চলে যেতে যেতে বলে যাওয়া কিছু কথা
সকালে দেখা কালো বিড়ালটির কথা রহমানকে বলেছিল জাহিদ হাসতে হাসতে। বেরোনোর সময় ওর পায়ের কাছে ঘোরাঘুরি করছিল।
রহমান কিছুটা গাম্ভীর্য নিয়ে বলেছিল ফাজলামি রাখ,সতর্কতার জন্য আমি বাসে যাতায়ত করিনা、 রেলজার্নিটাকে আমার নিরাপদ মনে হয়। গত দশবছরে রেলের কোন বড় দুর্ঘটনা ঘটেনি, বাসের দুর্ঘটনানাত অহরহই ঘটছে।
জাহিদ আবার বাসে চড়ে অভ্যস্থ, দশমিনিট পরপর পাওয়া যায়,ট্রেনের জন্য ষ্টেশনে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতে হয় না।
হাসপাতালের জাহিদের বেডের বসা তার স্ত্রী কনা শুনছিল স্বামীর কাছ থেকে দুর্ঘটনার বৃতান্ত।
ট্রাকের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ এড়াতে গিয়েই গাছের সাথে ধাক্কা লাগে আমাদের বহনকারী বাসটির। কিছুক্ষনের জন্য সব ভুলে গিয়েছিলাম আমি、 মাথায় কেবল তীব্র যন্ত্রনা হচ্ছিল।
কনা শুনছিল আর বোঝার চেষ্টা করছিল জাহিদের শরীরের বর্তমান অবস্থাটি।
গুরুতর কিছু নয় তবে শরীরের কয়জাগা কেটে গিয়েছে।
হঠাত করেই জাহিদ স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বলল, কনা তুমি কি বাছ বিচার করে চল অরথাত কুসংস্কারে বিশবাসী।
"কেন?"
"জান দুর্ঘটনার সকালবেলা মা পেছন থেকে ডেকেছিলেন আর একটা কালো বিড়াল বেরোনোর সময় পায়ের কাছে ঘোরাঘুরি করছিল। রহমানের কথা শুনে ট্রেনেই চড়াটাই হয়তবা শ্রেয় ছিল। "
"রহমানটা কে?"
"ও তোমাকে ত বলা হয়নি, আমার ছেলেবেলার বন্ধু এবার গ্রামে গিয়ে ওর সাথে দেখা、 দশবছ্র প্র। যদিও ঘনিষ্ট বন্ধুদের কেউ নয়।
"
"আমি অদৃষ্টে বিশ্বাসী,যা ঘটার ঘটতই, আমাদের পক্ষে যা করা সম্ভব তাহল সবকিছু স্বাভাবিকভাবে নেয়া। " কনা কিছুক্ষনভেবে উত্তর দিল।
তারপর যোগ করল,"আমাদের ধর্মের অবস্থান কিন্তু কুসংস্কার বিরুদ্ধে। আর সবকিছুতেই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে তবে অতিরিক্ত কোনকিছুই ভাল না"
জাহিদ স্ত্রীর দিকে সপ্রশংস তাকিয়ে বলল,"দর্শনের ছাত্রী ছিলে তুমি জানতাম দার্শনিক ছিলে যে জানতাম না। "
"সবারই একটি নিজস্ব জীবন দর্শন আছে" লজ্জায় মাথা মাথা নিচু করে বলল কনা।
"ওঃ" শয্যা ছেড়ে উঠে বসতে গিয়ে ব্যথায় ককিয়ে উঠল জাহিদ।
না বসলে হয় না কনা অনুযোগের স্বরে বলল।
"দুদিন শুয়ে কাটিয়ে হাপিয়ে উঠেছি। "
"কনা স্বামীকে ধরে আস্তে আস্তে বসিয়ে দিল"
"আমাকে আবার আখিকে নিয়ে আসতে স্কুলে যেতে হবে, তোমাকে দেখার জন্য পাগল হয়ে আছে ও, বারবার একই কথা বাবা আসেনা কেন?"
"ওকে হাসপাতালে নিয়ে আসার প্রয়োজন নেই, কাল পরশু নাগাদ রিলিজ পেয়ে যাব। "
ভাল কথা আমাকে খবরের কয়টা পত্রিকা দিয়ে যেও, আজকেরটাসহ গতকয়েকদিনের।
জাহিদ তার অফিসে ঢুকে প্রথমে যে কাজটি করে প্রথমসারির কয়টি পত্রিকা পড়ে দেশের খবর জেনে নেয়া।
ঠিক আছে আমি নারসের হাতে পাঠিয়ে দেব।
কনা চলে গেলে একলা জাহিদ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে লাগল পত্রিকার জন্য।
যখন আগ্রহটা তার মরতে বসে শুরু করেছে, তখন পরিচিত নার্সটা ঢুকল বেশ কয়টা পত্রিকা হাতে।
প্রায় ছিনিয়ে নেয়ার মত নার্সের হাত থেকে পত্রিকাগুলো হাতে নিল জাহিদ।
কিছুক্ষনের জন্যে হলেও হাসপাতালের গুমোট পরিবেশ থেকে পরিত্রান মিলবে ভেবে পুলকিত হল সে।
প্রথমে শিরোনামগুলো পরে শেষ করবে, তারপর অন্যান্য সংবাদগুলো আয়েশ করে পরা যাবে।
এক একটা পত্রিকার শিরোনামে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছিল সে। হঠাত করেই দুদিন আগের একটি পত্রিকার মোটা লাল কালিতে লেখা একটি শিরোনামে চোখ আটকে গেল জাহিদের।
"গত এক যুগের সবচাইতে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা, নিহত দুশজন।
"
শব্দ করে পড়তে লাগল জাহিদ সংবাদটা। পড়তে পড়তেই চমকে উঠল সে।
যে ট্রেনটিতে রহমানের ঢাকায় ফেরার কথা ছিল, সেটিই দুরঘটনা ঘটিয়েছে। অশুভ কিছু একটার আশংকায় আর উত্তেজনায় মাথাটা ঝিমঝিম করে উঠল তার।
মৃতদের নামের তালিকা খুজে পেল সে পরেরদিনের পত্রিকায়।
বুকের নীচে একধরনের শুন্যতার অনুভুতিটি ক্রমশঃ জোরালো হয়ে উঠছে। মৃতদের নামগুলো পড়তে শুরু করল সে। তালিকার যত শেষের দিকে এগুচ্ছে সে ততই মনে আবার বল অনুভুত হচ্ছে ওর। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। চার অক্ষরের নামটি খুজে পেল তালিকার শেষের দিকে।
পিতামাতার নাম দেখে নিশ্চিত হল সে তারবন্ধু রহমান মারা গেছে।
স্থানুর মত বসে রইল সে, সবকিছুই কেমন বিবর্ণ মনে হল তার।
কিছুক্ষন পর সবকিছুই আবার স্বাভাবিক হতে শুরু করল, এমনকি শরীরের ব্যথাগুলোও ফিরে এল।
আমার সাথে বাসে চাপলে হয়তবা রহমানকে প্রানটা হারাতে হত না।
প্রথমেই এই চিন্তাটি মাথায় এল জাহিদের।
নিজেকে খুব সৌভাগ্যমান মনে হল তার।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।