আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাওলানা মওদুদীর ধর্মরাজ্য, ফতোয়াবাজি ও নারীর অধিকার - ১



৩০ অক্টোবর ১ঌ৭০ মাওলানা মওদুদী লাহোরে ফতোয়া দেন, আল্লাহর ইচ্ছা অনুসারেই দুনিয়ায় ধনী-দরিদ্র আছে ৷সরকারি দৈনিক পাকিস্তান মাওলানা মওদুদীর উপরিউক্ত বক্তব্যের আলোকে "মাওলানা মওদুদীর ধর্মরাজ্য বনাম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর পাকিস্তান" শীর্ষক এক উপসম্পাদকীয় লেখে ৷ এতে বলা হয়, মাওলানা মওদুদীর প্রস্তাবিত ধর্মতত্ত্ব সম্পর্কে আমাদের ধারণা খুবই সীমিত ৷কিন্তু তাদের কথাবার্তা এবং আচরণে মনে হয় মধ্যযুগীয় থিয়োক্র্যাসীই জামায়াত ইসলামীর সকল স্লোগানের সারকথা ৷পাক-ভারত উপমহাদেশের মুসলমানদের জন্যে একটি স্বতন্ত্র বাসভূমি প্রতিষ্ঠাই ছিল জিন্নাহর স্বপ্ন ৷ এই সত্য তার অগোচরে ছিল না যে বিংশ শতাব্দীতে পুরোহিততন্ত্র বা মোল্লাতন্ত্র একেবারেই অচল ৷ মাওলানা মওদুদীর ধর্মচিন্তা অথবা জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে একমত না হলেই তা ইসলামের খেলাপ হয়ে যাবে এই জবরদস্তি জনসাধারণের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারেনি ৷ ইসলামের ইতিহাস প্রথমঃ হযরত ওসমান (রা.)-এর খেলাফত আমলে মাজাল্লাতু আহকামিল-আদালিয়া নামক গ্রন্থের সংকলন ফতোয়ার ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য কীর্তি ৷কেননা, ১৩৮৬ হিজরি সনে চার মাযহাবের তাকলিদের গন্ডির ভেতর থেকে বের হয়ে বিভিন্ন বিষয়ে ইবন শুবরূমা-এর মতবাদের আলোকে ফতোয়া প্রদানের এটাই সর্বপ্রথম ঘটনা ৷অতঃপর ১ঌ২ঌ খৃ. ও ১ঌ৩৬ খৃ. মিসরে তাকলিদের বন্ধনমুক্ত হওয়ার প্রয়াসে চালানো হয় এবং তাঁরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, মাসালিহ-ই মুরসালা অর্থাত্‍ জনকল্যাণ মূলক বিধান ও প্রগতিশীল ইসলামি জীবনযাত্রার পরিপ্রেক্ষিতে সকল মুসলিম ফিকহ শাস্ত্র পন্ডিতের অভিমতকেই ফতোয়া প্রদানের ভিত্তিরূপে গ্রহণ করা উচিত ৷ উপমহাদেশে প্রথমঃ ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম ধর্মীয় বিধানাবলির আলোকে যে ফতোয়া প্রদান করা হয়েছিল তা সিদ্ধান্তটি ছিল নারী-সমাজের জন্য ৷একটি সমস্যা দেখা দিয়েছিল যে অনেক স্ত্রীর স্বামীই অনেক সময় বছরের পর বছর নিরুদ্দেশ থাকেন, তাদের আর হদিশ পাওয়া যায় না ৷ সে ক্ষেত্রে ঘরে স্ত্রীগণ বছরের পর, বছর কষ্ট করতে থাকেন ৷এটা এক ধরনের নারী-নির্যাতন ৷এই অবস্থায় নারীরা ছিল খুবই অসহায় ৷ পুরুষরা বাধ্য করেছিল নারীদের এ অবস্থা মেনে নিতে৷ তারা অন্যত্র বিয়ে করতে পারতেন না ৷উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ শাফী দেওবন্দী তাঁর রচিত কিতাব 'আল-হীলাতুন-নাজিয়া' (করাচী) ফতোয়া গ্রন্থে সিদ্ধান্ত দেন যে, "যে স্ত্রীর স্বামী লাপাত্তা-নিরুদ্দেশ, সেই স্ত্রী দ্বিতীয় বিয়ে করতে পারবে৷" স্বাভাবিকভাবেই যুগের পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত পুরুষদের মনোবেদনার কারণ হয়েছিল ৷ পুরুষদের ধারণা ছিল, তারা লাপাত্তা বা নিরুদ্দেশ যা-ই থাকুন, ঘরে তাদের স্ত্রী অটুট থাকবে ৷ উপরিউক্ত ফতোয়ায় সামাজিক এই ধারণায় ছেদ ঘটায়৷

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।