আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মেধার মূল্যায়ন বনাম মেধা পাচার

আজ আমি একান্তই ব্যক্তিগত কিছু উপলব্ধির কথা বলতে চাই। আমাদের দেশে মেধা পাচার ইস্যু নিয়ে অনেক তর্কবাগীস অনেক টকশো করে থাকেন। তাদের উদ্দেশ্যে কয়েকটি প্রশ্ন- মেধাবীর সংজ্ঞা কি আপনাদের কাছে? চাকুরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ঘুষ, স্বজনপ্রীতি, রাজনৈতিক সুপারিশের করাল থাবার হাত থেকে মেধাবীদের বাঁচাবে কে? এদেশে মেধাবীরা কেন থাকবে? প্রথম প্রশ্ন কেন করলাম- বুঝিয়ে বলি। অন্য ক্ষেত্রের কথা জানিনা। বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু প্রথম স্থান অধিকারীরাই কি মেধাবী? যারা দ্বিতীয়, তৃতীয় স্থানে থাকে, তারা কি মেধাবী নয়? তারা কি কোথাও শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা রাখেনা? যদি তাদেরকে আপনারা মেধাবী বলতে রাজি হন- তাহলে আমার দ্বিতীয় প্রশ্নের জবাব চাই।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক পদে প্রথম স্থান অধিকারীকে নিয়োগ দিয়ে দিলেন-ভালো কথা। কিন্তু যারা পঞ্চম স্থান পর্যন্ত ছিল, তারা কি কোন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষকতা করতে পারবেনা- যদিনা তাদের শক্ত সুপারিশ করনেওয়ালা মামা/চাচা না থাকে? কেন তাদের বাদ দিয়ে এর চেয়ে কম সিজিপিএ ওয়ালাদের নিয়োগ দিয়ে দেন? যদি আগে থেকেই আপনাদের পছন্দের প্রার্থী থেকে থাকে, তাহলে ঘটা করে পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার দরকার কি? আর দিলেও আপনাদের প্রাক-মনোনিত প্রার্থী ছাড়া অন্যান্যদের সাক্ষাতকার নামক প্রহসনের জন্য আমন্ত্রন দেওয়ার দরকার কি? যত বড় জাঁদরেল শিক্ষকই হোন না কেন- পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়া আপনি কোন ক্লাশে গিয়ে ১০০% আত্মবিশ্বাসের সাথে ক্লাশ নিতে পারবেন? আমার মনে হয়-পারবেন না। সেক্ষেত্রে চাকরীর সাক্ষাতকারে প্রার্থীকে এলোপাথাড়ি প্রশ্ন করে মাথা নষ্ট করে দিলেন- আর পরে বললেন- আপনার ভাইভা তো ভালো হয়নি, তাই চাকরি হয়নি- পাবলিক কি সবাই ঘাস খায়? না তারা পম গানা? আমি একজনের কথা শুনলাম- তার সিজিপিএ ৩.৫ এর উপরে থাকার পরও বেচারাকে চাকরিটা না দিয়ে দিল এমন একজনকে, যার সিজিপিএ মাত্র ৩.১৫ !! এই যদি হয় অবস্থা, তাহলে আমরা কেন কষ্ট করি জীবনের ১৪/১৫ বছর? ১ পয়েন্টের জন্য প্রথম হতে পারিনা- এটা আমাদের অপরাধ? কেন মামা/চাচা নেই তদবির করার জন্য- এটা অপরাধ? কেন তাহলে হেলায় ফেলায় ছাত্র জীবন কাটিয়ে দেইনা ওদের মত, যারা ছাত্র জীবনে আমাদের ধারে কাছেও থাকতনা পড়াশুনার দিক দিয়ে। আজ তারা যখন গলায় টাই ঝুলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে যায়, আমরা কেন অসহায়ের মত তাদের দিকে তাকিয়ে নিজের ভাগ্য নিয়ে দুঃখ করি? সবই যদি ভাগ্যের খেলা হবে, তাহলে কেন আমরা চেষ্টা করি? সব মামা/চাচার হাতে ছেড়ে দিয়ে বসে থাকি না কেন? এইসব প্রশ্নের উত্তর যদি না দিতে পারেন, তাহলে বলেন- এই দেশে মেধাবীরা থাকবে কেন? আপনারা বলেন –সিস্টেমের মধ্যে থেকে সিস্টেম বদলাতে হয়। আপনারা তো আমাদের সিস্টেমে ঢুকতেই দিবেন না।

তার আগেই বাতিল করে দিবেন। আমরাও বারবার বারবার চাকরীর আবেদন করে করে একসময় আবিষ্কার করব-“আমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবেনা”!! শিক্ষকতা ছাড়া আর কোন পেশা কি নেই? প্রশ্ন করলে আমার জবাব হল- কর্পোরেট অফিসের সকাল ৯টা- রাত ৯টা কামলা দিয়ে সংসার/আত্মীয় স্বজন সবাইকে ভুলে থাকতে চাইনা। তাছাড়া শুনেছি মানুষ তার প্যাশন ফলো করলে সেই কাজে তার সাফল্য আসে। হ্যাঁ- আমি মনে-প্রানে একজন শিক্ষক হতে চেয়েছিলাম। কিন্ত এখন আসলেই ভাবতে শুরু করেছি- “আমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবেনা”!! ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।