অতীত খুড়ি, খুঁজে ফিরি স্বজাতির গুলিবিদ্ধ করোটি
ঘাতক, তুমি সরে দাঁড়াও
সামনে থেকে,
এই মাটি এই রক্তস্নাত ভুমি থেকে,
লাল সূর্যের সবুজ জমিন এই পতাকা উড়ছে দেখো
ত্রিশ লক্ষ লাশের ওপর
বধ্যভুমি বাংলাদেশে,
দুঃখের নদী সাতরে আসি
আগুনঝড়া নয়টি মাসে,
হাতের তালু ঝলসে গেছে
তপ্ত ব্যারেল ধরতে গিয়ে,
পায়ের তলায় দগদগে ঘা
হাটুর নিচে গুলির ক্ষত,
ঘুমহীন এই চক্ষু আমার
ঘুমের কাঙাল,
কাধের ওপর লাশের বহর,
ক্লান্তি আমায় আকড়ে আছে,
ঘাতক তুমি সরে দাঁড়াও
মগজ আমার বিগড়ে আছে। ।
ঘাতক, তোমার চোখে আমি দেখছি আগুন,
ঠোটের কোনে হিংস্র হাসি,
নখের ডগায় রক্ত কণা,
একুশ বছর পেরিয়ে গেছে-
তা বলে আর কেউ ভেবো না
স্মৃতি আমার লোপ পেয়েছে,
দিব্যি আমি দেখতে পারি সেই হায়েনা-
মাংসলোভী শকুন হয়ে খামচে আছে বোনের শরীর,
নদী-নালায় ভাসছে হাজার গুলিবিদ্ধ মুক্তিসেনা,
আমার বাবার শেষ আকুতি বাঁচতে চেয়ে,
জায়নামাজে মায়ের মুখে দোয়া-দরুদ আল্লাহ-রসুল,
দিব্যি আমি দেখতে পারি
আগুন লাগা গ্রামের সারি
উলটে পড়া ব্রিজ কালভার্ট
হত্যা লীলা- ধংসলীলা... ...
ঘাতক, তুমি সামনে আবার
দাড়িয়ে আছ কোন সাহসে?
সরে দাঁড়াও-
নইলে আবার যুদ্ধ হবে এই মাটিতে,
এক হায়েনাও পার পাবে না
উপড়ে দেব শিকড় সহ'
শুদ্ধ হবে দেশের মাটি।
তৈরি আমি
তৈরি আমি
তৈরি আমি।
ঘাতক তুমি সরে দাঁড়াও
মিছিল থেকে,
জনসভায় উঠছে দাবি বিচার চেয়ে,
পুত্র হারা মায়ের দাবি
কন্যা হারা বাবার দাবি
বোনহার এক ভাইয়ের দাবি
উঠছে দেখো মেঘের মতো,
বাদল হয়ে নামবে ওরা
ভাসিয়ে নেবে গ্রাম-জনপদ,
শহর-নগর, বাস্তু ভিটে।
।
তোমার সাথে আমার থাকা মানায় না আর
ঘাতক, তোমার হৃদয় জুড়ে
কালো শকুন বসত করে
ঘর বেধেছে কালো শেয়াল
সাপের মতো পেচিয়ে আছো
বাংলাদেশের সবুজ জমিন,
ফনার ভেতর লুকিয়ে আছে হিংস্র থাবা
বুকের ভেতর বিষের থলি,
চিনতে তোমায় নেই তো বাকি
মধ্যরাতে আবার তুমি
নগ্ন হয়ে নামতে পারো,
স্বার্থ বুঝে থামতে পারো,
মেলতে পারো ডানা আবার
এই মাটি এই আকাশ জুড়ে
ঘাতক, তুমি সরে দাঁড়াও
লাশ নামাবো কবর খুড়ে। ।
তাকিয়ে দেখো-
মাটির নিচে
লাশের ওপর লাশের সারি
বৃদ্ধ-যুবক, নর-নারী,
অবুঝ শিশুর আর্তনাদে
হাত কাপেনি তবু তোমার
ঘাতক, তুমি সরে দাঁড়াও
বিগড়ে আছে মগজ আমার। ।
একুশ বছর খুব কী সময়?
এইতো সকল দৃশ্যগুলো
ছবির মতো ভাসছে চোখে... ...
পচিশে মার্চ একাত্তরে
নিশুতি রাতে কাপলো ঢাকা
গড়গড়িয়ে চলল চাকা,
ট্যাঙ্ক কামান আর গুলি গোলায়
নিরস্ত্র সব মানুষগুলো
পাখির মতো মরল পথে,
কৃষঞচুড়া ফুলের মতো পাপড়িগুলো ঝরল পথে,
ঘাতক, তুমি মাড়িয়ে গেলে
মাড়িয়ে গেলে... ....
এমনি ভাবেই দেশটা পুরো
পড়লো চাপা বুটের তলায়
ঘাতক, তোমার ইচ্ছেগুলো পূর্ণ হলো ষোলকলায়। ।
এখন আবার কোন সাহসে
দাড়িয়ে আছ আমার পথে?
মুখে তোমার মুখোশ আটা
চিনতে পারি হর-হামেশাই
এই মাটিতে তোমার পায়ের চিহ্ন দেখে
জ্বলছি আমি
এই মাটিতে তোমার কথার বহ্নি দেখে
জ্বলছি আমি
এই বাতাসে তোমার কথার প্লাবন দেখে
জ্বলছি আমি
এই বাতাসে তোমার জামা দুলছে দেখে
জ্বলছি আমি
তবুও তুমি দাড়িয়ে আছো?
অস্ত্র আমার জমা দিলেও
ট্রেনিং আমি দেইনি জমা
বস্ত্র আমার ছিন্ন হলেও
তোমার জন্য নেইতো ক্ষমা।
ঘাতক, তুমি আর থেকো না
সামনে আমার,
দাঁড়াও সরে,
প্রতিশোধের নেশার আগুন
এখন আমার মাথায় ঘোরে। ।
ঘাতক, তুমি সরে দাঁড়াও
সামনে থেকে
এই সময়ে,
চতুর্দিকে আবার দেখো উঠছে শ্লোগান একাত্তরের
তাকিয়ে দেখো তরুন চোখে মশাল জ্বলে প্রতিবাদের
ভাঙবো আবার দম্ভ তোমার,
ভাঙবো আবার স্বপ্ন তোমার,
ভাঙবো তোমার পদযুগল
ভাঙবো আবার দুহাত তোমার,
একুশ বছর খুব বেশি নয়
আবার আমি দাড়িয়ে গেছি
একুশ বছর খুব বেশি নয়
দুখের দিবস মাড়িয়ে গেছি,
এখন আবার যুদ্ধ হবে এই মাটিতে তোমার-আমার,
ঘাতক, তুমি পার পাবেনা মানুষগুলো জাগছে আবার,
তাকিয়ে দেখো, তৈরি আমি
তাকিয়ে দেখো, তৈরি সবাই। ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।