আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সমুদ্রের দিনরাত্রি / দুই

নিজেকে খুঁজে ফিরি আর সবার মাঝে

যেদিন জাহাজে উঠি সেদিন ছিল প্রবল বৃষ্টি। বাইরে বেরুনো যায় না। রাস্তাঘাট থৈ থৈ করছে জলে। পথচারীরা সব ভিজে কাক, আমি নিজেও। সমুদ্রে যেতে হলে বৃষ্টিকে পরোয়া করা চলে না।

বৃষ্টির মাঝেই রওনা দিই, এবং এক সময় পৌঁছে যাই জাহাজের কাছে। চট্টগ্রাম ড্রাইডক পেরিয়ে আরএম-৯, অনেকেই বলে র‌্যামলাইন। বেবিট্যাক্সির ড্রাইভারও তাই বলছিল। র‌্যামলাইনের কোন অর্থ খুঁজে পাই নি। এক অর্থ হয় ভেড়ার সারি।

কিন্তু সেখানে জাহাজ থাকবে কেন? পরে জেনেছি রিভারমুরিঙের সংক্ষেপ হলো আরএম। আরএম-৯ এ জাহাজ বাঁধা। যেতে হলে সাম্পানে চড়তে হবে। জাহাজের গায়ে বাঁধা ছিল সাম্পান। আমাকে দেখে সাম্পানওয়ালা এগিয়ে এল।

আমার সাথে বেশ বড় লাগেজ। জাহাজের কাছে পৌঁছেই দেখতে পেলাম বন্ধু রাজুকে। ডেকে কাজ করছে, হাতে ওয়াকিটকি। আমাকে দেখেই ছুটে এলো। সাম্পানের মাঝি তাকে বলল, স্যার, একখান ওয়াইজম্যান পাঠান, ব্যাগটা নিয়ে যাক।

তার কথামতো 'ওয়াইজম্যান' এলো ইতিমধ্যে ভাবতে শুরু করেছি ওয়াইজম্যান মানে কি? জ্ঞানীলোক? জ্ঞানীলোককে কি এসব ছোটখাট কাজের জন্যই রাখা হয়? পরে জাহাজে উঠে অনেকের মুখে শুনলাম ওয়াইজম্যান, আরো পরে জানলাম 'ওয়াচম্যান'। এটাই অপভ্রংশ হয়ে দাড়িয়েছে ওয়াইজম্যান। এই ওয়াচম্যানের কাজ হলো জাহাজের সামনে, পেছনে ও গ্যাঙওয়েতে বসে পাহারা দেয়া, যাতে চুরি না হয়। তবু চোর আসে। ওয়াচম্যান জানতেই পারে না।

কয়েক দিন পরই ঘটে সেই ঘটনা। রাত দুটোর দিকে সাম্পানে চড়ে চোররা আসে। দুজন উঠে যায় জাহাজে। বেঁধে ফেলে এক ওয়াচম্যানকে। আর একজন ছুরি হাতে তাড়া করে ডিউটি অফিসারকে।

ডিউটি অফিসার কেবিনে গিয়ে দরজা বন্ধ করে চিত্কার করে। ভিএইচএফ- এ পুলিশ ও পোর্ট কন্ট্রোলকে ডেকে কোন সাড়া পাওয়া যায় না। এদিকে চোরের দল কয়েকটা রশি নিয়ে পালিয়ে যায়। কয়েকদিন পর চোরের দল আবার আসে। কিন্তু কাছে না ভিড়তেই নজরে পড়ে বুড়ো সুকানির।

হৈ হৈ রব পড়ে যায় জাহাজে। হাতের কাছে যে যা পায় তাই নিয়ে দৌড় দেয় পুপ ডেকে। চোরদের উদ্দেশ্যে নিক্ষিপ্ত হয় ওসব সুলভ অস্ত্র, এমন কি পায়ের স্যান্ডেল পর্যন্ত । কিন্তু চোরদের স্পর্শ করে না কোনটাই; বরং তাদের নিক্ষিপ্ত একটা ঢিলের আঘাতে আমাদের একজন আহত হয়। চোররা যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে চলে যায় কর্ণফুলির অপর পাড়ে।

সেই চোরের ভয় আজও রয়ে গেছে। জাহাজ যতই এগিয়ে যাচ্ছে ততই চোরের ভয় বাড়ছে বৈ কমছে না। জলদস্যুরা যদি আক্রমণ করে তাহলে কী করব? আত্মরক্ষার কোন উপায়ইতো নেই। এসব চিন্তা মাথায় নিয়ে কেবিনে ফিরে আসি। ম্যাপটা বের করি ড্রয়ার থেকে।

আমরা এখন যাচ্ছি ভিয়েতনাম। কয়েকদিন আগে ভিয়েতনাম যাওয়ার কথা শুনে আনন্দিত হয়ে উঠি। অবাক নাম ভিয়েতনাম, মার্কিন সেনাদের নাস্তানাবুদ করেছ তুমি। সে জন্যই আগ্রহ সবার ভিয়েতনাম দেখার। ভিয়েতনাম যাওয়ার কথা শুনেই সে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে।

ম্যাপটা খুলে হোচিমিনের দেশের দিকে তাকাই। সমুদ্রের কোল ঘেঁষে লম্বা সরু একটা দেশ। আমদের যাওয়ার কথা ছিল হোচিমিন সিটিতে। পরে সিদ্ধান্ত পাল্টেছে। এখন যাচিছ হাইফঙ।

হোচিমিন সিটির বর্ণনা পড়েছি নির্মলেন্দু গুণের ভিয়েতনাম ও কাম্পুচিয়ার স্মৃতি বইটিতে। হাইফঙের নাম শুনিনি, কিন্তু ম্যাপে দেখতে পাচ্ছি। হোচিমিন সিটি এক প্রান্তে আর হাইফঙ আরেক প্রান্তে, রাজধানী হ্যানয়ের কাছাকাছি। বঙ্গোপসাগর পেরিয়ে আমরা গিয়ে পড়ব দক্ষিণ চীন সাগরে। দনি চীন সাগরের কোল ঘেঁষেই ভিয়েতনাম।

যেতে সময় লাগবে দশদিন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।