আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাঙ্গামাটির রঙে চোখ জুড়ানো? (এক)

কখনো চাই নাই দূরে থাকি...তবু দূরগুলো বারে বারে আসে...

বিজয় কেতন চাঙমা যখন জিগাইলেন, "কেমন দেখলেন রাঙ্গামাটি?" কলিগ বন্ধু রাকেশের সোজাসাপ্টা উত্তর, "অসাধারন!" তপতীর মুখে মিষ্টি আমোদের হাসি...আর আমি কইলাম," পাহাড়ি মানুষের দুঃখ ভালোই দেখলাম। " কথাটা নিয়া অনেকেই আমার চরিত্রের সাথে মিলাইয়া নিতে পারেন, সকল সময় অল্টারনেটিভ থাকনের চেষ্টা...কুতর্কের বাড়াবাড়ি বলতে পারেন অনেকেই...রাকেশের মুখ শক্তও হইলো খানিক। কিন্তু আমি নির্বিকার চিত্তে বিজয় কেতন বাবুর বিস্মিত মুখ দেখি। তিনি আমার দিকে নির্বাক দৃষ্টি দিলেন ক্ষণকাল। বাঙালি-পাহাড়ি সম্পর্কের বেড়াজাল নিয়া তিনি ভাবিত থাকেন, সেই লেখা আমি পড়তে পারলাম নিমেষেই।

তার পাহাড়ি সরলতায় যতটুক কাঠিন্য ছিলো তার সবটুক প্রকাশিত হইলো। তিনি আমারে উদ্দেশ্য কইরাই জিগাইলেন এইবার," আপনাকে কি আমি আগে কোথাও দেখেছি?" আমার সাথে বিজয় বাবুর আগে কখনো দেখা হয় নাই...তার সাথে কস্মিনকালেও আমার পরিচয় ছিলো না। যদিও বিজয় কেতন চাঙমা নামের সাথে আগে কিঞ্চিত পরিচয় ছিলো। কল্পতরু নামের হাতীর দাঁতের বিবিধ সূচীকর্ম নির্মিতির আবরণে তিনি এক বিলুপ্ত প্রায় শিল্পের শেষ জমানার শিল্পী। কিন্তু ব্যক্তি বিজয় কেতন তার এই পরিচয়ের গন্ডী পাড় হইয়া বহুদূর গেছেন...সেই পরিচিতি আমার জানা ছিলো না।

হয়তো জানাও ছিলো...কিন্তু স্মৃতি বিড়ম্বিত করে প্রায়শঃই। রাজনৈতিক আবহের থেইকা এখন একটু দূরেই থাকি। মাঝে মাঝে কোন বিশেষ মুহুর্ত গুলিতে য্যান ভাবিত মানুষরে চমকাইতে বিকল্প পঠনের অভ্যাসে কিছু বলি। মানুষ চমকায়...অপবাদের ভাগীদার হই...কেউ কেউ দম্ভের স্বরও শোনে, আর আমি রাজনৈতিক অংশগ্রহণের তাগীদ থেইকা পলাইতে স্মৃতি নষ্ট করি। বিজয় কেতন বাবুর সাথে আমার পরিচয় হইছিলো কি না আমি জানি না।

পাহাড়ি মুখগুলি আমি খুব বেশী আলাদা করতে পারি না। চৈনিক...বৈজ্ঞানিকতায় মঙ্গোলয়েড চেহারায় আমি ঐক্যের ছায়া দেখছি চিরকাল। খুব কাছের না হইলে আমার মনে হয় তারা সব একই জন। বন্ধু রূপক আর জিতেনরে পৃথক করতে আমার প্রায় ৬টা মাস গেছিলো বিশ্ববিদ্যালয়ে। অথচ বিজয় কেতন বাবুরে আমার মনে পড়ে না...তিনিও আমারে মনে করতে পারেন না।

পরষ্পরের এই মনে না পড়নের মধ্য দিয়াই য্যান আমরা পরষ্পররে বেশী চিনতে পারি। পূর্ব নির্ধারিত ধারণহীনতা আমাগো মধ্যকার দূরত্ব ঘুচাইয়া একটা প্যারালাল পথের পথিকের ধারণাতেই আনে। পাহাড়ের দুঃখবোধের ঐকতানটাই আমাগো এই মিলমিশের মূল কারন হইলেও আমরা আর সেই বিষয়ে কথা বলি না। আমরা পরিচিত মানুষগো নিয়া কথা বলতে শুরু করি। প্রায় দ্বিগুণ বয়সের বিজয় বাবু আমার বন্ধুবত গল্পে মাতেন।

কখনো সুতর্কে-কখনো কুতর্কে-কখনো ঐক্যমতে আমরা চেনাজানা ইতিহাসের তথ্য সম্ভার কচলাই। তবে যাই বলতেছিলাম সব কেরম সংক্ষেপিত আলাপ হইতেছিলো...আমরা, মানে তপতী-রাকেশ-মৌসুম-আমি আর দেবর্ষী সকলের ঢাকায় পৌছানোর তাড়া ছিলো। শ্যামলী পরিবহন আর যাই করুক না করুক সময় মাইনা চলাচল করে এই সুখ্যাতি শুনাইতেছিলো আমাগো রাঙ্গামাটির আরেক বন্ধু ঈষিতা। ভ্রমণ কাহিনী পিছন থেইকা শুরু করনের ধরণটা আমি জানি কোথায় পাইছিলাম? সেইটা মনে করতে পারি না...কিন্তু বিজয় কেতন চাঙমা'র সাথে পরিচয় না হইলে হয়তো শুরুটা অন্যভাবেই হইতো। ১১ অক্টোবর আটটটায় ব্যাগ গুছাইয়া খাওয়া দাওয়া কইরা ৯টার সময় আরামবাগের উদ্দেশ্যে যাত্রা আর ক্যাব চালকের সার্কাসমতো গাড়ি চালনায় সময় মাফিক পৌছানোটাই হইতো রাঙ্গামাটি ভ্রমণ বর্ণনের সবচাইতে চটকদার আরম্ভ।

আগে কখনো সরাসরি রাঙ্গামাটি যাই নাই তাই সন্দিহান যাত্রার নিরামিষ বর্ণনা নিশ্চিত কোন পাঠকের বিরক্তি জাগাইতে আমি করতাম না। তবু রাঙ্গামাটি যাত্রা আমার ভিন্নবোধ আনে...যদিও রাঙ্গামাটি ভ্রমণ, তার সৌন্দয্য উপভোগ কোন নতুন উপলক্ষ্য নয়... সবকিছু পাল্টে দিলেন বিজয় বাবু...

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.