রীতে পরবর্তি এপোয়েন্ট টুকে রাখতে হবে।

একথা শুনে বস বলেছিলো আর বেশিদিন না। এখন দেখতেছি তাই। অনেক কিছুই মনে থাকে না। কাভার্ডগুলো বিভিন্ন রকমের ফাইল আর ডকুমেন্টে ভরে যাচ্ছে। টেবিলেও অনেকরকমের টিভাইস।

পাওয়ার সাপ্লাই থেকে শুরু করে ভোল্টেজ রেগুলেটর। পড়াশোনাকে বাইবাই বলতে মাস্টার্স শেষ করে চোখ বন্ধ করে চাকরী শুরু করেছি। কিন্তু শান্তি নাই। এখনো বসে বসে ডকুমেন্ট পড়তে হয়। আর স্টেনডার্ডগুলো এতো স্টেনডার্ড করে লেখা হয় যে কয়েকবার না পড়লে মাথা দিয়ে ঢুকে না।

ছাত্র থাকতে কোনকিছু না বুঝলে গ্রুফ ফাইট দেওয়া যেতো। এখন তাও সম্ভব না। সবই একা একা সমাধান করতে হয়। এখন মনে হচ্ছে ছাত্র জীবনটাই ভালো ছিলো অবসর চলে যায় কার্টুন আর বিভিন্ন চ্যানেলের খবর দেখে। বর্তমানে আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে সব দেশেই খাদ্য ঘাটতি চলছে।

গতদিন দেখলাম মিশর, ইউ.কে তে খাদ্য ঘাটতি জন্য ঐদেশের সরকার থেকে সবাই বেশ টেনশনে আছে। অষ্ট্রেলিয়ার উপর ছিলো একটা ডকুমেন্টারী। খরায় ওদের গম চাষ হয়নি। বায়ো ফুয়েলের জন্য খাদ্যগুলো এখন জ্বালানী তেল হিসেবে ব্যবহ্রত হচ্ছে। তৃতীয় বিশ্বের অবস্হা বিশেষ করে যাদের ইকোনমী আমদানী নির্ভর ওদের অবস্হা দিন দিন খারাপ হচ্ছে।

দেশে আমাকে খুব একটা টাকা পাঠাতে হয় না। তাই নিয়মিত কতো ইউরোতে কতো টাকা সেই হিসেব করা হয় না। প্রথম যখন জার্মান মার্ক ছিলো তখন মনে হয় ১ মার্ক = ৩১ টাকা ছিলো সর্বোচ্চ। ইউরো আসার পর এক ইউরো সমান ৪৮ টাকা পেতাম। আর এখন ১০৬ টাকার উপরে।

পাউন্ডের অবস্হা তো আরও একধাপ এগিয়ে। টিভি খুললেই দেখা যায় আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে লোকজনের হাতে টাকার ভান্ডিল। রাখার জায়গা নেই। কিন্তু মুল্য এক ডলারেরও না। দেশের বর্তমান পরিস্হিতি দিন দিন যে অবস্হার দিকে যাচ্ছে তাতে আমরা মনে হয় খুব একটা দুরে নেই।

গরীব মানুষগুলো কি খেয়ে বেচে আছে সেইটা আমার কাছে বিরাট একটা বিষ্ময়। এই অবস্হা থেকে পরিত্রানের উপায় জানা নেই। শুধু একটাই প্রার্থনা, আমার দেশের সাধারন মানুষগুলো যেনো খেয়ে পরে বাচতে পারে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।