আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দুর্ধর্ষ ফাটা কপাল

যাহ পাই তাহা চাই না, যাহা চাই তাহা পাই না আজকাল প্রায় সময়ই দেখা যায়, প্রশ্নপত্র হাতে নিয়ে আমি পরীক্ষার হলে অসহায়ের মতো বসে আছি। এস.এস.সি’র পরে কলেজে উঠে এটা মোটামোটি অভ্যাসের মতো হয়ে গেছে। পরীক্ষার হলে কথা বলার অভ্যাস আমার সারাজীবনই কম। এর কারন মোটেও এটা নয় যে, আমি খুব ভাল ছেলে। সত্যি কথা বলতে, আমার শাখামৃগ টাইপের বন্ধুদের বেশীরভাগই আমাকে তাদের মূল্যবান খাতাখানি দেখাতে চাইত না (খুলনা পাবলিক কলেজে পড়ার সময় এই অবস্থায় আমাকে বেশী থাকতে হয়েছে)।

এর সঠিক কারনটা আমি আজও উদ্ধার করতে পারি নাই। আমার চেহারার (আচার-আচরনেও হতে পারে) কোথাও হয়তোবা মেজাজ খারাপ হবার কোন উপাদান লুকিয়ে আছে। আর এ কারনেই, মোটামোটিভাবে সর্বদাই স্কুল জীবনে টিচারদের চক্ষুশূল হয়ে ছিলাম। ক্লাস নাইনে পড়ার সময় প্রতি পিরিয়ডে ধোলাই খাওয়া আমার জন্য এক রকম অলিখিত সংবিধান হিসেবে দাড়িয়ে গিয়েছিল। প্রায়ই দেখা যেত, ক্লাসে যদি একজন মানবসন্তানও মার খায় তাহলে সেই হতভাগা ছাত্রটি আমিই হতাম।

এজন্যই সম্ভবত তখন আমার ভিতরে বিদ্রোহী টাইপের মনোভাব জন্ম নিলো। ‘এমন করিয়া জগত জুড়িয়া মার খাবে দুর্বল ?’ সে জন্য আমি তখন কি করলাম?? আসলে কিছুই করলাম না। কারন আমার আসলে কিছুই করার ছিল না। যাক গে সে কথা,কলেজে সেকেন্ড ইয়ারে পড়ার সময় আমি সরকারি মজিদ মেমরিয়াল সিটি কলেজে ট্রান্সফার হয়ে চলে আসলাম। কেন আসলাম সেটা না হয় নাই বললাম।

কিন্তু টিচারদের অত্যাচারে আসি নি। আর এটাও সত্যি না যে, পাবলিক কলেজে একটা দুর্বিষহ জীবন কাটিয়েছি। বরং পাবলিক কলেজে পড়ার ঐ চমৎকার সময়টুকুর কথা আমি কোনদিনই ভুলব না। সিটি কলেজে এসে আমি কিছু অদ্ভুত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলাম। সেসব অভিজ্ঞতার কথা অন্য কোন এক লেখায় উল্লেখ করা যাবে।

এখন শুধু একটার কথাই উল্লেখ করছি। আগেই বলে নিচ্ছি, অনেকের কাছেই এটা খুব সাধারণ মনে হতে পারে। কারন, বাংলাদেশের বহু কলেজে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমার কাছে অদ্ভুত লেগেছে এবং সেটাই যুক্তিযুক্ত। কারন, আমাকে স্কুল জীবনের তিন-চতুর্থাংশ আর কলেজ জীবনের অর্ধেকটা পাবলিক কলেজে কাটাতে হয়েছে।

Discipline যেখানে একটা বড় অংশ জুড়ে ছিল। অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে, পাবলিক কলেজে স্কুল কোত্থেকে আসলো ? এই বিষয়টা পরিস্কার করছি। অফিশিয়াল নামটা ‘খুলনা পাবলিক কলেজ’ হলেও এখানে পড়ানো হতো ক্লাস থ্রী থেকে এইচ.এস.সি পর্যন্ত (এখনও হতে পারে)। অনেক বাজে কথা বলে ফেললাম। সিটি কলেজের প্রসঙ্গে ফিরে আসছি।

আমি যতদূর জানতাম, পরীক্ষার হলে এক ঘন্টার আগে কোনভাবেই হল থেকে বের হওয়া যায় না। কিন্তু এখানে দেখি অন্য ব্যাপার। বাংলা আর ইংরেজি বাদে সায়েন্সের বাকী বিষয়গুলো পরীক্ষা শুরু হতে না হতেই অনেকেই বের যায়। আমার অসংখ্য দুর্ভাগ্যের একটি হল বেশীরভাগ সময়ই হলে আমার সীট সবার সামনে পড়ে। সেই সৌজন্যে অনেকের খাতাতেই এক নজরে দেখতাম, নাম আর রোল নম্বর বাদে আল্লাহ্‌র অশেষ রহমতে তারা আর কিছুই লেখে নাই।

আমার বরাবরই লজ্জা-শরম বেশী তাই কিছু না পারলেও ইচ্ছার বিরুদ্ধে বসে থাকি। ‘কিছুই না পারা’টা আমি আক্ষরিক অর্থেই বুঝাচ্ছি। খুব অদ্ভুত একটা পরিস্থিতি এটা। কিছু লিখতেও পারছি না আবার বসে থাকতেও কষ্ট হচ্ছে। আমার মত এমন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে যারা পড়েছে তারাই শুধুমাত্র আমার অবস্থাটা বুঝতে পারবে।

বিব্রতকর পরিস্থিতি অনেকখানি বাড়িয়ে দিয়েছিল মেয়েগুলো। কারন, এখানে এসে পূর্ব-পরিচিত কিছু মেয়েকে পেলাম যাদের সীটও আমার সাথে একই হলে পড়েছে। যাদের সিংহভাগই আমাকে অতি ভাল ছেলে হিসেবে জানে (ভাল ছেলে নয়তো কী ? )। অদ্ভুত হলেও সত্যি, হল থেকে অনেক ছেলেরা বেরিয়ে গেলেও কখনোই কোন মেয়েকে বের হতে দেখিনি। মেয়েদের লজ্জা-শরম সম্ভবত আমার থেকেও বেশী।

প্রথম দিকে আমি ভাবতাম যে, মেয়েগুলো মনে হয় সব পারে। কিন্তু পরীক্ষার রেসাল্টের দিনগুলো এই ভুলটা ভাঙে। অনেক সময় স্যাররা হুমকি দিত হল কাঁপিয়ে,“আর একটা কথা হলে খাতা নিয়ে হল থেকে বের করে দিব। ” অনেকের খাতা নিয়েও যেত কিন্তু বিধিবাম আমার খাতা কখনোই নিত না। আমার তখন রীতিমত হাহাকার করার মতো অবস্থা।

খাতা দেওয়ার জন্য কম চেষ্টা করি নি (আমার কাছে চলে যাওয়ার চাইতে খাতা নিয়ে যাওয়াই বেশী সম্মানজনক মনে হয়েছে)। কিন্তু হায় আফসোস! অন্যদের খাতা নিলেও আমার বেলায় শুধু ধমক দিয়ে কাজ চালাতো। খাতা যে কখনোই নিত না তাও না, যেই পরীক্ষায় একটু পড়ে আসি সেদিন সামান্য ঘাড় ঘুরালেও ঠিক শার্লক হোমসে্র মতো পিছন থেকে এসে খাতাটা নিয়ে যায়। সাধে কি আর বলি ফাটা কপাল ! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.