আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলা সাহিত্যের ছড়া বিশ্বমানের

সভাপতি- বিক্রমপুর সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ, সম্পাদক ঢেউ, সভাপতি- জাতীয় সাহিত্য পরিষদ মুন্সীগঞ্জ শাখা ছড়া শুধু শিশুরাই নয়, সব বয়সের মানুষই পছন্দ করে। অ-আ, ক-খ শেখার আগেই শিশুরা ছড়া শিখে। শিশুদের মা-বাবা, দাদা-দাদী বা অন্যরা শিশুর ছড়া আবৃত্তি নিজেরা যেমন উপভোগ করেন তেমনি অন্যদের শুনিয়েও তারা খুশি হন। আমি একবার এক পৌঢ়া ভিক্ষুকের মুখে একটি ছড়া শুনে বিস্মিত হয়েছিলাম। সে ‘খোকা ঘুমালো পাড়া জুড়ালো/ বর্গী এলো দেশ’ ছড়াটি নির্ভুল ভাবে আবৃত্তি করে শোনাল।

এই ছড়াটির লেখক কে তা আর জানা যায় না। বাংলা সাহিত্যে অজ্ঞাত লেখকের আরো অনেক ছড়া রয়েছে, যা জনপ্রিয় হওয়াতে পাঠ্যসুচিভূক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ‘হাট্টিমা টিম টিম’, ‘আয়রে আয় টিয়ে’, আয় আয় চাঁদ মামা’, ‘নোটন নোটন পায়রাগুলি’ অন্যতম। ভাল ও শ্রুতিমধুর ছড়াগুলো মানুষের মুখে মুখেই বেঁচে ছিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরই প্রথম এইসব ছড়া সংগ্রহের উদ্যোগ নেন।

একটি সংকলন বের করেন। এরপরে আরো অনেকে ছড়ার সংকলন বের করে এগুলোকে হারিয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করেছেন। ছেলে ভুলানো ছড়া নিয়ে রবীন্দ্রনাথের একটি চমৎকার প্রবন্ধও রয়েছে। মুখে মুখে উচ্চারিত যে সকল শব্দ-ধ্বনি-ছন্দের ছটা ছড়িয়ে যায় মুখ থেকে মনে, তাই হল ছড়া। ছড়া কখনো অর্থবহ, কখনো অর্থহীন ছুটকো ছন্দময় রচনা।

এখনতো কবি-সাহিত্যিকদের হাতে ছড়া পেয়েছে লিখিত রূপ। ইংরেজি রাইম এর সাথে পয়েম-এর যেমন স্পষ্ট পার্থক্য করা যায় বাংলায় তেমনটা নয়। ছড়া ও কবিতার পার্থক্যর সীমারেখাটা এখানে স্পষ্ট নয়। নজরুলের ‘প্রভাতী’ ছড়া না কবিতা? এটা কবিতাই হওয়া উচিত। আল মাহমুদের ‘ঝালের পিঠা’ অবশ্যই ছড়া।

কিন্তু তার নোলক কিংবা ‘পাখির মতো’ কি ছড়া? অনেকে এগুলোকে কবিতাই বলছেন, নোলক তো কবিতাই। এখানে এধরনের লেখাকে ছড়া ধরেই লিখছি। বাংলা সাহিত্য ছড়ায় অত্যন্ত সমৃদ্ধ। ইংরেজি ছড়াগুলোর সাথে তুলনা করলেই বুঝতে পারি আমরা মোটেই পিছিয়ে নেই। আমাদের জনপ্রিয় ছড়াগুলো মৌলিক এবং আকর্ষণীয়।

‘টুইংকল টুইংকল লিটল স্টার’, ‘জনি জনি’ কিংবা ‘পুষি ক্যাট’ এর চেয়ে শিশুরা আমাদের ছড়াগুলো কম পছন্দ করে না। ইংরেজি অধিকাংশ ছড়ার চেয়েই বাংলা ছড়া ভাল। প্রাচীন কাল থেকে আসা, নাম না জানা লেখকদের কিছু প্রকৃত ছড়া বা ছড়াংশ তুলে দিলাম তুলনা করার সুবিধার্থে- খোকন খোকন ডাক পারি/ খোকন মোদের কার বাড়ি/ আয়রে খোকন ঘরে আয়/ দুধমাখা ভাতা কাকে খায়। আয় বৃষ্টি ঝেঁপে/ ধান দেব মেপে। / আয় বৃষ্টি কষে/ আমরা থাকি বসে।

/ লেবুর পাতায় করম্চা/ সব বৃষ্টি ধরে যা। চাঁদ উঠেছে ফুল ফুটেছে/ কদম তলায় কে?/ হাতি নাচছে ঘোড়া নাচছে/ সোনামণির বে। আইকম বাইকম তাড়াতাড়ি/ যদু মাস্টার শ্বশুরবাড়ি। / রেল কম ঝমাঝম/ পা পিছলে আলুর দম। হাট্টিমা টিম টিম/ তারা মাঠে পাড়ে ডিম।

/ তাদের খাড়া দুটো শিং/ তারা হাট্টিমা টিম টিম। ওখানে কে রে? আমি খোকা। / মাথায় কি রে? আমারে ঝাঁকা। / খাস্নে কেন রে? দাঁতে পোকা/ বিলুস নে কেন রে? ওরে বাবা! আতা গাছে তোতা পাখি/ ডালিম গাছে মৌ। / এতো ডাকি তবু কথা/ কওনা কেন বৌ?... আকাশ জুড়ে মেঘ করেছে/ সুয্যি গেছে পাটে/খুকু গেছে জল আনতে/ পদ্মদিঘির ঘাটে।

... আমার কথাটি ফুরোল/নটে গাছটি মুড়োল। / কেন রে নটে মুড়োলি?/গরুতে কেন খায়?/ কেন রে গরু খাস? ... ওপেনটি বাইস্কোপ/ টাইটুই টেইস্কোপ। / চুলটানা বিবিয়ানা/ সায়েববিবির বৈঠকখানা। ... দোল দোল দুলুনি/ রাঙা মাথায় চিরুনি। / বর আসবে যখনি/ নিয়ে যাবে তখনি।

... আম পাতা জোড়া জোড়া/ মারব চাবুক চড়ব ঘোড়া। / ওবে বিবি ফিরে দাঁড়া/ আসছে আমার পাগলা ঘোড়া। ... ঘুমপাড়ানি মাসি পিসি ঘুমের বাড়ি যেয়ো/ বাটা ভরে পান দেব গাল ভরে খেয়ো। ... খোকা যাবে মাছ ধরতে/ খেয়ে যাবে কী?/ শিকেয় তোলা গরম লুচি/ কলসিভরা ঘি। ... আগডুম বাগডুম ঘোড়াডুম সাজে।

/ ঢাক মৃদং ঝাঁঝর বাজে। / বাজতে বাজতে চলল ঢুলি/ ঢুলি গেল সেই কমলাপুলি... খুকু যাবে শ্বশুরবাড়ি সঙ্গে যাবে কে?/ বাড়িতে আছে হুলোবিড়াল কোমর বেঁধেছে। ... কে বকেছে কে মেরেছে কে দিয়েছে গাল/ তাই তো খোকা রাগ করেছে ভাত খায়নি কাল। ... বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর নদেয় এল বান/ শিবঠাকুরের বিয়ে হল তিন কন্যা দান। আমাদের প্রধান প্রধান কবিরা প্রায় সকলেই শিশুদের জন্য ছড়া লিখেছেন।

অবশ্য জীবনানন্দ দাশসহ ত্রিশের প্রধান ৫কবি ছড়ার পথে খুব একটা হাঁটেন নি। কবি বিষ্ণু দে ‘কতোবার এলো’ ছড়ায় লিখেছেন- কতবার এলো কতনা দস্যু/ কতনা বার/ঠগে ঠগে হলো আমাদের কত/ গ্রাম উজাড়। ... জীবনানন্দ দাশের জনপ্রিয় ছড়া না থাকলেও তাঁর মাতা কুসুমকুমারী দাশ লিখেছেন জনপ্রিয় ছড়া ‘আদর্শ ছেলে’: আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে/ কথায় না বড় হ‘য়ে কাজে বড় হবে?... ত্রিশের কবিদের মধ্যে বুদ্ধদেব বসুও ছড়া লিখেছেন। রীবন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম এবং শামসুর রাহমান অনেক ছড়া লিখেছেন। আমাদের এই প্রধান তিন কবি, প্রধান তিন ছড়াকারও বটে।

রবীন্দ্রনাথ ‘বীরপুরুষ’ ছড়ায় লিখেছেন, মনে কেরো, যেন বিদেশ ঘুরে/ মাকে নিয়ে যাচ্ছি অনেক দূরে। / তুমি যাচ্ছ পালকিতে, মা, চ‘ড়ে/ দরজা দুটো একটুকু ফাঁক ক‘রে,...। ছড়াটি শিশুদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। এছাড়া তিনি ‘ছুটি’, ‘তালগাছ’, ‘আমাদের ছোট নদী’সহ অসংখ্য ছড়া লিখেছেন। সত্যেন্দ্রনাথ দত্তকে বলা হয় ছন্দের যাদুকর।

ছন্দ মেলাতে রবীন্দ্রনাথও কম যাদুকর নন। কাজী নজরুল ইসলামের ছড়ার বই ‘ঝিঙেফুল’। এটিতে অসাধারণ কয়েকটি ছড়া রয়েছে। এর মধ্যে ‘খুকী ও কাঠবেড়ালি’, ‘প্রভাতী’, ও ‘লিচুচোর’ অনেক বেশি জনপ্রিয়। প্রভাতী ছড়াটির অংশবিশেষ বাংলাদেশের শিশুদের জন্য পড়ানো হয়; সাম্প্রদায়িক দিক বিবেচনা করে।

‘প্রভাতী’ ছড়ার অপাঠ্যভূক্ত অংশ বিশেষ: রবি মামা/দেয় হামা/ গায়ে রাঙা জামা ঐ,/ দারোয়ান/ গায় গান/ শোনো ঐ, “রামা হৈ!” শামসুর রাহমান গত কয়েক দশকের প্রধান কবিই ছিলেন না; ছিলেন প্রধান ছড়াকারও। তার কয়েকটি ছড়ার প্রথম কয়েক লাইন হল- কাকের ছায়া: কাঠফাটা সেই দুপুরে/কাকটা গেল পুকুরে। /পানি কাওয়ার আমেজে/পুকুরপাড়ে নামে যে। /সরিয়ে ঝরা পাতাটা/ দেখে কাকের মাথাটা। ট্রেন: ঝক ঝকাঝক ট্রেন চলেছে/রাতদুপুরে অই।

/ট্রেন চলেছে, ট্রেন চলেছে/ ট্রেনের বাড়ি কই? যদি আমি: মামণিটার চোখ এড়িয়ে/গলির মোড়ের পুল পেরিয়ে/ রোদের সাথে বুক মিলিয়ে/ পাখনা-ভরা রং বিলিয়ে/এখান থেকে অনেক দূরে/যদি আমি যেতাম উড়ে/প্রজাপতির মতো,/কেমন মজা হ‘ত? প-শ্রম: এই নিয়েছে ঐ নিল যাঃ/ কান নিয়েছে চিলে। /চিলের পিছে ঘুরছি ম‘রে/ আমরা সবাই মিলে। সাইক্লোন: চাল উড়ছে, ডাল উড়ছে,/উড়ছে গোরু, উড়ছে মোষ। খই উড়ছে, বই উড়ছে, উড়ছে পাঁজি, বিশ্বকোষ। এই শহরে: এই শহরে সাতসকালে/হঠাৎ কী-যে হ‘ল,/ ফুটপাতেরই বুকে প‘ড়ে/মাছরাঙাটা ম‘ল! ছড়া শব্দটির সাথে বাংলা সাহিত্যে যার নাম সমার্থক তিনি সুকুমার রায়।

তিনি অনেকগুলো জনপ্রিয় ছড়ার রচয়িতা। অন্নদা শংকর রায়ও জনপ্রিয় ছড়া লিখেছেন। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লিখেছেন: যতদিন রবে পদ্মা মেঘনা যমুনা গৌরী বহমান/ততদিন রবে কৃত্তী তোমার শেখ মুজিবর রহমান। তাঁর লেখা আলোচিত আরেকটি ছড়া হল- ‘খুকু ও খোকা’: তেলের শিশি ভাঙল বলে/ খুকুর পরে রাগ করো/ তোমরা যে সব বুড়ো খোকা/ ভারত ভেঙে ভাগ করো! বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অনেকেই ছড়া লিখেছেন। এর মধ্যে লুৎফর রহমান রিটন লিখেছেন- ফরিদপুরের অখ্যাত এক/ টুঙ্গীপাড়া গ্রাম/ ইতিহাসে টুঙ্গীপাড়ার/ নাম লিখে রাখলাম।

মুজিব রহমান লিখেছেন, দেখতে দেখতে সেই ছেলেটি/ বদলে দিলেন একটি জাতির চেতনা/ টুংগী পাড়ার সেই ছেলেটি না জন্মালে/ একটি জাতি স্বাধীনতাই পেত না। আমাদের পল্লীকবি জসীমউদ্দিন কতোগুলো পল্লীর ছড়া লিখেছেন। তাঁর ‘পালের নাও’. ‘আমার বাড়ি’ আকর্ষণীয়। তবে সবচেয়ে জনপ্রিয় হল ‘মামার বাড়ি’: আয় ছেলেরা, আয় মেয়েরা/ ফুল তুলিতে যাই,/ ফুলের মালা গলায় দিয়ে/ মামার বাড়ি যাই। / ঝড়ের দিনে মামার দেশে/ আম কুড়াতে সুখ,/ পাকা জামের মধুর রসে/ রঙিন করি মুখ।

ছড়ার সাথে থাকে ছন্দ। ছন্দের জাদুকর সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ছড়া আরো উৎকৃষ্ট হওয়ারই কথা। তিনি ‘ইলশে গুঁড়ি’ নামে ছড়ায় লিখেছেন: ইলশে গুঁড়ি! ইলশে গুঁড়ি/ ইলিশ মাছের ডিম। / ইলশে গুঁড়ি ইলশে গুঁড়ি/ দিনের বেলার হিম। ... আমাদের ছড়ার জগতে ‘কাজলা দিদি’ অন্যতম সেরা ছড়া।

বাঁশ-বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই,/ মাগো আমার শোলক-বলা কাজলা দিদি কই? অবশ্য এটাকে অনেকে ছড়া বলতে চাইবেন না। মোহিতলাল মজুমদারও ভাল ছড়া লিখেছেন। তাঁর ‘ঘুম-ভাঙানি’ ছড়ায় লিখেছেন: ফুট্ফুটে জোছনায়/ জেগে শুনি বিছানায়,/ বনে কারা গান গায়,... বাংলাদেশে ছড়ার চর্চাটা ব্যাপক। সাম্প্রতিক সময়েও ছড়া সাহিত্যে বাংলাদেশে বিশ্বমানের ছড়া লেখা হয়েছে। রোকনুজ্জামান খান ‘বাক্ বাক্ কুম্’ ছড়ায় লিখেছেন: বাক্ ব্ক্ কুম পায়রা/ মাথায় দিয়ে টায়রা,/ বউ সাজবে কাল কি/ চড়বে সোনার পাল্কি?.. সুফিয়া কামাল ‘ছোটন ঘুমায়’ ছড়াতে লিখেছেন, গোল কোরো না গোল কোরো না/ ছোটন ঘুমায় খাটে।

/ এই ঘুমকে কিনতে হলো/ নওয়াব বাড়ির হাটে। ... ফররুখ আহমদ ‘ঝুমকো জবা’ ছড়ায় লিখেছেন, ঝুমকো জবা বনের দুল/ উঠল ফুটে বনের ফুল। / সবুজ পাতা ঘোমটা খোলে,/ঝুমকো জবা হাওয়ায় দোলে। / সেই দুলুনির তালে তালে,/ মন উড়ে যায় ডালে ডালে। খান মুহম্মদ মঈনুদ্দীন ‘কানাবগীর ছা’ ছড়াটি লিখেই বিখ্যাত হয়েছেন।

আল মাহমুদ ‘ঝালের পিঠা’ ছড়ায় লিখেছেন, ঝালের পিঠা ঝালের পিঠা/ কে রেঁধেছে কে? /এক কামুড়ে একটুখানি/ আমায় এনে দে। / কোথায় পাবো লঙ্কাবাটা/কোথায় পাবো আতপ চাল,/ কর্ণফুলির ব্যাঙ ডাকচে/ হাঁড়িতে আজকাল। তাঁর আরেকটি ছড়া ‘পাখির মতো’: আম্মা বলেন, পড়রে সোনা/ আব্বা বলেন, মন দে;/ পাঠে আমার মন বসে না/ কাঁঠাল চাঁপার গন্ধে। .. সদ্যপ্রয়াত সাংবাদিক ফয়েজ আহমেদও ছড়া লিখে সুনাম কুড়িয়েছেন। তিনি ‘এক রত্তি’ ছড়ায় লিখেছেন, কোন এক বাঘ ছিল/ তার হাঁকডাক ছিল/ তার গায়ে দাগ ছিল/ ছিল না যে দাঁত।

... কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ ‘সাতনরী হার’ ছড়ায় লিখেছেন, বিষ্টি পরে টাপুর-টুপুর/ নদেয় এলো বান/ মুক্তোবতী জলকন্যার/ বেজায় ভারী মান। .... আসাদ চৌধুরী ‘জ্ঞানতত্ত্ব’ ছড়ায় লিখেছেন, ট্রেন যায় হিশ-হিশ, বায়ু যায় ফিশ -ফিশ,/ চোর যায় চুপ-চাপ,/ট্রাক যায় ধুপ-ধাপ/ গরীবের দিন যায়/ কী করে?/ কী করে? /কী করে?/ জানিবার সাধ হলে/ হাত দাও শিকড়ে/ শিকড়ে/শিকড়ে/শিকড়ে...। হুমায়ুন আজাদের ‘শুভেচ্ছা’ ছড়াটি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সেরা। ভালো থেকো ফুল, মিষ্টি বকুল, ভালো থেকো। / ভালো থেকো ধান, ভাটিয়ালি গান, ভালো থেকো।

/ ভাল থেকো মেঘ, মিটিমিটি তারা/ ভালো থেকো পাখি, সবুজ পাতারা/ ভালো থেকো চর, ছোটো কুঁড়েঘর, ভালো থেকো। ... অনেক ছড়াই উপদেশ মূলক। ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত লিখেছেন, বল দেখি এ জগতে ধার্মিক কে হয়,/ সর্ব জীবে দয়া যার, ধার্মিক সে হয়। ... সুনির্মল বসু লিখেছেন, আকাশ আমায় শিক্ষা দিল / উদার হতে ভাই রে,/ কর্মী হবার মন্ত্র আমি/ বায়ুর কাছে পাই রে। কামিনী রায়ের ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ ছড়ায় তিনি লিখেছেন, করিতে পারি না কাজ সদা ভয় সদা লাজ....।

নবকুমার ভট্টাচার্য লিখেছেন, ছোট পাখি ছোট পাখি/ কিচিমিচি ডাকি ডাকি/ কোথা যাও, দাঁড়াও না একবার ভাই/ ওই ফুল ফোটে বনে/ যাই মধু আহরণে/ দাঁড়াবার সময়তো নাই। অনেক ছড়াই হাস্যরসাত্মক। যেমন সুকুমার বড়–য়ার ‘সফদার ডাক্তার, মাথা ভরা টাক তার/ খিদে পেলে পানি খান চিবিয়ে। সুকুমার রায়ের ‘ঠিক আছে’ খুবই হাস্যরসাত্মক ছড়া। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, “ছেলেভুলানো ছড়ার মধ্যে আমি যে রসাস্বাদ করি, ছেলে বেলাকার স্মৃতি হইতে তাহাকে বিচ্ছিন্ন করিয়া দেখা আমার পক্ষে অসম্ভব”।

বাল্যকালে কিছু ছড়া থাকে মোহমন্ত্রের মতো; পরবর্তীকালেও এই মোহ ভুলা যায় না। শতবছর আগে যে ছড়াটি তখনকার শিশুদের মুগ্ধ করতো, সেই ছড়াটি আজও শিশুদের মুগ্ধ করে চলছে। এসব ছড়াই চিরকালের ছড়া। এগুলোই স্বার্থক ও সফল ছড়া। আমাদের সাহিত্যে স্বার্থক ও সফল ছড়া অনেক।

আমাদের ছড়া বিশ্বসাহিত্যের ছড়ার সমমানের। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ২১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।