আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মেধার বিনিয়োগ : বিশ্বের দুই প্রান্ত



আমার বড়ো মেয়ে নাহিয়ান যে ইন্টারমিডিয়েট স্কুলে পড়ে, সে স্কুলটি এ বছর ‘নাসা এক্সপে­ারার স্কুল’ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক স্বীকৃতি পেয়েছে। গোটা যুক্তরাষ্ট্রে পঞ্চাশটি স্কুল এ সম্মাননা অর্জন করেছে। নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের মাত্র চারটি স্কুল পেয়েছে এ স্বীকৃতি। এ উপলক্ষে ক'দিন আগে স্কুলে একটি বর্ণাঢ্য উৎসবের আয়োজন করা হয়েছিল। এই স্বীকৃতির আনন্দকে ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, অভিভাবক সবার প্রাণে পৌঁছে দেওয়ার জন্য আয়োজন হয়েছিল শিক্ষাবিষয়ক বিভিন্ন প্রশ্ন-উত্তর পর্বের।

সে অনুষ্ঠানে বিশ্বের এয়ার স্পেস বিজ্ঞানের মহাশক্তিশালী সংস্খা ‘নাসার’ দুজন উচ্চপদস্খ কর্মকর্তা উপস্খিত হয়েছিলেন। তারা সানন্দে ছাত্রছাত্রী-অভিভাবকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। মি. ওয়াল্টার জেকব নামের একজন কর্মকর্তা ‘নাসা’র বিভিন্ন পরিকল্পনা সম্পর্কে বিশদ বর্ণনা দিলেন। নাসা যুক্তরাষ্ট্রের পঞ্চাশটি স্কুলকে বেছে নিয়েছে মেধাবৃত্তিতে। এ স্কুলগুলোকে আগামী ৩ বছর মিলিয়ন ডলার গ্রান্ট দেবে নাসা।

‘নাসা’র উদ্দেশ্য হচ্ছে এই পঞ্চাশটি স্কুল থেকে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষামনস্ক মেধাবী ছাত্রছাত্রী গড়ে তোলা। মেধা বিবেচনায় ‘নাসা’ প্রতি বছরই যুক্তরাষ্ট্রের পঞ্চাশটি স্কুলকে গ্রান্ট দিয়ে থাকে। মি. জেকব বললেন, নাসা এভাবেই বিনিয়োগ করে যাচ্ছে। এই বিনিয়োগের মাধ্যমে আমরা মেধা অন্বেষণ করছি। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে গোটা যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রতি বছর যদি ১০০ জন মেধাবী ছাত্রছাত্রীকে আমরা শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী, প্রযুক্তিবিদ, প্রকৌশলী, মহাকাশ বিশেষজ্ঞ হিসেবে গড়ে তুলতে পারি তবেই আমাদের প্রচেষ্টা সার্থক হবে এবং আমরা সফলও হচ্ছি।

নাসা প্রতি বছর কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে যে গ্রান্ট পায়­ তার সবটা কাজে লাগাতে পারে না। তাই এই গ্রান্ট ফিরিয়ে না দিয়ে তা নবীন শিক্ষার্থীদের জন্য, তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেই গ্রান্ট হিসেবে দেয়। কারণ ‘নাসা’ মনে করে এই প্রজন্মের শিক্ষার্থীর মধ্য থেকেই বেরিয়ে আসবে আগামীর শ্রেষ্ঠ মহাকাশ বিজ্ঞানী। যারা একদিন মহাকাশে স্খাপত্য নির্মাণের স্বপ্নটি বাþত্মবে রূপ দেবে। যারা জয় করবে সকল কল্পনার অসাধ্য কাজ।

মি. জেকবের বক্তব্য যখন শুনছিলাম তখন আমি নিমগ্ন হয়ে পড়েছিলাম অন্য একটি চিìত্মা-ঘোরে। একই বিশ্ব। আর এই একই বিশ্বের একাংশের মানুষ মহাকাশ জয়ের পথে এগুচ্ছে। আর অন্য অংশের মানুষ সংগ্রাম করছে ভাঙা পাঁজরগুলো নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য। দুই. শিক্ষাখাতে একজন ছাত্রছাত্রীর জন্য অনুদান, স্কলারশিপ কিংবা গ্রান্টকে একটি বিনিয়োগ বলেই মনে করে যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা বিভাগ।

কেউ লেখাপড়া করতে চাইলে তাকে সর্বোচ্চ সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসে ফেডারেল, স্টেট, সিটি গভর্নমেন্ট। তার কারণটি হচ্ছে, এই শিক্ষার্থী তার লেখাপড়া সম্পন্ন করে একটা ভালো চাকরি করবে। ভালো বেতন পাবে। আর সেই বেশি বেতন থেকে ফেডারেল, স্টেট গভর্নমেন্টও পাবে বেশি ট্যাক্স। সরকার একজন শিক্ষার্থীর পেছনে যে গ্রান্ট বিনিয়োগ করবে, পনেরো/বিশ বছর ট্যাক্স দিয়ে সেই শিক্ষার্থী ফেরত দেবে এর দ্বিগুণ অর্থ।

অতএব লাভ তো সরকারেরই হচ্ছে। ইউরোপ-আমেরিকার শিক্ষা ক্ষেত্রে বিনিয়োগ এভাবেই বাড়িয়ে দিয়েছে বিশ্বে শিক্ষার আলো। মানুষ তার ন্যায্য অধিকার পাবে। নাগরিক পাবে তার যোগ্য স্বীকৃতি। এভাবেই হবে শিক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতির অগ্রগতি।

প্রতিটি দেশ নিজ নিজ সাধ্য অনুযায়ীই তার প্রজন্মকে সংরক্ষণ করবে। বিশ্বের মানবাধিকারের এটাই নিয়ম। কিì' সেই নিয়মটি কি সঠিকভাবে পালিত হচ্ছে? না হচ্ছে না। আর হচ্ছে না বলেই শুধু আর্থিক দরিদ্রতা নয় বরং মানসিক দৈন্যতাই ম্লান করে দিচ্ছে প্রজন্মের স্বপ্ন। মানুষের অগ্রসর হওয়ার পথ।

বাংলাদেশ সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন আড্ডায় প্রায়ই কথা ওঠে। সেদিন একজন সমাজবিজ্ঞানী খুব জোর দিয়েই বললেন, বাংলাদেশের প্রধান সমস্যাটি হচ্ছে ক্ষমতাসীনদের অনিচ্ছা এবং একগুঁয়েমি। কারণ ক্ষমতাসীনরা মনে করেন এই প্রজন্মও তাদের অনুগত হবে। তারা তাদের অনুগত হয়ে বড়ো হবে। এটা তো সম্ভব নয়।

প্রজন্মকে তাদের মতো করে বড়ো হতে দিতে হবে। তাদের মেধার বিকাশ সাধন করার ব্যবস্খা করে দিতে হবে। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ঐ সমাজবিজ্ঞানীর কথাগুলো শুনে আমি বারবার পরখ করার চেষ্টা করছিলাম বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতার কথা। কী জঘন্য পরিকল্পিতভাবেই না আজ একটি জাতিকে আদিমতার দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।

রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য একটি অপশক্তির হাতে দেশকে তুলে দেওয়ার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। বিবেক বিক্রি করে জাতিকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা করা হচ্ছে। দেশে আজও মৌলবাদী ,ফতোয়াবাজ, জংগীবাদীরা গোপনে সংগঠিত। বিশ্বের দেশগুলো মেধার বিনিয়োগ করছে। আর বাংলাদেশে সরকারি পৃষ্টপোষকতায় বেড়ে উঠেছে আদিম জঙ্গিবাদ।

মৌলবাদী দানবেরা যেকোনো বিজ্ঞান, প্রযুক্তিকেই স্বীকার করে না­ এর প্রমাণ তো বিশ্বে কম নয়। তারপরও এই জঙ্গিবাদের বির“দ্ধে বাংলাদেশের গ্রামে গ্রামান্তরে তীব্র প্রতিরোধ কেন গড়ে উঠছে না­ সে প্রশ্নটি থেকেই যাচ্ছে। নাকি সরকারি দমন-পীড়নকে ভয় করছেন জনগণ? মনে রাখতে হবে দানবেরা যতোই শক্তিশালী হোক না কেন, মানবের কাছে তারা সবসময় পরাজিত হয়েছে এবং হবেও। প্রয়োজন শুধু গণঐক্যের ।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।