আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাঙ্গামাটির রঙে চোখ জুড়ানো? (পাঁচ)

কখনো চাই নাই দূরে থাকি...তবু দূরগুলো বারে বারে আসে...

ঈদের দিন সকাল ১০টায় ঘুম ভাঙনের পর কেরম অস্বস্তি লাগতেছিলো...বহুকাল পর এই উৎসবের সকালে বিছানা ছাড়লাম এতো সকালে! পর্যটনের রেস্তোরাঁতে রেগুলার নাস্তার সাথে এক হাতা সেমাই খাইতে খাইতে মায়ের কথা মনে পড়লো...ধর্মীয় অনুশাসনের রীতিনীতি বাদ দিয়া আমার নিয়মিত জীবন যাপনেও এই উৎসবের দিনে শরীক হইতে তার কড়া নির্দেশ ছিলো। তার যুক্তি, ধর্ম না মানলেও উৎসবের একটা দিনে সকলের সাথে উদযাপনে তো কোন বাধা নাই...যেমন পুজামন্ডপেও ঘুরতে যাইতাম আমরা বাল্যকালে প্রতীমার শিল্প দেখতে। যাই হোক, নাস্তা সাড়ার পর আমরা সবাই মিলা রওনা দিলাম চাকমা রাজার বাড়ি দেখতে...বাঙালী অটোরিক্সা চালক আমাগো যেই জায়গা নামাইলো সেইখান থেইকা আরো প্রায় দুইশ গজ হাইটা আমরা পাইলাম রাজবন বিহার। এই স্থানে বৌদ্ধভিক্ষুরা তাগো বিভিন্ন সম্মিলনে আসেন। চাঙমা রাজারা বৌদ্ধ ধর্মের স্থানীয় সকল কিছুর নেতৃস্থানীয়।

তাই তাগো পৃষ্ঠপোষকতায়ই গইড়া উঠছে বিশাল বৌদ্ধবিহার। আষ্টাঙ্গিকের ভাবাদর্শে আটতলা একটা উপাসনার স্থাপনা গইড়া তোলা হইছে একই কম্পাউন্ডে। এতোকিছুর পরেও মৌসুম তার শৈশবের স্মৃতিমতো রাজবাড়ির সিঁড়িতে তোলা ছবির সাথে মিলে এমন জায়গাটা খুঁইজা পাইতেছিলো না। স্থানীয় তিন চারজনরে জিজ্ঞাসা করনের পর অঙ্গুলী নির্দেশ ছাড়া কোন সহযোগিতা পাইলাম না। আমরা নিজেগো কমনসেন্স মতোই আগাইতে আগাইতে নদীর ঘাটে পৌছাইলাম...যেইখানে ঈদ উপলক্ষে রাজবাড়ির একটা খেয়া নৌকা দর্শনার্থীগো এইপার ঐ পার করতেছিলো...আমাগো সাথে একদল নির্মাণ শ্রমিক জুইটা গেলো, তাগো প্রত্যেকের বাড়ি সাতক্ষীরায়।

চট্টগ্রামের সাতকানিয়া অঞ্চলে তারা কাজের নিমিত্তে আসছে। ছয় মাসের চূক্তিতে আসা এই সব শ্রমিকেরা ঈদের ছুটিতে বেড়াইতে আসছে রাঙ্গামাটি। সামনের ঈদেও হয়তো তাগো বাড়ি যাওয়া হইবো না। কেবল অর্থোপাজনের এই তাগীদ হয়তো আমাগো প্রবাসী বন্ধুরা খুব ভালো বুঝবেন। ডায়াস্পোরা এখন নিজের দেশের মানুষের সংস্কৃতির অঙ্গমতোন হইয়া দাঁড়াইছে।

রাজার বাড়ি দেইখা আমরা উচ্ছ্বসিত হইলেও এই শ্রমিকেরা খুব উৎসাহিত হইলো না। অযত্নের স্থাপত্য আসলে মধ্যবিত্তের নস্টালজিক প্রাণে বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়...শ্রমিকের নস্টালজিয়ায় এই স্থাপনা হয়তো আদৌ খুব প্রয়োজনীয় না। আমরা অযত্নের ইটের হেরিংবোন রাস্তা পার হইয়া রাজবাড়িতে গিয়া শুনলাম রাজা ত্রিদিব রায় এখন আমাগো প্রতিবেশী...অর্থাৎ তিনি ঢাকার গুলশান দুই নম্বর সেক্টরে থাকেন। এইখানে তাগো বৃহৎ পরিবারের ক্ষুদ্র অধিপতিরা আছেন। আর তাই মনে হয় সিঁড়িতে শ্যাওলা...সিমেন্টের সিংহের ত্বক ক্ষয়ে গেছে... মৌসুমের শৈশবের ছবিটার একটা বড়বেলার রেপ্লিকা তুললাম এই সিঁড়িতেই।

এতোক্ষণে আমাগো ক্ষুধাজনিত অনুভূতি টের পাইলাম...বিনে পয়সার খেয়া পার হইয়া রওনা দিলাম রিজার্ভ বাজারে। গ্রীন রেস্তোরাঁয় আমাগো নিমন্ত্রন জানাইছিলেন মজিদ মিয়া...মুসলমান বাঙালী সেটলারগো আনন্দমূখর পথ দিয়া আমরা সেইখানে পৌছাইলাম বিরিয়ানি খাইতে...পাহাড়ি ফার্মের মুরগীর চিকেন বিরিয়ানি...

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.