আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নানার বাতি নেভায় নাতি!!!

!!!

প্রতিদিন সকালে নানীর কর্কশ অ্যালার্মে ঘুম ভাঙ্গে নানার। ঘুম থেকে উঠেই বিরক্তির সুরে নানা বিরবির করে বলতে থাকেন- এই কর্কশ অ্যালার্মটি পরিবর্তন করা দরকার। বুড়িটার ট্যাম্পারেচার দিন দিন বেড়েই চলেছে... বলতে বলতে বিছানা থেকে উঠে সোজা প্রবেশ করলেন বাথরুমে। আয়নার সামনে দাড়াতেই প্রতিদিনই একটি না পাবার বেদনা তাড়িত করে নানাকে । তাহলো দাড়ি ।

অনেক নাতি-নাতনীর একমাত্র নানা তিনি। কিন্তু দুঃখ অন্যখানে। মুখে নেই কোন দাড়ি। তাই নানাকে আর নানা মনে হয় না কেমন যেন চাচা চাচা মনে হয়। নানার দঃখ সেটাই, কবে যে আউশ ধানের ড়্গেতের মতো আমার মুখটাও দাড়িতে ভরে যাবে! দাড়ি না থাকলেই তো ভালো ইয়ং ইয়ং দেখাবে, এমন যুক্তি অনেকেই নানাকে দেখালেও তার চালাকি আসলে অন্য জায়গায়।

পাশের বিল্ডিংয়ের এক ষোড়শী কন্যার প্রেমে পড়েছেন তিনি। হ্যাভি চটপটে মেয়ে। নাম মরিয়ম। সে নানাকে বলেছে আপনাকে চাপ দাড়িতে বেশি হ্যান্ডসাম লাগবে। ওমনিতেই শুরম্ন হয়ে যায় নানার দাড়ি সাইজ করার অভিযান।

সেভ করা একধম বন্ধ। প্রতিদিন বার বার হাত দিয়ে মুখে দাড়ি খুঁজতে খুঁজতে যা দুএকটা গজানোর সম্ভাবনা ছিল তাও ঠিকমতো গজাতে পারলো না। অনুর্বর মাটিতে ধান গজালে যেমন হয়, নানার মুখের দাড়ির অবস্থাও সেরকম হলো। এক মাসের সাধনায় মুখের প্রতি দুই ইঞ্চি পর পর একটি করে এক ইঞ্চি j¤^v সাইজের দাড়ির আবির্ভাব ঘটলো। পনের ইঞ্চি মুখের বিভিন্ন স্থানে এভাবে গুনে গুনে মোট ত্রিশটি দাড়ির হদিস পাওয়া গেল।

আর এই এক মাসে নানাকে সইতে হয়েছে নানীর মুখের বিরামহীন কর্কট বাণী। নানার নানা হওয়ার ব্যার্থ চেষ্টা ধরা পড়ে যায় চালাক নাতি হেকমতের চোখে। রহস্য খুঁজতে খূঁজতে হেকমত খুঁজে পায় তারই প্রেমিকা মরিয়মের প্রেমে পড়েছে নানা। রহস্য উদ্ঘাটন করার পর হেকমত তো তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো, - নানা আজ তোর একদিন, আর আমার যে কয়দিন লাগে। মরিয়ম হেকমতকে শানত্ম করলো।

বুদ্ধিমতি মরিয়ম একটি ফন্দি খুঁজে বের করলো, নানাকে একটু টেংরি নাচন নাচাতে হবে। তাতে সাপোর্ট দিল হেকমত। সিদ্ধানত্ম হলো আজ থেকে নানার সাথে মরিয়মের ধামাক্কা প্রেম চলবে। নানা বাথরম্নমের দড়জা বন্ধ করে আয়নার সামনে দাড়িয়ে দাড়ি গুনছিলেন। হঠ্যাৎ তার মোবাইল ফোন বেজে উঠলো।

কিন্তু তার কানে রিং টোনের শব্দ পৌছার আগেই নানী টের পেয়ে ছুটে গিয়ে ফোনটি রিসিভ করলেন। ওপার থেকে - হ্যালো.., জুলমত নানা? আবার বেজে উঠলো নানীর কর্কশ কণ্ঠ - কী কইলি ছুরি, আবার ক’তো কারে চাইলি? ভয়ে ফোনটি কেটে দিল মরিয়ম। নানী বটি নিয়ে বাথরম্নমের সামনে এসে দাড়ালেন। - এতড়্গণ বাথরম্নমে কী কর? তারাতারি বের হও। নানা দড়জা খুলেই দেখলেন বটি হাতে নানী দাড়িয়ে।

ভয়ে আবার বাথরম্নমের দড়জা সটাসট লাগিয়ে দিলেন। নানী চিৎকার করে বলতে লাগলেন- ভয় নেই। এই ভোতা বটি দিয়ে তোমাকে কুপাবো না। বটিতে ধার নেই, বাজারে গিয়ে তারাতারি ধার দিয়ে আনো, নইলে রান্না বন্ধ-খাওয়া বন্ধ। আজকাল তোমার মোবাইলে কচি কচি মেয়েদের ফোন আসে ঘটনাটা কী? বাজার থেকে আসো তারপর এর বিচার হবে।

কচি কচি মেয়েদের ফোন! তার মানে মরিয়ম ফোন করেছিল? নানা খুব সাহসী হয়ে উঠলো এবার। মরিয়মের জন্য দু একটা বটির কোপ কিছু না। দড়জা খুলতেই নানার পা ¯^qswµqfv‡eB থমথম করে কাঁপতে লাগলো। - এই যে নাও বটি এড়্গণি বাজারে যাও। নানা বিদ্যুতের গতিতে বটি নিয়ে বের হলো বাজারের উদ্দেশ্যে।

তবে মোবাইলটি নিতে সে ভুল করেনি। রাসত্মায় নেমেই একটু দূরেই লড়্গ করলো নাতি হেকমত আসছে। মনে মনে ¯^w¯Íi নিঃশ্বাস ফেললো, যাক হেকমতকে দিয়েই বটিটি বাজারে পাঠিয়ে দেই। এই বলে দ্রম্নত গতিতে হেকমতের দিকে এগুতে লাগলেন আর জোড়ে জোড়ে হেকমতকে ডাকতে শুরম্ন করলেন। হেকমত দূর থেকেই বটি হাতে নানাকে দেখে ভয়ে আধ মরা অবস্থা- মনে হয় আমাদের ফন্দি নানা টের পেয়ে গেছে।

আর এজন্যই নানা বটি নিয়ে আমাকে কুপাতে আসছে। হেকমত কাল বিলম্ব না করে দে দৌড়...। নানা যত জোড়ে দৌড় দেয়, হেকমত তার চেয়ে তিনগুন বেশি জোড়ে দৌড় দেয়। শেষ পর্যনত্ম হেকমতকে ধরতে না পেরে নানা নিজেই বাজারের দিকে রওনা হলেন। পকেট থেকে মোবাইল বের করে ইনকামিং লিস্টে দেখলেন মরিয়মের bv¤^vi| তার মানে মরিয়মই ফোন করেছিল! সাথে সাথে কলব্যাক।

কে মরিয়ম? -হ্যাঁ। কিন্তু আপনি কে বলছেন? আমি জুলমত। তোমার জুলমত নানা। -ও নানা ? আপনি। আসলে আমার মোবাইলের ডিসপেস্নটি নষ্ট হয়ে গেছে তাই বুঝতে পারিনি যে আপনি ফোন করেছেন।

ডিসপেস্ন নষ্ট হয়ে গেছে? আগে বলবা না, তোমারে নতুন একটি সেট কিইনা দিতাম। - তাহলে আজকেই নতুন সেটটি নিয়ে আসুন না। কোথায় আসবো? কখন আসবো? -উত্তরা পার্কে, বিকেল ৫টায়। ৪ টার সময়ই পার্কে এসে হাজির নানা। পাশেই একটি সাইনবোর্ড দেখে নানা আনন্দে আত্নহারা হয়ে উঠলেন।

খাদেম সাধুর কারবার, মহা এক আবিষ্কার -এখানে গ্যারান্টি সহকারে টাক মুখে দাড়ি গজানো হয়-। নানা ছুটে গেল খাদেম সাধুর কারবারে। বসে আছেন সাধু, সাদা চুল-দাড়িতে ভরপুর। কড়্গে ঢুকতেই খাদেম সাধু গলা উচু করে বললেন- রোহানী জগতে আপনাকে স্বাগতম। গোফ-দাড়ির যত প্রকার মুশকিল আচান দুর করাই আমার কাজ।

-হবে বাবা হবে? হবে মানে, আমাকে দেখে টের পাচ্ছিস না? আমার কাছে আছে রোহানী জগতের এক অবিশ্বাস্য জটিল তরল তেল, যা একদিন মুখে মালিশ করে দিলেই মুখ আর খালি থাকবে না। দাড়ি আর দাড়িতে ভরপুর হয়ে যাবে। দাম মাত্র ৫হাজার টাকা। নানা বিলম্ব না করে কিনে নিলেন রোহানী জগতের সেই তেল। আসলে নকল সাদা চুল দাড়ি লাগিয়ে সাধু সেজে বসেছিল নাতি হেকমত।

আর রোহানী জগতের তেল হিসেবে এসিড মিশ্রিত এক বোতল পানি ৫ হাজার টাকার বিনীময়ে নানার হাতে সে ধরিয়ে দেয়। পার্কে বসে মরিয়মকে বাদাম ছুলে দিচ্ছে নানা। সে নিজে বাদাম খেতে পারছেনা কারণ তার দাতগুলো লুজ হয়ে গেছে। -নানা চলুন আমরা দুজন পালিয়ে যাই, বলে উঠলো মরিয়ম। নানা আনন্দে পার্কের বেঞ্চি থেকে নীচে পড়ে গেল।

সত্যি যাবে? - হ্যাঁ। কালকেই যাবো। সাথে সাথে রাজী হয়ে গেল নানা। মরিয়ম আরও একটি আবদার করলো। আমার জন্য কিন্তু অনেক ¯^‡Y©i অলঙ্কার নিয়ে আসবেন।

শুধু অলঙ্কার কেন তোমার জন্য আমার শহীদ হতেও আপত্তি নেই, খুব আবেগপ্রবণ ভঙ্গিমায় বলে উঠলেন নানা। রাতে নানী ঘুমিয়ে যাওয়ার পর তার অলঙ্কারগুলো গোপনে প্যাকেট করে রাখলো নানা। ঘুমানোর আগে খাদেম সাধুর দেওয়া রোহানি জগতের তেলও মুখে মালিশ করে নিল। সকালে হঠ্যাৎ ঘুম ভেঙ্গে নানা মুখে হাত দিয়ে দেখেন অনেক দাড়ি। আমার মুখে এত দাড়ি! আনন্দে লাফিয়ে উঠলো।

কিন্তু মুহুর্তের মধ্যেই তার সেই আনন্দ বিলীন হয়ে গেল। ভালোভাবে লড়্গ করে দেখলেন নানীর মাথার চুলগুলো তার মুখের উপর এসে পড়েছিল। আর ঐ চুলকে নিজের দাড়ি ভেবে লাফিয়ে উঠেছিলেন। তবে দাড়ির প্রতি ততটা লোভ আজ নানার নেই। কারণ সে তো মরিয়মকে প্রায় পেয়েই গেছে।

আজ দুজনে দুজনার হাত ধরে পালিয়ে যাবে। এই ভাবতে নানা প্রবেশ করলেন বাথরম্নমে। কিন্তু আয়নার দিকে তাকাতেই নানার মাথায় যেন ঠাটা পড়লো! মুখে হাতে গোনা যে কয়টি দাড়ি গজিয়েছিল তাও ঝড়ে গেছে। রোহানী জগতের তেল মালিশ করেই এই অবস্থা হয়েছে তা বুঝতে আর বাকী রইলো না নানার। ভন্ড সাধুরে ধরতে পারলে ওকেই এবার রোহানী জগতে পাঠিয়ে দিবো।

নানার মাথা বিগড়ে গেলেও কোন রকমে কন্ট্রোলে আনলেন। সেজেগুঁজে গহনার পোটলা নিয়ে বেরিয়ে গেলেন মরিয়মের উদ্দেশ্যে। মরিয়মের কাছে এসেই তার ব্যাগে সেগুলো রেখে দিলেন। ইতিমধ্যে পূর্ব পরিকল্পনা মতো নাতি হেকমত নানীকে নিয়ে সেই স্থানে হাজির হলো। গর্জে উঠলেন নানী।

ভয়ে নানা তিন’শ মাইল বেগে দৌড় শুরম্ন করলেন। পিছে পিছে নানীও দৌড়। ঐদিকে নানা-নানীর সব সম্বল নিয়ে পালিয়ে গেল হেকমত আর মরিয়ম।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.