আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

''খুশি''

দ্যা ব্লগার অলসো.....

প্রিয় সুজন, চিঠি লেখা আমার কাছে বোরিং একটা ব্যাপার,কিন্তু যারা চিঠি লেখার পন্থা আবিষ্কার করেছিলেন তারা ঠিকই ধারণা করতে পেরেছিলেন যে,মনের আবেগ প্রকাশের জন্যে চিঠির চেয়ে উত্তম কোনো মাধ্যম আর হতে পারে না। আজ কিছু কষ্টের কথা বলার জন্যে তোর কাছে লিখছি। আচ্ছা তোর ‘খুশি’র কথা মনে আছে ? যদি বলিস মনে নেই, তাহলে তোর পাছায় এমন একটা লাথি কষাব যে, পুরো একমাস তোকে শুয়ে-শুয়েই অফিস করতে হবে। আমার নিঃসঙ্গ জীবনে যে আনন্দের বান ডেকে এনেছিলো তার নামÑ খুশি। আমি সবসময় মনমরা হয়ে থাকতাম দেখে,তুই বলতিস আমাকে বিষণ্ণতায় পেয়ে বসেছে।

এমন একটা টনিক দরকার যেটা আমার সকল দুঃখ ভুলিয়ে দেবে। তারপর তুইতো খুশিকে জুটিয়ে দিলি। খুশিকে পেয়ে আসলেই আমার জীবনটা অন্যরকম হয়ে গেলো। যতোক্ষণ অফিসে থাকতাম কাজের মাঝে ডুবে থাকতাম,আর বাসায় এসে ডুবে যেতাম খুশির মাঝে। আমি অফিস থেকে বাসায় এসে দেখতাম খুশি আমার জন্যে দরজায় দাঁড়িয়ে আছে।

আমাকে দেখতেই দৌড়ে এসে আমার গলা জড়িয়ে ধরতো। আমি জানি আদর পাবার জন্যে এরকম করতো ও। আমিও ওকে আদর করতাম,আদরে-আদরে অস্থির করে তুলতাম। শুরু হতো আমাদের খুনসুটি। প্রায় প্রতিদিনই এরকম হতো।

আমি ওকে সারারাত গল্প শোনাতাম। ও মগ্ন হয়ে শুনতো, গল্প যখন শেষ পর্যায়ে তখন ও আমার বুকে মাথা রাখতো। কেটে যেতো রাত। পরদিন অফিসে যেতে সমস্যা হতো, কিন্তু আমি কেয়ার করতাম না। এতোটাই প্রিয় ছিলো খুশির সঙ্গ।

ছুটির দিনগুলোতে আমরা বেরিয়ে যেতাম লঙড্রাইভে। খুশিকে পাশে বসিয়ে লঙড্রাইভে যাওয়ার মজাই ছিলো আলাদা । ক্যাসেট প্লেয়ারে সেলিন ডিওনের ‘মাই হার্ট উইল গো অন’ গানটি বাজতো সবসময়। কারণ একমাত্র এই গানটিই খুশি মন দিয়ে শুনতো; তখন ওর পিঙ্গল চোখজোড়া অন্যরকম হয়ে যেতো। যেন সে দূরে কোথাও হারিয়ে যাচ্ছে ! এরকম একটা ভাব দেখা যেতো ওর চেহারায়।

খুশি সমুদ্র তেমন একটা পছন্দ করতো না,তাই ওকে নিয়ে পাহাড়ে চলে যেতাম। ও চঞ্চলা হরিণীর মতো শুধু ছুটে বেড়াতো। প্রতি পূর্ণিমার রাতে খুশিকে নিয়ে আমি বাড়ির সামনের লনে বসে থাকতাম। আমার হাতে থাকতো চায়ের মগ,আর খুশির জন্যে দুধ;Ñও চা পছন্দ করতো না। গত দু’দিন আগে খুশির সাথে আমার একটু মনোমালিন্য হয়েছিলো।

তুইতো জানিস,রাশেদ আমার জন্য একটা ক্রিস্টাল অ্যাশট্রে পাঠিয়েছিলো সিঙ্গাপুর থেকে। আমাদের পাগলা রাশেদের কথা মনে আছেতো তোর ? ঐযে, খুব কবিতা লিখতো। তুইতো সবই ভুলে যাস, যদি ভুলে গিয়ে থাকিস একটা ঘটনার কথা বলি, তাহলে নিশ্চয়ই মনে পড়বে। তুই,আমি এবং রাশেদ যখন কলেজে পড়তাম, তখনকার কথা। এক পূর্ণিমায় আমরা গিয়েছিলাম ফটিকছড়ির জঙ্গলে,ওখানকার অবস্থা তখন মোটেও সুবিধের ছিলো না।

তবু আমরা ওটাকেই সিলেক্ট করেছিলাম অ্যাডভেঞ্চারের নেশায়। তো ভরা পূর্ণিমায় চাঁদ যখন মস্ত থালার মত মাথার উপর আমরা তখন একটু-একটু করে গিলতে শুরু করেছি। মনে পড়ে, রাশেদকে আমরা কিছুতেই খাওয়াতে পারছিলাম না, ও গিয়েছিলো আসলে পূর্ণিমা নিয়ে কবিতা লিখবে বলে। তো একঘন্টার মতো আমরা ওকে সাধার পর ও একটু মুখে দিয়েছিলো, বলেছিলো আর খাবে না। তারপর আমরা ওকে একরকম জোর করেই দু’তিন ঢোক খাইয়েছিলাম।

এরপর আর সাধতে হলো না, ও নিজেই খেতে লাগলো। আমরা তখন মদের নেশায় চুর ! আমি বললাম,‘একটা ঘন্টা শালাকে সাধতে হলো, ওর একটা শাস্তি পাওনা হয়েছে। ’ তুইও সায় দিলি। তারপর তোর মাথায় এলো সেই অসাধারণ আইডিয়া ! একটা মদের বোতল হাতে নিয়ে তুই ঝোপের আড়ালে গেলি। প্রস্রাব করে চলে এলি।

কর্মটা বাইরে না সেরে সেরেছিলি বোতলের ভেতর। তারপর ওই বোতল খাওয়ালি রাশেদকে। এক-আধঢোক খাওয়ার পর রাশেদ বললো,‘একটা অন্যরকম গন্ধ যেন পাচ্ছি,বাওয়া ?’ তুই তখন ওকে বলেছিলি,‘এতোক্ষণ তুই মদ খেয়েছিস,এখন মদ তোকে খাচ্ছে,তাই একটু অন্যরকম গন্ধ লাগছে। ’ পরদিন সকালে যখন এ কথা বলাবলি করে হাসিতে লুটোপুটি খাচ্ছিলাম,ও তখন বমি করছিলো। তারপর কোনো কথা না বলে সোজা চলে আসে চিটাগাং।

এরপর দীর্ঘদিন আমাদের সাথে সম্পর্ক রাখেনি রাশেদ। তারপর একদিন হুট করে রাশেদের একটা চিঠি পেলাম, সিঙ্গাপুর থেকে, সাথে এই অ্যাশট্রে। চিঠিতে কী লেখা ছিলো জানিস? ‘দিনকাল কেমন কাটছে?’ ব্যস এই ক’টা শব্দ। কোনো সম্বোধন বা বাড়তি কিছু ছিলো না। ওর পাঠানো সেই অ্যাশট্রেটা ভেঙে ফেলেছিলো খুশি।

ইচ্ছে করে অবশ্য নয়। ঘটনা হয়েছিলো একটা ইঁদুরকে নিয়ে। খুলেই বলি তোকে। খুশি ইঁদুর সহ্য করতে পারতো না। হয়েছিলো কি, সেদিন রূমের মধ্যে ইঁদুর দেখে ও দৌড় দিয়েছিলো।

আর ওর পায়ের সাথে বাড়ি খেয়ে টেবিল থেকে অ্যাশট্রেটা পড়ে গিয়ে ভেঙে গিয়েছিলো। হঠাৎ করেই আমার মেজাজটা বিগড়ে গেল। Ñখুব বকাবকি করলাম ওকে। ভীষণ মন খারাপ করেছিলো ও। অফিসে গিয়ে চিন্তা করতে লাগলাম, সামান্য একটা অ্যাশট্রের জন্যে ওর সাথে এমন বিহেভ করা মোটেও উচিৎ হয়নি আমার।

খারাপ লাগতে লাগলো। তাড়াহুড়ো করে অফিস থেকে ফিরলাম। গাড়ি থেকে নেমে দরজার দিকে তাকাতেই বরফের মতো জমে গেলাম; খুশি নেই ! রোজ দরজায় দাঁড়িয়ে আমার জন্যে অপেক্ষা করে খুশি, কিন্তু আজ দরজা হাট করে খোলা!Ñখুশি নেই ! বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো। তাড়াতাড়ি ভেতরে গিয়ে খুঁজলাম ওকে। নেই ! কোথাও নেই! বুঝলাম অভিমান করেছে ও।

সামান্য একটা অ্যাশট্রের জন্যে ওকে গালাগালি করেছি,আহাম্মক বলে গালি দিলাম নিজেকে। অ্যাশট্রেটা একটা জড় পদার্থ, কিন্তু খুশিতো তা নয়। ওরতো মন আছে। আর মনে আঘাত পেয়েছে বলেই ও আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। নাওয়া-খাওয়া মাথায় উঠলো।

খুশির ভাবনায় অস্থির হয়ে উঠলাম। না জানি কোথায় আছে বেচারি। দু’দিন আমি শান্তিতে ঘুমাতে পারি নি। কেন যেন মনে হচ্ছে খুশি আর ফিরে আসবে না। কারণ আমি জানি খুশির আত্মসম্মানবোধ অত্যন্ত প্রবল।

ও মানুষ নয়, তবুও মানুষের মতোই ওর বিচার-বুদ্ধি। দোস্ত্,আমার কষ্টের কথা তোকে জানালাম। কারণ, গেল জানুয়ারিতে তোর বাড়ির মাদি বেড়ালটা দুটো বাচ্চা প্রসব করেছিলো। তার মধ্যে মাদি বাচ্চাটা আমাকে দিয়ে বলেছিলিÑ‘নে দোস্ত, একে বাড়িতে নিয়ে যা। খুব ভালো বিড়াল(!!!!) সেই থেকেইতো খুশি আমার সাথে ছিলো।

কিন্তু আজ ও আমাকে ছেড়ে চলে গেছে ! দোয়া কর যেন খুশি ফিরে আসে। খুশি... আমার খুশি... ইতি, তোর আসিফ *****

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.