আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সমুদ্রের সুর

"কোথাও পাখির শব্দ শুনি; কোনো দিকে সমুদ্রের সুর; কোথাও ভোরের বেলা র'য়ে গেছে - তবে। অনন্ত রাত্রির মতো মনে হয় তবু। একটি রাত্রির ব্যথা সয়ে - " মধ্য রাত্রে জন্ম নিল একটা বাচ্চা । বাচ্চাটাকে পরিস্কার করে মা'র পাশে শুইয়ে রাখা হলো। অপরেশন থিয়েটার থেকে ডাক্তার বের হয়ে বাচ্চারা বাবা কে বললেন- আপনার ফুটফুটে একটা বাচ্চা হয়েছে ।

এবং বাচ্চার মা ভালো আছেন । দশ মিনিট পর আপনি আপনার বাচ্চাকে কোলে নিতে পারবেন । বাচ্চার বাবা এক আকাশ আনন্দ নিয়ে- সেই মধ্য রাত্রেই তার কাছের মানূষদের খবর দিচ্ছেন । ভোর না হতেই সবাই হাসপাতালে এসে উপস্থিত । সবার চোখে মুখে এক আকাশ আনন্দ ঝলমল করছে ! বাচ্চা টা এক আকাশ অবাক দৃষ্টি নিয়ে- সবার দিকে তাকিয়ে আছে।

বাচ্চার দাদী-নানী বাচ্চাকে দেখে আনন্দে কেঁদে ফেললেন । সবাই চাচ্ছিল- বাচ্চাটাকে কোলে নিতে কিন্তু ডাক্তার এর কঠিন নিষেধ- এখন না, পরে। বাচ্চার এক চাচা ক্যামেরা নিয়ে ঘুম ঘুম করছিল ছবি তোলার জন্য- কিন্তু নার্স এসে বলল, এখন ছবি তুলবেন না। বাচ্চার চোখে ফ্লাশ পড়লে সমস্যা হবে । ঠিক এই সময় বাচ্চাটা ভাবছিল- এতদিন একটা অন্ধকার ঘরের মধ্যে ছিলাম- আর এখন আমার চারপাশে ঝকঝকে আলো- নানান রকম মানুষ, নানান রকম তাদের কথাবার্তা।

এরকম একটা নতুন পরিবেশে এসে বাচ্চাটা ক্ষণে ক্ষণে বিস্মিত হচ্ছিল । বাচ্চাটা একটু পরপর চোখ পিট পিট করছিল- চোখ পিটপিট করার সময় বাচ্চাটার ঠোঁটের কোণায় যেন একটুকরো হাসি ঝিলিক দেয় । সদ্য ভুমিষ্ঠ হওয়া বাচ্চাটকে দুই দিন পর হাসপাতাল থেকে বাসায় নিয়ে আসা হয় । নতুন একটা বাচ্চা বাড়িতে আসবে, সেই উপলক্ষে সারা বাড়ি ফুল-টুল দিয়ে সাজানো হয় । আশে পাশের বাড়ির সবাই বাচ্চাটাকে দেখতে আসে ।

আত্মীস্বজন কেউ বাদ নেই । বাচ্চার দাদী রান্না-বান্না করতে করতে ক্লান্ত । নতুন একটা বাচ্চা একটা বাড়ির পরিবেশ বদলে দেয় । এভাবেই চলতে থাকতে দিনের পর দিন । কিছু দিন পরপর বাচ্চাকে উপলক্ষে নানান উৎসব হয় ।

হাসি আনন্দ আর গানে মেতে থাকে সারা বাড়ি । ছোট একটা বাচ্চার জন্য বাচ্চার মাকে অনেক কষ্ট স্বীকার করতে হয় । রাতের পর রাত জাগতে। একটু পরপর বাচ্চার কাঁথা বদলে দিতে হয়-খাওয়াতে হয় । অসুখ বিসুখ যেন না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হয় ।

বাচ্চার মা যখন বাচ্চাকে কোলে করে ঘুম পাড়াতে চেষ্টা করেন- তখন বাচ্চার বাবা গভীর ঘুমে তলিয়ে থাকেন । পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় সত্য হলো একজন বাচ্চার জন্য একজন মায়ের অনেক কষ্ট করতে হয় । অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয় । এই রকম কষ্ট করা অথবা ত্যাগ স্বীকার করা আর কারো পক্ষে সম্ভব নয় । এই জন্যই আমাদের প্রিয় নবী বলেছেন- "কখনও মায়ের মনে কষ্ট দিও না"।

বাচ্চার চাচা প্রতিদিন বাচ্চার ছবি তোলে । বাচ্চার বাবা একমাস পরপর বাচ্চার হাতের ছাপ পায়ের ছাপ কাগজে নিয়ে রাখেন । বাচ্চাটা এখন একটু বড় হয়েছে- সে একা একা উল্টে যেতে পারে । ঘুমের মধ্যে বাচ্চাটা হাত পা ছড়িয়ে ঘুমায় । দেখলে বোঝা যায় বাচ্চাটা খুব আরাম করে ঘুমাচ্ছে ।

বাচ্চাটা এখন অনেক দুষ্ট হয়েছে- হাতের কাছে যা পায় সব মুখে দিবে । একবার বাচ্চার চাচা একটা কাঁচা মরিচ বাচ্চার সামনে রাখল । চাচার ধারনা ছিল বাচ্চা বুঝবে এটা ঝাল বাচ্চা মুখে দিবে না । কিন্তু বোকা বাচ্চা কাঁচা মরিচ মুখে দিয়ে দিল! ভাগ্য ভালো বাচ্চার দাঁত নাই । বাচ্চার দাদী এসে চিৎকার চেচামেচি করে বাচ্চার মুখ থেকে মরিচ বের করে নেয় ।

চাচার ইচ্ছা, একদিন চুপি চুপি বাচ্চার মুখে সিগারেট ( অবশ্যই জ্বলন্ত সিগারেট না ) দিয়ে একটা ছবি তুলবে । চাচা সেই সুযোগের অপেক্ষায় আছে । দারুন একটা ছবি হবে । বাচ্চা টা তার এই মাথা ভরতি এলোমেলো চুলওয়ালা চাচাকে অনেক পছন্দ করে । চাচা তাকে কোলে নিলেই সে খুব হাসে ।

এত সুন্দর হাসি চাচা কখনও দেখেনি আগে । এই হাসির জন্যই এই পৃথিবীতে অনেক দিন বেঁচে থাকতে ইচ্ছা করে চাচার। স্বচ্ছ নির্মল প্রাবন্ত পবিত্র হাসি । যেন হাসিটা একদম বুকে এসে লাগে । অনেক আয়োজন করে বাচ্চার নাম রাখা হয় ।

ছাগল জবহ করে আকিকা হয় । বাচ্চার বাবা চায় না বাচ্চা টিভি দেখুক। খুব বেশী হলে কার্টুন দেখতে পারে । প্রায়ই দেখা যায়- বাচ্চার চাচা আর বাচ্চা মিলে ডরিমন দেখে । এই বাচ্চা সারারাত জেগে থাকে ।

বাচ্চার মা এসে বাচ্চার চাচার কাছে দিয়ে যায় মাঝে মাঝে- বলে, তোমার ভাইজি তোমার স্বভাব পেয়েছে- সে সারারাত জেগে থাকে। তখন বাচ্চার চাচা বাচ্চাকে অনেক গল্প শোনায় । বাচ্চাটা চোখ মুখ বড় বড় করে এক আকাশ আগ্রহ নিয়ে চাচার গল্প শোনে । " লাল পরি বলতে লাগলো, আসলে বাংলাদেশ একটি ঋতুবৈচিত্র্যের দেশ। সে দেশে ছয়টি ঋতু আছে।

গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরত্, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত-ছয় ঋতুতে প্রকৃতির পরিবেশ থাকে ছয় রকম। আসমানী পরী শরত্কালে সেখানকার আকাশে খণ্ড খণ্ড মেঘ আর নদীতীরে সাদা কাশফুল দেখেছে। সবুজ পরী হেমন্তকালে, হলুদ পরী শীতকালে আর কমলা পরী বসন্তকালে সেখানে গিয়েছিলে। " চাচার গল্প বলার ভঙ্গিমা দেখে বাচ্চাটা একটু পরপর হেসে উঠে । মাঝে মাঝে চাচা, বাচ্চাটাকে গান গেয়েও শোনায়- "আমাদের দেশটা স্বপ্নপুরি/ সাথী মোদের ফুলপরী/ ফুলপরী লাল পরী লাল পরী নীল পরী/ সবার সাথে ভাব করি/ এইখানে মিথ্যা কথা কেউ বলেনা/ এইখানে অসৎ পথে কেউ চলেনা/ লেখার সময় লেখা পড়া/ খেলার সময় খেলা করা/ কাজের সময় কাজ করি/ আমাদের দেশটা স্বপ্ন পুরি ! এই বাচ্চা একটু একটু করে বড় হবে ।

স্কুলে ভরতি হবে । গান শিখবে, নাচ শিখবে । হয়তো ততদিনে বাচ্চাটার আরও দুই একজন ভাই বোন হয়ে যাবে । সময় যাবে আর সবাই এগিয়ে যাবে । সবাইকে সামনের দিকেই এগিয়ে যেতে হবে, একমাত্র বোকা'রাই পেছন ফিরে চায় ।

একদিন এই বাচ্চা বড় হবে- নাচ দেখিয়ে গান গেয়ে বাড়ির সবাইকে মুগ্ধ করে দিবেপ_ "ধন্য ধন্য বলি তারে/ বেঁধেছে এমন ঘর/ শূন্যের উপর ফটকা করে। / সবে মাত্র একটি খুঁটি/ খুঁটির গোড়ায় নাইকো মাটি/ কিসে ঘর রবে খাঁটি/ ঝড়ি-তুফান এলে পরে। " এই বাচ্চা ভালো থাকুক। বাচ্চার সব কাছের মানূষরা ভালো থাকুক । ভালো থাকুক পৃথিবীর সমস্ত বাচ্চারা এবং বাচ্চাদের কাছের মানুষরা ।

"আজ যে শিশু,/ পৃথিবীর আলোয় এসেছে/ আমরা তার তরে একটি সাজানো বাগান চাই। / মায়ের হাসিতে ভেসেছে/ আমরা চিরদিন সেই হাসি দেখতে চাই। " প্রতিটি শিশু মানুষ হোক আলোর ঝরনাধারায়। । শিশুর আনন্দ মেলায় স্বর্গ নেমে আসুক।

হাসি আর গানে ভরেই যাক, সব শিশুর অন্তর প্রতিটি শিশু ফুলেল হোক সবার ভালোবাসায়। । শিশুর আনন্দ মেলায় স্বর্গ নেমে আসুক। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।